ঠিকানা রিপোর্ট: একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কিছু সংখ্যক আশীর্বাদ অভিশাপে রূপ নিচ্ছে। মেট্রোপলিটন এলাকার ১৮ থেকে কম বয়সী বালক-বালিকাদের ৬৫% প্রতিদিন ৩ বা ততোধিক ঘন্টা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। গণ স্বাস্থ্য বিষয়ক এক নতুন জরিপ প্রতিবেদন থেকে ১৫ মে এই উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, একই বয়সী ২২% ছেলে-মেয়ে প্রত্যহ ৫ ঘন্টারও বেশি সময় নিজেদের পছন্দসই ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে মশগুল থাকে। প্রত্যহ ৩ বা ৫ ঘন্টারও বেশি সময় বালক-বালিকারা নিজেদের পছন্দনীয় গেইম, কার্টুন, টেক্সটিং, চ্যাটিং ও সাফিংয়ে ব্যস্ত থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওসানসাইডের সাউথ নাশাউ কমিউনিটিজ হাসপাতালের পেড্রিয়াট্রিকস চেয়ারম্যান ডঃ ওয়ারেন রসেনফেল্ড বলেন, শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি জানি যে বর্তমানের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীরা নানা ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে সময় কাটায়। তবে যন্ত্রপাতির পেছনে তাদের সময় ব্যয়ের সঠিক তথ্যটি জানার পর আমি অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ রসেনফেল্ড বলেন, যন্ত্রপাতি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সময় কাটালে মানুষের বোধ ও উপলব্ধি শক্তি হ্রাস পায়। তারা বাইরের জগতের খেলাধুলা, ছুটোছুটি ও হাসিআনন্দের ত্রিমাত্রিক কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, কিছু সংখ্যক কমবয়সী ছেলে-মেয়ে যান্ত্রিক জগতের দ্বিমাত্রিক কর্মকান্ডে এতই আকন্ঠ নিমজ্জিত থাকে যে বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জানার আগ্রহ তাদের উত্তরোত্তর হ্রাস পাচ্ছে। অথচ অভিভাবগণ দেখেশুনেও নিজেদের সন্তানদের সাইবার জগতের এই আসক্তির খপ্পর থেকে মুক্তির কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
২০১৬ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিকসের পক্ষ থেকে সাবধান বাণী উচ্চারণ করা হয়েছিল। উক্ত সতর্ক বাণীতে বলা হয়েছিল ছেলে-মেয়েদের বিশেষত কম বয়সী ছেলেমেয়েদেও স্ক্রীনে বেশি সময় কাটানোর ফলে তাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও যুক্তিযুক্ত চিন্তন ক্ষমতা, ভাষা, সামাজিক ও আবেগিক প্রতিভার স্ফুরণ চরমভাবে ব্যাহত হয়।
সাউথ নাশাউ হাসপাতালের পক্ষ থেকে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে লং আইল্যান্ড এবং নিউইয়র্ক সিটির ছেলে-মেয়েরা স্মার্টফোন, ট্যাবলেটস, কম্পিউটার ও টেলিভিশন নিয়ে প্রত্যহ গড়ে ৩.৪১ ঘন্টা সময় কাটাচ্ছে। ওয়াশিংটন ও নিউ অরলিন্সে সদরদপ্তরবিশিষ্ট এলজেধার কস্টম স্ট্রাটেজীস নামক একটি প্রফেশনাল পলিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে ১৮ থেকে কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের ৬০০ অভিভাবকের উপর টেলিফোনযোগে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল এ জরিপকার্য পরিচালিত হয়।
জরিপে দেখা গেছে যে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ধরনের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। ৭% ছেলেমেয়ে তাদের প্রাইমারী স্ক্রীনে ডেস্ক বা ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করে। আর ৯০% ছেলে-মেয়ে স্মার্ট ফোন, ট্যাবলেটস কিংবা টেলিভিশনে লগিং করে সময় কাটায়। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির প্রতি আকৃষ্ট ছেলে-মেয়েদের জন্য একাডেমীর শিশুবিশেষজ্ঞগণ একটি পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মানসম্পন্ন প্রোগ্রামিং কোনক্রমেই এক ঘন্টার বেশি সময় দেখতে দেয়া যাবেনা।
তাছাড়া ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দেখÑভালের জন্য অভিভাবকদের সাহায্যার্থে সংস্থাটি গাইডলাইন্সও তৈরি করেছে এবং বলেছে যে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে অলসভাবে সময় কাটানোর দরুন ছেলেমেয়েরা স্থ’ূলকায় বা অতিরিক্ত মোটা হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এতদসত্ত্বেও জরিপকার্যে অংশগ্রহণকারী অভিভাবকদের মাত্র ৫০% বলেছেন যে তারা গাইডলাইন্স সম্পর্কে শুনেছেন। আর ১৩% অভিভাবক বলেছেন যে তারা শিশুবিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গাইডলাইন্স সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছেন।
এদিকে ন্যাশনাল স্লীপ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে স্ক্রীন থেকে বিকীর্ণ ব্লু লাইট নামে কথিত শর্ট ওয়েভলেংথ লাইটের তীক্ষè আলো দৃষ্টিশক্তি ও গভীর নিদ্রা উপভোগে চরম ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আর অনিদ্রার কারণে ছেলেমেয়েরা পাঠ অনুশীলনে পুরোপুরি মনোসংযোগ করতে পারেনা ও তাদের পাঠোন্নতি বিঘিœত হয়। এমনকি তাদের আচারআচরণেও অসংলগ্নতা জন্ম নেয়। সামান্য কারণেই তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে ও আত্মসংযমে ব্যর্থ হয়। অনেক সময় তারা সামান্য কারণেই অন্যের সাথে ঝগড়াঝাটি থেকে শুরু করে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তাই সন্তান-সন্ততির বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।