শেখ আখতার উল ইসলাম
ভাদেশ্বর বাংলাদেশের একটি গ্রামের নাম। আর নাগেশ্বর সকল ফুলের সেরা একটি ফুল। ভাদেশ্বর গ্রামের নাম বললে উপজেলা বা জেলার নাম বলতে হয়না। আর নাগেশ্বর যার সৌরভ স্বয়ং ঈশ্বর প্রদত্ত যার কোন তুলনা হয়না। অভিভক্ত ভারতবর্ষে অর্ধ ডজন খান বাহাদূর আর বহুল সংখ্যক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও কলকাতার খিদির পুরের জাহাজ ঘাঠ সহ পশ্চিম বঙ্গ আর আসাম প্রদেশ ছিল এই ভাদেশ্বরীদের নিয়ন্ত্রণে। উকিল, মুক্তার, ডাক্তার, অধ্যাপক, আমলা, কামলা ছাড়াও ভারত বর্ষের রাজনীতির ময়দানে ও ছিল ভাদেশ্বরের দাপট। ভাদেশ্বরের আব্দুল মতিন চৌধুরী (কলা মিয়া ) ছিলেন আসামের প্রভাবশালী মন্ত্রী। পাকিস্তানের জনক কারয়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দক্ষিণ হস্ত আব্দুল মতিন চৌধুরী ছিলেন মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।তিনি আজ শুয়ে আছেন পাকিস্তানের করাচি শহরে। এই গ্রামের সেতারা-ই- পাকিস্তান খেতাবধারী খান বাহাদূর মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম সেটেলমেন্ট বিভাগের প্রধান এবং ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর। তার নেতৃত্বেই ঢাকায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় জালালাবাদ এসোসিয়েশন। আর এই ভাদেশ্বরের অন্ধকবি আরজুমন্দ আলীই হলেন উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক। তার বিখ্যাত উপন্যাস- ‘প্রেমদর্পন’ মুসলিম সাহিত্যকেন্দ্র থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়ে বেশ অলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সাথে জড়িত আপ্তাব আলী বীর উত্তম- বীর বিক্রম সহ অসংখ্য বীর যোদ্ধা আজ ও ভাদেশ্বরের পূণ্যভূমিতে রয়েছেন শায়িত। তবে এত সব সুনামের মূল কেন্দ্রে রয়েছে যে প্রতিষ্ঠান তার নাম খান বাহাদূর নাছির উদ্দিন হাইস্কুল ও কলেজ। ১৯১৯ ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯২১ সালে আসাম প্রদেশের স্থায়ী অনুমোদন প্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকেই একে একে বেরিয়ে আসতে থাকেন আই, সি, এস,/ সি, এস, পি, উকিল, মুক্তার, ডাক্তার, অধ্যাপক সহ বিপুল সংখ্যক সামরিক-বেসামরিক আমলা কামলা। ঢাকার প্রথম বিভাগীয় কমিশনার মরহুম গিয়াস উদ্দিন আহমদ, যার চার ছেলে ফারুক আহমদ চৌধুরী, ইনাম আহমদ চৌধুরী, মারুফ আহমদ চৌধুরী, ইফতেখার আহমদ চৌধুরী ছিলেন সুপিরিয়র সার্ভিসের সদস্য। আর তার মেয়ে জামাই ছিলেন ফখর উদ্দিন আহমদ সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রগণ্যতার কারণে একসময় একটি প্রচলিত প্রবাদ- ‘ফুল ভাল নাগেশ্বর আর কইন্যা ভাল ভাদেশ্বর’ যে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে অর্জিত হয়েছিল সেই প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ পালিত হবে আগামী ২০১৯ সালের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর।
ভাদেশ্বর তার নিজ ভৌগলিক সীমা রেখা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ও স্থান করে নিয়েছে। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই ভাদেশ্বরের মানুষ বসতি গড়ে তুলেছে। নিউজার্সির প্যাটার্সনে এক সময় কলকাতা থেকে জাহাজে চড়ে এসে বসতি গড়েছিলেন ভাদেশ্বরের মরহুম হবিব আলীসহ আরও অনেকে। আর নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে ব্যবসা স্থাপনের সাথে সাথে প্রথম মসজিদ- ‘মদিনা’ মসজিদের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন ভাদেশ্বরের আলহাজ্ব মনির উদ্দিন ভ্রাতৃবৃন্দ। আমেরিকার মাটিতে আজ হাজার হাজার ভাদেশ্বরবাসী স্থায়ী নিবাস গেড়েছেন। আমেরিকার এমন কোন রাজ্য নেই যেখানে ভাদেশ্বরের মানুষ নেই।আর সেই আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের লংআইল্যান্ডের উডবারীর বিখ্যাত অপরূপ সুন্দর ক্রেস্ট হলো কান্ট্রি ক্লাবে সম্প্রতি বেশ জাকজমকের সাথেই বিয়ে হলো ভাদেশ্বরেরই এক প্রকৌশলী কন্যা শেখ তাহসিনা ইসলামের।
ভাদেশ্বরের সৌরভ আর গৌরব এর প্রাণকেন্দ্র ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন হাইস্কুল ও কলেজের শতবর্ষ উদযাপনের তোড়-জোড় এবার শুরু হয়েছে। প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠ যা দেশে-বিদেশে ভাদেশ্বরবাসিকে পরিচিত করে তুলেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমেরিকায় অবস্থানরত প্রবাসী ভাদেশ্বরবাসীসহ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে আগামী ২০ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক এর এস্টোরিয়ার বৈশাখী রেস্টুরেন্টে এক মিলন মেলা বসবে। সূদুর বাংলাদেশ থেকে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন এসেছেন- আরো আসছেন। আগামী ২০১৯ সনের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ভাদেশ্বরে স্কুল প্রাঙ্গণে মূল অনুষ্ঠান উদযাপনের মাধ্যমে যার সমাপ্তি ঘটবে।
লেখক : আইনবিদ ও রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা উদযাপন পরিষদ।
নিউইয়র্ক।