সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
আর কয়েক সপ্তাহ পরেই বাংলাদেশের সংসদের নির্বাচন। এ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে একটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া গত জুন মাসে তার দলের বেশ কিছু নেতাকে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন তদবির করতে, যাতে দিল্লি বিএনপি ও জামায়াতকে সমর্থন করে। শুধু জুন মাসেই নয়, চলতি সপ্তাহে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা দিল্লিতে তদবির করেছেন, ভারত যেন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন করে। কিন্তু খালেদা জিয়া এর আগে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে শুধু দিল্লি নয়, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও ক্ষুব্ধ। খালেদা জিয়া ও তার লন্ডনপ্রবাসী পুত্র একটি মন্তব্য করেছেন। মাতা-পুত্র বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে গত ১০ বছর ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে যেসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন হয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। খালেদা জিয়ার এই উক্তিতে দিল্লির প্রশাসন যারপরনাই চিন্তিত। দিল্লির প্রশাসন প্রশ্ন তুলেছে, খালেদা জিয়ার এই দুমুখো নীতি কেন?
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিগত শতকের পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার পর ইন্দিরা-মুজিব যেসব চুক্তি হয়েছিল, তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তখন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সমর সেন বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম নায়ক খন্দকার মোশতাক আহমদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মোশতাক ও জিয়া তাকে বলেন, এই সামরিক সরকারকে ভারত স্বীকৃতি দিক। সমর সেন মোশতাক-জিয়ার মুখের ওপর বলে দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে সম্পাদিত সব চুক্তি পুনর্বহাল করুন, তা না হলে ভারত সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। তখন ঢাকায় মার্শাল ল। ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সমর সেনের প্রস্তাব অর্থাৎ ভারতের প্রস্তাব জিয়া-মোশতাক জুটি মেনে নেয়। তাই দিল্লি মনে করছে, বিধবা খালেদা স্বামীর পথেই এগোবেন? সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে সমর্থনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, স্বয়ং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সেই সময়কার পুরনো ফাইল এনে যাবতীয় তথ্য জেনে নিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে বিএনপি নেতারা দিল্লিতে এসে বিজেপির শীর্ষ নেতা রাম মাধবের সঙ্গে এবং একজন জুনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে প্রস্তাব দেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে ৫০টি কেন্দ্রে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মনোনয়ন দেবে, আর ক্ষমতায় এলে পাঁচজন সংখ্যালঘু হিন্দুকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান রানা দাশগুপ্ত বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতকে আমরা বিশ্বাস করি না। ভারত যদি বিশ্বাস করে, তবে ভারত একটি ঐতিহাসিক ভুল করবে। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সব সময় নেত্রী হাসিনার সঙ্গে কথা বলি এবং অনেক দাবি-দাওয়া আমরা আদায়ও করে নিই। আমরা বিএনপির ফাঁদে পা দেবো না। আমরা ভুলে যাইনি, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া কিভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিলেন। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন। সমগ্র বিষয়টি এখন দিল্লির কোর্টে।’
শুধু বিএনপি নয়, তাদের দোসর জামায়াত হাজার হাজার সংখ্যালঘুকে খুন করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা তাকিয়ে আছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট আবারও ক্ষমতায় যাতে ফিরে আসে সেদিকে। এদিকে বোমা ফাটিয়েছেন ভারতের সাবেক বিদেশসচিব কৃষ্ণান শ্রীনিবাসন। কৃষ্ণান সম্প্রতি কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বলেছেন, ভারতের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুত্ব স্থাপনকে, তা একমাত্র সম্ভব হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেছেন, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই ষোলো আনা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান জেল থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকায় এক বিশাল জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার দেশ সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলাদেশের সংবিধানেও মৌলিক অধিকার হিসেবে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে। তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পিতার আদর্শ সামনে রেখে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচালনা করছেন।
সম্প্রতি মধ্য কলকাতার একটি পুরনো বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় কিছু প্রবীণ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, হাইকোর্টের কিছু উকিল এবং কয়েকজন লেখক বিজয়া দশমীর পর মিলিত হয়েছিলেন। ওই রেস্তোরাঁর একজন ম্যানেজার চা দেওয়ার সময় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি প্রশ্ন তোলেন। তিনি আমাদের প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে? ওই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক তরুণ গাঙ্গুলী, যিনি বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় রিপোর্ট করেছেন। উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএস অফিসার বুদ্ধদেব ঘোষ। তারা ওই হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার বাংলাদেশ নিয়ে এত আগ্রহ কেন? তার সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার মুখে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কিভাবে পাকিস্তানি খান সেনারা নির্বিচারে স্বাধীনতাপাগল বাঙালিদের ওপর হত্যা চালিয়েছে। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে গিয়েছিলেন; কিন্তু পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমরা সপরিবারে এ দেশে চলে আসি। আমার জন্ম এ দেশে।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাদের এই রেস্তোরাঁয় দেশ-বিদেশের বহু লোক চা-কফি খেতে আসেন। এমন সব লোক এখানে আসেন, যাদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমার কানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা আসে। বাবা বলতেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব না দিলে পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হতো না।’ ওই আড্ডায় আরো একজন উপস্থিত ছিলেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র গুপ্ত। পবিত্রবাবু বললেন, ‘অবসর নেওয়ার পর রামকৃষ্ণ মিশনের আতিথেয়তায় আমি বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বছরে অন্তত দুইবার ঘুরে বেড়াই। গোটা দেশে উন্নয়নের যে সুনামি বয়ে চলেছে, তা প্রত্যক্ষ করি। এবার বাংলাদেশে ৩৮ হাজার দুর্গাপূজা হয়েছে। কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি এই পূজায় বাধা দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলোর মোকাবেলার জন্য যে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন, তাতেই বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।’
ভারতের সাবেক বিদেশ সচিব তার প্রবন্ধে আরো লিখেছেন, বাংলাদেশকে বর্তমানে ভারত ১২ বিলিয়ন ডলার ক্রেডিট দিয়েছে। ফলে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও রেল যোগাযোগের উন্নতি হচ্ছে। সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা প্রসারিত হয়েছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করেছে। শুধু রেল যোগাযোগব্যবস্থাই নয়, সড়কপথেও দুই দেশের মধ্যে অনেক উন্নতি হয়েছে। ৯টি জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। দুই দেশের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। উভয় দেশই ব্যবসা-বাণিজ্য আরো সহজ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
কৃষ্ণানের আরো বক্তব্য, বাংলাদেশের নির্বাচন ভারতের কাছে সব সময় একটা বড় ফ্যাক্টর বলা যায়। বর্তমানে খালেদা জিয়া ও তার প্রবাসী পুত্র অনেক কেসের মুখোমুখি। সুতরাং বিএনপির নির্বাচনে জয়লাভ করা অসম্ভব হলেও তাদের উপদেষ্টারা, বিশেষ করে আমেরিকা ও পাকিস্তান তা মনে করে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থেকে এবং হত্যার পরেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা নাক গলাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রস্থল হলো কলকাতার হো-চি মিন সরণি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে দিল্লি কেন তাদের নাক গলাতে দিচ্ছে? এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর সঙ্গে। উভয়ই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিল্লি কূটনীতি করছে। কেন এই বিষয়টি দেখছে না। সোমেনবাবুর আরো প্রশ্ন ২০১২ সালে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং উভয় দেশের মধ্যে আরো সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন কে বা কারা সফর বানচাল করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল, আমরা তা ভুলে যাইনি। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে তারা পশ্চিমবঙ্গে কলকাতাসহ ছয়টি সীমান্ত জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কাছে খবর এই সন্ত্রাসবাদীরা বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং নির্বাচনের দিন প্রচ- গোলমাল বাধানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ড. সিংয়ের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। এতে কি প্রমাণিত হয় না, সিপিএম তথা বামপন্থী দলগুলো হাসিনার পাশে ছিল এবং থাকবে। সূর্যবাবু সোজাসাপ্টা মানুষ। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘উভয় দেশের স্বার্থে আমরা চাই তৃতীয়বারের জন্য হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘জানি না, কী কারণে, কোন মোহে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে এ দেশে ঠাঁই দিয়েছে।’ সে কি ভোটের জন্য? চার বছর আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে প্রচুর পরিমাণে বোমা বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। ওই বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় যখন হৈচৈ পড়ে যায় তখন বঙ্গেশ্বরী মমতা ব্যানার্জি মন্তব্য করেছিলেন, ‘দুষ্ট ছেলেরা কালীপূজার পটকা বানাচ্ছিল।’ কিন্তু ভারত সরকারের এনআই গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে তদন্ত করে দেখেছে। কিছু লোককে ধরে ফেলেছে এবং কিছু লোক বাংলাদেশে পালিয়েও গেছে। সেগুলো পটকা ছিল না, ছিল বোমা। সেগুলো বানিয়ে বাংলাদেশে পাচার করার উদ্যোগ নিচ্ছিল তারা। ধরা পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মমতার মিডিয়াগুলোতে অহরহ আওয়ামী লীগ ও হাসিনার নেতৃত্বকে নিচু করে দেখিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা হচ্ছে জামায়াতকে। কোনো কোনো মিডিয়ায় এ খবরও বের হচ্ছে, হাসিনার দলকে মোকাবেলা করার জন্য এরই মধ্যে জামায়াত নাকি ১০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ নেতারা যখন বিএনপি নিয়ে ব্যস্ত তখন গোপনে জামায়াত প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার জন্য।
আমাদের সেদিনকার রেস্তোরাঁর আড্ডায় হঠাৎ এসে উপস্থিত হলেন মালদহের তিনবারের কংগ্রেস সংসদ সদস্য ডালু খান সাহেব (বরকত খান চৌধুরীর ছোট ভাই)। তিনি মন্তব্য করলেন, ‘গত সাড়ে চার বছরে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেশ কয়েক হাজার জামায়াতি এসে মালদহে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। আমি জেলা পুলিশকে বলেছিলাম, কেন এই বিদেশিদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? জেলা প্রশাসনের কর্তারা হাত জোড় করে বললেন, আমরা সব জানি, কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে দিদির কোনো হুকুম নেই। সুতরাং পরিস্থিতির কোনো হেরফের হচ্ছে না।’ তিনি বললেন, ‘যেহেতু আমরা (কংগ্রেস) এখন পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতে ক্ষমতায় নেই, তাই আমরা জেনেশুনেও কিছু করতে পারছি না, যতক্ষণ না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকেও বলেছি। তাকে আমি এ-ও বলেছি, আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়ন করছেন অথচ পশ্চিমবঙ্গে জামায়াত নামক সন্ত্রাসবাদী শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। তিনি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে না জানালে আমাদের কিছু করার নেই। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে, এ ব্যাপারে টিভির পর্দায় একটি আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনায় আমিও অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মমতার মন্ত্রিসভার একজন প্রবীণ মন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, হাসিনাকে জেতানোর জন্য আমরা তিস্তা চুক্তি করব না, তবে আপনারা কাকে জেতাতে চান? তিনি সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর পর পদ্মা-মেঘনার জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে, এ দেশে কারা খালেদা জিয়া ও জামায়াতের পক্ষে আর কারা পক্ষে নয়।’
বিজেপি তথা আরএসএস নেতা রামমাধব বিএনপি নেতাদের কী বলেছেন, তা জানা যায়নি। তবে প্রশাসন ও গোয়েন্দারা বলছে, খালেদার রাজত্বের সময় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্যগুলোতে সন্ত্রাসবাদ এতই বেড়ে গিয়েছিল, হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তা শুধু বন্ধ করাই হয়নি, তার শিকড়টাও তিনি উপড়ে ফেলেছেন। সেই সময় পাকিস্তান থেকে জাহাজে করে বিপুল অস্ত্র ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্যে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে তুলে দেওয়ার খবরও গোয়েন্দাদের কাছে ছিল। ভারতের একজন প্রবীণ কূটনীতিবিদ বলেন, ‘রামমাধবরা কী করবেন সেটি তাদের ব্যাপার; কিন্তু আমরা অর্থাৎ প্রশাসকরা মনে করি, খালেদাকে সাহায্য করার অর্থ হলো ভারতের বিদেশনীতির আত্মহত্যা। কারণ তাদের দ্বিমুখী নীতি হলো ভারতের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’
লেখক : পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সাংবাদিক