ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পুরোহিতের হাতে কুরআন শরিফ তুলে দিলেন মাওলানা। আবার মাওলানার হাতে গীতা তুলে দিলেন পুরোহিত। এমনই প্রতীকী আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আন্তঃসম্প্রদায় সম্প্রীতি উৎসব। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর রাজবাড়িতে হয়ে গেল ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠান। এই সেই নাসিরনগর, যেখানে ২০১৬ সালের অক্টোবরে সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে গিয়েছিল হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির। পরস্পরের ধর্মগ্রন্থ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আয়োজকরা বোঝাতে চেয়েছেন, কোনো ধর্মগ্রন্থই ঘৃণার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। অন্য ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত করতে নিষেধ করে।
ধর্মগ্রন্থ বিনিময়ের আগে স্থানীয় হরিপুর আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন ও মন্দিরের পুরোহিত সবুজ চক্রবর্তী পায়রা উড়িয়ে সম্প্রীতি উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীন ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সম্প্রীতি উৎসবের ব্যবস্থাপক সৈকত শুভ্র আইচ মনন উৎসব আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাসিরনগরের হিন্দুপল্লীতে যে হামলা হয়েছে, তাতে সোনার বাংলা, যে বাংলা আমাদের মায়ের মতো, তার বদন মলিন হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য শুধু মুসলমান নয়, সব ধর্মের বাঙালি রক্ত দিয়েছে, সবাই মিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা দেশ গড়তে চেয়েছি আমরা। আশা করি নাসিরনগরের মতো কলঙ্কজনক ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটবে না। কোনো ধর্মই দ্বন্দ্ব-সংঘাত-হানাহানির কথা বলে না।
প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অনুকূল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃসম্প্রদায় সম্প্রীতি উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে সালমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জামাল মিয়া। উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের গভর্ন্যান্স টিম লিডার অ্যাসলিন বেকার, পেইভের রূপকার অ্যালিস্টার লেগ প্রমুখ।
আলোচনা শেষে কাওয়ালি ও কীর্তন দিয়ে সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও সম্প্রীতির বাণী ধ্বনিত হয়। উদ্বোধনের আগে একটি সম্প্রীতি শোভাযাত্রা ইউনিয়নের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করার ঘটনায় নাসিরনগর উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন এলাকায় মাইকিং করে উপজেলা সদরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে পৃথক দুটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সমাবেশ থেকে একদল লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর করে।