মুন্সীগঞ্জ : সব কিছু প্রস্তুত ছিল। অপেক্ষা শুধু অনুকূল আবহাওয়ার জন্য। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা গত ১২ মে ঘোষণা দিয়েছিলেন এ সপ্তাহের মধ্যেই চতুর্থ স্প্যান বসবে। তবে তাদের ঘোষণার পরদিনই গত ১৩ মে সকালে জাজিরা প্রান্তের ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটিতে বসে গেছে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে চতুর্থ স্প্যান। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল অবকাঠামো এখন ৬০০ মিটার দৃশ্যমান। পদ্মা সেতু প্রকল্পের (মূল সেতুর) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের একটি জাতীয় দৈনিককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যান বসে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর দ্বিতীয় স্প্যান এবং গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। গত ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর মূল অবকাঠামো এখন ৬০০ মিটার দৃশ্যমান। বর্তমানে পঞ্চম স্প্যানটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে চূড়ান্ত রঙের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী। এ স্প্যানটি শতভাগ প্রস্তুত হলেই বসানো হবে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের স্টক ইয়ার্ড থেকে গত ১২ মে সকালে রওনা হয়ে সন্ধ্যার আগেই জাজিরা প্রান্তে খুঁটির কাছে পৌঁছে নোঙর করে ভাসমান ক্রেনটি। আর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গত ১৩ মে সকাল থেকেই চতুর্থ স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসানোর কাজ শুরু হয়। সকাল ১০টার মধ্যে বসানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম গত ১৩ মে জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪২ দিনে মূল সেতুর অগ্রগতি ৯ ভাগ এবং সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫ ভাগ। এ হিসাবে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ এবং মূল সেতুর কাজ ৬১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মে মাসের ১৩ দিনের হিসাব করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মযজ্ঞ দ্রুতগতিতে চলছে। অগ্রগতি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে দিনরাত বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রতিদিনই অগ্রগতি হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ হয় ২৭ ভাগ। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ ভাগ, ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ। সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছিল ৪৯ ভাগ। আর এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৫৪ ভাগ এবং মূল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৬১ ভাগ। চলতি মাসের ১৩ দিনের কর্মযজ্ঞ হিসাব করলে সার্বিক অগ্রগতি ৫ ভাগ এবং মূল সেতুর অগ্রগতি ৬২ ভাগ বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা।
দায়িত্বশীল একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতুর জন্য সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ডাঙ্গায় থাকবে দুটি। ডাঙ্গায় থাকা দুটি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ছয়টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে সেতু। মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ও জাজিরা প্রান্তে এক হাজার ৬৭০ মিটার ভায়াডাক্ট (ঝুলন্ত পথ) থাকবে।