জয়া ফারহানা
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আইনবহির্ভূত কার্যকলাপ নিয়ে জনমনে বিস্তর প্রশ্ন। প্রশ্ন ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার নিয়ে। প্রশ্ন অপহরণ, নিখোঁজ, গুম নিয়ে। প্রশ্ন রিমান্ডে পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ে। প্রশ্ন জনগণের সঙ্গে পুলিশের ব্যবহার নিয়ে। পুলিশের ক্ষমতায়ন হয়েছে সন্দেহ নেই। বেতন বেড়েছে। সুযোগ সুবিধা বেড়েছে। কমেছে জবাবদিহি।
যখন তখন যে কাউকে তারা ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে পারে। গ্রেফতার করার জন্য যেসব পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা অনুসরণ না করলে তাদের যে খুব চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয় তাও নয়। কে চ্যালেঞ্জ করবে? চ্যালেঞ্জ করলে যে তদন্ত কমিশন গঠন হবে সেখানেও পুলিশ। পুলিশ নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করবে?
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ নিয়ে সব প্রশ্ন ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিল গুম। আর অতি সম্প্রতি তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাদা পোশাক পুলিশ আতঙ্ক এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু। সাদা পোশাক পুলিশ আতঙ্ক এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু বাংলাদেশে নতুন নয় বটে। নতুন যে নয় তা বোঝা যাচ্ছে। এ নিয়ে ১৮৯৮ সালেরই আইন আছে। তার মানে তখনও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হতো। তবে আতঙ্ক যখন ট্রমায় পরিণত হয় তখন তা আরো সবিশেষ হয়ে ওঠে। আর সেকারণেই তা বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
এটা মার্চ মাস। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে পড়ে যায় ২৫ মার্চ রাতের কথা। মনে পড়ে অপারেশন সার্চ লাইটের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের প্রতিরোধের কথা। সেটাই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের গৌরবের অংশীদার হিসেবে পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমাদের গৌরবও আছে। পুলিশ বাহিনী যার জš§ একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশের সেই স্বাধীন পুলিশ বাহিনী যদি পরাধীন দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আচরণ করে তবে গৌরব ধরে রাখা কঠিন। দুর্ভাগ্য স্বাধীন দেশের স্বাধীন পুলিশ বাহিনী অথচ এখনো সেই পুলিশের বহু আইনকানুন পরাধীন সময়ের আইনকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশকে এসব আইনকানুন দিয়েই ট্রেনিং দেয়া হয়।
যে কারণে বহু ক্ষেত্রে তাদের আচরণ পরাধীন দেশের পুলিশের মতো। কখনও কখনও সে আচরণ পরাধীন দেশ ছাপিয়ে সামন্ততান্ত্রিক আচরণে রূপ নেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালত এসব আইন সংশোধনের নির্দেশও দিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে ‘পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু’ ১৮৯৮ সালের আইন সংশোধনেরও। ১৬৪ ধারার বিষয়ে স্পষ্টভাবে আদালত বলেছে পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় কারো ওপর নির্যাতন করা যাবে না। যদি তা করা হয় তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ১০ মার্চ বিএনপির মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনকে রমনা থানা পুলিশ আটক করে। ১০ মার্চ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনদিনের রিমান্ড শেষে ১২ মার্চ তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং ওই দিনই কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা বলছেন জাকির হোসেনের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। জাকির হোসেনের কি গুরুতর অসুস্থ ছিল? গুরুতর অসুস্থ অবস্থাতেই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিল? যদি তা হয় তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের অন্তত এ অভিযোগটি সত্য নয় যে বিএনপির কর্মীরা কেউ আন্দোলনে অংশ নিতে রাস্তায়-ই নামে না।
এমন গুরুতর অসুস্থ কর্মী যদি মানববন্ধনে অংশ নেয় তবে সেই দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ আর অভিযোগ থাকে না। অভিযোগ তখন পরিণত হয় অপবাদে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, গ্রেফতারের সময় মৃত্যু, পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর চেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে না। দুর্ভাগ্য জঙ্গিত্ববাদ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো যতখানি সোচ্চার পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে ততখানি নয়। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়ও যে পুলিশের পারফরমেন্স খুব ভালো তা নয়। ৯ মার্চ যুগান্তরে প্রকাশিত ‘জামিন নিয়ে পলাতক দুই শতাধিক জঙ্গি’ প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে আটশ’ মামলা। বিচারাধীন মামলা ৫৫০। অতি ধীর গতিতে চলছে ২৫০ মামলা।
জঙ্গিরা জামিন নিয়ে পলাতক থাকলেও আসামির জামিনদারদের কোনো ধরনের জবাবদিহি নেই। কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। পলাতক দু’শ’ জঙ্গির মধ্যে অন্তত দুই ডজন ভয়ঙ্কর জঙ্গি রয়েছে যারা সমরাস্ত্র পরিচালনাসহ শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী এবং এরা সবাই টার্গেট কিলিং সন্ত্রাসী মামলার আসামি। এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও নাকি তাদের চিহ্নিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
আদালতে চার্জশিট পর্যন্ত দাখিল হয়ে আছে অথচ এদের দেখা নাই। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, জঙ্গি মামলা তদন্তেই পুলিশের বিস্তর ত্রুটি রয়েছে। বাকি প্রত্যেকটি স্তরেই সমস্যা আছে। এ বিষয়ে পুলিশের ত্রুটি-বিচ্যুতির বিস্তর উদাহরণ দেয়া যায়। কিন্তু সে সুযোগ কই? এত স্পেস কোথায় পাওয়া যাবে? পুলিশ হেফাজতে বিচারবহির্ভূত নৃশংস হত্যা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংঘটিত হয় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। নৃশংস সেই জেল হত্যায় স্তম্ভিত হয়েছিল জাতি। কিন্তু তখন প্রতিক্রিয়া প্রকাশের সুযোগ ছিল না। চলছিল অবৈধ সামরিক শাসন। অবৈধ সামরিক শাসনে প্রায় সব রকম আই ও বিচারবহির্ভূত ঘটনা ঘটে।
স্বাভাবিক সময়ে তা ঘটবে না বলেই ধরে নেয়া হয়। সামরিক শাসন সব সময়ের জন্য অগ্রহণযোগ্য অবৈধ অনৈতিক। সামরিক শাসন মানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু নির্বাচিত সরকারকে হতে হয় উচ্চতর মূল্যবোধ সম্পন্ন। সেখানে রাষ্ট্রের সব বাহিনীকে সবরকম জবাবদিহির আওতায় থাকতে হয়। গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন ধারণাটি যায় না। প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে র্যাব প্রধান অবশ্য বলেছেন তারাও মানবাধিকার বিশ্বাস করেন। নইলে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতারকৃত দেড় লাখ লোক এবং ১২০০ জঙ্গির সবাই নিহত হতো!
দুই. ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ র্যাব প্রতিষ্ঠার সময় একে একটি এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল কেন এটি এলিট ফোর্স? এলিট ধারণা থেকে তৎকালীন রেগুলার ফোর্স প্রকৃত অর্থে এত দূরে সরে গিয়েছিল যে আলাদাভাবে আরেকটি ফোর্স গঠন করে তাকে এলিট বিশেষণ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শূন্যে নেমে যাওয়া বা বিলুপ্ত ভাবমূর্তি উদ্ধারের একরকম চেষ্টা আর কী। দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অপব্যবহারের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তির প্যারামিটার আশঙ্কাজনক নিচে নেমে গেলে সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়ে ভাবমূর্তি উদ্ধার।
সেই চেষ্টার ফলশ্রুতি র্যাব। প্রতিষ্ঠা হলো র্যাব। বলা হলো জমিজমা বা টাকা পয়সা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত-পারিবারিক কোনো অভিযোগ র্যাব গ্রহণ করবে না। জনগণ তখন জানল পুলিশের মধ্যে এমন একটি ফোর্স তৈরি হয়েছে যারা রহিম মিয়ার বেড়ার সীমা ভেঙে করিম মিয়ার ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলা অথবা ফুফাতো ভাই কালা মিয়ার জমি মামাতো ভাই ধলা মিয়া দখল করে নেয়ার মতো আটপৌঢ়ে বিচার আচারের মধ্যে নাই।
তবে তো এটা এলিট ফোর্সই বটে। কিন্তু এই ‘এলিট ফোর্স’ কি ‘এলিটীয়’ মূর্তি ধরে রাখতে পেরেছে? ১৩ বছর পর এই এলিট ফোর্স সম্পর্কে লোকে কী ধারণা করে তা কখনো কোনো জরিপে পাওয়া যাবে না। প্রকৃত তথ্য পেতে হলে ভিন্ন পথ ধরতে হবে। ঘাসের মধ্যে যেমন পিঁপড়া মিশে থেকে ঘাস পরিস্থিতি বুঝে নেয় তেমন জনগণের মধ্যে জনগণ হয়ে বুঝতে হবে র্যাব সম্পর্কে লোকের ধারণা কী। ঠিক এলিট নয়, একটি বন্ধুসুলভ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে যে চেহারা আমরা ধারণা করি তার সঙ্গে না আমরা রেগুলার ফোর্সের কার্যকলাপ মেলাতে পারি, না কোনো এলিট ফোর্সের কার্যকলাপ মেলাতে পারি।
হাইকোর্টের নির্দেশনামা না মানার সংস্কৃতি রেগুলার ফোর্স থেকে এলিট ফোর্স প্রত্যেকের মধ্যেই আছে। হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়া আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাউকে গ্রেফতার করলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের স্থান, সময় এবং যদি তাকে কোথাও আটক রাখা হয় তাহলে সেই স্থানের কথা তার নিকট আত্মীয়দের জানাতে হবে। এখানেই শেষ নয়।
আবাসস্থান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে গ্রেফতার করা হলে ১২ ঘণ্টাও নয়, সেক্ষেত্রে জানাতে হবে এক ঘণ্টার মধ্যে। এটা নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দিতে হবে। আইনজীবী এবং নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শের সুযোগও দিতে হবে। এমনকি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে কী কারণে গ্রেফতার করা হলো তার কারণও জানাতে হবে।
কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রেসক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে ফিল্মি স্টাইলে বিরোধী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি ধরে নিই তিনি অপরাধী তবু প্রশ্ন থাকে। অপরাধী ধরার পুলিশি পদ্ধতি এই! খোদ সরকারি দলের লোকজনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও পুলিশ জনগণের এই ন্যূনতম মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করছে না।
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিওয়ালা ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই যখন আইনকানুন মেনে চলা হচ্ছে না সেখানে বিরোধী মতাদর্শীদের অবস্থান কী তা অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আমরা জানি যে কাউকে গ্রেফতারের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কিন্তু বহু গ্রেফতারের ঘটনাতে পরিচয়পত্র দেখানোর এই প্রাথমিক শর্তও মানার প্রয়োজন অনুভব করছে না আইন-শৃঙ্খলার বিভিন্ন ফোর্স।
৬ মার্চ প্রেসক্লাবে ঢুকে অস্ত্র উঁচিয়ে ডিবি যেভাবে সন্ত্রাসী খুঁজেছে তা সব খবর রাখা খোদ সাংবাদিকরা পর্যন্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারা রীতিমতো আতঙ্ক বোধ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের আশ্বস্ত করতে অস্ত্র তাককারী ডিবি সদস্যদের বলতে হয়েছে তারা পুলিশ। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীকে ডিবির পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়ার সময় ডিবি সদস্যরা বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর বক্স নিয়ে গেছে।
নিরাপত্তাকর্মীদের অভিযোগ লোকগুলো তাদের অস্ত্র দেখিয়েছে। চিৎকার করলে গ্রেফতার করে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। এ কেমন ডিবি যারা প্রকাশ্যে মৃত্যুর হুমকি দেয়? ডিবির কি এত ক্ষমতা? প্রকাশ্যে মৃত্যুর হুমকি দিতে পারে? মৃত্যু তো অনেক পরের ব্যাপার। বিনা কারণে ডিবি তো কাউকে গ্রেফতারের হুমকিও দিতে পারে না। ডিবির এহেন কার্যকলাপ জনমনে ডিবি সম্পর্কে কী ধরনের ধারণা তৈরি করেছে তার মোক্ষম উদাহরণ সজল চৌধুরীর মায়ের মন্তব্য। ‘বাবা তোমরা ডিবি না গুণ্ডা?’ পনেরো ষোলো জন সাদা পোশাকের লোক হুড়মুড়িয়ে ডিবি পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে সজল চৌধুরীকে বেঁধে মারধর করে। তিনি তখন চিৎকার করে বলছিলেন ‘মা, আমারে বাঁচাও। আমারে মাইরা ফেলব।’
মা দেলোয়ারা চৌধুরী বলছেন ‘বাবা আমি তো এতগুলান ষ-ামার্কা লোকের সঙ্গে পারি না।’ এরপর দেলোয়ারা চৌধুরী মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে গেলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। র্যাব-১ এর কার্যালয় থেকে তার আবেদন নিবেদনে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি। আর পুলিশ তো কিছু জানেই না। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিন-ই মাত্র র্যাব এলিটীয় ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পেরেছিল। এলিট বলতে এখানে পরিশীলিত এবং পরিমিতি বোধের পেশাদারি চরিত্র বোঝাতে চাইছি।
শুধু র্যাব নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় প্রত্যেকটি ফোর্স-ই ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে। র্যাব বা ডিবি যেমন যেনতেন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, প্রেসক্লাবও তেমন কোনো হেজিপেজি প্রতিষ্ঠান নয়। সমাজের সবচেয়ে জাগ্রত সচেতন এবং ক্রিমদের প্রতিষ্ঠান সেটা। ৬ মার্চ ডিবি সেখানে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে তা নজিরবিহীন। ইউনিফর্ম ছাড়া যখন তখন ডিবির অভিযান এতই পরিচিত দৃশ্যে পরিণত হয়েছে যে অপহৃত ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীকে যখন টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার মা চিৎকার করে বলেছে তোমরা কি গুণ্ডা না ডিবির লোক? ডিবির ইউনিফর্মবিহীন গেটআপের সঙ্গে লোকে তবে ষ-া-গু-াদের মিল খুঁজে পাচ্ছে? আতঙ্কের বিষয় বটে।
তিন. যারা পুলিশি হেফাজতে মারা যাচ্ছেন, যারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন, যারা গুম খুন অপহরণের শিকার হচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের অসহায়ত্ব আমাদের অনুভব করা দরকার। যে কেউ যখন তখন আমরা এই পরিস্থিতির শিকার হতে পারি। শুধু সে কারণেও নয়। মানুষ হিসেবেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করা উচিত। বিপদে মানুষই তো মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। মানুষই মানুষকে সাহায্য করবে। কেবল মানুষ চেহারাবিশিষ্ট হলেই তো তাকে মানুষ বলা যাবে না। মনুষ্যত্বের পরিচয় দিতে পারলে তবেই না সে মানুষ। কুসুম কুমারী দেবী স্মরণীয়। ‘মানুষ হতেই হবে মানুষ যখন।’
লেখক : কলাম লেখক