মোস্তফা কামাল : বহুল আলোচিত সাবেক এমপি আবদুর রহমানকে বদিকে মহিষে গুঁতিয়েছে। লাথিও মেরেছে। কিঞ্চিত পিষ্টও করেছে। অল্পের জন্য জানটা বেঁচেছে। তাও অন্য এলাকায় নয়, বেওয়ারিশ বা জংলী মহিষও নয়। একেবারে চেনা জায়গা, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে সমুদ্র সৈকতে। কিভাবে এতো সাহস হলো মোষটির?
বর্তমানে এমপি না হলেও বদির যশ-ক্ষমতা বেশি কমেনি ওই এলাকায়। সেখানে স্থানীয় ২ যুবক মোষের লড়াইর একটি আয়োজন করেছিল গত ২৭ নভেম্বর। বদিকে করা হয় ওই লড়াইর বিচারক ও বিশেষ অতিথি। লাল রঙের একটি টি-শার্ট পরে সেখানে যান তিনি। লড়াইরত একটি মোষ এক পর্যায়ে লড়াই ক্ষ্যান্ত দিয়ে বিচারকের দিকেই ছুটে আসে। শিং দিয়ে গুঁতিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। পায়ে পিষ্টও করে। এতে মোটামুটি আহত হন বদি। দ্রুত উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কামুক্ত করে তাকে টেকনাফে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে বদির কী দোষ?
তিনি তো সেখানে কোনো বদ কাজে যাননি। মোষের সঙ্গে গুঁতাগুঁতি করতেও যাননি। আবার গর্তেও পড়েননি। বদি উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক দু’বারের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে এমপি করা হয় তার স্ত্রী শাহীন আকতারকে। নিজে সংসদ সদস্য না হলেও গত চার বছর মাঠ দাবড়াচ্ছেন বদিই। এরপরও মোষটি বদিকে চিনলো কিভাবে? অনুসারীরা বলছেন, বদির কোনো দোষ নেই। গোলমালটা বাঁধিয়েছে তার লাল শার্ট। স্থানীয়ভাবে বেশ যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে বদির অনুসারীদের যুক্তিটি। না হয়ে উপায় আছে?
ষাঁড় কেনো বাঘ-মহিষও কক্সবাজারে বদিকে ভয় পায় বলে প্রচার-প্রচারণা আছে। তবে, লাল রং ষাঁড়ের চরম অসহ্যের বলে একটা মিথও আছে। কারো পরণে লাল কাপড় থাকলে ষাঁড় তখন চটে যায়। ব্যক্তিটি বদি হোন আর কোনো রোহিঙ্গাই হোক। অথবা বিচারকই হোন। রুচিবিরোধী হলে এমনই করে এরা। ষাঁড় বা জন্তু তার স্বভাব-চরিত্রে অটুট থাকলেও মানুষ নামের জীবরা কি চরিত্র অটুট রাখে?
কথাচ্ছলে বলা হয়, সময় খারাপ হলে বা হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাত্থ্যি মারে। বদি হাতি নন, সময়ও খারাপ হয়ে যায়নি। মোষটিও চামচিকা নয়। প্রবাদে থাকলেও বাস্তবে হাতির গর্তে পড়ার খবর খুব বিরল। এরপরও বছর খানেক আগে, ভারত থেকে বানের পানিতে ভেসে আসা একটা বুনোহাতি কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্রের চিলমারির খেরুয়ার চরে কাদায় আটকে পড়া খবরের শিরোনাম হয়েছিল। ঢাকা থেকে পর্যন্ত কেউ কেউ ছুটে গেছেন হাতির কাদায় পড়ার বাস্তব দশা দেখতে। ভারতের আসাম থেকেও প্রতিনিধি দল আসে হাতিটিকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিতে। কারণ হাতিরা মরলেও লাখ টাকা! বদিরা আরো বেশি। প্রবাদ আর বাস্তবতার তফাৎ নিয়ে আপত্তি আছে কারো?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।