ঠিকানা রিপোর্ট : সাংবাদিক আবুল কাশেম সম্পাদিত ‘বঙ্গখ্যাত ৭১ মনীষী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁর পার্টি হলে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রবাসী কবি, লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশিত ‘বঙ্গখ্যাত ৭১ মনীষী’ বই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন উপস্থিত গুণী ব্যক্তিরা। চলতি বছর ঢাকায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির প্রকাশক বেহুলা বাংলা এবং পরিবেশক রকমারি ডটকম। অনুষ্ঠানটির যৌথ আয়োজক ছিলেন সাদেক আলী ফাউন্ডেশন ও নিউইয়র্কস্থ শেরপুর জেলা সমিতি।

নিউইয়র্কস্থ শেরপুর জেলা সমিতির মামুন রাশেদের সভাপতিত্বে এবং আশরাফুল হাসান বুলবুলের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় ‘বঙ্গখ্যাত ৭১ মনীষী’ সংকলিত বইয়ের লেখক সাংবাদিক আবুল কাশেম ছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ, সাপ্তাহিক বাঙালীর সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, লেখক- সাংবাদিক মইনুদ্দিন নাসের, কবি-লেখক ও প্রকাশক এবিএম সালেহ উদ্দিন, কবি-লেখক ফকির ইলিয়াস, সাপ্তাহিক প্রবাসের সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, মূলধারার রাজনীতিবিদ মোর্শেদ আলম, সাবেক সচিব একেএম বদরুল মজিদ, ড. সুদীপ্ত দেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিবিদ শামসুদ্দিন আজাদ, প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল হক, জেবিবি’র সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুকু, বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, বিশিষ্ট আইনজীবী এন মজুমদার, আয়েশা বেগম ও সাংবাদিক আবুল কাশেমের বড় মেয়ে শায়লা শারমীন শতাব্দী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শহীদুল্লাহ।
সাংবাদিক আবুল কাশেম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিশ্ব যখন কোভিড-১৯০এর কবলে পড়ে যখন নাস্তানাবুদ অবস্থা, নিউইয়র্কের মানুষরা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছিল। স্থবির হয়ে পড়েছিল বিশ্বর বড় বড় শহর। নিউইয়র্কে দিনরাত সাইরেন বাজিয়ে কেবল রোগীদের জরুরি যানবাহনের ছুটে চলা। ঘরবন্দি সময় কাটানো যখন অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিলো, ঠিক তখনই সাংবাদিক আবুল কাশেম রাজনীতিবিদ, শহীদ বুদ্ধিদজীবী, সমাজসেবক, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ, কবি, মহাকবি, লেখক, গবেষক, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, জমিদার, নওয়াব, স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, বিপ্লবী, দানবীর, চলচ্চিত্রকার, চিত্রকর ও ভাস্করদের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে তা সংগ্রহ করেন। এরপর মনীষীদের জীবনী নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করার চিন্তা তার মাথায় আসে।
তিনি বলেন, এ বইয়ে সব মনীষীর জীবনী তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। দেশ ও প্রবাসের পাঠকরা যদি আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে সাদরে গ্রহণ করেন, তাহলে আগামীতে আরো ৫২ এবং ২১ মনীষীর জীবনী সম্বলিত বই বের করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানের আলোচক সাপ্তাহিক বাঙালীর সম্পাদক কৌশিক আহমেদ তার বক্তব্যে ‘বঙ্গখ্যাত ৭১ মনীষী’ বইয়ের নানা দিক উল্লেখ করে বলেন, বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি-লেখক ও সাধকের জীবনী এই বইয়ে প্রকাশ করা হয়নি। হয়তো লেখক আগামীতে তার নতুন কোন সংকলনে তা তুলে ধরবেন।
লেখক-সাংবাদিক মইনুদ্দিন নাসের দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের জীবনী এ সংকলনে আসা জরুরি ছিল। কিন্তু এ সংকলনে লেখক তার নিজের পছন্দের মনীষীদের জীবনী নিয়ে যেহেতু সংকলনটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে আমাদের বলার কিছুই নেই। তিনি আগেই উল্লেখ করেছেন আগামীতে আরো কয়েকটি সংকলন করবেন।
কবি-লেখক ফকির ইলিয়াস তার বক্তব্যে প্রকাশিত গ্রন্থটির ভালো-মন্দ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন এবং গ্রন্থে প্রকাশিত ৭১ জন মনীষীর নাম পড়ে শোনান।
কবি, লেখক ও প্রকাশক এবিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, একটি সংকলন বা বই প্রকাশ করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রবাসে বসে এ কাজ করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বইয়ের ভুল-ত্রুটি থাকাটাও স্বাভাবিক। তাই এসব বিষয় আলোচনা করে লেখকের মনকে দুর্বল না করে তাকে আরো উৎসাহিত করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। তাই আজকের আলোচনা সভায় বই ও লেখকের নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক আলোচনাই তাকে বেশি উৎসাহ যোগাবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নাজিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সাপ্তাহিক জন্মভূমির সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ আহমেদ শাম্মু, আইবিটিভির সাংবাদিক হাসান মাহমুদ, চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রাশেদ আহমেদ, লেখক ও কলামিস্ট শিতাংশু গুহ, টিবিএন-এর সাংবাদিক শামীম, সাংবাদিক শাখাওয়াত সেলিম, নিউইয়র্ক কাগজের সম্পাদক আফরোজা ইসলাম, নারী পত্রিকার সম্পাদক পপি চৌধুরী, সময় টিভির সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী, নিউইয়র্ক কাগজের সহযোগী সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, সাংবাদিক পুলক মাহমুদ, দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, বিডি ইয়র্কের সম্পাদক শাহ ফারুক, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান, লায়ন হাসান জিলানী, সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ, ফটো সাংবাদিক নীহার সিদ্দিকী, সাংবাদিক আনিসুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক, সাংবাদিক তপন চৌধুরী, সাংবাদিক মশিউর রহমান মজুমদার, আবাসন ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বাচ্চু, প্রবাসে বিনোদন সংস্থা শো টাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম, আল আমিন মসজিদের সভাপতি মো. জয়নুল আবেদিন, সাংস্কৃতিক কর্মী গোপাল সান্যাল, মো. ফারুক মিয়া, রাসেল আহমদ, রানা রায়হান, ফেরদৌসী বেগম, শান্ত দত্ত, শারমীন সুলতানা লাকী, ফরহাদ হোসেন মিলন, নাহিদ রায়হান লিখন, ফাহাদ ফাহমি, সরোয়ার আলম, কণ্ঠশিল্পী কৌশলী ইমা, শাহরিন সুলতানা, আমিরা ফারাহ শিমিন ও সাবেরা জামান কচি প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৌশলী ইমা ও শাহরিন সুলতানা। শিল্পীদের তবলায় সঙ্গত করেন প্রবাসের জনপ্রিয় তবলাবাদক স্বপন দত্ত।
উল্লেখ্য, আবুল কাশেম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকাত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। স্যার এএফ রহমান হলে আবাসিক ছাত্র থাকাবস্থায় লেখালেখিতে হাতেখড়ি। পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রথমে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও পরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত।