ফোর্স নয়, সেবকও নয়, বন্ধু চাই

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

পুলিশ একটি বাহিনী, এর গঠনের সূত্রপাত ইংরেজ আমলে। লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটা তখন খুবই জরুরি ছিল, ইংরেজদের খাজনা সংগ্রহ এবং ব্যবসায় উভয় তৎপরতার স্বার্থে। পুলিশের কাজ ছিল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীনদের স্বার্থকে পাহারা দেওয়া। এ কাজে পুলিশ ছিল একটি ফোর্স, যার পক্ষে জনবিরোধী না হয়ে কোনো উপায় ছিল না। পুলিশ বাহিনীকে পুলিশ সার্ভিস বলা হতো, শীর্ষ পদগুলোতে ইংরেজরাই থাকত, নিম্নবর্তী সব জায়গাতেই দেশি মানুষেরা নিয়োগ পেতেন। পুলিশের লাল পাগড়ি কিংবা বড় অফিসারদের শোলার হ্যাট দেখলে মানুষ উৎফুল্ল নয়, আতঙ্কিত হতো। তারপর ৪৭-এ দেশ স্বাধীন হলো। স্বভাবতই মানুষ আশা করল যে, পুলিশ বাহিনী এখন আর বল প্রয়োগে ব্যবহৃত হবে না, তাদের কাজ হবে মানুষের সেবা করা। ফোর্স রূপান্তরিত হয়ে যাবে সার্ভিসে। সেটা ঘটেনি। তার দায় অবশ্য পুলিশ বাহিনীর ওপর চাপানো যাবে না, দায়ী হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয়নি। দেশের মানুষ যে মুক্ত হয়েছে, তাও নয়। আসলে ৪৭-এ যা ঘটেছে, তাকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলা যাবে না, সেটা ছিল ক্ষমতার হস্তান্তর মাত্র। যারা ক্ষমতা পেলেন তার আগের শাসকদের মতোই জনগণকে অধীন এবং শাসনের অর্থাৎ শোষণের ক্ষেত্র হিসেবে দেখতে থাকলেন। ব্যাপারটা বিশেষভাবে প্রকট ও দৃশ্যমান হয়ে উঠল পূর্ববঙ্গে। ৪৭-এর পরপরই গোটা পূর্ববঙ্গজুড়ে নিদারুণ অভাব দেখা দিয়েছিল। সব পেশার মানুষই অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ বাহিনীতে বিক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা বেতন ও পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট পর্যন্ত করেন। সেই ধর্মঘট দমানোর জন্য যথার্থ যে ফোর্স, আর্মড ফোর্স অর্থাৎ সেনাবাহিনী- তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর পরে আসে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, তখন পুলিশকে ব্যবহার করা হয় সে আন্দোলনকে দমন করার জন্য। পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়। স্বাধীন দেশে বাঙালি পুলিশের হাতে বাঙালি ছাত্ররা নিহত হবেন- এটা কেবল অপ্রত্যাশিত ছিল না, ছিল অকল্পনীয়। অথচ সেটাই তো ঘটেছে।
রাষ্ট্র পুলিশ বাহিনীকে ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, হাতের ওই ফোর্স তাদের হুকুমবরদার হতে অসম্মত হবে- এই বাস্তবসম্মত আশঙ্কাতে একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশকেন্দ্রে অবস্থানকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একাত্তরে ওই মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যারা সেটা করতে পারেননি, তারা নানাবিধ দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের ভেতর কালাতিপাত করেছেন। তখন জনতার সঙ্গে পুলিশের একটি অভূতপূর্ব মৈত্রীর বন্ধন স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু সে বন্ধন টেকেনি, টেকবার কথাও নয়। কেননা পুলিশ সার্ভিসের সদস্যরা তো রাষ্ট্রের কর্মচারী। রাষ্ট্র হলো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, বলা যায় দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আর রাষ্ট্রের সে ক্ষমতা যাদের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়, তাদের একটি শক্তিশালী ও কার্যকর অংশ হলো পুলিশ বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নতুন রাষ্ট্রে পুলিশ বাহিনীকে মানুষ কিভাবে দেখতে চেয়েছে? ফোর্স হিসেবে যে নয়, সেটা তো বুঝতে অসুবিধা নেই। তাহলে কি সেবক হিসেবে? না, তাও নয়। ফোর্স হিসেবে কেন দেখতে চাইবে না, সেটা বোঝা গেল। ফোর্স একটা ক্ষমতা এবং ক্ষমতা মাত্রেই একটি সম্পর্ক, যেটি বিন্যাস ও প্রয়োগের ওপর নির্ভর করে। পুলিশের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, উৎস হলো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র যদি জনগণের কর্তৃত্বাধীন না থাকে অর্থাৎ গণতান্ত্রিক না হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যে কথিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে- এটা অনিবার্য। ব্যাপারটা তখন বল প্রয়োগমূলক হতে বাধ্য।
ঘুষ এখন সার্বজনীন। পুলিশ যে ঘুষ খায়, এটা সবাই বলে। সবাই নিশ্চয়ই খান না। তবু দুর্নামটা রটেছে। এর কারণ পুলিশের হাতে ক্ষমতা রয়েছে। ঘুষ নেওয়া ক্ষমতা প্রদর্শনেরই অংশ বৈকি। ঘুষ নিয়ে ক্ষমতা দেখানো হয়। সবাই যখন এই ক্ষমতা দেখাচ্ছে, তখন সমস্ত পুলিশ কাজটি থেকে বিরত থাকবে- এ প্রত্যাশা মানুষের নেই। দ্বিতীয় কথা এই যে, সমাজে এখন তারাই বীর, যাদের হাতে টাকা আছে। পুলিশ কেন ওই বীরত্ব প্রদর্শনে বিরত থাকবে, যখন তার হাতে সুযোগ আছে অর্থোপার্জনের। একজন পুলিশ অফিসারের কথা জানি, নিজেকে তিনি অসাধারণ বলে মনে করেন না, যদিও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। অনুপ্রেরণাটা ছিল সেবক হওয়ার। কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই টের পেলেন তার ঘাড়ের ওপর অন্য এক ব্যক্তি এসে ভর করেছে, যাকে তিনি চেনেন না; অথচ যে তাকে পরিচালনা করেন তাকে কাঁধ থেকে যে নামিয়ে দেবেন, তাও সম্ভব নয়। যেন সিন্দাবাদের কাহিনীর সেই অনড় বৃদ্ধ। বুঝতে পারলেন এই ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি নিজেই; কিন্তু এ ব্যক্তি তার একেবারেই অপরিচিত। তিনি ক্ষমতাধর। এর হাতে ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতাশীল অহর্নিশ উত্ত্যক্ত করছে; বলছে, তোমার ক্ষমতা আছে সেটা তুমি প্রয়োগ করো, নইলে তুমি সমাজের কাছে তো বটেই, আত্মীয়স্বজন এবং সহকর্মীদেরও কারও কারও চোখে অক্ষম বলে প্রমাণিত হবে। তিনি দেখছেন, তিনি বদলে যাচ্ছেন এবং পাছে একটি ভিন্ন মানুষে পরিণত হন এই ভয়ে চেষ্টা-তদবির করে অন্য দপ্তরে বদলি হয়ে গেছেন। সেখানে তার তেমন একটা ক্ষমতা ছিল না এবং ক্ষমতার এই অভাবের দরুনই তিনি স্বস্তিতে ছিলেন। অন্য যে কোনো পেশার তুলনায় পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতা বেশি।
রাষ্ট্র এ বাহিনীকে ক্ষমতা দেয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারীরা অনেক সময়ই পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। সেটা সত্য। আর ক্ষমতা নিজেও প্রয়োগে আগ্রহী হয়। প্রয়োগ না হলে, দৃশ্যমান না হয়ে উঠলে ক্ষমতাকে ক্ষমতা বলে চেনা যাবে কী করে? তবে ক্ষমতা যারা প্রয়োগ করেন, তারা যে সমাজের কাছ থেকে সম্মান ও মর্যাদা পান, তা কিন্তু নয়। আমার এক নিকটাত্মীয়ের কথা বলি, তিনি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে পুলিশ বিভাগে উচ্চপদে ছিলেন। কিন্তু সবসময়ই বলতেন যে, তিনি তার সন্তানদের অন্য যে চাকরিতেই পাঠান না কেন, পুলিশ সার্ভিসে পাঠাবেন না। কারণ একাধিক। অপরাধীদের পেছনে পেছনে ধাবমান থাকতে হয়। অন্যায় রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ না হয়ে উপায় থাকে না। সর্বোপরি সারা জীবন সত্যতার সঙ্গে কাজ করেও সমাজ মর্যাদা দেয় না। তার নিজের ব্যাপারে হয়তো সেটা সত্য নয়, সমাজ তাকে যে মর্যাদা দেয়নি, তা নয়। কিন্তু তার মনে হয়েছে, যা তার প্রাপ্য ছিল তা তিনি পাননি। বিপদটা এখানেই। ক্ষমতা ব্যবহার না করলে পদোন্নতি ঘটে না, বীরত্বও প্রদর্শিত হয় না। আর ব্যবহার করতে গেলে অপব্যবহারের হুমকি থাকে। বাহিনীর অধিকাংশই ভালো মানুষ বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু মুশকিল হলো এখানে যে, অন্যত্র যেমন এখানেও তেমনি ভালো মানুষরা চোখে পড়েন না, তাদের দাপট নেই, তারা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেন না এবং অনেকেই ভালো থাকতে পারেন না।
আর এক সত্য হলো এই যে, সমাজ ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের ভয় করে নিশ্চয়ই; কিন্তু সম্মান করে না, উল্টো বিরূপ দৃষ্টিতে দেখে। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আমরা ফোর্স হিসেবে দেখতে চাইব না, দেশের মানুষ যে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছে, যে সংগ্রামে পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণ ছিল, সেটির সঙ্গে বল প্রয়োগকারীর ভাবমূর্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাহলে কি আমরা চাইব, পুলিশ সমাজের জন্য সেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক? না, তা-ও নয়। আমরা চাইব পুলিশ ফোর্স নয়, সেবকও নয়, হোক মানুষের বন্ধু। ফোর্স কেন নয়, সেটা তো বোঝা গেল; কিন্তু সেবক নয় কেন? সে ব্যাপারে আপত্তির হেতুটা কী? প্রধান হেতু এটি যে, পুলিশ বাহিনীর কাজ সমাজসেবা নয়। সেবামূলক কাজ পুলিশ অবশ্যই করবে, দৃষ্টিহীন পথচারীকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করা, বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করা, দুর্ঘটনা দেখলে এগিয়ে আসা, দুর্বৃত্তদের বিতাড়িত করা- এ ধরনের কাজ পুলিশের কাছ থেকে সর্বদাই প্রত্যাশিত; কিন্তু পুলিশের মূল কাজটা হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধীরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, মানুষকে তারা বিপন্ন করে, তারা বড়-ছোট নানা ধরনের অপরাধে লিপ্ত থাকে, পুলিশের কাজ এই অপরাধীদের দমন করা। কেবল দমন করা নয়, সেই সঙ্গে অপরাধ যাতে না ঘটে তার জন্য সামাজিক ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়তা দেওয়া, নিরীহ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। এগুলোর কোনোটাই সমাজসেবার পর্যায়ে পড়ে না। এগুলো হচ্ছে বন্ধুর মতো দায়িত্ব পালন। তা ছাড়া সেবকদের সম্বন্ধে লোকের অভিজ্ঞতাটা মোটেই সুখকর নয়। স্বেচ্ছাসেবকদের কথা স্বতন্ত্র, তারা স্বেচ্ছায় শ্রম দেন, বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু তাদের সংখ্যা এখন খুবই নগণ্য। পুলিশকে মানুষ দেখতে চায় এমন বাহিনী হিসেবে, যেটি ভীতির বা সন্দেহের উদ্রেক করবে না, বরঞ্চ করবে নিরাপত্তাবোধের। থানাকে মানুষ ভাবতে চায় আপদ-বিপদের ভরসাস্থল এবং দুর্বৃত্তদের নিবৃত্তকরণের কেন্দ্র হিসেবে। অপরাধ দমনের কাজ তো থাকবেই, সেটা তো প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু এই কাজেও সামাজিক সহযোগিতা পাওয়া যায়, পুলিশের ভূমিকা যদি হয় বন্ধুর মতো। প্রত্যাশাগুলো এ রকমেরই।গ্রাম থেকে মানুষ এখন স্রোতের মতো শহরে চলছে। নদীতে স্রোত নেই; কিন্তু জনমানুষের এই প্রবাহটা খুবই প্রকট এবং ক্ষতিকর। গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাব। সম্পন্ন লোকেরা গ্রামে থাকতে চান না, বিনিয়োগ করেন না। আমাদের এই আত্মীয় ভাবছিলেন, গ্রামে উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করবেন এবং তারাও থাকবেন। নির্মল বাতাস, সুস্বাদু সবজি, তরতাজা মাছ, এসব পাবেন। কিন্তু পরে রণে ভঙ্গ দিলেন। কী কারণ? বললেন, নিরাপত্তা নেই। ডাকাতির ভয়। অবস্থাটা এখন এ রকমই। পুলিশ বাহিনী পারে গ্রামকে নিরাপদ করতে। কেবল গ্রাম কেন বলি, শহরেই-বা নিরাপত্তা কোথায় এবং কতটা? সেখানেও পুলিশের দরকার। বন্ধু হিসেবে পুলিশের উপস্থিতিটা হবে অনেকটা বিদ্যুতের মতো। বিদ্যুতের অপর নাম হচ্ছে শক্তি, ইংরেজিতে পাওয়ার। বিদ্যুৎ আছে বলেই আলো পাওয়া যাচ্ছে, কলকারখানা চলছে; কিন্তু তাকে দেখা যায় না, অদৃশ্য থেকে সে বন্ধুর মতো কাজ করে। তবে থেমে গেলেই বিপদ, সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু অচল হয়ে যায়। পুলিশও হবে সে রকমের। তারা আছে বলেই আমরা নিরাপদ থাকব। তবে অনাবশ্যকভাবে তাদের দৃশ্যমান না হলেও চলবে। কিন্তু বন্ধুত্ব তো একপক্ষের ব্যাপার নয়, সে তো সবসময়ই দ্বিপক্ষীয়। দেওয়া এবং নেওয়ার সম্পর্ক না হলে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে না, টিকে থাকা তো একেবারেই অসম্ভব। পুলিশ বাহিনী সমাজকে নিরাপত্তা দেবে, বিনিময়ে সমাজের তো কিছু দেওয়ার থাকা চাই। সমাজ কী দিতে পারে? দিতে পারে সম্মান ও মর্যাদা। সমাজ আরও একটি কাজ করতে পারে এবং বন্ধুর জন্য কাজটা করা দরকারও, সেটা হলো সহযোগিতা দান।এসবই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বাস্তবতা কি এসবের সমর্থক? মোটেই না। পুলিশকে আমরা বন্ধু হিসেবে দেখতে চাইলে যে তা পাব, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? দেওয়ার কথা অন্য কারও নয়, স্বয়ং রাষ্ট্রের। ঘটনা নিচ থেকে ওপরে যাবে না, ওপর থেকে নিচে নামবে, নদী যেমন নামে। সে জন্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত জরুরি। যেমন ধরা যাক, প্রশিক্ষণের ব্যাপারটা। সেখানে শারীরিক অনুশীলন, অস্ত্র চালনায় দক্ষতা, আইন-কানুন জানা, অপরাধী শনাক্তকরণের কৌশলÑ এসব বিষয় তো অন্তর্ভুক্ত থাকবেই। তেমনি থাকবে মানুষের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির কথা এবং থাকবে সমাজে পুলিশের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা এবং সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করার দিকে মনোযোগ। অবশ্য আগে প্রয়োজন হবে রাষ্ট্রকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রূপদান অর্থাৎ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে আনা, সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধিদের শাসন নিশ্চিত করা। আমরা আশাবাদী, আমরা আশা করব পুলিশ বাহিনীকে ফোর্স অথবা সেবক হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে পাব। সমাজ বন্ধু চায় এবং বন্ধুকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে খুবই উৎসুক। পুলিশ বাহিনীকে দেখতে চাই রাষ্ট্র নিয়োজিত এবং বন্দু বলে বিবেচিত সামাজিক সংস্থা হিসেবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক