ড. মো. হুমায়ুন কবীর
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অভাবনীয় কাজ করে সফলতা অর্জন করে চলেছেন, তার আরও একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল সম্প্রতি। তিনি ২৭ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় সিডনির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’ এর প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন। এতে তিনি নিজে সম্মানিত হয়েছেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সম্মানিত করে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি সেখানে সেই এ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেই শেষ করেননি, বিশ্বে নারী অধিকার আদায়ে চার দফা প্রস্তাবনাও তুলে ধরেছেন।
ওই প্রস্তাবনা চারটি ছিল প্রথমত, নারীর সক্ষমতা নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা সমাজে রয়েছে, তা ভাঙতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রান্তিক অবস্থানে ঝুঁকির মুখে থাকা সেসব নারীর কাছে পৌঁছতে হবে যারা আজও কম খাবার পাচ্ছেন, যাদের এখনও স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না, যারা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কোনো নারী, কোনো মেয়ে যেন বাদ না পড়ে। তৃতীয়ত, নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে তাদের সুুনর্দিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। চতুর্থত, জীবন ও জীবিকার সবক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
এ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করার পর জানা যায়, এ বিষয়ে ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭তম এবং এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে। কারণ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপর ধারাবাহিকভাবে নারী অধিকারভিত্তিক কার্যক্রম, লিঙ্গ সংবেদনশীল এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ায় এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে কখনও কোনো পুরস্কার কিংবা এ্যাওয়ার্ডের জন্য কোনো কাজ করেননি; বরং তার কাজই তাকে এসব সম্মানসূচক ডিগ্রি, স্বীকৃতি, সম্মাননা, পুরস্কার, পদক, এ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি এনে দিয়ে শুধু তাকে নয়, পুরো জাতিকে সম্মানিত করছেন। বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন মর্যাদা এবং গৌরবের আসনে। তিনি এ পর্যন্ত দেশ-বিদেশের প্রায় ২৭টি স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার মধ্যে কোনোটি তাকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়েছে, আবার কোনোটি তার উদ্যোগের সাফল্য হিসেবে দেওয়া হয়েছে দেশকে। তবে প্রতিটি সম্মানই তিনি দেশবাসী এবং সংশ্লিষ্টদের উৎসর্গ করে আরেক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এবার তার প্রাপ্ত এ্যাওয়ার্ডটিও তিনি নারীদের উৎসর্গ করেছেন।
তিনি কেন এভাবে দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিরলস কাজ করছেন, তা আমরা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারি। কারণ তিনি যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনি যে নিজের জীবন বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়েছেন। তিনি যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন। তিনি কাজ করেন দেশের দু-লাখ মা-বোনের ইজ্জতের মান বাঁচাতে। তিনি কাজ করেন ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য। আর তাকে তো এ কাজ করতেই হবে; কারণ স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পূরণ হতে চললেও অন্য কেউ তো এর আগে এই কাজগুলো করেননি। কাজেই এ গুরুদায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর কন্যা ছাড়া আর কেইবা নেবেন।
তিনি নারীশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করেছেন বলেই এখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহণ শুধু আশাব্যঞ্জকই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা পুরুষদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গেল কয়েকটি বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করলেই এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলবে। তা ছাড়া জাতীয় সংসদসহ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি, সংসদ উপনেতা, সচিব, পুলিশ, প্রশাসন, স্থানীয় প্রতিনিধি ইত্যাদি প্রতিটি জায়গায়ই এখন নারী নেতৃত্বের প্রাধান্য রয়েছে। এগুলো প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। আর এখন সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসবের কৃতিত্বের জন্য তিনি এমন অ্যাওয়ার্ড পাবেন সেটাই প্রত্যাশিত। আমরা গর্বিত। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। জয়তু শেখ হাসিনা।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।