বসতভিটার পাহারায় জোড়া সর্পরাজ

বৈচিত্র্যময় কৈশর ৪

ড. এবিএম এনায়েত হোসেন :

পূর্বেই বলেছি, আমাদের বসবাস পদ্মা-মধুমতীর ভাটি অঞ্চলে। গরিব, নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত লোকদের বসতভিটার ঘরবাড়িগুলোর ভিত উঁচু করার উপাদান প্রধানত এঁটেল মাটি। এর সাথে গোবর মিশিয়ে ভিত তৈরির জন্য উপযুক্ত করে জড়ো করা হয়। পরে দুরমুজ পিটিয়ে করা হয় সমান। চারদিকে সীমানা দেয়ালগুলোতে (ডোয়া) পানি ও গোবরমিশ্রিত প্রাকৃতিক সংমিশ্রণ দিয়ে লেপন করা হয়ে থাকে। ডোয়াগুলো নিয়মিত বিরতিতে লেপা না হলে বৃষ্টি-বাদল ও জলবায়ুর প্রভাবে অমসৃণ হয়ে পড়ে। এ কারণেই কুনোব্যাঙের আশ্রয়স্থলে রূপ নেয়। পরে ইঁদুরের গর্ত বা কোটর হতে দেখা যায়। আর এসব গর্তেই হয় সাপের আস্তানা। একদিকে ইঁদুর ও ব্যাঙ সাপের প্রিয় খাদ্য। অন্যদিকে ইঁদুরের গর্তগুলো সাপের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তা ছাড়া বসতবাড়িগুলোতে মুরগির বাক্সে ফুটানো বাচ্চা এবং মাঝেমধ্যে দুধেল গাই গরুর ওলান থেকে দুধ চুষে খাওয়ার লোভটাও এসব সাপের কম থাকে না!

আমাদের বড় ঘরের (টালির ছাদ এবং পাকা ভিত) পূর্ব পাশে ভাঙা-চোরা ইটপাটকেল ও ঝামা ইটের বেশ বড় একটা ঢিবি (স্তূপ) বর্তমান। কয়েক বছর এভাবে পড়ে থাকায় এটি সাপ-খোপ, টিকটিকি, কাকলাস, গুইসাপ, ব্যাঙ প্রভৃতির একটি উত্তম আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া দু-দুটি উঁচু ছাতিয়ান গাছ, আমাদের সামনের উঠোনে ঢোকার পথে বড় ঘরের পূর্ব কোণে একটি কামিনি ফুলের গাছ। ঝামা ইটের ঢিবির ওপর একটি আতা (নোনা) গাছ এবং পূর্ব দিকে গ্রাম্য হালটের (চওড়া রাস্তা) পাশে বিশাল শাখা-প্রশাখার ছাউনিঘেরা একটা লাটিম গাছ ছায়া প্রদান করে থাকে।

রাতের বেলায় পেশাব করার জন্য ঘুম থেকে উঠে মাঝেমধ্যে বাবা ও আমি দুজনেই ঝামা ইটের ঢিবিটার কিনারায় বসে প্রাকৃতিক কাজটি শেষ করে থাকি। সে রাতেও আমরা বাপ-বেটা মাঝরাতে উঠেছি পেশাব করতে। বাবার হাতে একটা বদনা। বাবা প্রথমে গিয়ে বসলেন ইটের ঢিবির কিনারায় কামিনি গাছটার সামনে। আমি অপেক্ষা করছি সামান্য পায়চারি করে।

সে রাতটা ছিল পূর্ণিমার দু-এক দিন আগের। চারদিকে জ্বলজ্বল করা অথচ শীতল, উত্তাপহীন আলোয় পরিপূর্ণ। বাবার পেশাব করা শেষ হলে সবেমাত্র আমি এগিয়ে গিয়ে কামিনি গাছের কাছে বসেছি, তখনই দক্ষিণের কাছারি ঘরের পাশ থেকে একটা কালো রঙের প্রায় দেড়-দুই হাত লম্বা সাপ এঁকে-বেঁকে দ্রুত দৌড়ে কামিনি গাছের পূর্ব দিক দিয়ে ঝামা ইটের ঢিবিতে ঢুকে লুকিয়ে পড়ল। আমি নিজের অজান্তেই বদনাটা রেখে দাঁড়িয়ে বলতে থাকলাম-
বাবা! সাপ, সাপ! একটা কালো সাপ কাছারি ঘরের পূর্ব কোণ থেকে দৌড়ে গিয়ে আমাদের ঝামা ইটের ঢিবিতে (পাঁজায়) লুকিয়ে গেল।

সাপটাকে বাবাও সম্ভবত একনজর দেখতে পেয়েছিলেন। যখন এ ঘটনাটা ঘটে, তখন ছাতিয়ান গাছ দুটি এবং কামিনি গাছটিতে অসংখ্য ফুলের সমারোহ। চারদিকে ফুলের সুবাসে ভরা। লোকমুখে শোনা যায়, কামিনি, হাসনাহেনা বা ছাতিয়ান ফুলের তীব্র সুগন্ধে সাধারণত সাপ এসে থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, সাপের কোনো নাক বা নাসারন্ধ্র নেই। সুতরাং গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কিংবা ফুলের সুগন্ধি ঠিক কীভাবে সাপকে আকর্ষণ করতে পারে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। যাহোক, আমাদের বাড়িতে সাপের আনাগোনা দেখে বাবা কোনোরূপ কালক্ষেপণ না করেই পুরোনো কামিনি গাছটিকে কেটে ফেলার ব্যবস্থা করলেন। অথচ আমাদের বাড়িতে কালেভদ্রে এক-আধটা ছোট আকারের ‘ঘরমণি’ সাপ ছাড়া কোনো বিষধর সাপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবু একদিন হঠাৎ করে বড় ঘরের ভেতর দিককার দরজার চিপায় পিষ্ট হয়ে একটা ছোট সাপের বাচ্চা পাওয়ায় সবাই হতবাক! তাও আবার জাত সাপের বাচ্চা! সাপের ডিম থাকে ছড়া বেঁধে বেঁধে। তাই জাহিদ ভাই আশপাশে খুঁজতে শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত সাপের ডিমের আরও একটা ছড়া (৭-৮টা ডিম পরপর লম্বাভাবে সাজানো) পাওয়া গেল। এ থেকে একটা ডিমকে লাঠি মেরে ফাটাতেই ছোট একটা সাপের বাচ্চা বেরিয়ে এঁকে-বেঁকে দৌড়াতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু দর্শনার্থী সবার হাতেই ছোট-বড় একটা লাঠি থাকায় এটা আর বেশি দূর এগোতে পারল না!

পরবর্তী ঘটনা ঘটে আমাদেরই জ্ঞাতি বংশের বসতভিটায়। বাড়িটি আমাদের বসতবাড়ির লাগোয়া উত্তর দিকে অবস্থিত। তিন বংশধরদের পৃথক পৃথক বসতি হলেও সবার ব্যবহারের জন্য মাঝখানে রয়েছে প্রশস্ত একটি উঠোন। দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে আয়েন উদ্দিন সরকারের দু’খানা টিনের ঘর। পশ্চিমে মোহাম্মদ আলি সরদারের দু’খানা টিনের ঘর এবং উত্তরেও নবনির্মিত মোহাম্মদ ইয়াসিন সরকারের টিনের একখানা বড় ঘর ও এরই পেছন দিকে পশ্চিম পাশে আরেকটি টিনের ঘর। আয়েনউদ্দিনের দক্ষিণস্থ টিনের ঘরের বারান্দার উল্টো দিকে মুরগির বাক্সে থাকে মুরগির বাচ্চা। আর দক্ষিণ দিকে লাগা গোয়ালঘরেও (শণের ছাউনি) থাকে বেশ কয়েকটি হালের বলদ ও দুগ্ধবতী গাভি। প্রধান বসতঘরের ভিত স্বাভাবিকভাবেই মাটির তৈরি এবং লক্ষণীয়ভাবে বেশ নিচু। এ ঘরের পূর্ব-দক্ষিণ কোনায় অবস্থিত একটা অপ্রশস্ত কামরায় আমাদের চাচাতো ভাই নবীর হোসেনের থাকা ও পড়ার ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঘরটির চারদিককার ডোয়াগুলোকে সময়মতো লেপা হয় না বিধায় বেশ অমসৃণ ও ছোটখাটো ফাটলে ভরা। আশপাশে কয়েকটা বড় গাছ থাকায় ঘরটির ডোয়াগুলো সব সময় ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে দেখায়। ফলে এসব ডোয়াতে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়া খুবই সহজ। এদিকে-সেদিকে অনেক ছোট-বড় ইঁদুরের গর্ত। সন্ধ্যা হতে না হতেই এসব গর্তে আশ্রয় নেয় ছোট-বড় নানা কুনোব্যাঙ। আর এর সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ হয়ে ওঠে সাপের জন্য আকর্ষণীয় আশ্রয়স্থল।

প্রথমে একদিন শুনতে পেলাম, নবীর ভাইদের গাভির দুধ সাপে খায় রাতের বেলা। আর এর আলামত হলো গাভিটির ওলান ও মাইপোষে সাপের দাঁতের আঁচড় দেখতে পাওয়া। ফলে এসব গাভি দুধ দোহন করতে দেয় না! কারণ, ওলান ও মাইপোষগুলোতে হাত দিলে এরা ব্যথা অনুভব করে থাকে।
এর কয়েক দিন পর জানা গেল, নবীর ভাইদের পোষা মুরগির সদ্য ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো একটার পর একটা উধাও হয়ে যাচ্ছে! উপায়ান্তর না দেখে নবীর ভাইরা একজন গুণিন বা ওঝাকে বাড়িতে ডেকে আনল। ওঝা ঘরের চারপাশটা দেখে কীসব মন্ত্র উচ্চারণ করে বলল, ডোয়ার একটা গর্তের মধ্যে সাপ রয়েছে। তখন প্রায় দুপুরবেলা। ওঝা একটা বেতের শিষের আগায় একটা জ্যান্ত কুনোব্যাঙ ধরে টোপ হিসেবে বেঁধে দিয়ে শিষটিকে একটা ইঁদুরের বড় গর্তে ঢুকিয়ে দিয়ে সবাইকে একটু দূরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলল। আধা বা এক ঘণ্টার মধ্যেই গর্ত থেকে সাপের ব্যাঙ ধরার আওয়াজ শোনা গেল। কিছুক্ষণ পর ওঝা বেতের শিষটিকে টেনে বাইরে বের করে আনল। দেখা গেল, একটা লম্বা ও মোটা-সোটা জাত সাপ বেতের শিষসহ ব্যাঙটাকে গিলে ফেলায় ব্যাঙটাকে আর উগরাতে পারছে না। কুকড়া-মুকড়া অবস্থায় শুধু এদিক-ওদিক করছে।

নবীর ভাইদের উঠোনে উৎসুক জনতার ভিড়! ছেলে-মেয়ে, পুরুষ-মহিলা, বুড়ো এবং যুবক-যুবতী। নানা লোকের নানা রকম উক্তি। তবে সবাই একবাক্যে স্বীকার করছে, এটা একটা গোখরো সাপ। কারণ, সাপটির মাথায় ইংরেজি অক্ষর ‘ঝ’-এর মতো একটা ছাপ আছে। সাপটি তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট লম্বা, গায়ের চামড়া হালকা হলুদ রঙের। ওঝা বাড়ির মালিককে উদ্দেশ করে বলল-

আপনাগের বসতভিটের পাহারাদার এ সাপ। এর জুড়ি কিন্তু রইয়ে গেল!
কথাটা শুনে আমি ওঝাকে প্রশ্ন করলাম-
পাহারাদার সাপে কি আমাদের বাড়িও পাহারা দেয়?
ওঝা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল-
আপনাগে বসতভিটা কোনটা?
-এই যে দক্ষিণের টালির ঘরওয়ালা বাড়িটা। আমি জবাব দিলাম।
ওঝা উঠোন থেকে একটু বেরিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে একনজর দেখে বলল-
পাহারাদার সাপের জোড়া আপনাগে এই দুই বাড়িই পাহারা দিয়ে রাখত।
ওঝার বক্তব্য শুনে সবার মনেই এ নিয়ে একটা সুপ্ত ভয় কাজ করতে থাকল। অবশ্য ওঝার ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে বেশি দিন দেরি হয়নি! একদিন আবার হঠাৎ করে লোকজনের হইচই শুনে আমি নবীর ভাইদের বাড়িতে এসে জানতে পারলাম, একটা জাত সাপ মুরগির বাচ্চা খাওয়ার জন্য মুরগির বাক্সের কাছে এলে বাক্সের মধ্য থেকে অন্যান্য মোরগ-মুরগি ডানা-ঝাঁপটানো এবং ক-ক করে দাপাদাপি শুরু করে দেয়। সকাল ১০-১১টার দিকের ঘটনা। নবীর ভাইয়ের মা মোরগ-মুরগির দাপাদাপি, ডাকাডাকি শুনতে পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মুরগির বাক্সের অদূরে এসেই দেখেন, একটা সাপ ফণা তুলে বারবার বাক্সের দরজায় ছোবল মারছে। তখন চাচিজান চিৎকার করে বাড়ির পুরুষদেরকে জানাতেই কয়েকজন লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এল। কিন্তু আশপাশে বেশ কিছুসংখ্যক গাছপালা ও অন্যান্য বাধা থাকায় সাপটিকে কেউই বাড়ি মারতে সক্ষম হলো না। ভীত হয়ে সাপটি দ্রুত দৌড়ে মজিবর সরদারের (ওরফে মজি) পশ্চিম পোঁতার ঘরের দক্ষিণস্থ ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকাতে চেষ্টা করল।

কিন্তু জনতা এতেও হাল ছাড়েনি। ঝোপঝাড়ে এলোপাতাড়িভাবে লাঠির বাড়ি মারতে থাকল। এতে সাপটি শেষ পর্যন্ত মজি ভাইয়ের ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটা হিজল গাছ ও তার সাথে বেড়ে ওঠা বেত ঝোপে ঢুকেই একটা লম্বা বেতের লতা বেয়ে প্রায় ১০-১৫ ফুট উপরে উঠে পড়ল। তখন পাশের বাড়ির আবু সরদার তাদের বাড়ি থেকে একটা শক্ত বাঁশের লগি এনে সাপটিকে উপর থেকে বাড়ি মেরে নিচে ফেলে দিতে সক্ষম হলো। এরপর সবাই লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি সাপটিকে বাড়ি মেরে শান্ত করতে সমর্থ হয়। দেখা গেল, এটাও একটা গোখরো সাপ। লম্বায় প্রায় সাড়ে তিন ফুট।

বয়োজ্যেষ্ঠদের অনেকেই বলতে লাগল, যাক বাবা! বাঁচা গেল। পাহারাদার সাপের জোড়া থাহি যহন দুইডা-ই মারা পড়িছে, তহন আর কোনো ভয় নাই।
কিন্তু বছর না যেতেই নবীর ভাইদের বাড়িতে আরেকটা বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনারও অকুস্থল মজি (মজিবর সরদার) ভাইয়ের ঘর। তখন শীতকালের চরম অবস্থা। সম্ভবত পৌষ মাসের শেষ দিক। মজি ভাই রাতের বেলায় ঘরের মেঝেতে বিছানা পেতে একটা লাল সালু কাপড়ের লেপ (বহিঃস্থ কভার ছাড়া) মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে। সকালবেলা নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে যখন তার সংবিৎ ফিরে এসেছে, তখন চোখ দুটো খুলতেই দেখতে পায়, একটা বেশ লম্বা সাপ তার লেপের ওপর এঁকে-বেঁকে আছাড় খাচ্ছে! সঙ্গে সঙ্গে মজি ভাই চিৎকার করে লেপের মাঝখান থেকে বেরিয়ে এক লাফে দরজা খুলে উঠোনে চলে আসে। বলতে থাকে-

ওরে! তুমরা কে কোহানে আছ? শিগগির আসে দেহে যাও আমার ঘরে সাপ ঢুহিছে!
চিৎকার শুনেই বালা ভাই (বালা সরদার), বাদশা ভাই (বাদশা সরদার), মুরিদ ভাই (শুকুর সরদার), মজলিশ ভাইসহ (মজলিশ সরদার) আরো কয়েকজন জোয়ান লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এল সাপ নিধনে। কিন্তু দরজার ফাঁক দিয়ে সাহসী দু-একজন কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হলো, সাপটি কোনো না কোনোভাবে আটকা পড়েছে। কারণ, সাপটি একই জায়গায় লেপের ওপরে থেকেই এদিকে-ওদিকে দাপাদাপি করছে। দৌড়ে গিয়ে কোথাও পালাতে পারছে না।

তখন কয়েকজন কিছুক্ষণ নির্ভয়েই ঘরের মধ্যে লাঠি হাতে ঢুকে পড়ে এবং সাপটিকে বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলে। পরে এটা নিশ্চিত হলো, বিষধর সাপটি লেপের ওপর ছোবল মারতেই ভাগ্যক্রমে কভার ছাড়া লেপের সেলাই করার শক্ত সুতায় এর দাঁত আটকে যায়। আর এ বাঁধন এমনই মারণ গিঁট হয়ে পড়বে সাপটির জন্য, তা ভাবতেই সবাই অবাক! যাহোক, দেখা গেল, এ জাত সাপটিও গোখরো সাপ। লম্বায় প্রায় সাড়ে তিন হাত।
এটি নিয়ে মোট তিন-তিনটি জাত সাপ মারা পড়ল নবীর ভাইদের বসতবাড়ি থেকে। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল। কারণ, ওঝা এসে বলেছিল, আমাদের বাড়িসহ নবীর ভাইদের বসতভিটার পাহারাদার হলো এক জোড়া জাত সাপ। তাহলে প্রশ্ন হলো তিন নম্বর সাপটি এল কোত্থেকে? তা ছাড়া আমাদের বড় ঘরের দরজার চিপায় পিষ্ট জাত সাপের বাচ্চাটি এবং আশপাশ থেকে খুঁজে পাওয়া এক ছড়া সাপের ডিমই-বা এল কোত্থেকে?
উপরিউক্ত প্রশ্ন দুটির জবাব অবশ্য আর মেলেনি! কারণ, আমাদের বসতবাড়িতে আমরা রাত-বিরেতে, কখনো-বা সামনের প্রবেশপথ দিয়ে, আবার কখনো-বা পেছনের অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ দিয়ে অসংখ্যবার যাতায়াত করেছি। কখনো-বা টর্চলাইট জ্বালিয়ে, আবার কখনো সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কিন্তু কোনো দিকে কারো সামনেই কোনো সাপ নজরে পড়েনি। তবে এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জেনেছি, আমাদের দুই বসতভিটার পাহারাদার সাপ একজোড়া ছিল না, ছিল দুই জোড়া সর্পরাজ!