ফুটবল কিংবদন্তি পেলে আর নেই

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলে আর নেই। ৮২ বছর বয়সে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। ২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত একটায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নভেম্বরের শেষ দিকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ায় সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা কাজ না করায় তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল।

হাসপাতালেই পরিবারের সঙ্গে পেলে বড়দিন কাটিয়েছেন। ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিজের শারীরিক অবস্থার আপডেট ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। চিকিৎসা কাজ করছে না জানার পরও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন ভক্তদের।

১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী এদসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো বিশ্বজুড়ে পরিচিত পেলে নামেই।

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাসোয়েস শহরে জন্ম তার। ছেলেবেলা থেকেই অন্যসব ব্রাজিলিয়ানের মতো তার ঝোঁক ছিল ফুটবলের দিকে। সেই ঝোঁককে মাঠে পায়ের জাদুতে পরিণত করতে খুব বেশি সময় নেননি পেলে। সাও পাওলোর শহর বাউরুর স্থানীয় ক্লাবে খেলতে খেলতে নজর কাড়েন কোচের। কোচ তাকে নিয়ে যান বিখ্যাত সান্তোস ক্লাবে। সেখান থেকেই শুরু। ১৬ বছর বয়সে সান্তোসের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়।

এর পরের গল্পটা শুধুই পেলের জয়রথের। তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। করেছেন হাজারের ওপরে গোল। বর্তমান ব্রাজিলের সমার্থক ‘জোগা বোনিতো’ বা সুন্দর খেলার প্রবর্তক ছিলেন তিনি।

১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ের পর সিদ্ধান্ত নেন ফুটবল ছাড়ার। পরের বছর রিও দে জেনেইরোতে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে খেলেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

ক্লাব ক্যারিয়ারে সান্তসের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। এরপর আমেরিকার লিগে নিউইয়র্ক কসমস দলের হয়ে কিছুদিন খেলেন। ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর কসমসের হয়ে সান্তোসের বিপক্ষে খেলেন শেষ ম্যাচ।

১২৭৯ গোল এসেছে তার পা থেকে। যা এখন পর্যন্ত পেশাদার ফুটবলে সর্বোচ্চ। সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল ও বিশ্বকাপ জয় এখনো রেকর্ডের পাতায়।

অবসরের পর ব্রাজিল দল তো বটেই, বিশ্বসেরা সব দল ও খেলোয়াড়ের পাশে ছিলেন তিনি। বহুবার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তার পরের প্রজন্মের সেরা মিশেল প্লাতিনি, মার্কো ফন বাস্তেন থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠত্বে তার প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডিয়েগো ম্যারাডোনাকেও।

হালের মেসি, নেইমার, রোনালদো, এমবাপ্পেরাও বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগের আগে পেয়েছেন পেলের শুভেচ্ছা। খেলোয়াড় কিংবা দল নয়, ফুটবলকেই ভালোবাসতেন পেলে। আর তার খেলা দেখেই বিশ্বের কোটি ভক্ত প্রেমে পড়েছে ফুটবলের। তার বিদায়ে শোকস্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব। প্রিয় ফুটবল সম্রাটের জন্য সবার চোখে জল।

কয়েক বছর ধরেই ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন পেলে। গত বছর তার কোলন টিউমারও ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত তাকে হার মানতেই হলো। বিদায় নিলেন তিন বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার, যাকে পুরো বিশ্ব ‘এল রে’ বা সম্রাট নামেই চেনে।

‘ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরিবোর্ডের বিচারে পেলে বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার। তবে ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট গিয়েছিল আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার পক্ষে। ফিফা শেষ পর্যন্ত যুগ্মভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে দুজনকেই।

ম্যারাডোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে আচমকাই না ফেরার দেশে পাড়ি দেন। এবার পেলেকেও হারাল বিশ্ব।

ঠিকানা/এনআই