ঠিকানা রিপোর্ট : নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটির পিপলএনটেক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ বলেছেন, পিপলএনটেক আটলান্টিক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাজার হাজার বাংলাদেশিকে অড জব ছেড়ে আইটি জবে ফিরিয়ে এনে উন্নত জীবন গড়তে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। গত ২৫ এপ্রিল পিপলএনটেক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আইটি জব সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ বলেন, সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি আটলান্টিক পাড়ি দিয়েছিলেন তা এখন আর স্বপ্ন নয়, পিপলএনটেক তার বাস্তব রূপ দিতে ইতোমধ্যে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ৫-৭ বছর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে আইটি ক্ষেত্রে কর্মরত ছিল বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিপ্রাপ্ত স্বল্প সংখ্যক বাংলাদেশি। কিন্তু যোগ্যতা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়াও যে আইটি জব পাওয়া সম্ভব তা প্রমাণ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পিপলএনটেক। তিনি বলেন, মাত্র চার মাসের ট্রেনিং শেষে বছরে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ডলার বেতনে পাঁচ হাজারের অধিক বাংলাদেশির চাকরির মাধ্যমে পুরনো ধ্যান-ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে তার এই প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি জনগণ অতীতে আইটির চাকরিতে পিছিয়ে ছিল শুধুমাত্র সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে। পিপলএনটেক সঠিক দিক-নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশীদেরকে পৌঁছে দিচ্ছে ছয় অংকের ডলার উপার্জনে। বর্তমানে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশি অনেকে এগিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একদিকে প্রতিটি বাংলাদেশিকে অড জবমুক্ত করা তার যেমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্টের ‘আমেরিকা ফাস্ট’ নীতি অনুসরণ করে পিপলএনটেক জব ট্রেনিং এবং জব প্লেসমেন্ট পদ্ধতিকে সময়োপযোগী করেছে। তাই বর্তমানে পিপলএনটেকের ট্রেনিং নিয়ে চাকরি পাওয়ার হার অতীতের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থী চাকরি পেত বর্তমানে তা ৪০ থেকে ৫০ জনে উন্নীত হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি গত মার্চ এবং এপ্রিল মাসে পিপলএনটেকের ট্রেনিং নিয়ে চাকরিপ্রাপ্তদের লিস্ট দেখিয়ে বলেন, গত দু মাসে পিপলএনটেকের মাধ্যমে আটলান্টিক সিটির পাঁচজন শিক্ষার্থী চাকরি পেয়েছে যারা দুই মাস আগেও ১২-১৫ ডলার বেতনে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, পিপলএনটেক শুধুমাত্র ডলারের বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না। সাথে সাথে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ একধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে পিপলএনটেক ‘এক মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবু হানিফ বলেন, পয়সা উপার্জনের পাশাপাশি স্বদেশীদের স্বপ্ন পূরণেও সহায়তা করতে চাই। এ জন্যে চলতি বছর মিলিয়ন ডলারের বৃত্তি ঘোষণা করছি। ২৫০ জন উদ্যমী বাংলাদেশি পাবেন এই সুযোগ। তিনি আরও বলেন, ৪ মাসের কোর্স বিনা ফি-তে শিখবেন এবং উচ্চ বেতনের চাকরির জন্যে প্রস্তুতি নিতে সম্পূর্ণ সহায়তা করবে পিপলএনটেক। এ বৃত্তির জন্যে ৭ মের মধ্যে আবেদন জানানোর অনুরোধ করেন সবাইকে। আবেদনে আগ্রহীদের অবশ্যই ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী এবং তথ্য-প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে কাজের পারমিট থাকতে হবে, ইংরেজিতে কথা বলার যোগ্যতা থাকতে হবে এবং আবেদকারিদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার হানিফ বলেন, এই আড়াইশ’ জনের কোর্সের জন্য মোট এক মিলিয়ন ডলার ফি লাগতো। সেটি তিনি নিচ্ছেন না। তিনি মেধাবী এবং উদ্যমী বাংলাদেশিরা অড জব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান।
পিপলএনটেক আটলান্টিক সিটি শাখার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব আটলান্টিক সিটির সভাপতি আকবর হোসাইনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ফরচুন ফাইভ হান্ড্রেড কোম্পানিতে কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষার্থী তানভীর আহমদ, মনির হোসেন, ফাতেমা রহমান, সালমা পারভিন এবং ফাতেমা ইয়াসমিন তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা বলেন, পিপলএনটেকের কারিকুলাম এবং ট্রেনিং পদ্ধতি সঠিকভাবে অবলম্বন করলে ছয় মাসের ট্রেনিং নিয়ে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ডলারের চাকরি পাওয়া এখন আর বিজ্ঞাপন নয় এখন বাস্তবতা। তারা আটলান্টিক সিটিতে পিপলএনটেকের ক্যাম্পাস খোলা রাখার মাধ্যমে তাদের সোনার হরিণ ধরার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য পিপলএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পাকিস্তান, ভারত, চীন, ম্যাসাডোনিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের ভর্তিচ্ছুরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাবুল বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির ট্রাস্টিবোর্ড চেয়ারম্যান আবদুর রফিক, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাহবুবুর রহমান চুন্নু, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব আটলান্টিক সিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন, বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব অব আটলান্টিক সিটির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ রহমান বাবুল, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এবং আটলান্টিক সিটি আলহেরা মসজিদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মো. ইকবাল হোসেন, আটলান্টিক সিটি রিপাবলিকান ক্লাবের সেক্রেটারি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং আটলান্টিক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত অফিসার সুমন মজুমদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আটলান্টিক সিটি পিপলএনটেকের প্রশিক্ষক মীর হোসাইনসহ আরও অনেকে।