ফান্ড নিয়ে কংগ্রেসম্যান প্রার্থী মিজান চৌধুরীর পাশে অনেকেই

ঠিকানা রিপোর্ট : নিউইয়র্ক কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক-৫-এর প্রার্থী বাংলাদেশি মিজান চৌধুরী এখন তার প্রচার-প্রচারণা নিয়ে মহাব্যস্ত। সেই সঙ্গে চলছে ফান্ড রাইজিংও। নির্বাচনে তার যে অর্থ ব্যয় হবে, তার একটি বড় অংশ সংগ্রহ করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
গত ১২ মে, শনিবার, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত জ্যামাইকার হিলসাইডে মিরিচ রেস্টুরেন্টে ‘ফ্রেন্ডস অব মিজান’-এর ব্যানারে ফান্ড রাইজিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় আগতরা একটি ফরম ফিলাপ করে ক্রেডিট কার্ড নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য দিয়ে তার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। এ জন্য অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও ফান্ডদাতাদের ধন্যবাদ জানান মিজান চৌধুরী ও এটর্নি সোমা সাঈদ।
যারা মিজান চৌধুরীর পাশে থাকতে চান ও আর্থিক সহায়তা করতে চান তাদেরকে গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্নভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কমিউনিটির অনেকেই এগিয়ে আসছেন।
যাঁরা সহযোগিতা করছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- শাহ নেওয়াজ, আহসান হাবীব, আতাউর রহমান সেলিম, খাজা মিজান, গিয়াস আহমেদ, বাহালুল উজ্জ্বল, ফাহাদ সোলায়মান, মইনুল ইসলাম, ফারুক হোসেন মজুমদার, কাজী হোসেন আজম, শাহানা বেগম, কাজী এ হোসেন নয়ন, নাসির আলী খান পল, মোহম্মদ আলী, নুরুল হক, ফখরুল ইসলাম খান, তোফাজ্জল করিম, মঞ্জুর চৌধুরী, মনির হোসেন, কামরুল আলম , ফরহাদ তালুকদার, এমএ হোসেন সেলিম, মোহম্মদ তায়েবুর রহমান, সরাফ সরকার, সাইফুল ইসলাম, আবু নাসের, এবিএম ওসমান গণি, মিসবাহ আবদীন, মজিবুর রহমান, হুমায়ুন খান, আলী ইমাম সরকার, শাহজাহান শেখ, কাজী আজহারুল হক মিলন, হায়দার আলী, জুয়েল চৌধুরী, সাইফুল্লাহ ভূঁইয়া, ডা. জুন্নুন চৌধুরী, ডা. মোহম্মদ রহমান, ডা. আনাম সাইদ, আহসান হাবীব, ডা. বর্ণালী হাসান, আদনান সাইদ, শেখ গালিব রহমান প্রমুখ। এছাড়াও অনেকেই তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মিজান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। তিনি ১৯৯৭ সালে, মাত্র ২৩ বছর বয়সে, অনেক আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। অন্যান্য ইমিগ্র্যান্টদের মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্র আসার পর অনেক ‘অড জব’ করেছেন। এমন কি এক সময় তিনি ট্রাম্প টাওয়ারে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পকে ফুড সার্ভ করেছেন। উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরো ভালো কিছু করার কথা ভাবছিলেন। বাংলাদেশে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের সাথে সাথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দিনে কাজ এবং রাতের শিফটে টেকনোলজি স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। শিক্ষা জীবনে তিনি মাইক্রোসফ্ট ও সিসকো থেকে টেকনোলজিতে অনেক সনদপ্রাপ্ত। তিনি সিসকোর সিসিআইই (CCIE) সনদপ্রাপ্ত। দীর্ঘ ১৮ বছর আইটি প্রফেশনে তিনি অনেক ফরচুন কোম্পানি, যেমন- ভ্যারাইজন, জনসন এন্ড জনসন, বোদাফোন, গভর্মেন্ট কনসালট্যান্ট, এনওয়াইসিবি ব্যাংক প্রভৃতিতে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের সবচেয়ে বড় এম্প্রায়ার নর্থ ওয়েল হেলথ-এর টেকনোলজি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


মিজান চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকাগুলো হচ্ছে-ফার রকওয়ে, ওজনপার্ক, রিচমন্ড হিল, জ্যামাইকা, হলিস, জ্যামাইকা এস্টেট, কুইন্স ভিলেজ, রোজডেল ভিলেজ, ভ্যালিস্ট্রিম ও এলমন্ড (কংগ্রেশন্যাল প্রার্থী হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট-৫)।
মিজান চৌধুরী বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি নাগরিকের স্বার্থে লড়তে চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের ইয়্যুথ এবং কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৫-এর জন্য আমার লড়াই।
তিনি বলেন, হাউজ অব কংগ্রেসে আমাদের নিজেদের প্রতিনিধি অত্যন্ত জরুরি। কংগ্রেসে অনেক সমস্যা রয়েছে, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। এজন্য আমাদেরকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। আগামী দিনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধিও জরুরি। ইউএস সরকারকে জনগণের পাশে নিয়ে আসতে হবে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি জানি, এ লক্ষ্যে আমাদের কি কি করা দরকার। বিশেষ করে জব, ইনকাম, হেলথ কেয়ার এবং শিক্ষা সবার স্বার্থেই অনেক জরুরি। আমি চাই কংগ্রেশন্যাল প্রার্থী হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট-৫-এ একটি টেকনোলজি পার্ক নিয়ে আসতে। আমি একজন টেকনোলজিস্ট, আমি টেকনোলজি নিয়ে অনেক কাজ করতে পারবো। যার মাধ্যমে অনেক কাজ জ্যামাইকায় নিয়ে আসা যাবে। এছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেক ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমি একজন চ্যালেঞ্জার হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি অনেক আশা ও প্রেরণা নিয়ে ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশি-আমেরিকান, ইন্দো-ক্যারেবিয়ান, আফ্রিকান-আমেরিকান, ইন্ডিয়ান-আমেরিকান, পাকিস্তানি-আমেরিকান সবাই আমাকে সমর্থন করছেন।
মিজান চৌধুরী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি-আমেরিকানরা আমাকে অনেকভাবেই সাহায্য করতে পারেন। যারা উৎসাহী, তারা ভলেন্টিয়ার হিসেবে সাহায্য করতে পারেন এবং ক্যাম্পেইনের জন্য ডোনেশন করতে পারেন। আপনারা তো জানেন, নির্বাচনী কাম্পেইন পরিচালনা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। দয়া করে আমাদের ওয়েব সাইট (www.mizan4congress.com) এবং ফেসবুক ভিজিট করবেন। আপনাদের যেকোন অনুষ্ঠানে আমাকে জানাবেন এবং আপনার প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেবেন।
আমি কুইন্স কাউন্টির ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন অ্যাক্টিভ কর্মী। এলানয়ের রুজভেল্ট ডেমোক্রেটিক ক্লাব, কমিউনিটি বোর্ড-১৩, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিনের সাউথ এশিয়ান এডভাইজারি কমিটির অ্যাক্টিভ সদস্য। আমি ইনফরমালি অনেক লোকাল ও স্টেট অফিসিয়ালদের সাথে জড়িত থেকে কমিউনিটি তথা নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন, নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান মেয়র মি. বিল ডি ব্লাজিও’র নির্বাচনী প্রচারণায় একজন গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় কর্মী ছিলাম। আমি একজন আন্ট্রাপোনর বিজনেসম্যান এবং কুইন্স চেম্বারর্স এন্ড কমার্সের সক্রিয় সদস্য। আমার অনেক সৌভাগ্য হয়েছে কুইন্স চেম্বার অব কমার্সের অনেক অনুষ্ঠান আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিরচ-এ হোস্ট করতে পেরে। আমি একজন টেকনোলজি লিডার। আমার অনেক সৌভাগ্য হয়েছে লোকাল এবং গ্লোবাল টেকনোলজি গ্রুপকে ম্যানেজ করা। আমি মনে করি, এ সবকিছুই আমার লিডারশিপ কোয়ালিটির অংশ।
তিনি আরো বলেনম আমার শিক্ষক বাবা সবসময় আমাকে বলতেন- ‘শিক্ষাই সাফল্যের চাবিকাঠি।’ তিনি সবসময় বলতেন- ‘তোমার শিক্ষা কেউ কোনোদিন নিয়ে যেতে পারবে না।’ আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবাওে জন্ম নিয়ে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করার সুযোগ করে নেই। পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ১৬ বছর বয়সে চাচার বাড়িতে রুমমেটের সাথে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডরমে থেকেছি। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, তখন আমার বাবা আমাকে মাসে মাত্র এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মতো অর্থ দিতেন (৯০-এর দশকে আনুমানিক ২০ ডলার)। কারণ কষ্টের সংসারে তিনি এ অর্থই আমায় দিতে পারতেন। মাসের ১৫/২০ তারিখের মধ্যেই সেই অর্থ শেষ হয়ে যেতো। তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু খোকন আমাকে ঋণ দিয়ে সাহায্য করতো। দূর্ভাগ্য, আমি যুক্তরাষ্ট্র আসার কয়েক বছর পর আমার সেই বন্ধুটি এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। আমি জীবনে কোনদিনও তার আন্তরিক সহযোগিতার কথা ভুলতে পারবো না। আমার মনে আছে, কোন কোন দিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে শুধুমাত্র ডাল-ভাত খেতে পারতাম। কারণ ডাল ছিলো ফ্রি। আমি কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ভুলতে পারবো না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক মজা ও কষ্ট হয়েছে। আমি আমার সংগ্রামী জীবনের মধ্যেই লেখাপড়া শেষ করেছি। এতো সংগ্রামের মধ্যে আমি চাইলে লেখাপড়া নাও করতে পারতাম। আমি প্রবাস জীবনেও অনেক কষ্টের মধ্যেও লেখাপড়া করেছি। তাই সব সময় সবাইকে বলি- ‘তোমার বর্তমান কিভাবে যাচ্ছে, এটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, এটা চিন্তা করো যে, তুমি ভবিষ্যতে কোথায় যাচ্ছো।’ মনে রাখতে হবে, অন্ধকারের পরেই আলো আসবে। কোনদিন থেমে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের একটাই জীবন, এই জীবনকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে। ছোট মনমানসিকতা থেকে দূরে থাকতে হবে। ছোট মনের মানুষ কখনোই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না এবং তারা কাউকে এগিয়ে যেতেও দেয় না।


আমাদের গোল হলো- প্রাইমারি নির্বাচনের ব্যালটে আমার নাম যোগ করা। আমার সাথে খুবই ভালো একটি টিম কাজ করছে। আমাদের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার, ক্যাম্পেইেন স্ট্যাটেজিস, কোর টিম এবং ভলানটিয়ার- সবাই খুবই উচ্ছ্বাসিত। আমরা অনেক খুশি যে, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাদের সাথে কাজ করছে এবং আগামী দিনেও অনেক জোরালোভাবে কাজ করবে। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো, আমাদের বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিকে মূলধারারর রাজনীতিতে আরো শক্তিশালী করে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া।
মিজান চৌধুরী আরো বলেন, আমার গভীর প্রত্যাশা হলো- আপনি যদি ডিস্ট্রিক্ট-৫-এর বাসিন্দা হন, তা হলে দয়া করে আমাকে সমর্থন করুন এবং ২৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রাইমারি নির্বাচনে আমাকে ভোট দিন। আপনার পাড়া-প্রতিবেশিকে এ ভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করুন। আমাদের ক্যাম্পেইনে ভলান্টিয়ার হিসেবে সাহায্য করুন। আমার ক্যাম্পেইনে আর্থিকভাবে সাহায্য করে আমাকে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়যুক্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। আমি মনে করি, এ নির্বাচনে আমরা সবাই নির্বাচন করছি। আমি আপনাদেরই লোক। আমি জয়ী হওয়া মানে, বাংলাদেশি কমিউনিটির জয় হওয়া।