বিশ্বচরাচর ডেস্ক : সামাজিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সাধারণত তার সমমনা চরিত্রের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে ভিন্ন রাজনৈতিক পটভ‚মি এবং দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তেও কার্পণ্য করে না। অর্থাৎ ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। বিবিসির আন্তর্জাতিক ইপসোস মোরির জরিপ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজনই বলে থাকেন যে তাদের প্রায় বেশির ভাগ বন্ধু-বান্ধব তাদের মতো একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হয়ে থাকেন। অন্য দিকে অর্ধেকের বেশি মানুষ এটা মনে করে, তাদের থেকে আলাদা অন্য মতাদর্শের মানুষের কথা শোনাটাও গুরুত্বপূর্ণ, যদিওবা সেটা তাদের মতের সম্পূর্ণ বিপরীত হয়।
পুরো জরিপ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা ইপসোস মোরির গেøন গটফ্রাইডের ভাষায়, গবেষণায় দেখা যায় যে, মানুষ আশাবাদী থাকতে পছন্দ করে; তারা এটা ভাবতে পছন্দ করে যে তারা বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সহনশীল। নিজের চাইতে আলাদা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলাটাকে বেশির ভাগ মানুষ খুব একটা জরুরি না ভাবলেও তারা নিয়মিত সেটা করে থাকে। গটফ্রাইড বলেন, সমাজের জন্য আমরা যা ভালো মনে করি আর যেটা আমরা আসলে অনুশীলন করি তার মধ্যে একটা ফাঁক রয়েছে।
ইপসোস মোরি ২৭টি দেশের ইন্টারনেট সংযোগ সম্পন্ন প্রায় ২০ হাজার মানুষের বন্ধুদল বা ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের ওপর জরিপ করে। যেখানে অধিকাংশই নিজেদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার প্রবণতা নিয়ে কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেয়া পাঁচজনের মধ্যে গড়ে দুইজন বলেছেন যে, তাদের বেশির ভাগ বন্ধু-বান্ধব কয়েকটি ইস্যুতে তাদের মতোই মতাদর্শ ও বিশ্বাস ধারণ করে থাকে। সেই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন (৪২), ধর্ম (৩৮), অভিবাসন (৩৮) এবং নারীবাদ (৩৭)। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে এই শতাংশের হিসাব হ্রাস পায়।
মার্কিন গবেষণা দল দ্য ডি-পোলারাইজেশন প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালিসন গোল্ডসওয়ার্দি বলেছেন, মানুষ তাদের বন্ধুদলকে যতটা রাজনৈতিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে করে আসলে তা নয়। এর আংশিক কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক বিভাজন প্রায়শই অন্যান্য সামাজিক বিভাজনের চেয়ে বেশি সামনে আসে।
মিস গোল্ডসওয়ার্দি বলেন, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে একটি প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতেও দেখা করা যায়। যেটা কি না জাতি, লিঙ্গ বা ধর্মের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হয় না। যে দেশগুলোতে জরিপ করা হয়েছে, ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মনে করেন, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে এখনকার সমাজ গত দুই দশকের চেয়ে অনেক বেশি বিপদের মধ্যে আছে। অথচ মাত্র ১৪ এর বিপরীত ভেবে থাকেন। গটফ্রাইড বলেন, রাজনীতি মানুষের সামাজিক চক্রে এক ধরনের সমস্যা। সাধারণ মানুষের মতে, রাজনীতি আরও বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং একজন মানুষের জীবনে বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে অবদান রাখছে।