নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা ফোরামের (টিকফা) বৈঠক আগামী মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে এতে। বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে এ বৈঠক গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ও তার বাহ্যিক প্রকাশ হলেও তা দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্ব মার্কিন-ভারতের আস্থা অর্জনের নানামুখী চেষ্টা করলেও বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে এড়িয়ে যাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরের (ইউএসটিআর) প্রতিনিধি দলের ঢাকায় বাণিজ্যসচিব ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পাবে। করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর টিকফার বৈঠক অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। যে কারণে আসন্ন বৈঠকে অনেক বিষয় গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ এখানে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব করবে। বাংলাদেশ সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবকাঠামো, সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর যেকোনোটি বেছে নেওয়ার সুবিধা দিয়েছে। আসন্ন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারে বলে জানা যায়। এখানে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা ওষুধশিল্প, হাইটেক পার্কসহ তাদের সুবিধামতো পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছয়টি পণ্যে অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা চাইবে। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হেলথ প্রোডাক্ট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, সুগন্ধি চাল রফতানি, তামাক ও তামাকজাত পণ্য ও প্রোডাকশন শেয়ারিং কটন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা দিতে পারে। মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকালে উল্লেখযোগ্য নমনীয়তা লক্ষ করা গেছে। তবে তা কতটা শর্তযুক্ত বা শর্তহীন হবে, তা নিশ্চিত নয়।
শ্রম ইস্যু, মেধাস্বত্ব, দক্ষতা, উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতেও আগ্রহী। নির্বাচন সামনে রেখে তারা এমন কোনো শর্তারোপ করতে চায় না, যা সরকারকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। তারা এখানে অবাধ, সুষ্ঠু, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায়। বিএনপি নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলতে আগ্রহী না-ও হতে পারে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি সাহায্যপুষ্ট এনজজিওগুলোকে স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলবেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র এখানে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও সংবিধান-বহির্ভূত কোনো বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই। তবে তারা সরকার ও বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা ও সম্মানজনক সমঝোতার পক্ষে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো রকম নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী তারা। বিএনপিকে মার্কিন এই মনোভাবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে জাতিসংঘের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে আলোচনা। সরকারও আলোচনা, সমঝোতার বিপক্ষে নয়, কিন্তু সংবিধান-বহির্ভূত কোনো বিষয়ে আলোচনায় যাবে না। এ ব্যাপারে টিকফা থেকে কোনো রকম মন্তব্য করা হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত এ ব্যাপারে সরকারের ওপর কোনো রকম চাপ ও প্রভাব সৃষ্টিকারী ভূমিকাও রাখছে না। সরকারকে বড় রকমের শক্তি জোগাচ্ছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাবে, তা-ও তাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয়।