ফেডারেল তদন্তকারীরা সব হুজুগে-মাতাল : জুলিয়ানি

ঠিকানা রিপোর্ট : ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী সহযোগীদের ষড়যন্ত্র তদন্তে নিয়োজিত ফেডারেল তদন্তকারীদের লিনশিং মব (যথাযথ বিচার ছাড়াই মৃত্যুদন্ডদাতা হুজুগে-মাতাল) হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবী রুডলফ জুলিয়ানি। নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র জুলিয়ানি আরও বলেন, ট্রাম্প টীম পরিণতিতে- নক দ্য হেক আউট অব (ধাক্কা মেরে নরক দূরে ঠেলে ফেলবে)। তথ্যানুসারে, ফক্স নিউজকে গত ৩১ মে রাতে জুলিয়ানি বলেন, প্রথমত এ ধরনের কোন তদন্ত পরিচালিত হওয়া উচিত নয় এবং দাবি করেন যে, জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ভেতরেই এথিক্যাল ইস্যু রয়েছে। তাই সেখানে লিনশিং মবের ( যথাযথ বিচার ছাড়াই মৃত্যুদন্ডদাতা হুজুগে জনগণের) একটি দল রয়েছে, যাদেরকে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে দিন। আর আমরা আমাদের অথরিটেটিভ রিপোর্টের (প্রামাণ্য প্রতিবেদনের) সাহায্যে হেক বা নরককে দূরে ঠেলে ফেলতে প্রস্তুত।
তিনি আরও দাবি করেন, প্রতিবেদনের পেছনে থাকবে ল অ্যান্ড ফ্যাক্টস (আইন ও সত্যতা)। আমরা আমেরিকার জনগণের সম্মুখে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করবো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। কোন রিপোর্ট বা প্রতিবেদনের প্রতি জুলিয়ানি ইঙ্গিত করেছেন, তা তৎক্ষণাৎ পরিচ্ছন্নভাবে বোঝা যায়নি।
এছাড়াও স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সাবপিনা বা সমন জারি করলে তাও আইনগতভাবে মোকাবেলার হুমকি দিয়েছেন জুলিয়ানি।
এবিসি নিউজকে জুলিয়ানি বলেন, মুলার সমন জারির চেষ্টা করলে আমরা আদালতে যাব। চীফ ল এনফোর্সমেন্ট অফিসার (আইনপ্রয়োগকারী শীর্ষ কর্মকর্তার) হিসেবে নিজের অবস্থানজনিত কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়া বিষয়ক তদন্তে আইনগতভাবে বাধা দিতে পারেন না- এ মর্মে ট্রাম্পের আইনজীবীরা ২০ পৃষ্ঠার একটি গোপনীয় চিঠি মুলারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। চিঠিটি ফাঁস হওয়ার অব্যবহিত পরেই জুলিয়ানি আদালতে শরণাপন্নের হুমকি দিয়েছেন।
গত ২৯ জানুয়ারি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে সর্বপ্রথম প্রকাশিত পত্রটির ভাষ্য ছিল- চীফ ল এনফোর্সমেন্ট অফিসার হিসেবে নিজের অবস্থানের সুবাদে এখানে প্রেসিডেন্টের কর্মকান্ড সাংবিধানিক কিংবা আইনগতভাবে বাধা সৃষ্টি করতে পাওে না। কারণ তেমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেই নিজের জন্য বাধা হয়ে পড়বেন। তাছাড়া তিনি ইচ্ছা করলে তদন্তকার্যক্রম বাতিল করতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে নিজের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, চিঠিটি লেখার সময় জুলিয়ানি প্রেসিডেন্টের লিগ্যাল টীমে না থাকলেও এবিসিকে তিনি পত্রটির বক্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন এবং জানুয়ারিতে পত্রটি প্রদান করা হয়েছিল বলে জানান।
তিনি এবিসিকে আরও জানান যে পত্রে বর্ণিত লিগ্যাল স্ট্র্যাটেজি অদ্যাবধি কার্যকর রয়েছে। মুলার সাক্ষাৎকারের জন্য প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করলে ট্রাম্প বলেন যে তিনি স্পেশাল কাউন্সেলের সাথে বসতে ইচ্ছা পোষণ করলেও তার লিগ্যাল টীম এবং বিরোধী উপদেশ দিয়েছিল।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদটি পরিবেশনের ৪০ মিনিট আগে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প জানতে চেয়েছিলেন মুলারের টীম কিংবা জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট পত্রটি ফাঁসের জন্য দায়ি কি-না? ট্রাম্প বলেছিলেন ডেমক্র্যাটদের ছাড়া রাশিয়ার সাথে কোন ষড়যন্ত্র হয়নি। তিনি জানতে চেয়েছেন কখন ব্যয়বহুল উইচ হান্ট হোয়াক্সের ইতি ঘটবে? তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের জন্য এটি খারাপ (দৃষ্টান্ত)।
তিনি আরও জানতে চেয়েছিলেন ভূয়া মিডিয়ার কাছে দ্য স্পেশাল কাউন্সেল/ জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট তার আইনজীবীদের পত্রগুলো ফাঁস করেছে?
ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি স্বরূপ জুলিয়ানিও পত্রটি ফাঁস করার জন্য স্পেশাল কাউন্সেলকে অভিযুক্ত করে বলেন, পত্র ফাঁসের ঘটনাকে নিন্দা করে মুলারের একটি বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজন ছিল এবং তার দলের কর্মকান্ডও তদন্ত করা মুলারের দায়িত্ব ছিল। যাহোক, স্পেশাল কাউন্সেলের সদস্যদের মাধ্যমে পত্রটি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিকট ফাঁস করা হয়েছে এ ধরনের কোন প্রমাণ মিলেনি।
সর্বশেষ এনবিসির মীট দ্য প্রেসকে জুলিয়ানি বলেন, সম্ভবত নিজকে ক্ষমা করার মত ক্ষমতা ট্রাম্পের রয়েছে। তবে তিনি তা করবেন না।
জুলিয়ানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষে নিজকে ক্ষমা করার বিষয়টি কল্পনা করা যায় না। আর ক্ষমা প্রদর্শন সম্ভবত তৎক্ষণাৎ অভিসংশনের পথে ধাবিত হবে।
এদিকে গত ৪ জুন ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেন যে, নিজকে ক্ষমা করার অ্যাবসলিউট রাইট (একচ্ছত্র অধিকার) তার রয়েছে। তবে ট্রাম্প জোর গলায় দাবি করেন, তিনি এমন কোন অন্যায় করেননি, যার জন্য তার ক্ষমা প্রদর্শনের প্রয়োজন হবে।
এক টুইট বার্তায় গত ৪ জুন, সোমবার, ট্রাম্প বলেন, আই হ্যাভ দ্য অ্যাবসলিউট রাইট টু পার্ডন মাইসেলফ (নিজকে ক্ষমা করার পুরোপুরি অধিকার আমার রয়েছে); বাট হোয়াই উড আই ডু দ্যাট হোয়েন আই হ্যাভ ডান নাথিং রঙ (কিন্তু আমি কোন অন্যায় করিনি, বিধায় কেন ক্ষমা প্রদর্শন করতে যাব?)। পাশাপাশি তার লিগ্যাল টীমও তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৬ সালে ট্রাম্প টাওয়ারের অখ্যাত স্টেটমেন্টের ডিকটেশনে ট্রাম্পের সম্পৃক্তির কথা ট্রাম্পের আইনজীবীরা প্রথম স্বীকার করেছেন। উক্ত সভায় ট্রাম্পের পুত্র এবং জামতাসহ ক্যাম্পেইন কর্মকর্তারা হিলারি ক্লিন্টন সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্যদাতা রাশিয়ান আইনজীবীর সাথে মিলিত হয়েছিলেন।