আব্দুল কাইউম আনোয়ার :
এক.
বাংলাদেশিরা প্রবাসী হলেও মাতৃভূমির প্রতি মজ্জাগত টানকে ছাড়তে পারে না। কোনো পরিস্থিতিতে এক-দুই-তিন দশকেও যদি স্বদেশে প্রত্যাগমন করতে না পারে, তারপর পরিস্থিতির পালাবদলে যদি সুযোগ আসে ঘুরে আসার, তবে কালক্ষেপণ না করে যাত্রা করে জন্মভূমির স্পর্শলাভের আকাক্সক্ষায়। আমার বেলায় সেই আকাক্সক্ষা কাজ করে বলেই আমি বাসনার শিকার হই। বয়স ভারী হয়েছে, তবু প্রতি তিনশ পয়ষট্টি দিনের মাথায় অন্তত কদিনের জন্য হলেও ঘুরে আসি স্বদেশেÑবাংলাদেশে।
দুই.
এই তো মাত্র এক মাস আগে, মানে ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিলেটের শহরতলির বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। সেই অবস্থানকালে আত্মীয়স্বজন ব্যতিরেকে কিছু অনাত্মীয় সুশীল নাগরিকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ আসরে বসে বহু কিছু আলাপ-আলোচনা করেছি। প্রবাস থেকে পাড়ি জমিয়েছি, তাই স্বভাবতই উৎসুক হয়ে তারা জানতে চেয়েছেন আমার প্রবাসজীবনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা। শুধু যে আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক অবস্থা তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনীতির অবস্থাও।
তিন.
পরিবার প্রসঙ্গে তথ্য বিনিময়কালে আমি সর্বদা যা বলিÑদক্ষিণ এশীয় এক অধনী দেশ থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উন্নত দেশে অভিবাসিত হওয়ার প্রধান লক্ষ্য যদি হয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, তবে এটা মেনে নিতে হবে যে প্রাথমিক স্তরে দেহবল খাটিয়ে পরিবারের জন্য দুবেলা অন্ন সংস্থান করা এবং আত্মজ আত্মজাদের সুশিক্ষার বন্দোবস্ত করা। আল্লাহর দয়ায় আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে আমি আমার উভয় বাসনাকে চরিতার্থ করতে পেরেছি।
সামাজিকতার প্রসঙ্গে বলি, ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে যে সংকটটির মুখোমুখি হই, সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে তখনো বাংলাদেশি সমাজ গড়ে ওঠেনি। সমাজবিহীন জীবনে সামাজিকতার যেসব অঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশি কৃষ্টি সংস্কৃতির আদৌ কোনো লক্ষণ খুঁজে পাইনি। দিন নয়, মাসান্তরেও দু-চারজন বাংলাদেশি একত্রে বসে সুখ-দুঃখ বিনিময় হতো না। অথচ বর্তমানে এই নিউইয়র্কে লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যত্রতত্র মসজিদ-মন্দির নির্মিত হয়েছে, গড়ে উঠেছে হাটবাজার। তা ছাড়া সামাজিক অন্য সব অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্য সুশোভিত পার্টি হলও পরিচালিত হচ্ছে। আর আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা যার মর্যাদা নোবেল কমিটি ছাড়াও জাতিসংঘ বৈশ্বিক পর্যায়ে চালু করেছে। রবীন্দ্র-নজরুলের কর্ষিত এই বাংলা ভাষায় কেবল নিউইয়র্ক থেকেই এক ডজনের বেশি সাপ্তাহিকী প্রকাশিত হয়। সুতরাং বাংলাদেশি সমাজের কর্মতৎপরতা এখন যথেষ্ট বিস্তৃত বৈকি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি ঐতিহাসিকভাবে সবল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্মলাভ করেছি, কিন্তু অর্থনীতি বোঝার বয়স থেকে দেখে আসছি সেই মাইলফলকের সূত্র ধরে আজও এখানকার অর্থনীতি রাজকীয় কবজায় বিশ্ব অর্থনীতিকে পরিচালিত করে আসছে। মন্দা হয়েছে অনেকবার কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা কাটিয়ে উঠেছে। এ দেশে আয়ের উৎস অনেক। খনিজ, বনজ থেকে শুরু করে সকল প্রাকৃতিক অপ্রাকৃতিক সম্পদের অফুরান সমাহার এখানে। তা ছাড়া এখানে গুণীদের আদর হয় সবচেয়ে বেশি। তাই তো এখানে প্রতিদিন আবিষ্কার হচ্ছে উন্নত মানের সবকিছু।
এখানে রাজনীতির কাঠামো তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ সরে যাওয়ার পরে। প্রায় আড়াই শ বছর পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার, এখানকার রাজনীতির প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে আজ অবধি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু আছে। বড় দুই রাজনৈতিক দলÑডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান। বিরাট প্রতিযোগিতা চলে দুই দলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে। অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় দুই স্তরে আইনসভার নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হয়। যুক্তরাষ্ট্র একটি উপমহাদেশ, এর ৫০টি অঙ্গরাজ্য পরিচালিত হয় গভর্নরদের দ্বারা আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে তিনশ মিলিয়ন মানুষের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হয় প্রেসিডেন্টের অধীনে গঠিত সরকার দ্বারা। এত বড় এক রাষ্ট্র হলো যুক্তরাষ্ট্র। এর দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্টকে ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হয়। নইলে অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে যেকোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে দেশ ও জাতি।
চার.
যেহেতু স্বদেশকে দেখছি স্বদেশের মাটিতে বসে, তাই সেখানকার অতীত, বর্তমান অনেক কিছুই ভেসে ওঠে মনের ও চোখের পর্দায়। ১৯৪৮ থেকে একাত্তর এবং একাত্তর থেকে বর্তমান (অর্ধশতক) বাংলাদেশে কত উত্থান-পতন, কত পালাবদল স্বচক্ষে দেখে আসছি। কিছুটা ভুলে যাওয়ার পরও যেসব এখনো ভুলিনি, সেসবের পর্যালোচনা করি, আপেক্ষিকতায় তুলনা করি অতীত ও বর্তমানকে।
স্বাধীনতার পূর্বকাল, ১৯৬৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গে শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত নেতাদের একজন আমার বিভাগীয় প্রধান ড. মাজহারুল ইসলাম। তারই ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের ভেতরেই মিটিং-মিছিল চলছে। প্রায়ই ঢাকা থেকে তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ প্রমুখ ছাত্রনেতা এসে জোরালো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের সর্বত্র যেন সংগ্রামের আগুন জ্বলছে। পাক মিলিটারি ক্যাম্পাসের বাইরে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশিদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রান্ত হচ্ছে। সূর্যালোকিত এক সকালে আমরা কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী স্লোগানসহকারে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছি, সহসা কয়েকজন ছাত্র কারফিউ ভঙ্গ করে দেয়াল টপকে বেরিয়ে গেল রাজপথে। তা দেখে প্রক্টর বিপদ অনিবার্য ভেবে তিনিও বেরিয়ে গেলেন সেই ছাত্রদের ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু বিধি হলো বাম। পাক সেনাদের একটি গুলির আঘাতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার প্রথম শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুদ্দোহা। আমরা সবাই নির্বাক, হতভম্ব!
দিন গড়াল, মার্চ মাস এল। পহেলা তারিখ অনার্স ফাইনাল। পরীক্ষা শেষে হলে ফিরে রেডিও শুনে সবাই দিশেহারা। শেখ সাহেব ঘোষণা করেছেন, আজ থেকে দেশের সকল অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। ঘোষণা শুনে সকল ছাত্রছাত্রী নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেল। বিপত্তি ঘটল আমরা যারা পূর্ববঙ্গের তাদের বেলা। ফ্লাইট বন্ধ, ট্রেন চলছে অনিয়মিত। তবু যেতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ে, বাড়িতে। রাজশাহী থেকে ট্রেন এল সিরাজগঞ্জ ঘাটে। সেখানে প্রায় অভুক্ত থেকে পাঁচ দিনের মাথায় সিলেটের বাড়িতে এলাম।
বাড়িতে এসে পড়াশোনা নেই, বেকার সময় কাটছে। আন্দোলন চলছে। পঁচিশে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলেন। ছাব্বিশে মার্চ ভোর থেকে পাক সেনারা সরকারি সবকিছু জব্দ করে তাদের হাতে নিয়ে নিল। মার্শাল ল’ জারি হলো। পাক সেনারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে, নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি ও অত্যাচার করছে। সিলেট শহরে আমাদের বাড়িতেই পাকিদের প্রথম অভিযান। বাসার সবাই ছিলাম ভীতসন্ত্রস্ত। পরের দিন অতি সকালে বাসা ছেড়ে আমরা পালিয়েছিলাম গ্রামের বাড়িতে।
এপ্রিলের ১০ তারিখ, একশ মাইল হেঁটে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বর্ডার পেরিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এখন আর পেছন থেকে আর্মিদের নির্বিচারে ছোড়া গোলাবারুদ গায়ে এসে লাগবে না। দেশ থেকে আওয়ামী লীগের পাস না নিতে পারায় এক রাত বর্ডার থানার জেলের প্রকোষ্ঠে কয়েদি হয়ে কাটাতে হলো। পরের দিন ওসি সাহেবের দয়ায় পাস নিয়ে ট্রেনে চড়ে সোজা আসামের শিলচর। সেখানে চাচাদের বাড়ি এবং বড় শরণার্থী শিবির। এপ্রিলের শেষের দিকে শিলকুড়িতে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সময়ের হিসাবে নয় মাস কিন্তু দেশছাড়া, বাড়িছাড়া, কী এক অসহ্য যন্ত্রণা! এল সেই শুভদিন, ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ সাল। দেশে ফিরলাম। সব এলোমেলো। পড়াশোনা করে কী লাভ হবে, এই প্রশ্ন মনে। ভাঙা দেশ, গড়া কি এত সহজ? আমার মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানকে বেঁচে থাকতে হলে অন্য পথ খুঁজতে হবে। দুই মাস পর ভার্সিটি খুলে গেছে, আমি গিয়ে যোগ দিচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত গার্ডিয়ানদের হুকুম মানতে গিয়ে গেলাম ভার্সিটিতে। এক বছরের মাথায় এমএ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। মাস দুয়েক পর সিলেট মহিলা মহাবিদ্যালয়ে অস্থায়ী অধ্যাপকের চাকরিতে যোগদান করি। সেখানে যে বেতন, তা দিয়ে সিগারেট ও রিকশা ভাড়া চলে বটে কিন্তু পেট ভরে না। তাই তো অন্য পথের ধান্দা করতে হলো। দেড় বছরের মাথায় ভিজিটে গেলাম লন্ডনে। সেখানে থাকলাম আরও দুই বছর। সেখানে আইনিভাবে থাকার সুযোগ নেই জেনে নববিবাহিতা স্ত্রী ও শিশুপুত্রের কাছে ফিরে এলাম। চাকরি শুরু করলাম এক ট্রাভেল এজেন্সিতে পাবলিক রিলেশন্স অফিসার হিসেবে। উনআশিতে চাকরি নিয়ে গেলাম কুয়েতের এক আবাসিক হোটেলে রিসেপশন ম্যানেজার হিসেবে। সেখান থেকে সাতাশি সালের ডিসেম্বরে চলে আসি নিউইয়র্কে।
পাঁচ.
পৃথিবী বদলাচ্ছে, তার কক্ষপথের দিশা সে যদিও হারায়নি, কোনোদিন কিন্তু ভূপৃষ্ঠের আবহাওয়া থেকে শুরু করে আদি বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলোই লুপ্ত হয়ে গেছে। জীবজগতের বিশিষ্ট প্রাণী মানবশ্রেণি যদিও বিলুপ্ত হয়নি, তবে ডাইনোসরের মতো অতিকায় জীবও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
বাংলাদেশের রূপ বদলেছে। সত্তর-আশি এমনকি নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশকে খুঁজতে গেলে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। কোমরভাঙা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ অর্ধশতাব্দীর পালাবদলে যেন নতুন সূর্যকে হাতের মুঠোয় ধরতে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার মহান আদর্শে এগিয়ে যাচ্ছে স্বদেশ। আমরা স্বদেশিরা পরিস্থিতির বিবর্তনে কঠিন সত্যকেও অনেক সময় মূল্য দিই না। যদি ধরি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অবদান, সেকি বর্তমান বাংলাদেশে বিভাজিত রাজনীতিকে পাল্লায় তুলে মাপার সুযোগ আছে? আমার মনে হয় না। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী দল ও বিএনপি, তাদের মতাদর্শের ভিন্নতা দেখেশুনে গা শিউরে ওঠে। আমার নিজ বাড়িতেই সেই ভিন্নতার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখেছি। বাড়িতে এখন যারা রাজনীতি বোঝে, তারা প্রায় সবাই বিএনপির সমর্থক। দু-এক জন স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বও দেয়। বিস্মিত হই যখন তাদের সঙ্গে বসি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করি।
ছয়.
প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমার তৈরি নতুন ঘরের বৈঠক কোঠায় ঘর উদ্বোধনীর দিন থেকেই ১০ বাই ১২ ইঞ্চি ফ্রেমে বড় দেয়ালের মাঝামাঝি তিনটি ছবি টাঙিয়ে রেখেছি। মাঝামাঝি ছবিটি শেখ মুজিবুর রহমানের, বাম পাশে নেলসন ম্যান্ডেলা এবং ডান পাশে বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী। প্রথম দাওয়াতের দিন এই মাঝের ছবি নিয়ে বিপত্তির সৃষ্টি হলো। বিএনপিপন্থী ভাতিজা-ভাতিজি ও তাদের কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা (আমার নাতি-নাতনি) আমার ঘরে ঢুকেই স্লোগান দিয়ে উঠল, কেউ চাচা কেউ দাদা ডেকে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করল, দেয়ালে একি দেখছি? দেয়ালে মুজিবের ছবি কেন? তাদের প্রশ্নে আমি হতভম্ব। খানিকের জন্য আমি নির্বাক! আমার মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই। এতক্ষণে রাগ ও ঘৃণা আমার মুখমণ্ডলকে রক্তিম করে তুলেছে। আমি তাদেরকে প্রশ্ন করলামÑতোমরা কি বঙ্গবন্ধুকে চেনো না? তোমরা কি বাংলাদেশি? যদি বাংলাদেশি হও, বলোÑবাংলাদেশের জনক মানে পিতা কে? জবাব নেই কারও মুখে। আমার সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে, তোমরা যদি বাংলাদেশি হও আর তোমরা তোমাদের পিতাকে না চেনো, তাহলে তোমাদের পরিচয় কী? তোমরা যদি জেনেও বঙ্গবন্ধুকে না চেনার ভান করো, তাহলে তোমরা কি এ দেশের অবৈধ সন্তান হতে চাও?
প্রসঙ্গ সংক্ষেপ করি, রাজনীতির খাতিরে দেশ ও জাতির ইতিহাসকে বিকৃত কিংবা ভুল বোঝানো আন্তর্জাতিক সভ্য সমাজে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ জাতীয় অপরাধের জন্য দায়ী কিছু লোভী ও অদূরদর্শী নেতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দল গণতন্ত্রের প্রয়োজনে রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে-এটাই স্বাভাবিক কিন্তু জাতির জনকের ভূমিকা ও অবদানকে গামছার আড়ালে লুকিয়ে রেখে নগ্ন দেহে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমার জলে সিনান করছে দেখলে আমার মতো স্বদেশপ্রেমিকদের গাত্রদাহ বেড়ে যায়।
সাত.
পরিশেষে যা লিখে নিজের ও পাঠকদের চিত্তে শান্তি ও আশ্বাসের সুবাতাস বইয়ে দিতে চাই, তা হলো শুধু নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনই নন, বর্তমান আন্তর্জাতিক বিশ্বে যেসব সংস্থা বহুবিধ সূচকের মানদণ্ডে একটি রাষ্ট্রের উন্নতি যাচাই করে, বাংলাদেশ সেই মানদণ্ডে উতরে যাওয়ার পথে। বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের গর্ব করার দিন সমাসন্ন।