ফেইসবুক লাভ

(নাম, স্থান, কাল, পাত্র কাল্পনিক। কারও জীবনের সঙ্গে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়)

ফ্রান্সিস মানিক ফলিয়া :

রাতে ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারছিলাম প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে। জানালা হয়তো একটু ওঠানো ছিল, তাই বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সকালে উঠে দেখি মুষলধারে বৃষ্টি, পাকা পাতাগুলো সব রাস্তায়, কোনো লোকজন নেই রাস্তায়, অবশ্য এখন থাকার কথাও নয়। অফিস আওয়ার শেষ, এখন বাজে সকাল পৌনে দশটা। প্রতিদিনের মতো আজও একদম জানালার সঙ্গে লাগোয়া বিছানার ওপর আসন গেড়ে বসে তমাল। রাস্তার পরই খেলার মাঠ, পাশে কেজি স্কুল। এটা তমালের প্রাত্যহিক রুটিন। বৃষ্টি কিছুটা কমবে, তবে সারা দিন কমবেশি বৃষ্টি হবে আজ। বুঝতে পারে, মন খারাপের দিন আজ। খারাপটাকে পাত্তা না দিয়ে ঝটপট উঠে সোজা বাথরুমে চলে যায়। সকালের নাশতায় এক কাপ কফি সঙ্গে দেশি বাঙালি গ্রোসারি থেকে দেশি পরোটা আর একটা ডিম পোঁচ। এরপর আবার সিগারেট ধরিয়ে জানালার পাশে বসতে হবে। কানে হেডফোন লাগানো থাকবে, ফোনে গান চলতে থাকবে আর হবে দেশে-বিদেশে একটার পর একটা ফোন। যখন ফোনে কথা হবে না, তখন গান শোনা আবার কল এলে কথা বলা, কথা শেষ হলে আবার গান শোনা। এ রকম রুটিন করে সারা দিনের একটা ছক তৈরি করে ফেলে।

তমাল। পুরো নাম তমাল মৃধা। কানেকটিকাট স্টেটে ম্যানচেস্টারে থাকে। মাত্র দুই বছর হয় আমেরিকায় আগমন। ওর স্ত্রী হ্যাপি চাকরিজীবী। একটা কার কোম্পানিতে চাকরি করে। প্যান্ডামিকে লকডাউন থাকার পরও হ্যাপি কাজে গিয়েছে। ওদের বন্ধ ছিল না। তমাল কাজ করত একটা ফাস্টফুডের দোকানে। প্যান্ডামিক শুরু হওয়ার এক মাস পরই অর্থাৎ এপ্রিল ২০২০ তেই ওদের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে এখন অবধি ঘরে বসে, এখন ডিসেম্বর মাস চলছে। প্রতিদিন ও বাইরে যায়, তবে ঘরে থাকার নব্বই ভাগ সময়ই ওর বিছানার ওপর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা আর একটার পর একটা সিগারেট টানা। হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে গান শোনা আর বাংলাদেশে কথা বলা।

একই নেইবারহুডে থাকার দরুন একদিন এক বাঙালি গ্রোসারিতে পরিচয়, বছরখানেক হবে। বন্ধুবৎসল হাসিখুশি, দেখলে বোঝা যায় কষ্ট দমবন্ধ করে লুকিয়ে রাখতে জানে। দেখতে হ্যান্ডসাম, বয়স একটু বেশি, পঁয়ত্রিশ হবে। আমার তুলনায় কম। প্রথম দিন কথা বলার পর থেকেই রাস্তায় মাঝেসাজে দেখা হলেই সালাম দিত। এখানে কিছুদিন যাওয়ার পর মনে হলো ছেলেটা মিশতে চায়। তার পর থেকেই ধীরে ধীরে ওকে শুধু ছোট ভাই হিসেবে আপন করে নেওয়া। আসলে ওর কথা বলার ইচ্ছা ও কাছে আসতে চাওয়া দেখে মনে হতো, ও কিছু বলতে চায়। তাই ভাবলাম, ওর কাছের সঙ্গী হয়ে যদি ওর মনের কষ্ট দূর করতে পারি, তবে ক্ষতি কী।

কিছুদিন কথাবার্তা, মেলামেশা করার পর একদিন বিকেলে ওর কাছ থেকে ফোন পেলাম। কুশলাদি বিনিময় করার পর বলল, বড় ভাই একটা বিষয় নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। এ-পাশ থেকে আমি বললাম, বল, কী বলবি। ও ইতস্তত করতে লাগল, আমি বললাম, কিরে বল, কী বলবি। ও বলল, না তেমন কিছু নয়, এই একটু পারিবারিক বিষয়। আমি ওকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, ঠিক আছে, অসুবিধা নেই, সময় নে, দেখা হলে তখন না হয় বলিস। ও যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, বলল, ঠিক আছে।
মফস্বলের ছেলে, প্রচণ্ড রকমের একটা উচ্চাভিলাষী মন। আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে স্মার্টফোন হাতে পৃথিবী হাতের নাগালে। আরো আছে ফেসবুক। যার কল্যাণে খুঁজে পাওয়া যায় হারানো জনকে, আবার নতুনের সঙ্গে করা যায় বন্ধুত্ব। মাথায় ভূত চড়ে বসে তমালের। সারাক্ষণ ফেসবুকে ডুবে থেকে ইউরোপ, আমেরিকায় থাকা মেয়েদের খোঁজা। লাগামহীনভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল। মেসেঞ্জারে হ্যালো বলতে বলতে একদিন হ্যাপির কাছ থেকে উত্তর আসে, হ্যালো। কিছুদিন পর শুরু হয় মেসেঞ্জারে কথা বলা। ভালো লাগা থেকে হয়ে যায় ভালোবাসা। এভাবে বছরখানেক চলার পর হ্যাপি একদিন বাংলাদেশে গিয়ে হাজির। অফিসে ওকে দেখে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খায় তমাল। ওর থেকে কম করে হলেও দশ বছরের বড়। সামলে নিতে দু-তিন দিন সময় নেয়। পরক্ষণে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয়, আমিও তো আমেরিকা থাকার জন্য একের পর এক মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। যা-ই থাকুক কপালে, হ্যাপির সঙ্গে কোর্ট ম্যারেজ করে। তার এক বছর পরে ও ওর স্বপ্নের দেশ আমেরিকার কানেকটিকাট স্টেটে হ্যাপির বাসায়।

বাঙালি মিষ্টান্ন ভান্ডারে বসে চা, শিঙাড়া খেতে খেতে ওর কথা শুনছিলাম। আমি আবার খুব গরম চা খাই, তাই আমার কাপ শেষ, ও দেখলাম এক চুমুকও নিল না। বললাম, চা’টা গরম থাকতে শেষ কর। হু, বলে চুপচাপ চা শেষ করে আমরা বের হয়ে এলাম। বাইরে এসে ও সিগারেট ধরাল, উদাসভাবে বেশ জোরে কয়েকটা টান দিল। মনে হলো, এখানেই শেষ নয়। পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম, চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

এ পর্যন্ত কথা হওয়ার পর আমাদের দোরগোড়ায় করোনাভাইরাস এসে হাজির। আমেরিকায় মার্চের পনেরো তারিখ থেকে লোকজনের মাঝে বেশ সতর্কতা দেখা যায়। মার্চের শেষ থেকে লকডাউন দিয়ে দেয়। সবার কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় আরেক জীবন। প্রথম এক মাস শুধু ঘর আর গ্রোসারি, প্রয়োজন হলে সপ্তাহে এক দিন বাইরে যাওয়া। অন্যথায় রাত-দিন মানুষ গৃহবন্দী। ফোনে কথা হয়, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় কম।

একসময় লকডাউন শিথিল হয় কিন্তু আশপাশে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সবার কাজের জায়গা বন্ধ। তমাল যেখানে কাজ করত, সেখানেও একই অবস্থা। এই অবস্থায় মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আন-এমপ্লয়মেন্ট হয়ে বসে আছে। প্রতি সপ্তাহে সবার একটাই কাজÑযার যার দিন এবং সময় অনুসারে আন-এমপ্লয়মেন্ট ক্লেম সার্টিফাই করা। এ রকম এক বিকেলে ফোনটা বেজে ওঠে, বড় ভাই বলে সালাম দেওয়ার পর বলে, বড় ভাই বের হবেন নাকি? আমি বললাম, বের হব, চলে আয় স্কুলের মাঠে, বেঞ্চ আছে বসা যাবে।
ও বলল, ঠিক আছে ভাই, আমি আসছি। সেদিন দুজনে অনেক কথা বললাম। বউয়ের বদৌলতে বিয়ের এক বছরের মাথায় তো আমেরিকায় আসা। এখানে যে আরো অনেক চমক ছিল, তা ঘূণাক্ষরেও তমাল বুঝতে পারেনি। ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। ফেসবুকে ছবি দেখে, প্রেম ভালোবাসা করে, হোক বয়সে অনেক বড়, তা-ও তো আমেরিকায় আসা হলো কিন্তু এখানে এসে এ রকমটা হবে তা কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি। ওর থেকে মাত্র নয়-দশ বছরের ছোট হ্যাপির বড় মেয়ে, তারপর মেজো মেয়ে এবং সবার ছোট ছেলে। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দেয় যে ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়নি বলে। তবে নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব হারাম হয়ে গিয়েছিল এক নিমেষে। হায়রে ফেসবুক আর হায়রে আমেরিকায় আসার বাসনা। বুদ্ধিমান ছেলে সবকিছু সামলে নিতে সময় নেয় না। চেষ্টা করে যতটা সম্ভব নিজেকে সহজ স্বাভাবিক রাখার। বিশেষ করে, হ্যাপির সামনে তো কখনোই বিমর্ষ থাকা যাবে না। আমি আর কী বলব, কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। সেদিনের মতো রাত নয়টা নাগাদ আমরা যার যার ঘরে চলে আসি। পরবর্তী দেখা ও কথা না হওয়া পর্যন্ত ভাবতে থাকি, কী হলো? মাঝে মাঝে ওর স্ট্রিটে ঠিক ওর বাসার অপর পাশে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে গাড়ির ভেতর বসে থেকে দেখি, তমাল জানালার পাশে খাটের ওপর বসা। দৃষ্টি দূর নীলিমায়। ও তো ভাবতেও পারবে না, এ সময় আমি এখানে আছি। ওকে দেখে গানটা মনে পড়ে, ‘আমি বন্দী কারাগারে।’ দুদিন পরে ফোন দিয়ে বলি, তমাল, গান শুনবি? ও বলে শুনব, আমি গাইলাম, ‘আমি বন্দী কারাগারে আছি গো মা বিপদে, বাইরের আলো চোখে পড়ে না, মা আমি…’ জানিস, এটা কার গাওয়া গান? ও বলল, জানি, মুজিব পরদেশী। ভাই আমার সঙ্গে মজা করেন, আমি বললাম কী রকম? বলল, ভাই আমার মতো এ রকম অবস্থায় যাতে কেউ না পড়ে, আমি সব সময় সেই দোয়াই করি। আমি বললাম, আচ্ছা বুঝছি, বের হবি? ও বলল, না ভাই আজকে না, একটু সমস্যা আছে, কালকে বিকেলে বাইর হওয়ার আগে আপনাকে কল দেব। ঠিক আছে বলে লাইনটা কেটে দিলাম।

মাঝখানে অনেক সময় চলে যায়। ধীরে ধীরে জানতে পারি, আমার খুব কাছের এক ছোট ভাই এবং তমাল একসঙ্গে কাজ করে। ছোট ভাই রানার সঙ্গে কথায় কথায় যখন ওর কাছে বলি, এ রকম তমাল নামের একটা দেশের ছেলের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিচয়ের সূত্র ধরে সব কথা, তখন ও বলে, ওরা তো একসঙ্গেই কাজ করে। পরে একসঙ্গে অনেকবার রানার বাসায় আড্ডা দিয়েছি। কিন্তু লক্ষ করতাম, রাত নয়টা হলেই ও আর থাকত না। যেভাবেই হোক ওকে বাসায় পৌঁছাতেই হতো। পরে জানতে পারলাম, ওর ওয়াইফ হ্যাপি রাত সাড়ে আটটায় চলে আসে, তাই ওকে রাত নয়টার মধ্যে ঘরে থাকতে হতো। প্যান্ডামিকের সময়ে যেহেতু কারও জব নেই, সবাই আন-এমপ্লয়মেন্টের ওপর নির্ভরশীল, তাই মাঝে মাঝে হয়তো রাত দশটা অথবা এগারোটা হতো। তখন ও বলত, আজ বেবির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে। এর পর থেকে মাঝে মাঝে হাসি-তামাশা করে বলতাম, বেবির অনুমতি নিয়ে এসেছে কি না। যাক, ছেলে ভালো, রাগ করত না। রানার বাসায় ওদের আরো এক কলিগ আসত, রাকিব নাম। তমাল যখন সবার সঙ্গে থাকত, দেখতাম ও খুব প্রাণবন্ত। কিন্তু এক সকালেই পৃথিবীটা যেন ওর মাথার ওপর। তাই প্রতিদিনই কল দিতে চাইতাম, যেন আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলে ভালো সময় পার করে যায়। ধীরে ধীরে ও আমাকে বড় ভাই হিসেবে মেনে নেয়। এখানেও নিকটাত্মীয় কেউ নেই। ওর চাকরিটা হয়, তা-ও আমার এক কাছের ছোট ভাইয়ের বরাতে। যা-ই হোক, সবার সঙ্গে আনন্দে বেশ সময় কাটে। বেশ দিলদরিয়া। আনন্দ-উল্লাস করতে পারে এবং টাকাপয়সা খরচ করতে জানে। এ রকম একদিন আবার সময় হয় কথা বলার। বড় ভাই! বললাম, হুম। ভাই, আপনাদের সঙ্গে মেলামেশার পর মনে হয় নতুন করে আবার জীবন পেলাম। আমি বললাম, এইটা কেমন কথা! ও বলল, সব কথা তো আপনারে বলি না, তাই বুঝবেন না। আমি বললাম, বল দেখি কোনটা বুঝি না। ওর স্ত্রী হ্যাপি ও আমেরিকায় আসার পর হতে ওর পাসপোর্ট, ওর গ্রিনকার্ড সব তার কাছে রেখেছে। এখন চাকরি করার পর হতে ব্যাংকে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছে। কিন্তু সেখানে শুধু ওর চেকই জমা পড়ে, হ্যাপির কোনো টাকাপয়সার চেক ওখানে জমা হয় না। তাই কার্ডে কোনো কিছু কেনাকাটা করলে তার জবাব দিতে হয়। কথায় কথায় রোজ ওর ছেলেমেয়েরাও ওকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। নিজের রান্না নিজেকে করে খেতে হয়। তারা আমেরিকান, বস্তা পচা বাঙালি খাবার ওরা খেতে পারে না। পরিবারের ছোট সন্তান হিসেবে খুবই আদর-সোহাগে মানুষ। রান্নাবান্না পারত না। কিন্তু আমেরিকায় এসে এখন মাছ-মাংস, সবজি, ডাল-ভাত সবই ভালো রান্না করতে পারে। কথাগুলো বলতে গিয়ে যেন ওর দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে। তাই আমি প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে অন্য কথায় মনোনিবেশ করাই, বলি, বাদ দে, সব ঠিক হয়ে যাবে। ও বলে, ভাই কিছুই ঠিক হবে না, আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। আমি বলি, ধৈর্য ধর, উত্তেজিত হয়ে কিছুই করা যাবে না। আর তাতে ফল ভালোও হবে না। আইনত তুমি তার স্বামী। একেই বলে ফেসবুক লাভ।

আসলে তমালের ইচ্ছা ছিল যেকোনো উপায়ে আমেরিকায় আসা। ও নিজেই বলে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। তাই বলে তার শাস্তি যে এত ভয়াবহ হবে, বুঝতে পারেনি। হ্যাপি চেয়েছে এবং এখনো চাচ্ছে, ও যাতে ওর হাতের কবজায় থাকে। বাইরের জগৎ সম্বন্ধে যেন কোনো ধারণা না হয়। বাংলাদেশি কারও সঙ্গে যেন ওর বন্ধুত্ব না হয়। তমালের ইনকামের ওপর দিয়ে যাতে সংসারের সব খরচ চালাতে পারে। ওর যাতে কোনো সঞ্চয় না হয়। আরো অনেক কিছু। গ্রিনকার্ড রিনিউনালের সময় এসে যাচ্ছে, কিন্তু গ্রিনকার্ড ওর স্ত্রী হ্যাপির কাছে। তাই আমি একদিন ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলাম, তুই তো সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তোকে পালবে আর তুই সোনার ডিম পাড়বি। যেদিন ডিম পাড়া বন্ধ করবি, সেদিন তোকেই খেয়ে ফেলবে। হয়তো আরো অনেক কথা ছিল। কিন্তু এরপর আর কী কী থাকতে পারে। বিদেশে আসার নেশায় ফেসবুকে ছবি দেখে প্রেম করে দেশে গিয়ে যখন দেখে, তখন দেখে মায়ের সমান বয়স। মনকে বলে সমস্যা নেই, আমেরিকায় যেতে পারলেই হয়। কিন্তু বোঝেনি মেয়েও কত ধুরন্দর। ওকে বিয়ে করে এনে এখন সোনার ডিম পাড়া হাঁস বানিয়ে খাঁচায় বন্দী করে মাসের পর মাস ওর সব উপার্জন নিয়ে নিচ্ছে। ওর সব কাগজপত্র নিজের কাছে গচ্ছিত রেখেছে। এখন ওর মন কাঁদে, আমি মুক্তি চাই। আর কিছু বলবি, যদি কোনো উপদেশ থাকে। ও বলল, ভাই, আমার মতো লোভে পড়ে আমেরিকায় আসার নেশায় কোনো বাংলাদেশি ছেলেমেয়ে যেন ফেসবুকে ছবি দেখে প্রেমে না পড়ে অথবা ফেসবুকে ছবি দেখে কাউকে প্রেমের ফাঁদে না ফেলে এবং আমার মতো এখানে এসে এই দুঃসহ জীবন যাপন না করে। আমার মতে, ফেসবুক লাভ ইজ ফেকবুক লাভ।

তমালের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরবর্তী এক সপ্তাহে আর ওর সঙ্গে দেখা করলামই না। ওর জন্য খুবই খারাপ লাগত। তাই ওদের কথা ভাবতে ভাবতে একটি কবিতা লিখে ফেললাম :