বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলছে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ষড়যন্ত্রের মাত্রা ঊর্ধ্বগতিতে চড়ছে। ঠিক এটাও সেপ্টেম্বর মাস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে এগোচ্ছিল, ইয়াহিয়া-ভুট্টোর নৃশংস নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছিল এবং এক কোটি মানুষ ভারতবর্ষে চলে এসেছিল। ৪৭ বছর আগে এই সেপ্টেম্বর মাসেই স্বাধীনতা নয়, পাকিস্তানের সঙ্গেই থাকবজাতিসংঘের বৈঠকে এ কথা বলানোর জন্য আমেরিকা ও পাকিস্তান লোক ঠিকঠাক করে রেখেছিল। কিন্তু সব কিছু ভেস্তে গিয়েছিল ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতার কারণে। তাজউদ্দীন মন্ত্রিসভার বিদেশমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ তার সচিব মাহবুবুল আলম চাষী এবং আরো পাঁচ থেকে সাতজনকে নিয়ে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। খবরটা ভারতীয় গোয়েন্দারা অনেক আগেই জানত; কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ্যে আনেনি। যখন তারা বিমান সংস্থার কাউন্টারে টিকিট দিয়ে বোর্ডিং কার্ড নিচ্ছিলেন তখন ভারতীয় গোয়েন্দারা তাদের ঘিরে ফেলে এবং বিমান সংস্থার কর্মীদের বলে, বোর্ডিং কার্ড দিতে হবে না, টিকিটগুলো আমাদের দিন।
একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তা আমরা সকাল থেকেই টের পেয়েছিলাম; কিন্তু সঠিক কী ঘটতে চলেছে, তা আমরা জানতে পারছিলাম না। কারণ কেউ আমাদের টেলিফোন ধরেনি এবং ধরলেও কেউ কথা বলেনি। আমরা অন্য সূত্রে খবর পেয়েছিলাম, তারা বড় ‘অপারেশন’ করতে যাচ্ছে। অপারেশনের নেতা ছিলেন শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায়। তিনি হাত জোড় করে বিনীতভাবে খন্দকার সাহেবকে বললেন, ‘আপনি তো তাজউদ্দীন মন্ত্রিসভার বিদেশমন্ত্রী এবং আপনি এ দেশে পালিয়ে এসেছিলেন আপনার নিজের এবং পরিবারের জীবন রক্ষার জন্য। আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। আপনার দেশে পাকিস্তানি ভুট্টো-ইয়াহিয়ার অত্যাচার দেখেও আপনি এই স্বাধীনতাসংগ্রামকে বানচাল করতে উদ্যোগী হয়েছেন। আপনার লজ্জা হচ্ছে না গাড়িতে উঠুন আপনাকে যেখানে আমরা রেখেছি, সেই সুন্দরী মোহন এভিনিউয়ের বাড়িতেই আপনাকে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি।’ শরদিন্দুবাবু যখন মোশতাক সাহেবকে নিয়ে গাড়িতে উঠছিলেন আমি তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার চোখাচুখি হতেই খন্দকার আমাকে বললেন, ‘দেখছেন তো, ভারত সরকার আমার জাতিসংঘে যাওয়াটা আটকে দিলো।’ আমি তাকে একটি প্রশ্ন করতে যাচ্ছি তখন গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে গেল। এর পর থেকে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তিনি আর কোনো দিন থিয়েটার রোডের তাজউদ্দীন মন্ত্রিসভায় যাননি, সেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাজউদ্দীনের সঙ্গে তিনি ঢাকায় ফিরে গিয়েছিলেন।
সেপ্টেম্বর মাস কেন উল্লেখ করলাম, তার মধ্যে আরেকটি কারণ হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া ফারাক্কার বাঁধ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। যদিও অভিযোগ জানিয়ে নিউইয়র্কের ইস্ট রিডার থেকে জল পাননি, জলের সমস্যার সমাধান হয়েছিল দিল্লিতেই। যাক, এই সেপ্টেম্বরে কী হচ্ছে দেখা যাক। বিশেষ গোপন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্দুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের জোটকে নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য অতি উৎসাহে মেতে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যার কিছু তথ্য এবং খবর এপার বাংলায় প্রতিদিনই আসছে। এমনকি গত সপ্তাহে কলকাতায় এমন একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেমিনারে উপস্থিত ব্যক্তিরা কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জির উচ্চ প্রশংসা করে বলে গেলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ নয়, তাই তারা দলে দলে এ দেশে চলে এসেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা মাহবুবুল ইসলাম দোলন, এক সাবেক সংসদ সদস্য এবং কয়েকজন শিক্ষাবিদ। তাদের উদ্দেশ্যটা কী? আর কারাই বা এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, কেনই বা করেছিলেন সে ব্যাপারে ভারত সরকারের কলকাতার আমলারা মুখ খুলতে চাননি। কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন অফিস থেকে বলা হয়, এ ধরনের একটি সম্মেলন আয়োজন করার ব্যাপারে তারা ঢাকাকে অনেক আগেই ওয়াকিফহাল করেছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর পুনরায় ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে শুধু উন্নয়নের কাজই হচ্ছে না, দেশটি এখন পৃথিবীতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। উন্নয়নের তালিকাটি খুবই বড়। অন্য দিকে ওয়াশিংটনের একটি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করে, বর্তমান হাসিনা সরকার সঠিক পথে চলেছে। সাম্প্রতিককালে যেসব সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে শুধু জয়ী হয়নি, এরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। তা দেখে ষড়যন্ত্রকারীরা ঈর্ষান্বিত। ওই সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, হাসিনার জনপ্রিয়তা গত এপ্রিল মাসে ছিল ৬৬ শতাংশ। সাম্প্রতিককালে আবার সমীক্ষা করে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুকন্যার জনপ্রিয়তা এখন ৬৯ শতাংশ। এই ৬৯ শতাংশ মানুষই চায় আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরের নির্বাচনে উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য আবার ক্ষমতায় থাকুক। এই বিপুলসংখ্যক মানুষ আরো মনে করে, তারা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই খুশি নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে হাসিনা সরকারের যে বলিষ্ঠ ভূমিকা তা বহাল থাকুক। সূত্র বলছে, এর বাইরেও অতিরিক্ত উন্নয়নের তথ্য ওয়াশিংটনের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছে আছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন তাদের কলকাতার কনস্যুলেটে জন্মসূত্রে বাংলাদেশি এখন আমেরিকার নাগরিক এবং আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকে কাজ করেন তাদের আনা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কলকাতার হো চি মিন সরণির মার্কিন দূতাবাসে যিনি আসেন, তার নাম জন বিন লিটন। তার কুকর্ম ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তিনি আমেরিকায় ফিরে গিয়েছিলেন, তিনি আশির দশক পর্যন্ত কলকাতায় থাকাকালে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্যগুলোতে সন্ত্রাসবাদকে প্রচ- মদদ দেন। আর খালেদা জিয়া, তার স্বামী জিয়া তাদের আমলেই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্যগুলোতে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে, সরকারি নথিপত্রে এর যথেষ্ট প্রমাণ এখনো রয়ে গেছে। সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ থেকে এসে পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে হত্যালীলা চালিয়ে আবার বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেয় আর আশ্রয় দেয় খালেদা জিয়া ও তার সরকার। তাই নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই তারা আবার নড়েচড়ে বসে। বর্তমান ভারত সরকার বারবার ঢাকাকে বলেছে, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হোক, এটাই দিল্লি দেখতে চায়; কিন্তু নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই এর বেশি দিল্লি আর কিছু বলেনি। তারা এ কথাও বলেছে, ২০০১ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রর একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে এ অঞ্চলে শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়া এখনো চলছে, যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটার দিকে নজর দিতে হবে। দিল্লি মনে করে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে হাসিনা যেভাবে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, তা প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও হাসিনার এই নীতি যাতে বজায় থাকে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতও সেটাই আশা করে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আমার আসন্ন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছিল। তারা সবাই একমত, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে অন্তর্গত করা এবং তাকে সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার জন্য এক বিশাল দক্ষতার প্রয়োজন, যা গত কয়েক বছর থেকে হাসিনা ও তার দল দক্ষতার সঙ্গে দেখিয়ে যাচ্ছে। সেটা একমাত্র বজায় রাখতে পারেন হাসিনা। কারণ খালেদার আমলে লাখ লাখ মানুষকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আসতে হয়েছে। কখনো ধর্মীয় দাঙ্গার কারণে, কখনো সম্পত্তি দখলের কারণে, কখনো মন্দির ভাঙার জন্য। হাসিনার আমলে কী দেখা যাচ্ছে? যখন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে তখন ঐক্য পরিষদের পক্ষে রানা দাশগুপ্ত ও বুদ্ধিজীবীদের পক্ষে শাহরিয়ার কবিরের মতো প্রবীণ স্বাধীনতাসংগ্রামীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেল, হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাষায় তাকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হাসিনা সরকার বিপুল সাফল্য লাভ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তাই সীমান্ত ডিঙিয়ে গত সাত-সাড়ে সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে বহু দুষ্কৃতকারী ও চোরাকারবারি এপার বাংলায় এসে সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের আশ্রয়দাতা কে? তারা নির্বাচনের সময় ওপার বাংলায় গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেই আওয়ামী লীগের শত্রু আছে। তারা হিংসা, পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তারা কখনো লন্ডন, কখনো কলকাতা আবার কখনো বা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্যে গিয়ে বিশৃঙ্খলার উসকানি দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যেকোনো শক্তি তা ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ বা কলকাতার হো চি মিন সরণি হোক ষড়যন্ত্র করে সফল হবে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে সে দেশের উন্নয়ন।
বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা ছিল উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ। কথা ছিল বিশ্বব্যাংক এই সেতু নির্মাণে বাংলাদেশকে আর্থিক সাহায্য দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পিছিয়ে গেলেও হাসিনা সরকার পিছিয়ে যায়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ বাংলাদেশ সরকার করছে এবং তা দ্রুতগতিতেই করছে।
সমস্যাটা কোথায়? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যার সঠিক তথ্য নতুন প্রজন্ম, ভোটার, এমনকি যাদের ৪৫-৪৬ বছর বয়স তারাও জানেন না। তাদের জানানোর জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানা নেই। এর ফলে নতুন প্রজন্মের পক্ষে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীরা সেই সুযোগটার পুরো সদ্ব্যবহার করে চলেছে। শেখ হাসিনাকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা তাদের কতটা আছে তা ভারতের ইতিহাসবিদরাও জানেন না। তাই পাকিস্তানি গুপ্তচর আইএসআই এই সুযোগটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের গড় আয় অনেক বেশি। তাই ভুট্টো-ইয়াহিয়া থেকে ইমরান খানসবার শ্যেনদৃষ্টি কী করে বাংলাদেশ ও বাঙালিদের খতম করা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ না দেখার কথা নয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এমনকি তার মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশে সুসম্পর্ক গড়তে প্রথম অগ্রাধিকার হলো পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের। তিস্তার পানিচুক্তি। গত কয়েক বছর বাংলাদেশে গেছি। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেখা হলেই তারা প্রশ্ন করেছে, আপনারা আমাদের তিস্তার পানি দিচ্ছেন না কেন? আমি তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি, এ কথার জবাব দিতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এই চুক্তি করতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বাধা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ঢাকায় সফর করতে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, যত দিন হাসিনা ও মোদি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী পদে তিস্তাচুক্তি তার মধ্যেই হবে। এর মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাদ সেধেছেন। বর্তমানে এ ব্যাপারে মোদি আর কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে ওয়াকিফহাল মহলের ধারণা, মমতার মন্ত্রিসভার এক সদস্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ‘তিস্তার জল দিয়ে আমরা কি হাসিনাকে জেতাব?’ এর উত্তরে আমি বলেছিলাম, তবে আপনারা কাকে জেতাতে চান, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক যদি এই পর্যায়ে চলে যায়, তবে কোন সুসম্পর্ক আমরা আশা করব; যে সুসম্পর্কের কথা ১৯৭১ সালে এপার বাংলার মানুষরা মনে করেছিল। তাই সেপ্টেম্বর মাসটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
লেখক : পশ্চিমবঙ্গের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক