
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অর্থাৎ এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপ-তিন মহাদেশের তিন প্রভাবশালী দেশ সফর করে দেশে ফিরে গেছেন। এই সফর নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গুঞ্জন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে হাই প্রোফাইল সফর বলে গণ্য করছেন। অনেকে বলছেন হাই ভোল্টেজ সফর। অনেকের ধারণা, এই সফরের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে অনেকটা বোঝাপড়া, হিসাব-নিকাশ সেরে নিলেন এবং তার চলন-বলনের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়লাভের গ্রিন সিগন্যাল অর্জন করে গেলেন, সেটা উপলব্ধি করা যায়।
রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকের মন্তব্যে তিনি যে ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪-এর শুরুর নির্বাচনে অনেকটাই নির্ভার, তা ভালোই বুঝতে পারা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবারের এই হাই ভোল্টেজ সফরে যে রকম আত্মপ্রত্যয়ী এবং সর্বস্ব জয়ের মতো মনে হয়েছে, ইতিপূূর্বে তা দেখা যায়নি বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। এই আত্মবিশ্বাসই তাকে জয়ী করে আনতে সাহায্য করবে। শেখ হসিনার এই সফর বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এই সফরের পজিটিভ ফল বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ভোগ করে যেতে পারবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বে সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা দেশ জাপান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জাপান বাংলাদেশের বিষয়ে উদার। গ্র্যান্ট আর ঋণ বলি, জাপান অকৃপণভাবে বাংলাদেশের পাশে সব সময় আছে। এবারও লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বাংলাদেশ এবং তার নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেবল সম্মানিতই করেনি, ৮ চুক্তি এবং মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সই করে জাপান যে এখনো বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুই আছে, তার প্রমাণও দিয়েছে। আটটি চুক্তির সব কটিই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিতে আধুনিকায়নের ওপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। এবার জাপানের সঙ্গে যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি চুক্তি কৃষির আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাপানে প্রধানমন্ত্রীর অতিসাম্প্রতিক সফরকে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সফরের প্রথমেই ২৫-২৮ এপ্রিল জাপান সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে সব মহলে। এই সফর বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন অংশীদার পর্যায়ের সম্পর্ককে ছাড়িয়ে কৌলশগত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যা আগামী ৫০ বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখা হিসেবে কাজ করবে। ৩০ দফার ১০ পৃষ্ঠার একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। ৮ দফা চুক্তি এবং সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি, সাইবার ইস্যু ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, বিশ্বে শান্তি-স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ার ক্ষেত্রেও ঢাকা-টোকিও একমত হয়েছে।
বিশ্ব জানে, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থ বরাদ্দ এবং পরবর্তীকালে অর্থ প্রত্যাহার করা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কে তিক্ততার কথা। বিশ্বব্যাংক তার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ যে ভুল ছিল, অনুভব করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দেশের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদ্বোধনের পর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ খুঁজছিল। সেই সুযোগ এসে যায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ উপলক্ষে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে নিয়ে গিয়ে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করে। কেবল তা-ই নয়, যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানই আবার নানা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশকে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এই আস্থা বেশ ভালোই জন্মেছে যে, বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা এবং সামনে এগিয়ে নিতে পারেন মাত্র একজনই-তিনি বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার দীর্ঘ সুস্থ জীবন প্রার্থনা করে।