সাঈদ-উর-রব : দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনকে অবিকৃতভাবে ছবিতে ধারণের নেশায় পেট্রিট শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জনকারী ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর ফটো এডিটর নাসির আলী মামুন নিউইয়র্কে ঠিকানাকে প্রদত্ত একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন ২ হাজার রাজনীতিকের কাছে। এ অবস্থা থেকে দেশটিকে মুক্ত করতে দরকার জনসচেতনতা। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা-মহল্লায় প্রতিরোধ রচনা করতে হবে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে। নাসির আলী মামুন নিউইয়র্কে আসার আগে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গি হিসেবে চীন, কানাডা এবং ওয়াশিংটন ডিসি ভ্রমণ করেন। ১০ ডিসেম্বর অসলোতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও তিনি থাকবেন ডঃ ইউনূসের সাথে। ১৯৭৮ সাল থেকেই রয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের এই প্রাণ পুরুষ, গরিব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে নিরলসভাবে কর্মরত সদ্য নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে। ডঃ ইউনূসকে নিয়ে নাসির আলী মামুনের গর্বের সীমা নেই। অনেক জ্ঞানী-গুণিজন কর্তৃক ডঃ ইউনূসকে আবিস্কারের অনেক আগেই তিনি তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, মানবতাবাদ সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন বলেও দাবি করেন নাসির আলী মামুন। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই, এমনকি প্রথম ৬ বছর নিজের ক্যামেরাও ছিল না, ধার করে ছবি তুলেছেন, ফিল্মও অনেক সময় কিনতে হয়েছে ধার করেই-এভাবে কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে পোট্রেট ফটোগ্রাফির জনক হিসেবে পরিচিত নাসির আলী মামুন ঠিকানা অফিসে এসেছিলেন ২৭ নভেম্বর। সে সময় ১৯৭২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পোর্টেট ফটোগ্রাফি এবং নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা এখানে উপস্থাপন করা হলো।
মামুন বলেছেন, ১৯৬৩, ৬৪, ৬৫ সালের দিকে, আমার বয়স ১১-১২ বছর হবে। সে সময় আমাদের বাসায় পত্রিকা আনলে প্রথমেই আমি সেটা থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি (যেমন রাষ্ট্র প্রধান, বিখ্যাত কবি, বিখ্যাত লেখক, বিজ্ঞানী, অভিনেতা-অভিনেত্রী ইত্যাদি) কেটে নিতাম এবং ভাল করে পরখ করতাম, কীভাবে কোন পোজে ছবিটি উঠানো হয়েছে। কীভাবে সেই ফটোগ্রাফার ক্যামেরা ফোকাস করেছেন, কোন আলোতে কী কৌশলে-সেটিও কল্পনায় আঁকতাম। বিষয়গুলি আমার মনে খুব রেখাপাত করতো, কৌতুহল জাগাতো। ভাবতাম, সেই ফটোগ্রাফারকে আমি কী দেখতে পারবো, বিখ্যাত লোকদেরকে কী কাছে পাবো? এভাবে আমি বিখ্যাত ব্যক্তি, সিলিব্র্যাটি, আইকনদের সান্নিধ্য লাভে সচেষ্ট ছিলাম। বাংলাদেশে এ ধরনের কেউ আসছেন জানতে পারলে সেখানে যেতাম। বাংলা একাডেমীসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতাম এবং দেশী-বিদেশী সিলিব্র্যাটিদের দেখতাম। সেই বিখ্যাত ব্যক্তিরা বাসায় কীভাবে থাকেন, কী খান, ঘরে কী করেন ইত্যাদি কৌতুহল আমাকে সদা তাড়িত করেছে। পাশ্চাত্যের মত লিজেন্ডদের ব্যাপারে আমারও দারুন কৌতুহল রয়েছে। এরপর ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল, সে সময় আমি ভেবেছি যে, আমার এখনই সময় একটা কিছু করার। সে সময় আমার বয়স ১৯ প্লাস। কিন্তু কী করবো, আমার চেহারা ভালো নয় যে অভিনেতা হবো, আমার কক্তও ভালো নয় যে আবৃত্তিকার হবো, লিখতেও পারি না যে লেখক হবো। তাহলে আমি কী করতে পারি? আমি ভাবলাম যে, ১৯৬৩ সাল তথা ১০ বছর বয়স থকে যেটা হৃদয়ে লালন করছি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিখ্যাত মানুষদের প্রতি আমি এক ধরনের অপসেশন অনুভব করছি, ভালোবাসছি, তাদের ছবি তুললে কেমন হয়। বাহাত্তর সালে বাংলাদেশে পোট্রেট ফটোগ্রাফি কেউ জানতো না। অনেক ফােটাগ্রাফারও জানতেন না যে পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি কী। আমার পূর্বসূরী ফটোগ্রাফারদের প্রায় সকলেই পাখী, নদী, নিসর্গ এসব নিয়ে ছবি তুলেছেন। অর্থাৎ ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির দিকে সমস্ত ফটোগ্রাফারের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। আমি ভাবলাম যে, আমার পূর্বসূরীরা যে পথে গেছেন, সে পথে না গিয়ে আমি একটা নতুন পথ, নতুন ফাইল ওপেন করি। সেটি হচ্ছে পোট্রেট ফটোগ্রাফি। ছবি তুলতে গিয়ে আমি দেখলাম যে, বিভিন্ন সেক্টরে আমাদের দেশে খ্যাতিমানদের কোন পরিসংখ্যান নেই। অন্য দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন বৃত্তান্ত সাজানো থাকে, সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। গেলাম বাংলা একাডেমীতে। তাদের কাছে বিখ্যাত লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের তালিকা চাইলাম। সেখানেও পেলাম না। বাংলা একাডেমী বললো, যাদেরকে তারা পুরস্কৃত করেছে কেবলমাত্র তাদেরই একটি তালিকা রয়েছে সেখানে। সেটি একশ’ জনের মত হবে। আমি সেটি সংগ্রহ করলাম। ঢাকার একজনের কাছে গিয়ে বললাম যে, বিখ্যাত ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে দেবেন কি? সে সময় আমার তৈরী করা একটি তালিকা তিনি দেখে উষ্মা প্রকাশ করলেন। নেগেটিভ এটিচ্যুড পরিলক্ষিত হলো। তিনি বললেন, ‘তোমার কাছে কয়েকজনের নাম রয়েছে, যাদেরকে আমি কোনভাবেই বিখ্যাত বলতে পারি না। ওতো অনেক পড়ে লেখা শুরু করেছে। ও তো ছাগল, অশিক্ষিত। এসব লোকের নাম তালিকা থেকে বাদ না দিলে আমি এসবে নেই।’ এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়েছি। যদিও পরে দেখেছি যে উনি যাদের ব্যাপারে প্রচন্ড আপত্তি করেছিলেন, তারা সকলেই সত্যিকার অর্থে ভাল লেখক এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতে চাই। তারা হলেন, আহমদ ছফা, ডঃ আহমদ শরিফ, এস এম সুলতান, কবি জসিমউদ্দিন উল্লেখযোগ্য। এটা হচ্ছে সত্তর দশকের প্রথম দিকের কথা। তাহলে বুঝুন যে, কত প্রতিকূল অবস্থায় আমাকে তালিকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। আমার মত অল্পমেধার মানুষ, একজন সামান্য ফটোগ্রাফার, কী ধরনের দুরূহ পথে পা বাড়িয়েছি।
নাসির আলী মামুন বলেন, পোট্রেট ফটোগ্রাফি হচ্ছে, ছবিতে বিশেষভাবে ব্যক্তি মানুষের চরিত্র এবং তার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে, তার বিভিন্ন মুহূর্ত ফুটে উঠে। যদিও পোট্রেট ফটোগ্রাফির সঠিক সংজ্ঞা আজ অবধি কেউ দিতে পারেননি। এমনি অবস্থায় মানুষের বৈশিষ্ট্য ধারণ করা একটি স্থির ছবিতে কত কঠিন কাজ। এছাড়া আমি যে দেশে কাজ করছি সে দেশে অন্যের ভাল অনেকেই সহ্য করতে চান না। প্রতিপক্ষকে ছোট করার মানসিকতা প্রবল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন-বৃত্তান্ত সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানেও নেই। যেমন বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন-বৃত্তান্তের উপর প্রকাশনা রয়েছে।
মামুন বলেন, আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেটি হচ্ছে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান, তাদের সথে যোগাযোগ করাও প্রথম দিকে দুরূহ হয়ে পড়েছিল। কেননা সে সময় ঢাকা শহরে বেশিরভাগ মানুষেরই ফোন ছিল না। এছাড়া অনেকে বুঝতো না যে পোট্রেট ফটোগ্রাফিটাও একটা শিল্প। নিসর্গের উপরই বেশী মানুষের দৃষ্টি ছিল। সকলেই মনে করতেন যে নিসর্গই হচ্ছে শৈল্পিক ফটোগ্রাফি। কিন্তু আমি উঠাই মানুষের মুখের ছবি। বয়োবৃদ্ধ মানুষের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি উঠানোর সময় অনেকে জিজ্ঞাসা করতেন যে এগুলো দিয়ে আমি কী করবো। সে সময় বলেছি প্রদর্শনীর কথা। অনেকে মুচকি হাসি দিত। অনেকে সন্দেহ করতো, আবার কেউ বা আস্থাহীনভাবে ফটো তুলতে দিত। সেটা বাহাত্তরের ঘটনা। মূল কথা হচ্ছে অনেকে বিশ্বাস করতেন না তাদের মুখের ছবি দিয়ে প্রদর্শনী কি করে সম্ভব?
মামুন বলেন, ৭৭ সালের কথা। বাংলা একাডেমীর মত বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান আমাকে প্রর্শনীর সুযোগ দিয়েছিল-যখন বাংলাদেশের মানুষ আমাকে চেনা দূরের কথা, পোট্রেট ফটোগ্রাফি নিয়েই যখন কোন কৌতুহল ছিল না। সেটি নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলা একাডেমীর। ৭৭ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে হয়েছিল সে প্রদর্শনী এবং উদ্বোধন করেছিলেন সামরিক সরকার জিয়াউর রহমানের তথ্য উপদেষ্টা আকবর কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি শামসুর রাহমান। দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছিলেন শামসুর রাহমান ১৬ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ সম্পাদক হিসেবে সেটি ছিল তাঁর প্রথম অনুষ্ঠান। কবি শামসুর রাহমান উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেছিলেন যে, বইয়ের প্রদর্শনী হয়, পোষাকের প্রদর্শনী হয়, কিন্তু বিখ্যাত লোকদের, লেখকদের, সাহিত্যিক-কবিদের এই ছবি প্রদর্শনী হচ্ছে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটা ট্রেডিশনের বাইরে। কবি শামসুর রাহমান অনেক প্রশংসা করেছিলেন আমার সে উদ্যোগের। দৈনিক বাংলাসহ অনেক পত্রিকায় খবরটি ভাল করে প্রকাশিত হয়েছিল।
মামুন বলেন, আমি যে ফটোগ্রাফি যাদুঘর করতে চাই, সেটি মাথায় ঢুকলো সেই প্রদর্শনী চলাকালেই। প্রদর্শনী চলাকালে একজন ভদ্রলোক লিখলেন যে, সবকিছু নিয়ে যেতে চাই যাদুঘরে। চট করে আমার মাথায় তা বিদ্যুতের মত খেলে গেল। হৃদয়ে গেঁথে গেল যাদুঘর। ভদ্রলোকটি কেন সে কথা বলেছিলেন-সে ব্যাপারে সন্ধান করতে গিয়ে জানলাম যে, তিনি বাংলাদেশ যাদুঘরের মহাপরিচালক। সেই থেকে বিষয়টিকে আমি লালন করেছি। সে সময় কিন্তু আমার একটি টাকাও ছিল না। পরিচিতিও ছিল না। কোথায় করবো, কীভাবে করবো কিছুই জানি না, তবে মাথায় রাখলাম যে, ফটো যাদুঘর আমি করবোই। খুব সম্ভবতঃ সামনের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকাতে সেটা শুরু করতে চাই। সেটির নাম দিয়েছি ‘ফটোজিয়াম।’ সাইনবোর্ডের নীচে ব্যাখ্যা থাকবে ‘ইমেজ মিউজিয়াম অব বাংলাদেশ।’ সেখানে অন্ততঃ ৮টি ফ্লোর থাকবে। তার একটি ফ্লোর সংরক্ষিত থাকবে নাসির আলী মামুন আর্কাইভ হিসেবে। নিজের তোলা বিখ্যাত লোকদের বাছাই করা ছবি থাকবে সেখানে। বেশীর ভাগই সাদা-কালো। একই সাইজের ছবি-সবগুলো বাঁধাই করা। একটিতে স্থান সংকুলান না হলে অধিক ফ্লোর নেব আমি। একটি ফ্লোর থাকবে আমাদের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নামে। সেখানে শুধু তাঁর ছবি থাকবে। ছবির পাশাপাশি তাঁর উপর ভিডিও থাকবে, তাঁর বক্তব্য থাকবে, দর্শক ঢুকে কেউ যদি ভিডিও বা ছবি দেখার পর তার কপি নিতে চায়, তাহলে সাথে সাথে তা দেয়া হবে। সেখানেই থাকবে সে ব্যবস্থা। নন প্রফিট অর্গানাইজেশন করা হবে। খুব স্বল্প অর্থে সেগুলো মানুষ সংরক্ষণ করতে পারবেন। এটা আমার শুধু স্বপ্ন নয়, বহুদিনের আকাঙ্খা। আমার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটানোর অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের জন্যে দু’বছর আগেই ডঃ ইউনূসকে রাজি করিয়ে রেখেছি। তখন তো কেউ জানতাম না যে উনি নোবেল পুরস্কার পাবেন। তাঁর এত মূল্য হবে। উনি উদ্বোধন করলে আমার মিউজিয়ামের গুরুত্ব বাড়বে। সে রকম চিন্তা তো ছিল না। মামুন বলেন, আরেকটি ফ্লোরে থাকবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের হাতের লেখা, পান্ডুলিপি, অটোগ্রাফ, চিঠি ইত্যাদি। আমি যাদের ছবি উঠিয়েছি, শুধু তাদের হাতের লেখা নয়। এর বাইরেও থাকবে। যেমন আব্বাস উদ্দিনের চিঠি আছে, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবি আছে। উস্তাদ আয়াত আলী খান, আলাউদ্দিন খানের মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের হাতের লেখা আছে আমার কাছে। আলাউদ্দিন খাঁ লিখেছেন, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। মামুন বলেন, আমাকে মনে করতে পারেন ভিক্ষুকের মত। যখন বিখ্যাত ব্যক্তিগণের ছবি উঠাই, সে সময় তাদের লেখা চাই এবং তা সযতনে সংরক্ষণ করি। নানা কৌশলে, গল্প করে, কথা বলে, হাসির ফোয়ারা বানিয়ে সেগুলোর কপি সংগ্রহ করেছি। ২৯/৩০ বছর এভাবে সংগ্রহ করেছি বিখ্যাত ব্যক্তিগণের ছবি, লেখা। মীর মোশারফ হোসেনের লেখা আছে আমার কাছে। কাজী নজরুল ইসলামের অরিজিনাল লেখাও আছে। ২০ বছর ধরে একজনের পিছে রয়েছি বিদ্যাসাগরের হাতের লেখার জন্যে। কবি জসিমউদ্দিনের চিঠি আছে। আল মাহমুদের লেখার পান্ডুলিপির জন্যে ১৯৭৪ সাল থেকে চেষ্টা করেছি। তাঁর কাছে পাইনি। তবে তার একজন ঘনিষ্ঠজনের কাছে সোনালী কাবিনের পুরো পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেছি। কবি শামসুর রাহমানের বহু লেখা, ডাইরি রয়েছে আমার কাছে। এ ধরনের বহু লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকের দুর্লভ জিনিষ রয়েছে আমার কাছে। মামুন বলেন, আমার যাদুঘরে আরেকটি ফ্লোর থাকবে বিখ্যাত লোকদের নিজ হাতে আঁকা নিজের ছবি। অর্থাৎ যারা কখনোই ছবি আঁকেন না, তারা যদি নিজের ছবি আঁকেন তাহলে বিষয়টি অন্যরকম নয় কি? প্রফেসর ইউনূস, শামসুর রাহমান নিজের ছবি এঁকেছেন, সেগুলিও রয়েছে আমার কাছে। এ্যালেন গিন্সবার্গ, গুন্টারগ্রাস-এদের নিজেদের করা স্কেচ রয়েছে আমার কাছে। মামুন বলেন, পৃথিবীর কোথায়ও কিন্তু সেল্ফ পোট্রেটের মিউজিয়াম নেই। কোন মিউজিয়ামে গ্যালারীও নেই। ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেছি কোথাও নেই। মামুন বলেন, সেপ্টেম্বরে দুটি ফ্লোর দিয়েই যাদুঘরের উদ্বোধন করতে চাচ্ছি। এরপর পর্যায়ক্রমে তা সম্প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, একত্রে তো আর ১০/১২ তলা ভবন করতে পারবো না। সে সামর্থ আমার নেই। উদ্বোধনের পর দেশী-বিদেশী মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা-পরামর্শ-ডোনেশন, নানা সহযোগিতা নিয়ে সেটি পূর্ণাঙ্গ করবো ইনশাল্লাহ। যেহেতু এটি ট্রেডিশনাল মিউজিয়ামের বাইরে হবে, তাই নিশ্চয়ই সহযোগিতা করার মত সৃজনশীল লোকেরও অভাব হবে না। মামুন বলেন, এক সময় হয়তো দেখা যাবে, সেখানে স্থান হচ্ছে না। তখন এর শাখা খোলা হবে। বহুদেশে একটি মিউজিয়ামের শাখা রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। মামুন বলেন, এটি পরিচালিত হবে একটি ট্রাস্টির আন্ডারে।
এই পোট্রেট ফটোগ্রাফির দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, এর উপরে আপনার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে কি-জানতে চাইলে মামুন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, এখনও নেই। জীবন পাঠ করে শিখেছি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। বাহাত্তর সালে যখন এটি শুরু করেছি, সে সময় কিন্তু ছবি তোলা জানিনা, ক্যামেরাও ছিল না। সম্পূর্ণ নতুন একটি জগতে মনোনিবেশ করেছিলাম কিছুই না জেনে। দু’ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। ক্যামেরা ছিল না বলে বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজনের কাছে ধার নিতাম। ৪ ঘন্টার কথা বলে এক ঘন্টা পরই ফিরিয়ে দিতাম। এভাবে আস্থা অর্জন করতাম, পরবর্তিতে চাওয়া মাত্র যাতে পাই। শুনলে হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে, প্রথম ৬ বছর আমার নিজস্ব কোন ক্যামেরাই ছিল না। এমন প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করেছি। কাজ করতে করতেই শিখেছি। আমার ক্যামেরার লেন্সের মধ্যে কয়েকটি জেনারেশন অতিবাহিত হয়েছে। ১৮৮০ সালের দিকে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের ছবি তুলেছি, তাদের হাত স্পর্শ করেছি, তাদের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলেছি। ৯০/৯৫ বছর বয়েসী এসব গুণিজনের সাথে বন্ধুত্বও হয়েছে। কাজী নজরুল, জসিমউদ্দিন, কাজী মোতাহার হোসেন-এর মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পেয়েছি, দোয়া পেয়েছি। বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে যাদের জন্ম তাদের পেয়েছি। তিরিশের দশকে যাদের জন্ম-তাদেরকেও পেয়েছি। এভাবে ৫টি জেনারেশন আমার ক্যামেরায় প্রবাহিত হয়েছে। আশির দশকে যাদের জন্ম তাদের ছবিও আমি তুলেছি। যারা ইতিমধ্যেই সঙ্গীত, সাহিত্যে, অভিনয়ে, শিল্পকলায় নাম করেছে।
এটাতো হচ্ছে আপনার লালনের দিক-যা কৈশোর থেকেই লালন করেছেন। এই পেশার যে বাস্তবতা, তার আর্থিক সম্ভাবনা কতটুকু বলে মনে করেন-এ প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, আমি কিন্তু কখনোই ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেয়ার চিন্তা করিনি। যদি আমি সেটা করতাম তাহলে আমার মনে হয় এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। কারণ, টাকার সাথে ফটোগ্রাফিকে সম্পর্কিত করলে এ পেশায় হয়তো থাকতে পারতাম না। এ জন্যে আমাকে অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। দুর্দিনকে নিত্য সঙ্গী করে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। ক্যামেরা কিনতে পারিনি। ভালো লেন্স কিনতে পারিনি। ফিল্ম কিনতে পারিনি। বন্ধু-বান্ধবেরা ফিল্ম কিনে দিয়েছেন। কেউ ১০ টাকা দিয়েছেন, কেউ ২০ টাকা, আবার কেউ ৫০ টাকাও দিয়েছেন ফিল্ম কেনার জন্যে। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এভাবে চলতে হয়েছে। একটি প্রসঙ্গ এখানে উল্লেখ করতে চাই। চুয়াত্তর সালে মৌলানা ভাসানীর ছবি উঠানোর একটা সুবর্ণ সুযোগ হলো। খবর পেলাম যে উনি ৩ দিন টাঙ্গাইলের সন্তোষে থাকবেন। এ খবর দেন তার পার্টির একজন নেতা। সে সময় স্থির করলাম ভাসানীর ছবি আমাকে তুলতেই হবে। তার আগেও আমি তার ছবি তুলেছি। কিন্তু এভাবে একেবারে কাছে থেকে নিরবে, অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। সে সময় আমার এক বন্ধু ধার দিলেন ১০০ টাকা টাঙ্গাইলে যাতায়াতের জন্যে। সেই অর্থ থেকে ফিল্ম ক্রয় এবং দুই বন্ধু মিলে টাঙ্গাইলে যাই। দুপুরে একটি ভাঙ্গা ঘরের হোটেলে খানাপিনা করি। যদিও ভাসানীর বাসায় যাবার পর দুপুরে সেখানেও ভাল আহারাদির ব্যবস্থা হয়। সেদিন তাঁকে যে পোজে ছবি তুলেছি, সেটা হয়তো আর সম্ভবই হতো না। একা পেয়েছি। নির্জন আমগাছের নীচে বসা। কাঠের একটা হাতল ভাঙ্গা চেয়ার। টুপিটা হাটুর উপরে রাখা। মাথা খালি। ঐ অবস্থায় দেখামাত্র ছবি তুললাম। ঐ ছবিগুলি অন্যরকম হয়েছে-যেমনটি আমি চেয়েছিলাম। এরকম বহু লোকের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি ফটোগ্রাফিকে চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে। প্রফেশনালি যদি নিতাম তবে প্রথমেই আমার চিন্তা হতো যে, এই ছবিকে কীভাবে, কতভাবে বিক্রি করা যাবে। এক পর্যায়ে হয়তো সে পেশা ছেড়ে দিতে হতো এবং কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফিতে যোগদান করতে হতো। এখনও কি প্রফেশনাল হিসেবে এ পেশাকে নেয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়নি-জবাবে
মামুন বলেন, অনেকটা হয়েছে। পোট্রেট ফটোগ্রাফি অনেকে আমাকে দিয়ে করান। টাকা-পয়সাও দেন। গত ৮ বছর যাবত আমি প্রথম আলোতে চাকরি করছি। বর্তমানে আমি প্রথম আলোর ফটো-সম্পাদক। পোট্রেট ফটোগ্রাফিতে আরও কোন বাংলাদেশী কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে মামুন বলেন, আমার মত সিরিয়াসলি আর কেউ কাজ করে না। কারণ বাংলাদেশে পোট্রেট ফটোগ্রাফি বিক্রির মত বাজার এখনও তৈরী হয়নি। নান্দনিক ছবি-দেখতে সুন্দর-যেগুলো নিসর্গ নির্ভর ছবি-যা দিয়ে ক্যালেন্ডার তৈরী করা যায়, ঘরে বাঁধাই করে রাখা যায়, নানা জায়গায় প্রকাশ করা যায়-সে সব কাজেই সবার আগ্রহ বেশী। কিন্তু পোট্রেট ফটোগাফিতে সেটা হয় না। যেমন একজন বিখ্যাত বুড়ো মানুষের মুখায়ব-সেটা দিয়ে মানুষ কী করবে? আর্থিক কারণও সম্ভবতঃ বাংলাদেশে এ পেশায় না আসার কারণ। কিন্তু অভাব-অনাহারকে নিত্য সঙ্গী করেও আমি এটাকে ধরে রেখেছি। এটা আমার কমিটমেন্ট। এক চিন্তা, এক ধ্যানে রয়েছি এখন পর্যন্ত।
আপনার এ শিল্প মাধ্যমে সমাজকে কিছু দেয়ার সুযোগ কতটা রয়েছে বলে মনে করেন-এর জবাবে তিনি বলেন, সেটি তো ঐভাবে বোঝানো যাবে না বা পাল্লা দিয়েও ওজন করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া এবং পাবলিকেশন্স জগতে এর একটা গুরুত্ব আছে। আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে খুব বিনয়ের সাথে এটাই বলি যে, বাংলাদেশের পাবলিকেশন্স জগতের দৃষ্টি ফেরাতে চেষ্টা করছি। তারা আগে বিভিন্ন বইতে লেখকদের পাসপোর্ট সাইজের ছবি ছাপাতেন, পত্রিকাতেও সামনাসামনি পাসপোর্ট ছবি প্রকাশিত হতো, এখন সে ধারণা পাল্টেছে। অন্ততঃ তাদেরকে কনভিন্স করতে সক্ষম হয়েছি যে, ওগুলো ছবি নয়, এগুলো ছবি-যা কথা বলবে। লেখকের সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরী হবে। এ ব্যাপারটি হয়তো এখন বোঝা যাবে না। আরো ২০/৩০ বছর পর যদি কেউ এ নিয়ে গবেষণা করেন, তখন তা উদ্ভাসিত হবে।
সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, মানুষের স্বভাব, মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনার স্তর-সবকিছুই প্রতিফলিত হচ্ছে পোট্রেট ছবিতে-এ আস্থা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে মামুন বলেন, আমি যখন ছবি উঠাই তখন কিন্তু মানুষটির পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি সেখানে চলে আসে। শুধু তাই নয়, যে সময়ে আমি ছবি উঠাচ্ছি সে সময়ের আলো-বাতাস-কান্না-পোষাক সবকিছু সেখানে থাকছে। এখন আমরা সেটা টের পাবো না, কারণ আমরা এই সময়েরই মানুষ। পরবর্তি প্রজন্ম সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন অক্ষরে অক্ষরে। ৫০ বছর পরের জেনারেশন বুঝতে পারবে কবি শামসুর রাহমান নিজের ছবিতে কী বলতে চেয়েছেন। নাসির আলী মামুনের ছবিতে অন্ধকার প্রাধান্য পাচ্ছে কেন-এটা যদি জানতে চান তবে বলবো, আমার জীবনে যে দারিদ্র, বেদনা এবং যাদের উপরে আমি কাজ করেছি তাদের মধ্যেকার বেদনা-হতাশা সবটাই বুঝতে হবে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের হতাশা বেদনা হচ্ছে, রাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দেয়নি-মূল্যায়ন করেনি, পরিবারেও তাদের মূল্যায়ন করা হয় না। নানাভাবে তাঁরা অবমূল্যায়িত। আমার অবচেতন মনেই আসলে এটা হয়ে গেছে। এ জন্যে আমার বেশীর ভাগ ছবিতেই অন্ধকার প্রাধান্য পেয়েছে।
আলোকিত মানুষদেরকে আপনি অন্ধকারে দেখছেন, আলোতে আপনি তাঁদেরকে সেভাবে দেখতে পারেন না কেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, অন্ধকার না থাকলে আলোটা দেখবেন কীভাবে? অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈয়িদের শ্লোগান হচ্ছে আলোকিত মানুষ চাই। আসলে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, হতাশাগ্রস্ত বাঙালি জাতিতে আলোকিত মানুষ খুঁজছেন তিনি। তাকে যদি বলা যায় যে আলোকিত মানুষ পেয়েছেন? উনি ৪/৫ জনের বেশী উল্লেখ করতে পারেন না। এতবড় একটি দেশে মাত্র ৪/৫ জন আলোকিত মানুষ তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
আপনি তো অনেক বিখ্যাত লোকের ছবি তুলেছেন, এর মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে কে-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, এস এম সুলতান, গুন্টার গ্রাস, কবি এ্যালেন গিন্সবার্গ, মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আরো অনেকে। আমি ২৩ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ছবি তুলেছি। দেশে এখন কেমন লাগছে
জানতে চাইলে মামুন বলেন, অনেকে দেশ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু আমি হতাশ নই। আমি মনে করি পৃথিবী একটাই। যেমন আমাদের দেশে একট সংগঠন আছে তারা ভিসা মুক্ত বিশ্ব চায়। তাদের এ শ্লোগানে অনেকে হাসাহাসি করলেও আমি কিন্তু তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি না। হয়তো আগামী ৫০ বছর পর তেমন একটা সময় আসতে পারে যখন ভিসার কোন বালাই থাকবে না। আসলে ভিসা এবং ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রার কোন যুক্তিও নেই। এতে প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। অর্থ যাচ্ছে। অনেক স্পেসও লাগছে ভিসা-পাসপোর্টের ডক্যুমেন্ট এবং টাকা রাখার জন্যে। সে জন্যে আমি মনে করি যে বাংলাদেশ আর আমেরিকার কোন তফাৎ নেই। তবে এটা বাস্তব যে বাংলাদেশ হচ্ছে গরিব দেশ, নানা রকমের সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বহু বছর ধরেই চলছে। ১৫ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্র পেয়েছি বলে দাবি করা হলেও আমাদের রাজনীতিকরা কি তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন? আমি তো সেটা মনে করি না। বাংলাদেশের অনেক মানুষই তা বিশ্বাস করেন না। তবুও আমি প্রচন্ড আশাবাদি যে, আইটি সেক্টরে আমাদের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হচ্ছে। সামনে অনেক দূর এগুতে পারবো আমরা। যেমন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে আপনি যদি ঢেউ তোলেন তবে তা লন্ডনের টেমস নদী বা নিউইয়র্কের হাডসন নদীতেও একইভাবে দোলা লাগাবে-এমন একটা সময় খুব শীঘ্র আসছে। এ জন্যে আমি মনে করছি ১৫/২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে, মানসিকভাবে আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে। আপনি এক দশকের মত নিউইয়র্কে ছিলেন, এরপর ফিরে গেছেন বাংলাদেশে। সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে কীভাবে নিজেকে চালিয়ে নিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, নিউইয়র্কে এটা সাজানো-গোছানো পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। নিউইয়র্কে বরঞ্চ আমার এ কাজে সমস্যা হয়েছে। সেটা ছিল প্রত্যাশিত ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাতে নানা প্রতিবন্ধকতা। ইচ্ছা করলেই সাক্ষাৎ করতে পেতাম না। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও অনেক সময় অনুমতি পাইনি। কেননা বিখ্যাত লোকদের নিজস্ব অফিস রয়েছে। সেক্রেটারী রয়েছে। সেক্রেটারী পর্যন্ত যেতে পারলেও গন্তব্যে যাবার সুযোগ খুব কমই পেয়েছি। প্রচন্ড স্বার্থপর তারা। সময় সম্পর্কেও সজাগ খুব। অপরদিকে বাংলাদেশ হচ্ছে আমার জন্যে সহজ, খুবই সহজ। যখন যার সাথে ইচ্ছা সাক্ষাত করতে পারছি। অনেকের বাসায় যেতেও আপত্তি উঠেনি। ফলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সহজ কথায় আমার অনেক লাভ হয়েছে। বর্তমানে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, কেউ যদি একটি বই প্রকাশ করেন, তবে সেটিতে নাসির আলী মামুনের একটি ছবি থাকলে বইটির মর্যাদা বাড়ে বলে মনে করেন অনেকেই।
ফটোগ্রাফি ছাড়া আর কি করেন আপনি-জানতে চাইলে মামুন বলেন, যাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং ছবি উঠানো ছাড়া অন্য কোন চিন্তা আমার মধ্যে কাজ করে না।
যাদুঘর প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই পোট্রেট ফটোগ্রাফিকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার ব্যাপারে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা মানুষের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না। একটা মানুষ যদি অনেক ফাইল ওপেন করে তবে কোনটিই সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে না অনেক সময়েই। সে জন্যে আমি অন্য কিছু ভাবতে চাই না। কেননা যাদুঘরের কালেকশন জীবনেও শেষ হবে না, সেটি নিয়েই থাকবো। মামুন বলেন, এ যাবত আমি সাড়ে ৩ হাজার বিখ্যাত মানুষের পোট্রেট করেছি। এর মধ্যে ৩৫০ জনের উপরে মারা গেছেন।
জনাব মামুন উল্লেখ করেছেন, অধিকাংশ সিলিব্র্যাটিকে তার পরিবারের সদস্যরা ভালোবাসেন না। কারণ তিনি পরিবারকে সেভাবে সময় দেন না। পরিবারের স্বাচ্ছন্দে তিনি অনেক অর্থ আয় করেন না বলে এ ধরনের গৃহদাহকে নিত্যসঙ্গি করে অনেকে সিলিব্র্যাটি হয়েছেন। এ জন্যে কিন্তু আমি ঐসব বিখ্যাত ব্যক্তিগণকে দোষী সাব্যস্ত করতে চাই না। কারণ আমি বুঝতে পারি তার বেদনাটা। তিনি যখন সৃজনশীল কাজে থাকেন বা সঙ্গীত চর্চা করেন বা সাহিত্য চর্চা করেন কিংবা আরাধনার মধ্যে থাকেন, সে সময় তিনি থাকেন অন্য একটা জগতে। একটি কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, যারা সৃষ্টিশীল মানুষ তারা সময়ের আগে চলেন। এ ধরনের অবস্থা কি আপনার ব্যক্তি জীবনেও রয়েছে- মামুন বলেন, না আমি সে দিক থেকে ভাগ্যবান। আমার একটাই ছেলে অন্যতম। ওর পুরো নাম নওশের আলী খান এবং ডাক নাম অন্যতম, সে কলেজে যাচ্ছে। স্ত্রী নাজমুননেসা নাজমা আমাকে ভালো বুঝে। ফলে কোন সমস্যা হচ্ছে না। স্ত্রী পুরোদস্তর গৃহিনী হলেও আমাকে সহযোগিতা করেন। ছেলে কম্প্যুটারে সমস্ত কাজ করে দেয় আমাকে। দিনের একটি সময় সে আমার জন্যে ব্যয় করছে।
দেশ-বিদেশে অনেক বিখ্যাত লোকের সাথে আপনি মিশেছেন, এ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আপনি কী লাভবান হয়েছেন বা সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তির কোন প্রভাব আপনার উপর পড়েছে কিনা-এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, এ সময় আমি একটি বিষয় লক্ষ করেছি যে তারা যা বিশ্বাস করেন বা লিখেন বা বলেন বাস্তবে তা তারা বিশ্বাস করেন না বা লালনও করেন না। যেমন বলেন একটা, করেন আরেকটা। এটা এক ধরনের ভন্ডামি। আরেকটা বিষয় আগেই বলেছি যে তারা নিজের পরিবারেই নিগৃহিত। এমন বহু ঘটনার সাক্ষি আমি। এগুলো নিয়ে আসলে একটি বই লেখা যাবে। এসব বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন থেকে আপনি কোন কিছু গ্রহণ করেছেন কিনা জানতে চাইলে মামুন বলেন, এসব আলোকিত মানুষের কাছে যা শিখেছি তা সত্যি আমাকে অভিভূত করেছে। যেমন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কথা ধরুন, ১৯৭৮ সালে তাঁকে আমি প্রথম দেখি। যেভাবে তিনি সে সময়েই নিজের সময় ব্যয় করেছেন যোবরা গ্রামের গরিব অশিক্ষিত মানুষদের জন্যে, যেভাবে তিনি চাটগাইয়া ভাষায় তাদেরকে আমন্ত্রণ করতেন, নিজের উদ্যোগের কথা বুঝাতেন, আমার মনে হয় কোন বাঙালি মুসলমানের পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। আর এ কাজটি করতেন রাতে। দিনে গ্রামীন ব্যাংকের অন্যান্য কাজ শেষ হলে স্টুডেন্টদের নিয়ে যেতেন গ্রামে। ওখান থেকে আমি শিখেছি যে, একটা মানুষ তার মনোবাঞ্ছার প্রতি কত ভালবাসা থাকলে তার কাজের সাথে দীর্ঘ সময় লেগে থাকতে পারেন। মামুন বলেন, আরেকটি বিষয় শিখেছি তার কাছে। সেটি হচ্ছে সময় জ্ঞান। ডঃ ইউনূস জানেন বাংলাদেশে কোথায়ও যেতে হলে কত ঘন্টা সময় লাগবে। সব সময় নির্দিষ্ট সময়ের ১০ মিনিট আগেই তাঁকে রেডি থাকতে দেখেছি। বৃষ্টি বলেন আর কঠিন শীত বলেন, সব সময় ঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছেন ডঃ ইউনূস। মামুন বলেন, প্রফেসর ইউনূস হলেন বিশ্বে একমাত্র লোক যিনি নিজের উপর নিজের আস্থা রাখেন। সিলিব্র্যাটিদের ব্যাপারে, লিজেন্ড বা আইকন বলতে আমরা যেটা বুঝি যে তাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, সামনাসামনি দেখা যায় না, দূর থেকে দেখতে হয়, কাঁচের ভেতরে দেখতে হয়। বিল ক্লিনটন, হিলারী ক্লিনটনের কাছে সাধারণ মানুষ কি যেতে পারেন? পারেন না। নেলসন ম্যান্ডেলার কাছে কি যাওয়া যায়? তাদের সেক্রেটারীর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। অনেক সময় সেক্রেটারীরাই নকআউট করে দেন দর্শনপ্রার্থীদেরকে। অপরদিকে আমাদের ডঃ ইউনূস হলেন পৃথিবীর আইকনদের মধ্যে একমাত্র মানুষ যার কাছে যে কোন লোক যেতে পারেন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত যে কেউ সরাসরি কথা বলতে পারেন। তার ফোন সব সময় খোলা থাকে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মহিলারা তাকে ফোন করেন। তিনি নিজে রিসিভ করেন সে ফোন। কথাও বলেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে।
আপনি নিজেকে একজন মুসলমান ফটোগ্রাফার হিসেবে মনে করেন এবং ডঃ ইউনূসকেও বাঙালি মুসলমান বলেছেন-এর কারণ কি, জবাবে মামুন বলেন, বাঙালি মুসলমান বলছি একারণে যে, পৃথিবীতে কিন্তু বাঙালি জাতি আরো আছে। পশ্চিম বাংলায় যারা ওরাও বাঙালি। ওরা কিন্তু মুসলমান নন, ওদের সাথে আমাদের পার্থক্যও অনেক। শুধু ধর্মীয় পার্থক্য নয়, সাংস্কৃতিক পার্থক্যও রয়েছে অনেক। কোনভাবেই আমরা এক নই। আমাদের চিন্তা-চেতনা সবটাই আলাদা। সাহিত্যও এক নয়।
মুসলমান নাসির আলী মামুন না ভেবে নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবেন না কেন-এ প্রশ্নে মামুন বলেন, আমি তো নিজেকে বাঙালি মুসলমান বলেছি, মুসলমান বলিনি কিন্তু। বাঙালি মুসলমান পৃথক একটা জাতি, সেটা আমি বুঝাতে চেয়েছি। আহমদ ছফা এ ব্যাপারে অনেক লিখেছেন। বাঙালি মুসলমানের মন নামক একটি বই রয়েছে তার। আমি ঐ ঘরানার লোক সোজা কথা।
প্রবাসে আপনার এমন কোন অভিজ্ঞতা কি রয়েছে যা এখন পেশাগতভাবে কাজে লাগছে-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে (নিউইয়র্ক) থাকার জন্যে আমি ফটোগ্রাফিতে অনেক কিছু শিখেছি। তার আগে আমি ফটোগ্রাফির অনেক কিছুই দেখিনি। নানা ধরনের ফিল্ম, ক্যামেরা, অনেক টেকনোলজির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল নিউইয়র্কে থাকাবস্থায়। এছাড়া সেলিব্র্র্যাটিদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটিও শিখেছি। তাদের বাড়িটা কেমন, বেডরুমটা কেমন-অনেক কিছু দেখার সুযোগ হয়েছে এই নিউইয়র্কে। আরেকটি বিষয়, আমেরিকার মত এতবড় একটি দেশে থেকে গেছি, সে ব্যাপারটিও আমার এগিয়ে যাবার ব্যাপারে পাথেয় হয়েছে। দেশে কিছুটা মূল্য পেয়েছি।
অর্থাৎ আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, বাংলাদেশে থাকলে এত উপরে উঠার সুযোগ হয়তো হতো না-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হয়তো না।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে যারা বিপুল সাফল্য অর্জন করেছেন তাদের অনেকেই এক সময় প্রবাসী ছিলেন, আপনিও প্রবাসী ছিলেন। দেশে কাজ করছেন সুনামের সাথে। এ অবস্থায় আপনি নিজেকে কখনো কি প্রবাসী হিসেবে মনে করেন-এ প্রসঙ্গে মামুন বলেন, নিজেকে সবসময় বাংলাদেশী মনে করি। কেননা আমার কাজের জন্যে আমি যখন যেখানে খুশী সহজে যেতে পারি। সকলেরই সহযোগিতা পাচ্ছি। আমার কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলাদেশ।
আপনার এই পেশায় আর কাউকে রেডি করছেন কিনা-এর জবাবে তিনি বলেন, ২০০২ সাল থেকে আমি ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্কশপে যোগদান করছি এবং বিষয়টিতে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। ২০০৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঢাকাতে ওয়ার্কশপ করেছি বেশ কয়েকটি। পান্থপথে পাঠশালা নামক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফটোগ্রাফিতে সবচেয়ে বড় শিক্ষালয় সেটি। সেখানে প্রায় ৩ বছর আমি শিক্ষকতা করেছি। একটি পয়সাও নেইনি। সেটা করে ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে আমারই লাভ বেশী হয়েছে। কেননা অনেক সময় ছাত্ররা এমন সব প্রশ্ন করেছে যা আমিও জানতাম না। বাসায় ফিরে সেটি শিখেছি এবং পরে ছাত্রদেরকে জানিয়েছি।
এ পেশায় তিক্ত কোন অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা-এ ব্যাপারে মামুন বলেন, গল্পের মতই একটা মজার ব্যাপার রয়েছে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় প্রচন্ড আন্দোলন চলছিল বাংলাদেশে। সে সময় বদরুদ্দিন ওমরের ছবি উঠানোর জন্যে তার বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি যে আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছেন অর্থাৎ আত্মগোপন করেছেন সেটি আমি জানতাম না। সোজা তার বাসায় গেছি। ভয়ে উনি দরজা না খুলে, একটু ফাঁক করে বলেছেন, যান যান আপনাদের অফিসে আমার অনেক ছবি আছে, নতুন করে তোলার দরকার নেই। অর্থাৎ উনি ভেবেছিলেন আমি পুলিশের লোক। এটা আমি বুঝতে পারিনি। তার প্রতিবেশী কবি সাইয়িদ আতিকুল্লাহকে বিষয়টি বললে উনি হো হো করে হেসে বলেন, আসলে আপনাকে উনি ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ)’র লোক ভেবেছিলেন। নিউইয়র্কের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। গুন্টার গ্রাস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৫ সালে। এরপর তিনি কলকাতায় যান। আমি সাক্ষাৎ করতে যাই সেখানে। সে সময় একজন জার্মান প্রায় ঘাড় ধরেই আমাকে সেখান থেকে বের করে দিলেন। উল্লেখ্য যে, গুন্টার গ্রাস যখন ১৯৮৬ সালের দিকে ঢাকায় গিয়েছিলেন সে সময় আমি তার সাথে কাজ করেছি অন্ততঃ ৭ দিন। কলকাতায় জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক আমার সাথে সেই ব্যবহার করেছেন। যদিও আগেই আমি আমার পরিচয় ঐ পরিচালককে দিয়েছিলাম। আমার সামনেই কলকাতার ফটোগ্রাফাররা অনবরত ভেতরে যাচ্ছে এবং ছবি নিচ্ছেন, কেবলমাত্র আমাকেই বারবার নিষেধ করা হয়। সে সময় কলকাতায় গুন্টার গ্রাসের অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। যেখানে গেছি সেখানেই আমার সাথে অমন ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও আমি থেমে থাকিনি। এক পর্যায়ে আমি তার ছবি নিয়েছি। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি উঠানোর জন্যে পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করতে হয়েছে-এ অর্থ পাচ্ছেন কীভাবে? এর জবাবে মামুন বলেন, সমস্ত খরচ আমার নিজের। শুধু প্রফেসর ইউনূসের সাথে এবারের ট্রিপে চীন-কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রে আসার যাবতীয় খরচ দিয়েছেন আর্কিট্যাক্ট মোবাশ্বের হোসেন। এ সফরটি তিনি স্পন্সর করেছেন। ব্যাংকে অনেক টাকা নেই আমার-এটা কোন দুঃখের ব্যাপার নয় আমার কাছে। তবে আনন্দেরও নয়। ফটোগ্রাফি করতে পাচ্ছি-এটাই বড় আনন্দ। আমি যে সব ছবি তুলেছি তার মূল্য হাজার হাজার টাকার সমান। এটাই আমার পরম পাওয়া। ফটোগ্রাফিতে আনন্দ যদি না পেতাম তাহলে তো অনেক আগেই এটা ছেড়ে দিতাম। অন্য লাইনে যেতাম যেখানে প্রচুর অর্থ-বিত্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কাজ হচ্ছে। তবে আরো অনেক কিছু হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত যতটুকু হয়নি তার জন্যে দায়ী হঠকারী রাজনৈতিক কর্মকান্ড। এ থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে সচেতন হতে হবে যে, আমরা হরতাল করবো না, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করবো, আমরা কোন ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করবো না। তবে এটা (হঠকারী রাজনীতি) পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের ১৪ কোটি লোককে জিম্মি করে রেখেছেন ২ হাজার রাজনীতিক। কোন আইন বা সরকার এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারবে না। এ জন্যে দরকার জনসচেতনতা। প্রতিটি এলাকায় টিম গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ জিম্মি ২ হাজার রাজনীতিকের কাছে
পোট্রেট শিল্পী মামুন ঠিকানাকে বলেছেন