বিশ্বচরাচর ডেস্ক : একটা সময় ছিল যখন বাইরে যাওয়া তো দূরে থাক ঘরের চৌকাঠ পেরোতেও ভয় পেত সৌদি নারীরা। এক রকম বন্দী জীবনযাপন করত তারা। অন্দরমহলের অবরোধবাসিনী। দিন পাল্টেছে। সৌদি নারীদেরও অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো সৌদি নারীরাও এখন গাড়ি চালাচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে সিনেমা হলে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামেও তাদের সরব উপস্থিতি। ফ্যাশন, সঙ্গীত ব্যবসা- সবখানেই এখন নারী। সকালে দলবেঁধে জগিংয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে নারী ম্যারথনও হয়ে গেছে সৌদিতে। সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু মাত্র বছরখানেক আগেও দেশটিতে এগুলো অকল্পনীয় ছিল। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমাজ সংস্কারমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে সৌদি। তারই হাত ধরে ঘোমটার অন্ধকার ছেড়ে আলোয় আসছে নারীরা। যুবরাজের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অধীনে কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
‘ফ্যাশন রানী’ রাজকুমারী
সৌদির ফ্যাশনজগত বদলে দিতে কাজে নেমেছেন দেশটির এক রাজকুমারী। সৌদি নারীদের আরও ফ্যাশন সচেতন করে তুলতে ফ্যাশন শেখাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন জাপানের রাজধানী টোকিওতে কাটিয়ে বদলে যাওয়া সৌদিতে ফিরেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন দেশটির ফ্যাশনের নতুন মুখ। আধুনিক ফ্যাশনের সব কায়দা-কানুন জানা এ রাজকুমারীর নাম প্রিন্সেস নোরা বিনতে ফয়সাল আল সউদ। সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদের প্রৌপোত্রী। রাজধানী রিয়াদের কেন্দ্রে ইসালিয়াহ শপিংমলে বিশাল একটা দল নিয়ে কাজ করেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে আরব ফ্যাশন কাউন্সিলের অনারারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করা হয় তাকে। মাত্র ৩০ বছর বয়সী নোরা সৌদিতে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম আরব ফ্যাশন উইকে অংশ নেন। মাথায় আধুনিক ধাঁচের হেডস্কার্ফ আর গায়ে রঙিন লম্বা গাউন পরা নোরা সদা হাসিমুখ ও সদালাপী। তাই টোকিও থেকে ফিরে আসার পর নোরাকে সাদরেই গ্রহণ করেছে সৌদির ফ্যাশনপ্রেমী নারীরা।
জেদ্দার মঞ্চে প্রথম গায়িকা
প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী চিকিৎসক, প্রথম গাড়ি চালকের পর মঞ্চের প্রথম গায়িকাকেও পেয়ে গেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি মঞ্চে উঠে দর্শক-শ্রোতাদের মন মাতিয়েছেন সৌদির প্রথম নারী সঙ্গীতশিল্পী মিত লোলওয়া আল শরিফ। সৌদির উপকূলীয় বড় শহর জেদ্দায় সম্প্রতি এক কনসার্টে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার ‘ফ্লাই মি টু দ্য মুন’ গানটি পরিবেশন করেন তিনি। রাত যতই বাড়তে থাকে আল শরিফ একে একে গেয়ে যান এরিক ক্লাপটন, সান্টানা সাদে ও আডেলের বিখ্যাত সব গান। যখন ‘আই’ভ গট আ উইম্যান’ গানটির মধ্য দিয়ে কনসার্ট শেষ করতে যাচ্ছেন, উৎসুক দর্শক-শ্রোতা আরও একটা আরও একটা বলে চিৎকার করতে থাকে।
কনসার্ট শেষ করার আগে তিনি ন্যাট কিং কোলের ‘লাভ’ ও সানটানার ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক উইম্যান’ গানটি গেয়ে শোনান। কিছুদিন আগেও এ দৃশ্য কল্পনা করা যেত না সৌদিতে। প্রথমবারের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ খোলা আকাশের নিচে প্রকাশ্য কনসার্টের অনুমতি দেয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।