নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি ও সরকার পরস্পরবিরোধী কথা বলছে। অসুস্থতা নিয়ে এ ধরনের রাজনীতি দেশের মানুষকে বিস্মিত ও ব্যথিত করছে। সরকারের উচ্চতর মহল ও বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান আরো কিছুদিন চলবে। বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। তাকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তৎপরতাও চলছে।
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার দৃশ্যত নমনীয় নীতি নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই উদারতার পেছনে অনেক বড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়া তার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান। খালেদা জিয়ার বোনের ছেলেসহ দুজন চিকিৎসক সর্বশেষ পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে দেখার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেছেন। দুই সপ্তাহেও সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। উল্টো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সরকারের উচ্চতর পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাকে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে। প্যারোলের মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস হতে পারে। প্রয়োজনে তা আরো বাড়ানো হতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দরকে দিয়ে প্রথমে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভাই হিসেবে বড় বোনের দুর্ভোগের সাময়িক অবসান ঘটাতে শামীম ইস্কান্দরের অনুরোধকে মানবিক কারণ বলেই মনে করা হয়েছিল। এর পেছনে সরকারি হাত থাকতে পারে বলেও মনে করেছিলেন। দৃঢ়চেতা খালেদা জিয়া এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে ভবিষ্যতে তার কাছে না আসার জন্যও সতর্ক করেছিলেন শামীম ইস্কান্দরকে। এরপর বিএনপির অত্যন্ত প্রভাবশালী শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত অপর এক নেতাও বিভিন্ন বাস্তবতায় ও যুক্তিতে আপাতত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পক্ষে কথা বলেন। কুমিল্লা ও ঠাকুরগাঁওয়ের অধিবাসী এই দুই নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থে তৃতীয় একটি মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে চিকিৎসা নিতে ছয় মাসের জন্য প্যারোলো মুক্তি দিতে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানানো হয়। প্রয়োজনে প্যারোলের মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিতও দেওয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতাদের সর্বশেষ সাক্ষাতে সরকারের এই প্রস্তাবের কথা বেগম খালেদা জিয়াকে জানানো হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী স্থায়ী কমিটির এক নবীন সদস্য চট্টগ্রামের অধিবাসী এর তীব্র বিরোধিতা করেন। সরকারের সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতার বিপক্ষে তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
বিএনপির সূত্রে যত দূর জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলো চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তার বিদেশ গমন নেতা-কর্মীদের দারুণভাবে হতাশ করবে। সরকার তার রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থা করে নেবে। খালেদা জিয়া দেশে থাকলে কর্মীরা মনোবল পাবেন। খালেদা জিয়ার কঠোর মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি পরিকল্পনা আপাতত সফল হচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হবে এবং তার পরামর্শের ভিত্তিতে সরকার তাকে লন্ডনে পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে সরকারি মহল মনে করছে। নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ব্যাপারে সরকার তাড়াহুড়ো করার পক্ষে নয়। চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতেই পারে। তবে বিএনপি মনে করছে, এর পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তা না হলে অত্যাধুনিক সুবিধা-সংবলিত স্থানীয় ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করতে সরকারের আপত্তি কেন? এখানে যথেষ্ট ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলেই কেবল বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। সরকার তা না করে লন্ডনে পাঠানো আগ্রহী কেন?