ঠিকানা রিপোর্ট: ফোবানা একাংশ ও এনএবিসির মধ্যে দ্ব্দ্বন ও বিভক্তির অবসান ঘটেছে। আগামী বছর থেকে এনএবিসি ও ফোবানা সম্মিলিতভাবে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফোবানা (একাংশ) ও এনবিসির নেতৃবৃন্দ। এনএবিসি ও ফোবানার একাংশের মধ্যে বিভক্তি দূর হলেও ফোবানার বিভক্তি দূর হয়নি। সেই বিভক্তিদূর করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ফোবানার একাংশের ও এনএবিসির নেতারা। ফোবানার নেতারা বলেছেন, ফোবানার অপরগ্রুপের সাথে আমরা একাধিকবার সমঝোতার জন্য আলোচনা করেছি। যোগাযোগ করেছি। এখনও আমরা সমঝোতা চাই। তিন শর্তে ঐক্য হতে পারে। এক নম্বর শর্ত হলো আলোচনায় বসতে হবে সমঝোতা করার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে। দ্বিতীয় শর্ত সমতা থাকতে হবে। তৃতীয় শর্ত একে অপরকে সম্মান জানাতে হবে। এই তিন শর্তে যদি তারা রাজি থাকেন তাহলে আলোচনা হতে পারে, এর কোন বিকল্প নেই। প্রয়োজন হলে আমাদের পক্ষ থেকে ও তাদের পক্ষ থেকে কয়েকজনের মাধ্যমে আলোচনা করে এই প্রক্রিয়া এগুতে পারে। সাংবাদিকদের মধ্য থেকে দুইজন এই ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য কাজ করতে পারেন। আমরা যে কোন সময়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এই কথাগুলোই রোববার দুপুরে জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন ফোবানা ও এনএবিসির নেতৃবৃন্দ। সেখানে ফোবানা ও এনসএবিসি এর যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানও যুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ফোবানার (একাংশের) নেতৃবৃন্দ ও এনএবিসির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নিউইয়র্কের সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যুক্ত ঘোষণা পাঠ করেন ফোবানার স্টেয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের একান্ত প্রচেষ্টা ও শক্তিশালী লেখনীর মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটিতে গড়ে উঠা সকল আঞ্চলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ব্যাপ্তি, বিকাশ এবং নিজের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে আপনাদের ভ‚মিকা চির অ¤øান হয়ে আছে। যা আমাদের স্মৃতি থেকে কোনদিন বিস্তৃত হবে না।
তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসের সষ্ট্রা নই। তবে আমরা ইতিহাসের উৎস। আজকের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আমাদের সঙ্গে আছেন এনএবিসি এর সম্মানিত নেতৃবৃন্দ। আমরা উভয়ে মিলে যৌথ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছি। এই সম্মেলনের প্রতিটি মুহুর্ত এবং সময় আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষন। আপনারা জেনে খুশী হবেন যে, অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে ফোবানার পুন: একত্রিকরণের লক্ষ্যে একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছি। যা আমাদের ফোবানার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।
আজ আমরা এই যৌথ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সকল বিভক্তির অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিতে যাচ্ছি। এই জন্য আজকের সংবাদ সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। বিভক্তি ও বিভাজনকে বিসর্জন দিয়ে আমরা ও এনএবিসি’র নেতৃবৃন্দ আজ ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন থেকেই আমরা ঐক্যের পথে চলা শুরু করেছি। এই সমুহান লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম। অনেক আলাপ আলোচনার পর নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব কমিয়ে এনে একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি। তার চ‚ড়ান্ত ঘোষণা দেয়ার জন্যই আমাদের আজকের এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন। আপনারা জানেন উত্তর আমেরিকার প্রবাসী বাংলাদেশী ভাই ও বোনেরা নিজেদের মধ্যে সামাজিক যোগসূত্র সৃষ্টি করার প্রয়াসকে সামনে রেখে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন। সময়ের সাথে সাথে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এর সাথে সাথে বিভিন্ন সংঘ সমিতির সাথে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। এর সাথে সাথে বিভিন্ন সংঘ ও সমিতির সংখ্যাও বৃদ্ধি লাভ করেছে। এই অগ্রগতি আমাদের জাতিসত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে এক সম্ভাবনাময় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, এই সব সংগঠনের যোগসূত্রকে আরো বেশি কার্যকর ও অর্থবহ এবং তার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটানোর লক্ষ্যে উত্তর আমেরিকায় গড়ে উঠা সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি আম্ভ্রেলা সংগঠন গড়ে তোলার সমুহান প্রয়াস আমাদের আত্ম উপলব্ধির চৌকাঠে এসে ধাক্কা দেয়। এই অঞ্চলে গড়ে উঠা সকল ছোট ছোট বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে এক ঐতিহাসিক রাখিবন্ধন গড়ে তোলার অনাবিল স্বপ্ন বুকে ধারণ করে যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সম্মেলন এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। যারা এই মহান আম্ভ্রেলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের কথা আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। তাদের মধ্যে যারা এখন জীবিত নেই তাদের স্মৃতির প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
তিনি বলেন, প্রতিবছর লেবার ডে উইকেন্ডে এই সকল বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের সমন্বয়ে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সেই থেকেই আমাদের বাংলাদেশ সম্মেলন এর যাত্রা শুরু হয়েছে। এক সময়ে ফোবানার যাত্রাপথে নিজেদের মধ্যে অনাকাঙ্খিত বিভক্তি ও বিভাজনের রেখা দেখা দেয়। এর ফলশ্রæতিতে ১৯৯৪ সালে ফোবানা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। অনেক প্রচেষ্টা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ১৯৯৭ সালে ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হয়। এই ঐক্যবদ্ধ ফোবানা পুনরায় ১৯৯৯ সালে দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়ে। এই বিভক্তিও বিভাজনের জন্য আমরা কাউকে দায়ী করতে চাই না। এটাই ছিল ফোবানার সময়ের পরিনতি। ফোবানার সৌভাগ্যেও সিকা ছিড়ে গেলেও ফোবানার চলার পথ থেমে যায়নি। আমাদের গড়ে উঠা কমিউনিটির জন্য বিষয়টি কোনভাবেই সুখকর ছিল না। কিন্তু এই কথা সত্য যে সেই দূভার্গ্য আজও ফোবানার পিছু ছাড়েনি। ভাঙ্গা সম্মেলন করার দীর্ঘ পথ চলতে গিয়ে ফোবানার অনেক অলংকার গা থেকে খসে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা এই দেশে মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদেরকে সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। প্রমোট করতে পারিনি জাতীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি , শিল্প ও সাহিত্য। আমাদের অনৈক সামাজিক সংগঠনোগুলোকেও বিভক্তি বিভাজন কুরে কুরে খাচ্ছে। তারপরও এই সব সংগঠনগুলো তার স্বকীয়কতা বজায় রেখে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে হতাশার কোন স্থান নেই। ফোবানা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি এর ঢেউ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সত্য কথা যে, ফোবানার সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে কম নয়। তারপরও ফোবানা আছে থাকবে। আমরা ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করবই। তার সকল আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের আমরা সবাই দৃঢ় এবং অনড়।
তিনি বলেন, আনন্দের সাথে আমরা ফোবানা ও এনএবিসি এর নেতৃবৃন্দ আপনাদের সামনে ঘোষণা দিচ্ছি যে, আজ থেকে আমরা সবাই একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ফোবানার যাত্রা নিষ্কন্টক রাখবো।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আজ যারা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দূর দূরান্ত থেকে এসে যোগদান করে ফোবানার ঐক্যের পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন তা ফোবানার ইতিহাসে কোনদিন বিস্মৃত হবে না। আমরা মনে করি, আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঐক্যের অপরিসীম অগ্রগতি ঘটেছে। এখনো যারা (সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষ) ঐক্যবদ্ধ ফোবানা’র বাইরে রয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান, আসুন আমরা সবাই মিলে ফোবানাকে শক্তিশালী করি ও এর সুফল উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বাংলাদেশের জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি হচ্ছে ‘ফোবানা’ সম্মেলন ২০১৯ এর হোস্ট কমিটি। এই সম্মেলনে কনভেনর নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র তথা নর্থ আমেরিকার এক গৌরবোজ্জল ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস বিজেনস এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর একজন প্রিয় নেতা জনাব শাহনেওয়াজ। সদস্য সচিব হয়েছেন উত্তর আমেরিকার আরেকটি গৌরবোজ্জল সংগঠন সন্দীপ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক নির্বাচন কমিশনার ফিরোজ আহমেদ। আগামী ৩০ ও ৩১ শে আগস্ট এবং ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৯ লেবার যে উইকেন্ডে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টের মেরিয়ট হোটেলে এই ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, এই বছরের এনএবিসি সম্মেলন হবে আটলান্টায়। এনএবিসি ২০১৯ সম্মেলনের কনভেনর নির্বাচিত হয়েছেন উত্তম কুমার দে, যিনি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যেও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের একজন জনপ্রিয় নেতা। সদস্য সচিব নির্বাচিত হয়েছেন শহীদুল ইসলাম, তিনি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন প্রখ্যাত তরুণ সংগঠন। এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ২৭-২৮ জুলাই ২০১৯ জর্জিয়ার পাঁচ তারকা হোটেল সনেস্তাতে।
তিনি পরিশেষে বলেন, যথাসময়ে উভয় সম্মেলণে ফোবানা ও এনএবিসি এর নেতৃবৃন্দের যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী ফোবানা সম্মেলন ২০২০ এর একক যাত্রা শুরু হবে। ফোবানার দীর্ঘজীবন কামনা করে তিনি তার লিখিত বক্তৃতা শেষ করেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে চারজনের নাম ছিল। তারা হলেন ফোবানা স্টেয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, এনএবিসি এর চেয়ারম্যান কুদরত ই খোদা, ফোবানা স্টেয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন আযম, এনএবিসি এর নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক মোহন জব্বার। লিখিত বক্তব্যে দুই চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পর তারা সাংবাদিক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বেলা একটায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় দুইটায়। আর শেষ হয় বিকেল চারটার পর। সংবাদ সম্মেলন শুরু করার আগে ফোবানার ও এনএবিসির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানস্থলেই এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেন ও ঐক্যমতে পৌঁছান। এরপর তারা সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করেন। সংবাদ সম্মেলনে ফোবানার ও এনএবিসির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এই দুই সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত কমিউনিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মোহম্মদ হোসেন।
সাংবাদিকদের বেশিরভাগই প্রশ্ন ছিল দুই ফোবনা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে। এই বিষয়ে মোহম্মদ হোসেন খান বলেন, আমরা দুই ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই। এই জন্য এর আগে আমরা তাদের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছি। বিভিন্ন সময় বসেছি। তারা আমাদের প্রস্তাব শুনেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোন উত্তর দেননি। তারা আমাদের কথা শুনলেও সিদ্ধান্ত জানান না। এই কারণেও বিভিন্ন সময়ে ঐক্য প্রক্রিয়া নেওয়া হলেও তা আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে সমাধানে ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বিভিন্ন সময়ের নেওয়া উদ্যোগের বিষয় ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান করেও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাও হয়নি। এছাড়াও ঐপক্ষের ড. নুরুন্নবী সাহেবের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন তিনি এর সঙ্গে যুক্ত নন। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন। যদিও তিনি আর কোন সমাধান দেননি। তিনি অভিযোগ করেন বলেন, আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন না। কেন হচ্ছে না তিনি এর ব্যখ্যাও দেন।
তিনি বলেন, আমাদের আগেও যে লক্ষ্য ছিল এখনই তাই আছে। আমরা সমঝোতা করতে চাই।
ফোবানার লগো ব্যবহারের বিষয়ে অপরপক্ষের আপত্তি ও আইনী বিষয়টি তুলে ধরেন একজন সাংবাদিক। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ফোবানা নিয়ে নতুন করে মামলা হয়েছে এমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। ২০০১ সালে ফোবানা উত্তর আমেরিকা ১টি মামলা করেছিল। ওই মামলাতে আমরা জয় লাভ করেছি। এরপর আর কোথাও কোন মামলা হয়নি। তারা (ফোবানার অপর অংশ) লগো ব্যবহারের যে বিষয় বলছেন এই ধরণের নিষেধাজ্ঞার কথা আমরা জানি না। আমরা আজকে ফোবানার মূল লগোই ব্যবহার করেছি। সম্মেলনেও সেটাই ব্যবহার করা হবে।
সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা অতীত নিয়ে বলতে চাই না। আমরা ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করবো আর ভবিষ্যতের কথা বলবো।
এনএবিসি ও ফোবানা এই বছর তাদের নিজ নিজ মতো করে সম্মেলন করছে আগামী বছর থেকে ঐক্যবদ্ধ সম্মেলন করার কথা বলছে তাহলে এই বছর থেকেই নয় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে অপর এক নেতা বলেন, এই বছর এটা সম্ভব হবে না। কারণ এই জন্য একটা সময়ের প্রয়োজন। সেই সময়টুকুতো নিতেই হবে। কারণ এনএবিসির সম্মেলনের হল ভাড়া থেকে শুরু করে অনেক বুকিংও হয়ে গেছে। এই অবস্থায় অনুষ্ঠান বাতিল করা হলে লোকসান হবে। তাই এই বছর আমরা দুইটি সম্মেলন করবো। আমরা ফোবনাতে আসবো, ফোবানা আমাদের এনএবিসিতে যোগ দিবে। এরমধ্য দিয়ে ঐক্যপ্রকাশ পাবে। এরপর থেকে একসাথে হবে। আজকে আমরা সেই ঐক্যও ঘোষণা দিলাম। এখন থেকেই আমরা এক হয়ে গেছি।
ফোবানার অপর গ্রæপের সঙ্গে সমঝোতার জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কোন কমিটি করা হবে কিনা ও কোন শর্তে ঐক্য জানতে চাইলে শর্ত ও পদ্ধতি সম্পর্কে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, আমরা ৩/৫ জন নিয়ে বসতে রাজি আছি। নামও দিতে রাজি আছি। তারাও আসুক, বসুক। দুইপক্ষ আলোচনা করবো। আর সমঝোতাও হবে। তবে এখানে শর্ত থাকবে তিনটি। এক হলো সমঝোতা করার মানসিকতা নিয়ে আন্তরিকতা নিয়ে বসতে হবে। ঐক্য হতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। দ্বিতীয়ত সমতা থাকতে হবে। এখানে সবাই সমান। অসমতার কথা বললে হবে না। তারা বেশি চাইবেন, আমাদের দিবেন না এমন হলে হবে না। তৃতীয়ত সম্মান জানাতে হবে। একপক্ষ অপরপক্ষের মধ্যে সম্মান থাকতে হবে। কাউকে অসম্মান করা যাবে না। এই তিনটি বিষয়ে এক হতে পারলে সমঝোতা হবে। তবে এছাড়াও আমাদের ওই রকম বিশেষ কোন শর্ত নেই। তিনি আরও বলেন, তাদের অবদানও কম নয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বিজ্ঞজন। আপনাদের মধ্য থেকে যদি তাদের সঙ্গে এক্সসেস থাকে তাহলে কেউ এই ব্যাপারে কাজ করতে পারেন।
বিভক্তির বিষয়ে বলেন, এই বিভক্তির জন্য আমরা সুখকর পরিস্থিতিতে নেই। অসুখকর পরিস্থিতি আমরা চাই না। এটাও আমরা রিয়েলাইজেশন করি যে ফোবানা ভাঙ্গাটা উচিত হয়নি, ঐক্যবদ্ধ থাকলেই ভাল হতো। এখনও আমরা সমঝোতা চাই। কিন্তু ওনারা সমঝোতা চান কিন্তু সমতা চান না। অসমতার ভিত্তিতেতো সমঝোতা হবে না। সমতা থাকতে হবে। তারা আলোচনায় বসেন। বছরের পর বছর চলে যায় সমঝোতার প্রস্তাব রাখেন না। এই ভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না। তাদের সমঝোতাতে আসতে হবে। ১৯৯৯ থেকে বিভক্তি চলছে। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
এবারের বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, এবারও ৫ জন ৫ জন করে বসার জন্য চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কথা বেশিদূর এগুলো না। কারণ তারা বললো তারা আলোচনায় বসতে চান, তবে আমাদের পক্ষের ফোবানার কনভেনরের সঙ্গে তারা বসবেন না। আলোচনায় তাদের কনভেনর বসবেন। কিন্তু আমাদের কনভেনরকে বাদ রাখতে হবে বলে শর্ত দেন। দেখেন, এটা কি সমঝোতার কোন কথা? তাদের কনভেনর থাকবেন আলোচনায়, আর আমাদের কনভেনর বসবেন না। এইভাবেতো আসলে হয় না। তিনি বলেন, আমরা তাদের সম্মেলন করা ও তাদের নিয়ে কিন্তু সমালোচনা করছি না। কিন্তু তারা করছেন।
ফোবানার গোল সম্পর্কে জানতে চান একজন সাংবাদিক। এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য গোল আছে। এচিভমেন্টও আছে অনেক। কমিউনিটির মানুষের মধ্যে ও দেশের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র হিসাবে কাজ করছে। এখানে বিচারপতি এসেছেন, বিভিন্ন শিক্ষক, শিল্পীরা সহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বরা আসছেন। ব্যবসা বাণিজ্যও একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এতগুলো মানুষ যখন আসা যাওয়া করেন, হোটেলে থাকেন, তাদের খাওয়া দাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ হয়। এতে বাণিজ্যিকভাবে যারা জড়িত তাদের লাভ হয়। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও উন্নয়নের পাশাপাশি জ্ঞানের আদান প্রদান হচ্ছে। এখানে এমন এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেগুলো সরকারের দূতাবাস এর কর্মকর্তা গ্রহণ করতে পারেন। তারা দেশে সরকারকে জানাতে পারেন। সরকার কাজে লাগাতে পারে।
আরেকজন নেতা বলেন, ফোবানার বিভক্তির কারণে বিভিন্ন সময়ে সমস্যা হয়। মার্কিন সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার কাছে আমরা অনেকবার চিঠি লিখেছি। তিনি দুইটা সংগঠন দেখেছেন। দুটি হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। এটা খারাপ। আসলে এক হলে এত চিঠি লেখার দরকার হতো না। অনেক সময় শিল্পীরাও বলেন তারা বিভক্তি জানলে আসতেন না। এটা আসলে আমাদের জন্য সুখকর কিছু নয়।

ফোবানা ও এনএবিসির সমঝোতা কি কি শর্তে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে আরেকজন নেতা বলেন, সমঝোতা হয়েছে শর্তহীন। আলোচনার ভিত্তিতে। এখানে ফাইন্যান্সিয়াল কোন বিষয় নেই। এক হয়েছি বলে আমরা ফোবানা ও এনএবিসির সম্মেলন আলাদা করে হচ্ছে। নাহলেও তো একই তারিখে হতো।
একজন প্রশ্ন করে নিউইয়র্কে হলেই ফোবানার দুটি সম্মেলন হয় এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তারা বলেন, কেবল নিউইয়র্কে দুটি হয় বিষয়টি এই রকম নয়। ১৯৯৫ সালে মন্ট্রিলে ২টি, আবার ২০০১ সালেও দুটি সম্মেলন হয়েছে দুটি ফোবানার। এখন আবার ২০১৯ সালেও দুটি হচ্ছে। তাই নিউইয়র্কে হলেই দুটি হয় এটা মনে করা যাবে না।
দুই ফোবানা এক না হয়ে দুটি সম্মেলন হলে সমস্যা কোথায় এমন এক প্রশ্নের একজন বলেন, বিভিক্তিটা শুনতে খারাপ লাগে। সমালোচনা হয়। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা হয়তো মূলধারার রাজনীতিতেও আরও বেশি ভ‚মিকা রাখতে পারতাম বিভক্তি আমাদেরকে এখানে অনেক কিছু অর্জনে পিছিয়ে রেখেছে। এই কারণে ঐক্য দরকার। আর যদিও কমিউনিটির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি চিন্তা করা হয় তাহলে একটি অনুষ্ঠান করা হলে আসলে সব মানুষের জন্য বসার ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা একসঙ্গে করা সম্ভব নয় এটা ঠিক। সেই ক্ষেত্রে দুটি হলে সমস্যা নেই।
বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও ফোবানার একজন নেতা গিয়াস আহমেদ বলেন, আমি প্রস্তাব দিতে চাই যদি আমাদের কমিটি এগ্রি করেন তাহলে আমাদের পাঁচ জন ও তাদের পাঁচজন করে কমিটি করে আলোচনা হতে পারে। আর দুই জন সাংবাদিককে রাখা যেতে পারে যারা লিয়াজো হিসাবে কাজ করবেন। তিনি বলেন, আমরা এক হতে পারলে ভাল হয়। আর তারা ফোবানার লগো ট্রেডমার্ক করে নিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। এটা হয় না। এটা তারাও ব্যবহার করবেন আমরাও ব্যবহার করবো। তার প্রস্তাবে অপর এক নেতা বলেন, আমাদের দ্বার তাদের আলোচনার জন্য সব সময় খোলা। তারা আসলেই আলোচনা হতে পারে।
ফোবানার কনভেনর শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা ঐক্যচাই। সমতার ভিত্তিতে ঐক্য হতে হবে। আগামী সম্মেলন সফল করে তুলতে আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের শক্তি। এনএবিসি সম্মেলনের নেতারা আমাদের ফোবানাতে আসবেন আর আমরাও তাদের এনএবিসি সম্মেলনে যাবো। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
অনুষ্ঠানে ফোবানার নেতৃবৃন্দ ও এনএবিসির নেতারা আরো বিভিন্ন প্রশ্নের দেন তারা। এরপর অনুষ্ঠান শেষে মেম্বার সেক্রেটারী ফিরোজ আহমেদ সকলকে ধন্যবাদ জানান। সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামানা করে তিনি যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও যুক্ত ঘোষণা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।