বাংলাদেশে যোগ্য লোকের জায়গা নেই, অযোগ্যরাই সব দখল করে আছে

ঠিকানা রিপোর্ট: বাংলাদেশে যোগ্য এবং ভাল লোকের কোন জায়গা নেই; অযোগ্য এবং খারাপ লোকরাই সব জায়গা দখল করে আছে। বাংলাদেশে ভাল এবং যোগ্য লোকের কোন ভবিষ্যত নেই। বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক চৌকস অধিনায়ক জুয়েল রানা এ সব কথা বলেন। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশের সাড়া জানানো এবং জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড় জুয়েল রানা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন ফুটবল খেলার উৎকর্ষ সাধনে। অথচ নিয়তির নির্মম বিধানে বর্তমানে তিনি নিজের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। নিজ দেশে নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে না পেরে অবশেষে বাধ্য হয়েছেন আমেরিকায় পাড়ি জমাতে। সাফ গেমসে সোনা জয়ী অধিনায়ক জুয়েল রানা গত ২২ এপ্রিল সপরিবারে আমেরিকায় চলে আসেন। ২ দিন নিউইয়র্কে থাকার পর বর্তমানে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় অবস্থান করছেন। এখনো ঠিক করেননি, কোথায় দ্বিতীয় আবাসন গড়বেন। জুয়েল রানা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলেছিলেন ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। জাতীয় দলের অধিনায়কের গুরু দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে সোনা জয়লাভ করেছিলো ১৯৯৯ সালে। সে জন্য তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলেল অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।


মসজিদ ও জ্যামের নগরি ঢাকায় জন্ম নেয়া জুয়েল রানা প্রথম ডিভিশন ফুটবল লীগ খেলা শুরু করেন ১৯৮৮ সাল থেকে। তার প্রথম ক্লাব ছিলো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাবে খেলেছিলেন ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল, ১৯৯৫ সাল, ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ এবং ২০০৭ সাল ও ২০০৮ সাল। ২০০৮ সালেই মোহামেডান ক্লাব থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আরো খেলেছেন ১৯৯৪, ১৯৯৭ সালে মুক্তযোদ্ধা সংসদে এবং ২০০৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল ব্রাদার্স ইউনিয়নে। এক সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় জুয়েল রানার নেতৃত্বে সাফ ফুটবলে সোনা জয়ের পাশিপাশি আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে সাফ গেইমস ফুটবলে বাংলাদেশ রানার্স আপ হয়েছিলো ১৯৮৯ সালে। বাংলাদেশ ফাইনালে হেরে যায় পাকিস্তানের সাথে। ১৯৯৫ সালেও বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে রানার্স আপ হয়েছিলো। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ভারত। প্রায় ১০ বছর জাতীয় ফুটবল দলে খেলেও তিনি প্রায় ২০ বছর ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলা চালিয়ে যান। তিনি জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন ১৯৯৯ সালেই। এ ছাড়াও তিনি কলকাতা লীগে মোহামেডানের হয়ে ১৯৯১ সালে এবং মোহনবাগানের হয়ে ১৯৯৯ সালে খেলেছিলেন।
ঢাকায় জন্ম হলেও সিলেটের সুনামগঞ্জের সন্তান জুয়েল রানা হঠাৎ করে কেন আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট হয়ে চলে এসেছেন এই প্রশ্নের জবাবে- জুয়েল রানা বলেন, বাংলাদেশ আসলে কোন সিস্টেমে চলছে না। বাংলাদেশ নিয়ে কারো কোন প্ল্যান নেই, কোন ক্ষেত্রে প্ল্যানিং নেই। বাংলাদেশের মূল সমস্যা আমার কাছে মনে হয় রাজনীতি। বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে একমাত্র বাধা রাজনীতি। ক্ষমতার জন্য যে যা খুশি তাই করছে, বাংলাদেশের জনগণের কথা কেউ চিন্তা করছেন না। বাংলাদেশে কোন জবাবদিহিতা নেই। এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাল এবং সৎ লোকের কোন জায়গা নেই, অসৎ এবং অযোগ্যরাই সব জয়গা দখল করে আছে। এখন যোগ্যতা বিবেচনা করা হয় রাজনীতি দিয়ে। আমি কোন দল করি না বা যে রাজনীতি চলছে সেই রাজনীতি পছন্দ করি না। যে দেশের জন্য নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করলেন, সেই দেশ কেন ছেড়ে আসলেন- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে বাংলাদেশের জন্য কে কি দিয়েছে, তা চিন্তা করার মানুষও এখন নেই। আমি তো আমার জীবনের ৭৫% শেষ করে দিয়েছি। কিন্তু এখনতো আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে।

সেই কারণেই প্রিয় জন্ম ভূমি বাংলাদেশকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। বাবা হিসাবে সন্তানের ভবিষ্যত তো আমাকে দেখতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান ফুটবল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলও প্ল্যানহীনভাবে চলছে। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য কোন বাজেট নেই। নিজস্ব অর্থায়ানেই চলছে ক্লাব এবং লীগগুলো। সেই সাথে দুর্নীতি তো রয়েছে। আগে এক সময় মানুষের রিক্রেয়শনের জায়গা কম ছিলো। আবার স্টার ফুটবলারও ছিলো। যাদের খেলা দেখার জন্য মানুষ মাঠে আসতো। এখনতো মানুষ ঘরে বসেই বিশ্বের নানি- দামি খেলোয়াড়দের খেলা দেখছে। আমাদের সময় ফুটবলে বাংলাদেশের অনেক স্টার ছিলো, এখনোতো সেই স্টার নেই। সুতরাং কার খেলা দেখার জন্য মানুষ মাঠে আসবে। তা ছাড়া আগে জেলাভিত্তিক, বিভাগভিত্তিক যে সব লীগগুলো বা খেলাগুলো হতো এখন তা নেই। আগে এক সময় সারা দেশে শেরো বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী গোল্ড কাপ হতো এখন তা নেই। এমন কি স্কুল, কলেজ পর্যায়েও খেলা নেই। সুতরাং খেলোয়াড় বা স্টার তৈরি হবে কীভাবে? সত্যি কথা বলতে কী বাংলাদেশে ফুটবল লাভার অনেক, কিন্তু আমাদের খেলার কোয়ালিটি নেই। অন্যদিকে এফসির ল’ও আমরা মানি না। সুতরাং খেলোয়াড় তৈরি হবার কোন সুযোগ নেই। খেলোয়াড় তৈরি না হলে ফুটবল জনপ্রিয় হবে কীভাবে?
জুয়েল রানার স্ত্রীর নাম জান্নাতুল মাঞ্জুমা, এক ছেলে জাবির আরহাম এবং একমাত্র কন্যা আরফা ওয়াজিহা।