রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলার সাজেকে দুর্বৃত্তের ব্রাশ ফায়ারে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফের তিন কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেনÑ সঞ্জীব চাকমা ওরফে চোগা (৪৫), স্মৃতি চাকমা (৫০), অটল চাকমা (৪০)। এ সময় আহত হয়েছেন একই গ্রুপের কনক চাকমা নামে আরও একজন। নিহতরা সবাই ইউপিডিএফ ও গণতন্ত্রিক যুব ফোরামের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত ২৮ মে সকাল ৭টায় বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের গঙ্গ্যারামমুখ কড়ল্যাছড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একাংশ অর্থাৎ এমএন লারমার গ্রুপ সংস্কারপন্থীকে দায়ী করেছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে সংগঠনটি।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একাংশ অর্থাৎ এম এন লারমার গ্রুপ সংস্কারপন্থীর ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের গঙ্গারামমুখ কড়ল্যাছড়ি গ্রামে হানা দেয়। এ সময় ইউপিডিএফ কর্মী সঞ্জীব চাকমা, স্মৃতি চাকমা, অটল ও কনক চাকমা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় জঙ্গলে আগে থেকে ওতপেতে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন ইউপিডিএফের কর্মী সঞ্জীব, স্মৃতি ও অটল চাকমা। তবে একই ঘটনায় ইউপিডিএফর কর্মী কনক চাকমা গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় যৌথ বাহিনীর একটি দল। বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি থমথমে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা অভিযোগ করে বলেন, নেতাকর্মী হত্যা করে ইউপিডিএফকে নিশ্চিহ্ন করতে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো অপশক্তিই ইউপিডএফের অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ইউপিডিএফ তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি ইউপিডিএফের তিন সদস্যকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান। রাঙামাটির সাজেক থানার কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল আনোয়ার এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একাংশ অর্থাৎ এম এন লারমার গ্রুপ সংস্কারপন্থীর মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে এ ঘটনা ঘটেছে। যৌথবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গেছে। লাশ উদ্ধার করে নিহতদের মরদেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এলাকায় যৌথবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি নানিয়ারচরে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান ও পরদিন একই এলাকায় গণতান্ত্রিক-ইউপিডিএফের আহ্বায়কসহ ছয়জন দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়। সে সময় আহত হয় প্রায় আটজন। এ দিকে পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতী সহিংসতায় একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনাকে নিরাপত্তাহীনতা বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।