প্রবাসীদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা

রহমান আজিজ : প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ব্যাংকগুলোর খাতাকলমে ঋণ আছে। কিন্তু বাস্তবে নেই। বিদেশ গমনেচ্ছুকরা ঋণ পেতে গেলে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকের শাখা ম্যানেজাররা নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেন। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো জানায়, তারা এ ধরণের গ্রাহক পায় না বলে ঋণ দেয় না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে আসে।
বিদেশি গমনেচ্ছুকদের খাতাকলমে ঋণ দেয় সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে- পূবালী, উত্তরা, এনআরবি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক। তবে বাস্তবে বিদেশে গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ছাড়া বাকি ছয় ব্যাংকই ঋণ দেয় না।
এসব ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসী গমনেচ্ছুকদের ৯ শতাংশ হারে বিনা জামানতে ঋণ দেয়া হয়। ঋণের পরিমাণ এক লক্ষ টাকার উপরে হলে সুদের হার হওয়ার কথা ১১ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদে প্রবাসী আয় থেকে নির্দিষ্ট কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা হয়। বৈধ ভিসার বিপরীতে এ ঋণ দেয়ার কথা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অনুসন্ধানে জানতে পারে এবং ব্যাংকের প্রোডাক্ট (ঋণের ধরণ) হিসাবে প্রবাসী কল্যাণ ঋণ উল্লেখ থাকলেও কোনো ঋণ দেয়া হয় না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোর শাখা ম্যানেজাররা ঝুঁকি নিতে চান না। কোন গ্রাহক এলেও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরণের ঋণ জামানতহীন নয়, এ ঋণের জামানতসহ চালু করতে হবে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিদেশগামী কর্মীদের জন্য এই ঋণের খাত থাকলেও টাকা দেয়া হয় না। ব্যাংকগুলোর দাবি- তারা গ্রাহক পান না।
তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বৈধ ভিসার বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে। ব্যাংকটি ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৫৮৪ জনকে ৭১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণ ফেরত আসার হারও ভাল। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে এ পর্যন্ত খেলাপির হার ৭ শতাংশ।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সরকার বিদেশ গমনেচ্ছুকদের জন্য ঋণ চালু করে। এ জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা করে। বিদেশমুখী মানুষকে বিদেশে যাওযার জন্য যাতে ভিটেমাটি বিক্রি করতে না হয় এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ আসে সে উদ্দেশ্য থেকেও সরকার এ কার্যক্রম শুরু করে।
এ উদ্দেশ্য থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও প্রবাসী ঋণ চালু করতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোকে এ ধরণের ঋণ চালু করতে নির্দেশ দেয়া হয় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১০-১১ প্রবাসী আয় আসে ৮২৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে আসে এক হাজার ১৮ দশমিক ৮২ বিলিয়ন; ২০১২-১৩ অর্থবছরে আসে এক হাজার ১৫৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ১০৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ১৮৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ১৬৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন টাকা।
এর পরের বছরেই প্রবাসী আয় কমে যায়। ওই বছরে আসে এক হাজার ১০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন টাকা। এরপর ২০১৭-১৬ অর্থবছরে নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পর কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২৩১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন টাকা।