বাংলাদেশের এবারের বাজেট

কাজী মোশাররফ হোসেন

বাজেট কেবলমাত্র একটি বছরের আয়-ব্যায়ের হিসাবই নয় বরং জাতীয় অগ্রগতি, সামাজিক ন্যায়-বিচার এবং আগামী বছরগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপরেখাও বটে। সর্বস্তরের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, বিদেশী বিনিয়োগ, ভিন দেশে কর্মরত মানুষের রেমিটেন্স ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সাহায্যে করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ঘোষিত বাজেট কতটুকু সাহায্য করবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ব্যাংকিং সেক্টরের নৈরাজ্য রোধের কোন নির্দেশনা এই বাজেটে নেই। মূলত অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতাই ব্যাঙ্কিং খাতের নৈরাজ্যের জন্য ১০০% দায়ী। অথচ পদত্যাগের বদলে আবার বাজেট ঘোষণার সুযোগ পেলেন তিনি। ঘোষিত বাজেটকে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বাজেট বলা চলেনা। প্রথমতঃ গার্মেন্টস সেক্টর আমাদের প্রধানতম আয়ের উৎস। অথচ আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকেই উত্তরবংগে থেকে ঢাকায় থেকে মানবেতর জীবন যাপন করেন। গার্মেন্টস শিল্প ‘হাব’ তৈরি করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা সদরে গার্মেন্টস স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা যেত। গার্মেন্ট শিল্পের ২৫% কারখানা উত্তরবঙ্গে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। কর্মমুখী শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নারীরক্ষমতায়ন এবং স্বাবলম্বী ও শিক্ষিত করার বিষয়টি বাজেটে প্রাধান্য পায়নি। আই,টি খাতে যেখানে ৬ লক্ষ বিদেশি লোক কাজ করছে, সেখানে বুট ক্যাম্পের মাধ্যমে আইটিতে দক্ষ জনবল তৈরির তেমন সুযোগ রাখা হয়নি। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণের লক্ষে নতুন জাহাজ ক্রয় বা তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সাধারণ জনগণের আমিষের চাহিদা মেটানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তা মেটানোর ব্যবস্থা অত্যাবশ্যকীয়। নিজস্ব অর্থায়নে ড্রেজিং মেশিন বানানো ও নদী খননে নিয়োজিত রাখা জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০০ ড্রেজারের কথা বলেছেন। অথচ এর জন্য কোন বরাদ্দ নাই, আকস্মিক বন্যা রোধে এবং খাদ্য সম্পদ রক্ষায় যা অন্যান্য ভূমিকা পালন করে। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ফাঁকফোঁকর রয়েছে। অনেকের ধারণা শুধুমাত্র ব্যাঙ্কিং খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে সহজেই ১০% শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। অথচ অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে যুবক-বৃদ্ধ রেসিওতে যুবকের সংখ্যা উন্নত দেশ ও অনেক উন্নয়শীলদেশের চেয়ে বেশি। সেই হিসাবে প্রবৃদ্ধি ১০% এর বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আদিবাসী ৬ লক্ষ এবং বাঙালি পাহাড়ীর সংখ্যা ৬ লক্ষ, এই ১২ লক্ষ লোকের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। অথচ এদের কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে অবশ্য পাহাড়ী ও বাঙালির মধ্যে ব্যবধান কমে আসতো এবং সংঘাত কমে এসে শান্তি বিরাজ করতো যা উন্নয়নের মূলমন্ত্র। উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ী এলাকায় আরও বেশি নিরাপত্তা বাড়িয়ে পর্যটন সমৃদ্ধির মাধ্যমে দেশজ আয় বাড়ানোর সম্ভব ছিল।
-লস এঞ্জেলেস।