অ্যাড. মাহাবুবার রহমান বকুল :
জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, কিন্তু কর্মের সন্ধান ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় বিদেশে বসবাস। বিদেশে কাজকর্ম করে টাকা পাঠান দেশে। চেষ্টা করেন দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার। সর্বাত্মক চেষ্টা থাকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার। সাধারণত তাদেরই বলা হয় প্রবাসী। দেশছাড়া এই মানুষেরা যেমন বিদেশের মাটিতে তাদের শেকড় গাড়তে পারেন না, অর্থাৎ পরগাছা হয়ে থাকতে ও বাঁচতে হয়, ঠিক তেমনি তারা দীর্ঘদিন প্রবাসজীবন অতিবাহিত করার পর নিজ দেশে ফিরে এসেও তাদের ন্যায্য প্রাপ্য ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
প্রবাসীদের প্রতিনিয়তই দেশ ও বিদেশের মাটিতে আঘাতপ্রাপ্ত হতে হয়, তাদের জীবন বিপন্নের সম্মুখীন হয়। অনেকে দেশে গিয়ে তাদের মূল্যবান জীবনটাও প্রতিপক্ষের হাতে বিসর্জন দেন। দেশের প্রচলিত আইন তাদের অনেক সময় সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই সময় এসেছে সর্বদা ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রবাসীদের জানমালের সুরক্ষার জন্য স্বতন্ত্র একটি আইন এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের। আইনটির নাম হতে পারে ‘Probashi Protection Act (PPA)’ এবং ট্রাইব্যুনালের নাম হতে পারে ‘Probashi Special Tribunal (PST)’। দেশপ্রেমিক প্রবাসীদের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আমার বিশ্বাস।
PPA এবং PST কেন প্রয়োজন, তার কারণ ও সমাধান ছয়টি দফার মাধ্যমে নিচে উল্লেখ করা হলো :
দফা-১ : ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা নিজ দেশে গিয়ে হরহামেশাই অকারণে খুনের শিকার হন। দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে এমন খুনের মামলা আদালতে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আইনের ফাঁকফোকর গলে খুনি আসামি বেরিয়ে যায়। ফলে খুনিদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এই খুনিদের বেশির ভাগই হয় নিকটাত্মীয়। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে নিজ দেশে এসে খুন হওয়া প্রবাসীদের খুনের কারণ সম্পর্কে খোঁজখবর এবং জরিপ করে দেখা যায়, প্রতিটি খুনের পেছনে রয়েছে স্বার্থ আর অর্থ।
অর্থাৎ প্রবাসীদের দ্বারা দেশে গড়া অর্থসম্পদ-জমিজমা-মূল্যবান বাড়িঘর। এই শ্রেণির প্রবাসীরা তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকালে তাদের অবর্তমানে দেশে রেখে যাওয়া মূল্যবান সম্পত্তি, জায়গা-জমি, বাড়িঘর তাদের নিকটাত্মীয়রা দেখাশোনা করে থাকে। শুধু স্বার্থের কারণে এই নিকটাত্মীয়দের দ্বারাই একসময় এই প্রবাসী নিষ্ঠুরভাবে খুনের শিকার হন। স্থানীয়ভাবে এই আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়, পক্ষান্তরে প্রবাসীরা বিদেশে অবস্থানের কারণে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কম থাকে। এ ক্ষেত্রে সাক্ষীরা আসামিদের অন্যায় প্রভাব ও ভয়ে সত্য সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাকে। এ কারণে আদালতে অধিকাংশ সময় আসামিদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খুনিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। প্রচলিত আইনে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করা জটিল ও দুরূহ হওয়ায় দেশে প্রবাসী খুনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
দফা-২ : অনেক সময় দেখা যায়, একান্নবর্তী পরিবারের ২০-২৫ বছরের একটি ছেলেকে পিতা অথবা অভিভাবকের আর্থিক সহায়তায় অর্থ উপার্জনের আশায় বিদেশে পাঠানো হয়। বিদেশে উপার্জিত অর্থ ছেলেটি তার দেশে অবস্থানরত পিতা অথবা বড় ভাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করতে থাকে। পিতা অথবা বড় ভাই ওই টাকায় নিজ নামে জমিজমা, সম্পদ কিনতে থাকে। টানা ১০-১২ বছর প্রবাসজীবন অতিবাহিত করে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে এসে ছেলেটি তার পাঠানো একটি টাকাও ফেরত পায় না। তার পাঠানো টাকায় খরিদ করা জমির অংশ থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে ছেলেটির জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়।
দফা-৩ : অনেক প্রবাসী আছেন, তারা দেশে অবস্থানরত স্ত্রীর নামে টাকা পাঠান। দীর্ঘ বছর টাকা পাঠানোর পর একসময় দেশে এসে ওই প্রবাসী দেখেন, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা এবং বিবাহিত স্ত্রী উভয়ই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ওই প্রবাসী তার স্ত্রীকেও পান না, স্ত্রীর কাছে পাঠানো টাকাও ফেরত পান না।
দফা-৪ : প্রবাসীরা দেশে গেলে তাদের কাছ থেকে স্থানীয় মাস্তানরা জোর-জবরদস্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজি করছে। পুলিশ-র্যাবের অনেক অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও এরূপ অভিযোগ প্রকাশ পাচ্ছে।
দফা-৫ : প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত নিজ দেশের বিমানবন্দরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন বলে সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে।
দফা-৬ : বাংলাদেশের প্রবাসী নারী শ্রমিকেরা বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতনের শিকার এমনকি খুন হওয়ার সংবাদ প্রায়ই প্রকাশ পাচ্ছে।
উপরিল্লিখিত ১-৬ নং দফায় বর্ণিত অপরাধের মামলা বিভিন্ন জটিলতার কারণে দেশের প্রচলিত আইন এবং প্রচলিত আদালত দ্বারা সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং প্রবাসীদের আনীত অভিযোগের প্রতিটি মামলা সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রবাসীদের কল্যাণে একটি গতিশীল নতুন আইন ‘Probashi Protection Act’ প্রণয়ন করে তা অনুমোদনের সুপারিশ করা হলো। প্রবাসীদের দ্বারা আনীত সকল অভিযোগ ‘Probashi Protection Act’ নামক নতুন আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। ‘Probashi Protection Act’ দ্বারা পরিচালিত বিচারিক কাজ পরিচালনার জন্য ‘Probashi Special Tribunal’ নামক নতুন আদালত গঠন করতে হবে। প্রবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের জানমাল এবং সম্পদ রক্ষায় বিচারকগণ যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দ্রুততার সঙ্গে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলায় ‘Probashi Special Tribunal’ গঠন করে অভিযোগের বিষয়গুলো দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে। ‘Probashi Special Tribunal’ এর বিচারক হবেন জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। আদালত কর্তৃক একটি অভিযোগ গ্রহণের পর তা পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
Probashi Protection Act-এর রূপরেখা-বিষয়ক আমার সুচিন্তিত মতামত ও প্রস্তাবনা উপরিল্লিখিত দফাভিত্তিক ব্যাখ্যা করা হলো :
দফা-১ এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
(ক) কোনো প্রবাসী নিজ দেশে অবস্থানকালে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদ্বয় দ্বারা আর্থিক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা খুন হলে তার বিচারের দাবিতে প্রবাসে অবস্থানরত যেকোনো আত্মীয়স্বজন প্রবাসে থেকেই ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তির/ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে Online-এর মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। অর্থাৎ থানায় এজাহার দাখিল করতে পারবেন। Probashi Special Tribunal-এ মামলা দাখিল করতে পারবেন। ওই কাজে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করলে প্রয়োজনে তারা টেলিটক বা ফোন কল ব্যবহার করতে পারবেন।
(খ) অভিযোগকারী বা বাদী সশরীরে কোর্টে হাজির না হয়েও প্রবাস থেকে Online Video বা Virtual Testimony কোর্টের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে চঝঞ কোর্টে সাক্ষ্য বা জবানবন্দি প্রদান করতে পারবেন। এই সাক্ষ্য বা জবানবন্দি কোর্ট দ্বারা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে এবং তার ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত বা রায় প্রদান করতে পারবেন।
(গ) অধিকাংশ প্রবাসীর খুনের মামলায় কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী বা Eyewitness থাকলেও প্রভাবশালী আসামিদের ভয়ে তারা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন অথবা সত্য সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাই PST কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করে যাতে খুনিদের সাজা সুনিশ্চিত করা যায়, সেই লক্ষ্যে চাক্ষুষ সাক্ষী বা Circumstantial Evidence-এর গুরুত্ব শিথিল করে Eyewitness Evidence-এর প্রতি অধিকতর গুরুত্ব রেখে খুনির শাস্তি নিশ্চিত করার বিধান রাখতে হবে। এই প্রকৃতির মামলায় অভিযোগকারী বাদীকে শুধু প্রমাণ করতে হবে এবং আদালতের মূল বিবেচ্য বিষয় হতে হবে। অভিযুক্ত আসামির সঙ্গে Deceased বা মৃত ব্যক্তির কোনো আর্থিক লেনদেন চলমান ছিল এবং মৃত ব্যক্তির মূল্যবান Property দেখাশোনা করার জন্য অভিযুক্ত আসামি Caretaker হিসেবে নিযুক্ত ছিল।
শাস্তির মেয়াদকাল
(ক) খুনের শাস্তি : এক বা একাধিক আসামির বিরুদ্ধে প্রবাসী খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান রাখতে হবে।
(খ) প্রবাসীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত : কোনো প্রবাসীকে হত্যার উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক আসামির দ্বারা আঘাত করার অভিযোগ আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হলে আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১৪ বছর সাজার বিধান নিশ্চিত করতে হবে।
(গ) Property আত্মসাৎ : একইভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ বছর সাজা দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করতে হবে। উপরিল্লিখিত অভিযুক্ত আসামিরা বিচার চলাকালে জামিনে মুক্ত থাকার অধিকার পাবেন না।
দফা-২-এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
(ক) ১০-১২ বছর পর বিদেশ থেকে ফিরে আসা ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী যদি PST কোর্টে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তার প্রেরিত টাকা বাবা বা ভাইয়ের ব্যাংকে গচ্ছিত আছে, তবে কোর্ট এই টাকা জব্দ করে প্রবাসীর নিজ নামীয় ব্যাংক অ্যাকাউট বরাবর প্রেরণ করতে পারবেন।
(খ) প্রবাসীর পাঠানো টাকায় দেশে অবস্থানরত বাবা, ভাই বা অন্য কেউ তাদের নিজ নিজ নামীয় Property অর্থাৎ জমিজমা, সম্পদ কিনে থাকলে প্রবাসী কর্তৃক আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে ক্রয়কৃত Property বাবা বা ভাইয়ের আইনগত স্বত্ব স্থগিত করে তা প্রবাসীর নামে Transfer করার যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আদালতকে প্রদান করতে হবে।
(গ) অনেক প্রবাসী বিদেশে অবস্থানকালে নিজ দেশে রেখে যাওয়া Property অর্থাৎ জমিজমা, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো নিকটাত্মীয়কে Power of Attorney বা আমমোক্তারনামা ক্ষমতা অর্পণ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায়ই ক্ষতির সম্মুখীন হন ওই প্রবাসীরা। তাই প্রবাসীরা বিদেশে অবস্থান করেও যাতে নিশ্চিন্তে দেশে থাকা Property বা জমিজমা কেনার সময় সবকিছু নিজ চোখে দেখতে পারেন, সে লক্ষ্যে সরকারি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে শুধু প্রবাসীদের সুবিধার্থে Online Video Conference ব্যবস্থা চালু করতে হবে। Online Video Conference বা Virtual Testimony-এর মাধ্যমে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে যাতে দলিল রেজিস্ট্রি অফিসের সমস্ত কার্যক্রম দেখতে ও পড়তে পারেন, ক্রয়কৃত জমির দলিলের সঠিকতা ও দাতার স্বাক্ষর প্রভৃতি যাচাই করতে পারেন, তা স্বচক্ষে অবলোকন করে জমির ক্রয়কৃত মূল্য প্রতিনিধির মারফত বিক্রেতাকে নিশ্চিন্তে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
দফা-৩-এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
(ক) ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী নিজ দেশে এসে টাকা আত্মসাতের অপরাধে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তা প্রমাণ করতে পারলে PST আদালত যাতে প্রবাসীর প্রেরিত টাকা বা টাকার সমপরিমাণ সম্পদ, জমিজমা তার স্ত্রীর কাছ থেকে প্রবাসীকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে আদালতকে শক্তিশালী করতে হবে। আদালতের আদেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতের নির্দেশ মান্য করতে স্ত্রী ব্যর্থ হলে তৎস্থলে স্ত্রীকে ১৪ বছর কারাদণ্ড ভোগ করার বিধান রাখতে হবে।
দফা-৪-এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
কোনো প্রবাসী দেশে এসে চাঁদাবাজির শিকার হলে আসামি/আসামিদের বিরুদ্ধে PST আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আসামিদের বিরুদ্ধে ওই আদালত সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়ার বিধান রাখতে হবে। একইভাবে কোনো পুলিশ বা র্যাব সদস্য অথবা কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান এবং তাদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার পক্ষে প্রস্তাবনা রইল।
দফা-৫-এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
কোনো প্রবাসীকে নিজ দেশের বিমানবন্দরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা হয়রানি ও লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ PST আদালত কর্তৃক প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত আসামি/আসামিদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখতে হবে।
দফা-৬-এর পক্ষে মতামত ও প্রস্তাবনা
(ক) বাংলাদেশের কোনো নারী শ্রমিক বহির্বিশ্বের কোনো দেশে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতন বা খুনের শিকার হলে তা বাংলাদেশ সরকার অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অত্যাচারিত প্রবাসী নারী শ্রমিককে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। খুন হলে মৃত ব্যক্তির মরদেহ ত্বরিৎ গতিতে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে অবহিত করে দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ সরকারকে অটল থাকতে হবে।
(খ) কোনো প্রবাসী বহির্বিশ্বের কোনো দেশে আন্তর্জাতিক মানব পাচার দালাল চক্রের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে অথবা অন্য কোনো কারণে প্রবাসে কারাবন্দী হলে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে অবগত হওয়া মাত্রই ওই কারাবন্দী প্রবাসীকে উদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
PPA অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে PST আদালতে প্রবাসী কর্তৃক কোনো ফৌজদারি প্রকৃতির অভিযোগ গৃহীত হলে বিচার চলাকালীন সংশ্লিষ্ট আসামি/আসামিরা জামিনে মুক্ত থাকার অধিকার পাবে না।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী মোট ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। এই প্রবাসীদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হয়। প্রবাসীরা অর্থ পাঠিয়ে দেশের গতি সচল রাখতে সহায়তা করেন। তাই প্রবাসীদের সুরক্ষা দেওয়া দেশের দায়িত্ব। দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা পুরোপুরি প্রবাসীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রচলিত আইনের পাশাপাশি Probashi Protection Act নামে বিশেষ আইন অনুমোদন দেওয়া জরুরি, যা Probashi Special Tribunal দ্বারা বিচারিক কাজ পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, আইন প্রণেতাগণ এবং পররাষ্ট্র, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় বরাবর ১ কোটি ২০ লাখ প্রবাসীর পক্ষে নিবেদন করছি, প্রবাসীদের জানমালের সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করে দাবিকৃত ও প্রস্তাবিত Probashi Protection Act এবং Probashi Special Tribunal অনুমোদন করে তা আইনে রূপ দেওয়া হোক।
লেখক : আইনজীবী, নিউইয়র্ক।