বঙ্গ সম্মেলনে উপেক্ষিত নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়া: ‘বজ্র আঁটুনি, ফসকা গেরো’

ঠিকানা রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা রাজ্যের ‘সিন সিটি’ খ্যাত লাস ভেগাসে শেষ হয়েছে ৪২তম বঙ্গ সম্মেলন। এই আয়োজন নিয়ে যতটা ঢাকঢোল পেটানো হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে বিশাল বাজেটের এ আয়োজন নিয়ে অনেকে মন্তব্য করেছেন, বঙ্গ সম্মেলনের আয়োজনটি ছিল মূলত ‘বজ্র আঁটুনি, ফসকা গেরো’র মতই।
‘নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (এনএবিসি)’ শীর্ষক প্রবাসী বাঙালিদের এ সম্মেলন ১ জুলাই শুক্রবার লাস ভেগাসের প্ল্যানেট হলিউড হোটেলে উদ্বোধন হয়। তিন দিনের এ সম্মেলনের শেষদিন ছিল ৩ জুলাই রোববার। তবে অতীতের বঙ্গ সম্মেলনের যে গৌরবময় ও বর্ণিল রূপরেখা ছিল, তা এবারের সম্মেলনে দেখা যায়নি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ক্যাসিনোর ভেতরে। এতে আয়োজকদের কেউ কেউ মদ্য পান ও জুয়া খেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুই বছরের করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে শুরু হওয়া ৪২তম বঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন ছিল ১ জুলাই শুক্রবার। লাস ভেগাসে মিলিয়ন ডলারের বাজেটের এ সম্মেলনে যোগ দেননি বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন ও বাংলাদেশি প্রথম সারির শিল্পীরা বঙ্গ সম্মেলনে না আসার পেছনে আয়োজকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মকে দায়ী করছেন। এর ফলে আয়োজকদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এবারের বঙ্গ সম্মেলন যে আদলে হওয়ার কথা ছিল, সে আদলে হয়নি। সম্মেলনের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সুপার স্টার শাকিব খান। গত ২৬ জানুয়ারি নিউইয়র্কে ম্যানহাটনে একটি রেস্টুরেন্টে শাকিব খানের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি সইও হয়েছিল। এতে সই করেন বঙ্গ সম্মেলন ২০২২ এর আহবায়ক মিলন আওন। তবে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাকিব খানও উপস্থিত হননি। কিছু শর্ত পূরণ না হওয়ায় এবং আয়োজকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারণে তিনি সম্মেলনে যাননি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। একই কারণে উপস্থিত হননি আইসিটি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী। আইসিটি মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সম্মেলনের জন্য অনুদান দেয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, দশ হাজার লোকের আয়োজন ছিল। অথচ গ্যালারি ছিল একপ্রকার দর্শকশূন্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অভিনয় শিল্পী মীর সাব্বির, ইমন ও পরিচালক অমিতাভ রেজাকে দেখা গেছে। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি সংস্কৃতির ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও দেখা যায়নি লিজেন্ড সঙ্গীত শিল্পী জেমসকেও।
বঙ্গ সম্মেলনের অবস্থা দেখে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। কোনো কিছু সঠিকভাবে হয়নি। সম্মেলন পরিণত হয়েছিল পারিবারিক অনুষ্ঠানে।
এদিকে বঙ্গ সম্মেলন ভারত ও বাংলাদেশের বাঙালিদের অনুষ্ঠান হলেও এ সম্মেলনে বাংলাদেশের মিডিয়াকে উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ভারতীয় মিডিয়াকে। বাণিজ্যিক কারণে নিউইয়র্কের দু-একটি মিডিয়া অংশ নিলেও অধিকাংশ বাংলাদেশি মালিকানাধীন মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
৪২তম বঙ্গ সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সম্মেলনের চেয়ারপারসন এবং কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. কালী প্রদীপ চৌধুরীসহ বিশেষ অতিথিরা। এর আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় মিট অ্যান্ড গ্রিট অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার শিল্পী, কলাকুশলী ও বিশিষ্টজনরা।
বঙ্গ সম্মেলনের চেয়ারম্যান ড. কালী প্রদীপ চৌধুরী বলেন, আমাদের সব বাঙালি এখানে এসেছে। সব বাঙালি একাকার।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া সময় টিভির উপদেষ্টা ও চিত্র পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গ সম্মেলনের নাম অনেক শুনেছি আমি। আগে কখনো আসা হয়নি। এই প্রথম বারের মতো আসতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে আমার। খুবই গর্ববোধ করছি।
উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ৫২ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ। আর এই সংগঠনের অধীনেই ৪২ বছর ধরে প্রতিবছর উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এই আসর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।