বাংলাদেশি তরুণ যাচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে

ঠিকানা রিপোর্ট: নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকান ফিল্ম মেকার সারওয়ার হাবিব এর নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ সিনেমা ” মেইড ইন চায়না ” আগামী মাসে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য কান ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শনের জন্যে নির্বাচিত হয়েছে। এই ফেস্টিভালে শর্ট ফিল্ম কর্নারের ভিডিও লাইব্রেতিতে মে ১৪ থেকে ১৯ মে ,২০১৮ পর্যন্ত থাকবে। ফেস্টিভাল কর্তৃপক্ষ সারওয়ার হাবিব কে সেটা কনফার্ম করেছে। এছাড়াও সল্পদীর্ঘ এই সিনেমাটি ১৯ এ মে বিশেষ প্রদর্শন প্রজেকশন করা হবে সারা পৃথিবী থেকে আসা সিনেমা বাজারের প্রডিউসারদের জন্যে ।
” মেইড ইন চায়না ” চলচিত্রে নিউইয়র্ক শহর কে সারা পৃথিবীর শহুরে জীবনের শহরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যে শহরে মানুষ হাসে, কাঁদে আর শেষ পর্যন্ত মরে যায়। শহুরে জীবনে কিভাবে জীবন নিজস্ব জায়গা থেকে হারিয়ে যায়। কেউ টের পায়না। ঠিক এভাবেই এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে সুদূর চায়না থেকে এক মেয়ে স্টুডেন্ট হয়ে নিউইয়র্ক এ সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় আসে , আর শেষে সে সবকিছুই হারিয়ে ফেলে।
সিনেমার মুল গল্পটা এ রকম যে, চায়না থেকে বিপুল স্বপ্ন নিয়ে আসা এক তরুণী ছাত্রীর জীবনের অন্ধকার অংশ। যে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে। ” লি ” – যিনি নিউইয়র্ক শহরের একটি কলেজে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন এবং চীনে তাঁর পরিবারকে ফেলে ভাল জীবন প্রত্যাশা স্বপ্নের এই শহরে এসেছে। ” লি ” নামের এই তরুণী নিউইয়র্ক এ যে, এফ , কে বিমান বন্দরে নেমে ট্যাক্সি কাব্য নিয়ে তার এক পুরন বান্ধবীর বাসায় ওঠে। শহরে প্রথম প্রথম সবকিছুই খুব চমৎকার ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে এই শহরের অন্ধকার দিকগুলি ধরা দেয় । বান্ধবী বাসা ভাড়া এবং অন্যান্য বিলের জন্যে তাকে চাপ দেয়। অর্থ সঙ্কট সমাধানের জন্যে সে জব খুঁজতে বের হয়ে যায়। কোথাও জব মেলেনা, লিগ্যাল কাগজ পত্রও না থাকবার কারণে। তার মধ্যে হতাশা ঢুকে যায়। হঠাৎ এক স্পা সেন্টার এ গিয়ে কাজ খুঁজে। স্পা ম্যানেজার তাকে দেখেই কাজে নিয়ে নেয়। সে প্রথম প্রথম খুব খুশি হয়। কিন্তু এখান থেকেই জীবন পরিবর্তন হতে শুরু। স্বপ্ন ভাঙ্গার শুরু এখান থেকেই । “লি ” এর অভিজ্ঞতা ছিলনা এই কাজের। তাকে বিভিন্ন দেশের মানুষরা এসে বিভিন্ন রকম ডিমান্ড করে। এক এক জনের চরিত্র এক এক রকম । একবার ভাবে সে কাজ ছেড়েই দিবে। কিন্তু স্পা ম্যানেজার তাকে বোঝায় সব কিছুকে মেনে নিতে হবে। তার আর ফিরে যাবার উপায় থাকে না। সে আস্তে আস্তে শেষ পর্যন্ত একজন যৌন দাসীতে পরিণত হয়। কলেজ থেকেও বিতাড়িত হয়ে যায়। আমেরিকান স্বপ্নের অন্ধকারে মুখোমুখি হওয়ার ফলে তার শেষ অবধি নতুন যাত্রা শুরু হয়। সেখানে থাকে নতুন শহরের শহুরে জীবনের সমস্ত উত্থান আর পতন।
সিনেমার বিভিন্নœ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শেরী কিউ, জ্যানেট মারক, জাস্তিন ক্রিক্লান্দ, ক্যামেলিয়া কাসানভা, রেজি এবং অনন্যা রা। বেঙ্গল স্টুডিও ইঙ্ক এর ব্যানারে প্রডিউসার ছিলেন লুইস পেদ্রন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর আলি আস্রার , চিনেমাটগ্রাফিতে ছিলেন ইউসুকে আর মিউসিক করেছেন মেং । স্ক্রিপ্ট এবং নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশী তরুণ সারওয়ার হাবিব। নির্মাতা ফিল্ম গ্রাজুয়েশন করছেন ব্রক্লিন কলেজ এ, পড়েছেন মিডিয়া স্টাডিজ নিয়ে লাগরদিয়া কলেজে এ এবং নিউ ইয়র্ক ডিজিটাল ফিল্ম একাডেমী থেকে এক বছরের সিনেমা ডিরেকশন । এছাড়াও বাংলাদেশে ঢাকা ইন্সিটিউট থেকে ফিল্ম শর্ট কোর্স আর থিয়েটার স্কুল থেকে এক বছরের অভিনয় কোর্স সম্পাদন করেছেন এবং বাংলাদেশে ইষ্ট ওয়েস্ট ইউনিভারসিটি থেকে ইংরেজিতে গ্রাজুয়েশন করেছেন।
বর্তমান এ কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেঙ্গল স্টুডিও ইঙ্ক নিয়েই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। এখন আমরা একটা গভর্নমেন্ট প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। ৫০ টি দেশের ল্যাঙগুয়েজ এ আমেরিকান সিটিজেনসিপ কিভাবে নেয়া হয়- সেই এডুকেশনাল ভিডিও বানাচ্ছি। এছাড়াও স্টুডিওর বানার থেকে আমরা যে কোন কর্পোরেট ভিডিও, টেলিভিশন কমার্য়াশিয়াল , ইভেন্ট ফটগ্রাফি এবং ভিডিও গ্রাফি নিয়ে কাজ করছি। তবে মেইনস্ট্রিম সিনেমা টাই আল্টিমেট লক্ষ্য। কান উৎসব থেকে ফিরেই নতুন সিনেমায় হাত দিব। যা পরবর্তী বছরে অস্কার শর্ট ক্যাটাগরিতে অংশ গ্রহণ করবে।
তাকে ভবিষ্যৎ দেশীয় সিনেমা ভাবনার জন্যে প্রশ্ন করা হলে বলেন, বাংলাদেশের জন্যে কাজ করতে চাই। সে জন্যে শুধু একটা পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা এখানে যে ভাবনার জায়গা থেকে কাজ করি সেই ভাবনার প্রাকটিস তা বাংলাদেশের জন্যে প্রয়োজন। তবে আশাবাদী পরিবর্তন আসবেই, আসতেই হবে । কান উৎসব এ যাচ্ছেন- এ বাপারে অনুভুতি জানতে চাইলে উনি বলেন, বাংলাদেশ কে পৃথিবীর মানচিত্রে অন্যরকম একটা জায়গায় নিয়ে যাবার ভাবনা আমার বুকের ভেতর ছিল দীর্ঘদিন থেকে। একেবারেই আমার মত করে, আমার কাজ দিয়ে। এটার শুভ সূচনা হল মাত্র।