বাংলাদেশকে ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে চায় চীন

নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশকে নগদ অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছে চীন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশের যে পরিমাণ আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন, চীন তা দেবে। চীন চায় না বাংলাদেশ বড় রকমের কোনো বিপদের সম্মুখীন হোক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ঋণ সুদসহ পরিশোধের চাপ পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। বিশাল অঙ্কের সুদসহ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাংলাদেশের থাকলেও তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। খাদ্যশস্য সংগ্রহসহ জরুরি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশকে সংকটে পড়তে হতে পারে। সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে চীন বাংলাদেশের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সব রকম সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তাদের সর্বাত্মক সহায়তার কথা জানিয়েছেন। চীন সাধারণত নগদ অর্থ সহযোগিতা করে না। তারা প্রকল্প সাহায্য দিয়ে থাকে। তাদের এই সহযোগিতায়ও এমন কিছু শর্ত থাকে, যা ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য এবং চূড়ান্তভাবে তাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়। ঋণগ্রহীতা অনেক দেশ ঋণের ফাঁদে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি দেউলিয়া পর্যন্ত হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। কেবল চীন নয়; আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে নেওয়া ক্ষতিকর শর্তযুক্ত ঋণ নিয়ে পরিশোধে ব্যর্থতা তাদের অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলেছে। অবশ্য দেশগুলোর শাসনব্যবস্থায় গলদ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের অভাব, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে তারা বিপদে পড়েছে। চীন রেলের কয়েকটি প্রকল্পে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এমন কিছু শর্তে অর্থায়ন করেছে, তবে তা বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলার মতো নয়।
চীন বাংলাদেশে তিন লাখ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছে। আগামীতে আরো লক্ষ কোটি টাকা তারা এখানে বিনিয়োগ করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অনুন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনেক উন্নত দেশকেও ভয়াবহ বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলেছে। বাংলাদেশের নেতৃত্ব তার দূরদর্শিতা ও দক্ষতা দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সংকট উত্তরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সামনে সংকট হতে পারে। এ সম্ভাবনা থেকেই চীন বাংলাদেশের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে থাকার কথা জানিয়ে গেছে। ৪০ হাজার কোটি থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা অত্যন্ত সহজ শর্তে ঋণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। এমনকি এই অর্থের এক-তৃতীয়াংশ সুদমুক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। প্রয়োজনমতো বাংলাদেশ এই অর্থ চাওয়া মাত্র পাবে। চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনগণের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে যা করেনি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তা-ই করার কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে।