বাংলাদেশের ঈদের বাজার ভারতীয় পোশাকে সয়লাব

ঢাকা অফিস : ঈদকে সামনে রেখে নতুন নতুন পোশাক বাজারে নিয়ে আসে বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলো। সারাবছরে বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা চললেও এ সময়টাকে লক্ষ্য করেই চলে তাদের মূল আয়োজন। কিন্তু ফ্যাশন উদ্যোক্তারা বলছেন, যেখানে ঈদের সময় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা চলে, সেখানে দেশীয় পোশাক থেকে আসে মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। বাকি পুরোটাই চলে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি পোশাকের আধিপত্য।
কেন জায়গা করতে পারছে না দেশীয় পোশাক : বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী এলাকার বাসিন্দা মিসেস অ্যানি। কি ধরনের কাপড কিনছেন জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, পোশাকের জন্য তার প্রধান পছন্দ ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি কাপড়।
আমি যেহেতু কটন নেবো, ভারতীয় থ্রি-পিসই খুঁজছি। বনানী সুপার মার্কেটে কটনের ভালো থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি কিনে বানিয়ে নেবো। দেশীয় বলতে আড়ং-এ আসলে দেশীয় ভালো পাওয়া যায়। আর তো দেশীয় আমি খুব একটা ভালো দেখতে পাই না।
কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অনেক ফ্যাশন হাউজ। উদ্যোক্তারা বলছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। বড় বড় উৎসবকে সামনে রেখে সেসব ফ্যাশন হাউজ দেশের ডিজাইনারদের তৈরি নতুন নতুন ধরনের নকশার পোশাক নিয়ে আসে। যেমনটা এবারও ঈদকে সামনে রেখে এসেছে।
দেশীয় ফ্যাশন হাউজে কিনতে আসা ক্রেতাদের কথায় উঠে আসে সাধারণত্ব এবং আরামবোধের বিষয়টি। কিন্তু অনেক ক্রেতার কাছে পোশাক বাছাইয়ে এরচেয়ে বড় বিবেচ্য-পোশাকের চাকচিক্য ও নকশা। ফলে তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিদেশি কাপড়ের পোশাক।
তাদের কথা বিবেচনায় দোকানগুলোতের বিদেশি পোশাকের পসরা। রাজধানীর সানরাইজ প্লাজার কয়েকজন বিক্রেতা জানাচ্ছেন, তাদের শো-রুমে দেশীয় কোনও কাপড় নেই, সব ভারতীয়।
বসুন্ধরা সিটি, বনানী সুপার মার্কেট কিংবা পিংক সিটিসহ অনেক মার্কেটের বহু দোকান এখন ভারতীয় ড্রেসে সয়লাব। এরপরেই আছে পাকিস্তানের কাপড়। তাছাড়া চাইনিজ কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে।
কয়েকজন ক্রেতা বলছিলেন, দেশীয় বুটিকের কাপড় তুলনামূলক সিম্পল বলে মনে হয়, তবে ততোটা গর্জিয়াস নয়।
যদিও বাংলা বর্ষবরণ, কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদিকে সামনে রেখে দেশীয় কাপড় বা পোশাকের বাজারটি বেশ জমে ওঠে, কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট থাকে মূলত ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে। সেখানে ভারতীয় বা পাকিস্তানি কাপড়ের প্রতি এ আগ্রহ দেশের বুটিক শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে, বলছেন বুটিক হাউজ বিবিয়ানার সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার।
আমরা যেভাবে ডিজাইন করে যাচ্ছি, সেগুলো দিয়েই কিন্তু তিন বছর আগে ভালো ব্যবসা করে গেছি। কিন্তু তখন কেনো করতে পেরেছি? কারণ তখন এই মার্কেট এতো ওপেন ছিলো না। প্রতিযোগিতা যতো বাডছে, আমরা ডিজাইন নিয়ে ততো কাজ করছি। আসলে মার্কেটটা এখন এতো ওপেন হয়ে গেছে, এমনকি ওইসব দেশ থেকে বিশেষ করে ইন্ডিয়া থেকে লোকজন এসে হোটেল ভাড়া করে পুরোদমে বিজনেস করে, এ সিজনটাতে কাজে লাগিয়ে তারা চলে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্যাশন হাউজের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। লিপি খন্দকার আরও বলেন, ভারত থেকে এই পণ্যগুলো যদি যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আসে, তাহলে কিন্তু দামের বিষয়টা আমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় আসবে না।
বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর সংগঠন ফ্যাশন উদ্যোগের এক জরিপের তথ্য অনুসারে ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সেখানে দেশের বুটিক হাউজগুলোর ব্যবসা মাত্র চার হাজার কোটি টাকার মতো। তার মানে বাকিটা বিদেশের কাপড় আর পোশাকের দখলে।
কিন্তু দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো কেন পিছিয়ে? এর কারণ পোশাকের মান, নাকি ডিজাইনের অভাব?
এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ-এর সত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, যে কাপড়গুলোর সাথে আমাদের কাপড়ের তুলনা করা হয়, আসলে আমাদের নিজস্ব ধরণ থাকে, আমরা রিসার্চমূলক কাজ করি। আমরা চাইলেই তো ইন্ডিয়ান নেটের কাপড় বানাবো না। এখন কথা হচ্ছে যদি বাংলাদেশের আরও ৭/৮টা উৎসব দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পাওে, তাহলে ঈদে কেনো পারবে না? ঈদ কি ভিনদেশী উৎসব?
তিনি বলেন, অজস্র কাপড়, যেগুলো কর ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকছে। কেউ জানে না, কারো অগোচরে ঢুকছে তাতো না। দায়িত্ব আসলে সরকারের- এটা দেশে কতোটা দেশি কাপড় বিক্রি হবে, কতোটা বিদেশি কাপড় বিক্রি হবে- সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের।
তিনি আরও বলেন, স্যাটেলাইটের যুগে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই টিভি-সিনেমা দেখে চাইছে ভিনদেশী কাপড়ে সাজতে। এটা ব্রেইনওয়াশ হওয়ার মতো।