প্লেনের টিকেট আকাশচুম্বী : অনেকেই দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : করোনা মহামারি কমতে শুরু করেছে। এখন বাংলাদেশে যাওয়া-আসার ওপরও করোনার বিধিনিষেধ উঠে গেছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে ভ্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদ্্যাপন করতেও অনেকে দেশে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় টিকিট কেনার পরিমাণও বাড়ছে। এতে ট্রাভেল এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে, টিকিটের মূল্য ততই বাড়ছে। তবে টিকিটের মূল্য বাড়লেও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো তেমন লাভ করতে পারছে না। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, আগে নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যাওয়া-আসার টিকিট পাওয়া যেত ৮০০ থেকে ১৩০০ ডলারে। এখন সেই টিকিট ২২০০ ডলার বা তারও বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এখন সাধারণ সামার সেলে তেমন কোনো টিকিট নেই। সব কিনতে হচ্ছে আপ সেলে। আপ সেলের ক্ষেত্রে একটি ইকোনমি ক্লাসে বিভিন্ন দামের টিকিট থাকে। ইকোনমি টিকিট ছয়টি লেভেলে বিক্রি হয়। দেখা যায়, একজন যাত্রী ইকোনমি ক্লাসের টিকিট ৮০০ ডলারে কিনেছেন, অন্য যাত্রী সময়ের ব্যবধানে একই টিকিট ১২০০ ডলারে কিনেছেন। কারণ, যারা আগে টিকিট কিনে রেখেছেন, তারা লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আমরিশিয়ান ট্রাভেলসের প্রধান ফেরদৌসী বেগম বলেন, এখন টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। ২২০০-২৩০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। শিগগিরই টিকিটের দাম কমারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এয়ারলাইন্সগুলো গত দুই বছর ব্যবসা করতে পারেনি। এ কারণে এখন দাম বাড়িয়েছে। গত ১০ বছরেও এমনটা দেখা যায়নি। তাই যারা দেশে যেতে চান, তাদের উচিত কমপক্ষে ছয় মাস আগে ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে টিকিট কিনে রাখা। তবে নন-রিফান্ডেবল টিকিট না কেনাই ভালো। দুটি এয়ারলাইন্সে রিফান্ডেবল টিকিট পাওয়া যায়। যারা আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশে যেতে চান, তারা এখনই টিকিট কিনে রাখতে পারেন।
ফেমাস ট্রাভেল অ্যান্ড হলিডে ইনকের সাইফ ইসলাম বলেন, এখন যারা দেশে যাচ্ছেন, তাদেরকে করোনার কোনো টেস্ট করাতে হচ্ছে না। কেবল ভ্যাকসিন কার্ড থাকলেই হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ করলেই হবে। এবার ঈদ উপলক্ষে অনেকেই দেশে যাচ্ছেন। কিন্তু টিকিটের দাম বেশ চড়া। এয়ারলাইন্সে এ বছর সামার সেল বলে কোনো সেল নেই। সবই নরমাল প্রাইস এবং হাইপ্রাইস। আগে এই টিকিট ১০০০-১৪০০ ডলারের মধ্যে পাওয়া যেত, এখন আর সেই দামে টিকিট মিলছে না। তাই অনেকে দেশে যাওয়া বাতিল করছেন।
বাংলা ট্রাভেলসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহম্মদ বি হোসেন (বেলাল) বলেন, আগে যেখানে ১১০০-১২০০ ডলারে টিকিট পাওয়া যেত, এখন সেই টিকিট প্রায় ডাবল হয়ে গেছে। টিকিটের দাম বাড়লেও আমাদের তেমন কোনো লাভ নেই। কারণ, আমরা কমিশন পাই। টিকিট কম দামে কিনলেও যে কমিশন পাব, বেশি দামে কিনলেও একই কমিশন পাব। আমরা সব সময় গ্রাহকদের বলি, বাড়ি যেতে চাইলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে টিকিট কিনতে। যারা আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে যেতে চান, তারা টার্কিশ এয়ারলাইন্সে যেতে চাইলে এখন ৮৫০ ডলারে টিকিট কিনতে পারছেন। কিন্তু এই টিকিটের দামও বেড়ে যেতে পারে।
বাজেটে না কুলানোর কারণে অনেকে যাত্রা বাতিল করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের বিশেষ প্রয়োজন, তারা যাচ্ছেনই। যারা কেবল বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, দাম বাড়ায় তারা দেশে যাওয়া বাতিল করতে পারেন।