মোস্তফা কামাল : মেয়র পদে হেরে আলহামদুলিল্লাহ বলেছিলেন সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- গাজউক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ায় আবারও আলহামদুলিল্লাহ। বাকি থাকলো কী?
নাউজুবিল্লাহ-আস্তাগফিরুল্লাহর মানুষ নন তিনি। ক্রমবিকাশমান গাজীপুরকে আধুনিক, সুপরিকল্পিত, শিল্প ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী করবেন তিনি। এ পদে মনোনীত করায়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক, গণতন্ত্রের মানস কন্যা, মানবতার মা, দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি মহোদয়কে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন আজমত উল্লা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউক আদলে গড়া গাজউক চেয়ারম্যান যেনতেন কথা?
ইলেকশনের পর সিলেকশন, রেওয়াজ হিসেবে মন্দ নয়। অথবা মন্দের ভালো। এর আগে, রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতলে জেলে যাওয়া লাগে। বিরোধী দল থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয় কতো মেয়র জেল খেটেছেন! তাদের উপলব্ধি হয়েছিল জেলের চেয়ে ফেল ভালো। গাজীপুরে বিজয়ী মেয়র সাবেক মেয়রের মা জায়েদাকে অবশ্যই ইনশাল্লাহ জেলে পাঠানো হবে না। পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লারও জয় হলো। তাকে ওই সিটির উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগে কি আইনগত কোনো ব্যত্যয় হয়েছে?
না, তা একটুও হয়নি। কিন্তু, জনগণকে দেখিয়ে দেয়ার যে কাজটি হয়েছে, তা খুব জরুরি ছিল? এ প্রশ্নের বিপরীতে ভিন্ন ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। দু’জনই চেয়ার পেলেন। একজন মেয়রের, আরেকজন পেলেন চেয়ারম্যানের চেয়ার। সরকার মানুষকে তার ক্ষমতা দেখিয়ে দিল। মানুষ দেখলো আজমত উল্লা ভদ্রলোকের ফেল করার পুরস্কার। সেইসঙ্গে তার আত্মমর্যাদা ও ক্ষমতার মোহ। দেখিয়ে দেওয়ার এ মানসিকতা ও লোভ যদি আরো নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে? যদি হোগলাকান্দি-মদনপুরেও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার দাবিনামা ওঠে? ভাগেযোগে গণতন্ত্রের এই বোঝাপড়ায় কোনো হৈচৈ হবে? পরিবেশটাও কী চমৎকার হবে না?
দেশে পরাজিতরাও এমপি সাব, চেয়ারম্যান সাব, মেম্বার সাব নামে পথে-ঘাটে আদাব-সালাম কম পান না। সাবরাও হাত-মাথা নেড়ে সালামের জবাব দেন। কুশলাদি বিনিময় করেন। পেছনে এ নিয়ে নানা রসকসের আলাপ থাকলেও তা পাস করে জেল খাটার চেয়ে উত্তম।
২০১৩ সালে ব্যাপক উৎসাহে দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচটিতেই জেতেন বিএনপি প্রার্থীরা। পরে তাদের কী দশা হয়েছিল?
জয়ের মালা গলায় পরে তারা নিজ নিজ চেয়ারেও বসেছিলেন। চেয়ারটাতে মাজার ঘঁষা পড়তে না পড়তেই একে একে ছিদ্দতের মহামারি। প্রায় সবার নামেই গুরুতর মামলা! সহিংসতা, সন্ত্রাস, পেট্রোলবোমায় খুন-খারাবির আসামী। ফেরারি-গ্রেফতার। কারাবাস। তাতেও মেলেনি শেষরক্ষা। অবশেষে বরখাস্তও হয়েছেন কয়েকজন। কম-বেশি জিন্দেগি বরবাদ হয়েছে গাজীপুরের মান্নান, সিলেটের আরিফুল হক, রাজশাহীর বুলবুলদের। তাদের চেয়ারে ভারপ্রাপ্ত করে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল সরকারের খাসপছন্দের কাউন্সিলরদের। কোথাও কোথাও গদিনশীল করে দেয়া হয়েছে সরকারের কোনো নির্বাহী কর্মকর্তাকে। এখন কী আর সেই ঝুঁকি আছে?
লেখক : ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।