বাংলাদেশ সোসাইটির একুশ উদযাপন

ঠিকানা রিপোর্ট: প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সেসাইটি অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারো মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভষা দিবস পালন করেছেন। তবে অন্যান্য বছর শান্তিতে একুশে ফেব্রুয়ারি করলেও এ বছর শান্তিতে একুশে ফেব্রুয়ারি করতে পারেনি। কারণ এবার ছিলো বিরোধিতা। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদতে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলা এখন বিচরাধীন রয়েছে। এই মামলাকে কেন্দ্র করে সোসাইটির কার্যকরি কমিটির ক্ষুদ্র একটি অংশ কারো কারো ইশারায় বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান না করার পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদের বক্তব্যেও তা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির বিরোধিতা কেউ কেউ করেছিলেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আপনাদের কারণেই আমরা অনুষ্ঠান সফল করতে পেরেছি। ষড়যন্ত্র কখনো সফল হয় না যদি সাধারণ সদস্যরা সোসাইটির পক্ষে থাকেন। আবারো তা প্রমাণ হলো। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, যত দিন মামলার নিষ্পত্তি না হবে এবং নতুন কমিটির কাছে বর্তমান কমিটি ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে, ততদিন বর্তমান কমিটিই সোসাইটির রেগুলার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, আমরা ২৬ মার্চও পালন করবো। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আজকে যেভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করেছেন, আগামীতেও করবেন। তিনি বলেন, আমরা সব সময় সত্য এবং সুন্দরের পক্ষে এবং প্রবাসী বাংলদেশীদের পক্ষে।

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কমাল আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় একুশের কর্মসূচি পালন করা হয় উডসাইডের গুলশান টেরেসে। সন্ধ্যা থেকেই ছিলো প্রবাসে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু- কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাত ১২টা ১ মিনিটে অস্থায়ী শহীদ মিনরে বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পমাল্য অর্পণ।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলী ওম্যান ক্যাটেলিনা ক্রুজ, ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিমুর রহমান বোরহান, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, কাজী আজাহারুল হক মিলন, সরাফ সরকার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, আতাউর রহমান সেলিম, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী মোহামম্মদ আব্দুর রব মিয়া, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোসাইটির সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলদার, সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, কার্যকরী সদস্য আজাদ বাকের প্রমুখ।

এ্যাসেম্বলীম্যান ক্যাটেলিনা ক্রুজ বলেন, নিউইয়র্ক সিটির সৌন্দয্য হচ্ছে এই সিটিতে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের এবং ভাষার মানুষের বসবাস। তারা সবাই নিজ নিজ সংস্কৃতির প্রসারে অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন। আজকে বাংলাদেশীদের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি গর্বিত। আমার কাছে খুব ভাল লাগছে অনুষ্ঠান দেখে। তিনি বলেন, আপনাদের সন্তানরা যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি দেখানো উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বাংলাদেশীরা আমাদের পাশে ছিলেন। আমি সেই সময় প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম আমার অফিসে একজন বাংলাদেশী নিয়োগ দেয়া হবে। আমি একজন বাংলাদেশীকে নিয়োগ দিয়েছি। তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের পক্ষ থেকে একুশের শহীদবেদীতে ফুল দেয়ার জন্য সোসাইটির কর্মকর্তাদের হাতে একটি ফুলের তোড়া তুলে দেন।

মুহম্মদ ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভাষা ব্যবহারের লড়াই এ অঞ্চলে বৃটিশ ভারতেও ছিলো। তবে তাতে ছিলো অনেকটা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠির বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিলো সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে সে দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের ২১ মে ফেব্রুয়ারি হরতালকে কেন্দ্র করে তা চ‚ড়ান্ত রূপ নেয় পুলিশের গুলি বর্ষেণের মধ্যদিয়ে। শহীদ হন রফিক, সালাম, শফিক, জাব্বার, বরকত এবং নাম না জানা আরো অনেকে। তিনি বলেন, এই ইতিহাস কমবেশি সকল বাঙালিরই জানা। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, ভাষার দাবি স্বীকৃত হলেও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি আজও। এবং আজকের সময়ে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে একদল বাঙালিকেই দেখা যাচ্ছে। এদের পরাভ‚ত করা ৫২ এর চেয়েও কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে বাংলা ভাষাকে শত্রু মুক্ত করার লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারলেই দেশ ও প্রবাসে সাড়ম্বরে একুশ পালন সার্থক হবে।

শামীম হোসেন বাংলাদেশ সোসাইটিতে ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য। সেই সাথে তিনি বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, একুশ আমাদের অহঙ্কার, সেই অহঙ্কার নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয় দিতে হবে।

প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী তানভীর শাহীনের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শামীম সিদ্দিকী, চন্দ্র রায়, নৃত্যাঞ্জলী। নৃত্যাঞ্জলির পরিবেশনা ছিলো অসাধারণ। পুরো অনুষ্ঠানটি সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু নেতার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করেই তারা দলীয় স্লোগান শুরু করে। আওয়ামী লীগ দলীয় স্লোগান শুরু করলে বিএনপিও পাল্টা দলীয় স্লোগান শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সভাপতির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

একুশের শহীদ মিনরে পুষ্পমাল্য অর্পণকারী সংগঠনগুলো হচ্ছে-

বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেট, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ, বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকা, চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইউএসএ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই নর্থ আমেরিকা, শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলমনাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই, কুইন্স বাংলাদেশ সোসাইটি, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার সায়েন্ট্রিস ইনক, বাংলাদেশী আমেরিকান জাতীয়তাবাদী ফোরাম, বাংলাদেশ আমেরিকান কার এন্ড লিমোজিন এসোসিয়েশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি অব ইউএসএ, বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশন ইউএসএ, বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন, বৃহত্তর দাউদকান্দি সোসাইটি, বাংলা ল’ সোসাইটি, ইয়েলো সোসাইটি নিউইয়র্ক, বিয়ানীবাজার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, শাপলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েটস, মুন্সীগঞ্জ- বিক্রমপুর এসোসিয়েশন, পদ্মা ইয়েলো সোসাইটি, শেরপুর জেলা সমিতি ইউএসএ, মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুর এসোসিয়েশন, বৃহত্তর নোয়াখালি সোসাইটি, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন, প্রবাসী নরসিংদী জেলা সোসাইটি, মীরস্বরাই সমিতি ইউএসএ, সিলেট গণদাবি পরিষদ, মেঘনা উপজেলা ফাউন্ডেশন, মাদারিপুর জেলা সোসাইটি, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি, দোহার উপজেলা এসোসিয়েশন, নরসিংদী জেলা সমিতি, ডাউনটাউন ম্যানহাটন বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন, কুমিল্লা সমিতি ইনক, বৃহত্তর খুলনা সোসাইটি, পঞ্চগড় জেলা কল্যাণ সমিতি, কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন, প্রবাসী মাদারিপুর জেলা সোসাইটি, ফরিদপুর জেলা সমিতি, রংপুর জেলা সমিতি, বারী হোম কেয়ার এলএলসি, নজরুল একাডেমি অব নিউইয়র্ক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশী লায়ন ক্লাব, বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক সোসাইটি, সুনামগঞ্জ সোসাইটি অব আমেরিকা ইনক, নবাবগঞ্জ এসোসিয়েশন, কুমিল্লা সোসাইটি ইউএসএ, গ্রীন টাচ মা ও শিশু সংগঠন, প্রবাসী পেশাজীবী সংগঠন।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন অতিথি এবং বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় সভাপতি কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া সম্পাদক নওশাদ হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবীব, কার্যকরি সদস্য ফারহানা চৌধুরী, মাইনুদ্দিন মাহবুব, আজাদ বাকির, সাদি মিন্টু, সরওয়ার খান বাবু প্রমুখ।

বাফা’র প্রভাত ফেরি

বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) আয়োজিত শতশত লোকের উপস্থিতিতে তৃতীয় বারের মতো ব্রঙ্কসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মহান একুশের প্রভাতফেরি। গত একুশে ফেব্রৃয়ারি সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মূলত বহু জাতিক পরিবেশে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝে ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও অমর একুশের ইতিহাস ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসে বাফা’র এ আয়োজন। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” সমবেত কণ্ঠে গানটি গাইতে গাইতে স্টার্লিং এভিনিউ থেকে ওভাল পার্ক সংলগ্ন ইউনিয়ন পোর্ট রোড হয়ে পুনরায় স্টার্লিং এভিনিউতে এসে সকলে দেয়ালে অংকিত শহীদ মিনারের সামনে অস্থায়ী বেদিতে পুস্প স্তবক অর্পণ করেন। প্রথমেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। এরপর বাফার পক্ষ হতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন বাফা’র শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবক বৃন্দ। এছাড়া আরও যারা পুস্পস্তবক অর্পণ করেন, বাংলাদেশ উইমেনস এসোসিয়েশন, হৃদয়ে বাংলাদেশ, বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন এবং সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে সংক্ষেপে কথা বলেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, এসেম্বলি উইমেন কারিনাস রাইস, বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, টাইম টেলিভিশনের সি ই ও আবু তাহের, মুক্তি যোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সাহিত্য একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন, ছড়াকার মঞ্জুর কাদের, এশিয়ান ড্রাইভিং ইস্কুলের কর্ণধার সাইদুর রহমান লিংকন, নাট্যকর্মী এজাজ আলম, কমিউনিটি একটিভিস্ট এন মজুমদার, আব্দুর রহিম বাদশা, শাহেদ আহমেদ, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মোঃ খলিল রহমান, আবদুস শহীদসহ মেয়র অফিসের কর্মকর্তা বৃন্দ এবং কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান প্রচারে সহযোগিতায় ছিল ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাঙালী, বাংলা পত্রিকা, এনটিভি এবং টাইম টেলিভিশন। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং প্রবাসী বাঙালিদের বাফা’র পক্ষ হতে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন বাফা’র প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন। প্রভাত ফেরির পর্বটুকু পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আবৃত্তিকার গোলাম মোস্তফা এবং কমিউনিটি একটিভিস্ট সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ।

নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা ভাষা চর্চার বিষয়টিকে উৎসাহিত করতে, প্রতি বছরের মতো বাফা’র নিয়মিত আয়োজনে এবারও ছিল ‘শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা’।

আল আকসা পার্টি হলে প্রাতরাশ পর্ব শেষ হবার পর মোশাররফ হোসেন এর উপস্থাপনায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রতিযোগিতার বিচারকদের মধ্যে মঞ্জুর কাদের, আবৃত্তি শিল্পী আনোয়ারুল হক লাভলু, সংগীত গুরু জাভেদ ইকবাল, নৃত্য গুরু অনুপ কুমার দাস এবং কমিউনিটি একটিভিস্ট সিরাজ উদ্দিন সোহাগ। পুরস্কার তুলে দিতে আরও ছিলেন সাইদুর রহমান লিংকন, আব্দুস শহীদ, বাফা’র তবলার প্রশিক্ষক হাসান আরিফ ও মুক্তি যোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী। পুরস্কার বিতরণী পর্বে সহযোগিতায় ছিলেন বিপা এবং জিমি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালি জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তি যুদ্ধের বীরগাথা এবং একুশের চেতনাকে ধারণ করে উপস্থাপিত হয় ‘ফাগুন বনে আগুন মাখা একুশ” পর্বটি।

এ পর্বটিতে ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পড়ে শোনান মার্জিয়া স্মৃতি ও অর্ণব।

এরপর বাফা’র শিশু কিশোরসহ প্রশিক্ষক বৃন্দের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় কবিতা, গান এবং বৃন্ত আবৃত্তি। এতে অংশ গ্রহণ করেন জাভেদ ইকবাল, আনোয়ারুল হক লাভলু, হাসান আরিফ, জান্নাতুল আরা, ফারহানা বেগম, লুসি হাসান, শম্পা দত্ত, কানিজ ফাতেমা, নুসরাত জাহান, ফারজানা ইয়াসমিন সুমি, মোঃ জুনায়েদ, তারেক জি মোহাম্মেদ, বাবুল সরকার এবং বেনজির শিকদার, মার্জিয়া স্মৃতি, আহমেদ সাদমান, কৃষ্ণা প্রিয়া দেব, অপ্সরা দত্ত, মিশেল পালমা, জুডি পালমা, ফারিবা ইফতেশাম, সোহানা আহমেদ, ওয়াফি কবির, তুলসী দেব, আবৃত্তি, আয়ান, মায়া এঞ্জেলিনা, নুহিতা খান, অমৃতা সাহা, পারমিতা সাহা, মেহজাবিন ইশরাত, চৈতন্য দেব, ফাতেমা হৃদিতা মেহজাবিন এবং নুসরাত শিকদার কথা।

অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা এবং পরিকল্পনায় ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী এবং বাফা’র প্রশিক্ষক আনোয়ারুল হক লাভলু। সংগীত এর তত্ত¡াবধানে ছিলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী এবং বাফা’র প্রশিক্ষক জাভেদ ইকবাল। তবলায় সঙ্গত করেন বাফা’র তবলা প্রশিক্ষক হাসান আরিফ। উপস্থাপনায় ছিলেন আনোয়ারুল হক লাভলু এবং শামীম আরা বেগম। সার্বিক তত্ত¡াবধানে ছিলেন ফারজানা ইয়াসমিন।

সবশেষে বাফা’র প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিনের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করা হয়।

ব্রঙ্কসে সম্মিলিত একুশ উদযাপন

ছন্দা বিনতে সুলতান : ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য গৌরবোজ্জ¦ল একটি দিন। ১৯৫২ সনের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ঢাকার রাজপথ হয়েছিল রঞ্জিত। শহীদ হয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। সেই থেকে বাংলাদেশে এই দিনটি মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৯৯ সন হতে ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই দিন সরকারি ছুটি থাকে। নিউইয়র্কে কনকনে শীত উপেক্ষা করে কর্মদিবসেও বাঙালিরা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে। নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ব্রঙ্কসে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হলো মহান একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকেই তুষারপাতকে আগ্রাহ্য করে একে একে বাঙালিরা সমবেত হতে থাকে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের গোল্ডেন প্যালেসে। বিকেল থেকে শুরু হওয়া নানা কর্মসূচি শেষ হয় একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে দিয়ে। অনুষ্ঠানমালায় ছিল স্মৃতিচারণ, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও বর্ণমালা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নানা আয়োজন। ৩০টি সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াসে এই একুশ উদযাপিত হয়।

সম্মিলিত একুশ উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি শাহেদ আহমেদ ও মো. শামীম মিয়ার পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন আসন্ন স্পেশাল নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক এডভোকেট পদপ্রার্থী হেলাল আবু শেখ, মামুনস টিউটেরিয়ালের কর্ণধার শেখ আল মামুন, রাজনীতিক আব্দুর রহিম বাদশা, স্টারলিং বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াস উদ্দীন, সমাজসেবক আব্দুর রব দলা মিয়া, উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা আব্দুস শহীদ, চিফ কোর্ডিনেটর এরইসলাম মামুন, আবুল বাছিব খান, আব্দুল হাসিম হাসনু, আহবাব চৌধুরী, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, মাহবুব আলম চৌধুরী, মো. সোলায়মান আলী, কফিল চৌধুরী, আলমাস আলী, সারোয়ার জাহান লাহিন, প্রফেসর আবুল কাইয়ুম, হাসান আলী, আনোয়ারুল ভূঁইয়া, বনেস্বর সাহা, জীবন মণ্ডল, মোতাসিম বিল্লাহ তুষার, সারোয়ার আলী, মো. মুকিত চৌধুরী, ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া, মোস্তফা জামান সিদ্দিকী, আবুল খায়ের আখন্দ, সালেহ উদ্দীন চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, তৌকিফুর রহমান ফারুক, মো. রফিকুল ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমিন, রেক্সোনা মজুমদার, সাইদুর রহমান লিংকন, মাসুদ পারভেজ মুক্তা, যুগ্ম সদস্য সচিব শামিম আহমেদ, সমন্বয়কারী বুরহান উদ্দীন, সারোয়ার চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম, দেবব্রত পোদ্দার প্রমুখ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি এ নতুন প্রজন্ম।

অনুষ্ঠানে শিশুদের চিত্রাংকন ও বর্ণমালা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। শিশুদের প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল বাংলা কথা বলা, বর্ণমালা লিখি, বাংলা কবিতা আবৃত্তি, বাংলা গান এবং চিত্রাঙ্কন। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ব্রঙ্কস পূজা কমিটির পক্ষে গায়েত্রী সাহা, দেবস্মফি পোদ্দার। এছাড়া ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী কৃষ্ণা তিথী, সুফিয়া মেঘফা। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ছন্দা বিনতে সুলতান। কবিতা আবৃত্তি করেন জুই ইসলাম, মাকসুদা আহমেদ প্রমুখ। নৃত্য পরিবেশন করে দেবপ্রিয়া পোদ্দার ও রৌদ্র সাহা।

নানা কর্মসূচির পর একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়। নিউইয়র্ক সময় একুশের প্রথম প্রহরে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে গোল্ডেন প্যালেসে অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। একে একে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আয়োজক সংগঠনসহ অন্যান্যরা। আয়োজকরা সংগঠনগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ সোসাইটি, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশি কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কস, বাংলাদেশি আমেরিকান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক সোসাইটি, বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন, বিশ্বনাশ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ইউএসএ সিলেট দক্ষিণ সুরমা এসোসিয়েশন এ ইনক ব্রঙ্কস বাংলাদেশি উইমেন্স এসোসিয়েশন, আমেরিকা বাংলাদেশি ওয়ালফেয়ার অর্গানাইজেশন ইউএস সুনামগঞ্জ সোসাইটি অব আমেরিকা ইনক, নবীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনক, বাংলাদেশি আমেরিকান ওম্যান এসোসিয়েশন, ফেঞ্চুগঞ্জ অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ব্রঙ্কস পূজা কমিটি, সনাতনী দেব সংঘ ব্রঙ্কস ইউএসএ রাধাকৃষ্ণ সেবা সংঘ, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি, ইডেন কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশন, নেত্রকোনা জেলা এসোসিয়েশন, বাংলা ক্লাব ইউএসএ, রাজনগর উপজেলা উন্নয়ন পরিষদ, কুমিল্লা সোসাইটি শেরপুর জেলা সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ড, ইউএসএ মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, হৃদয়ে বাংলাদেশ, স্টারলিং বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন, অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশি আমেরিকা ইনক।