ঠিকানা রিপোর্ট: বাংলাদেশ সোসাইটির বিদায়ী কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৯ অক্টোবর রবিবার সোসাইটি ভবনের নিজস্ব কার্যালয়ে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সাহিত্য সম্পাদক নাসির উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য ফারহানা চৌধুরী, মঈনুল উদ্দিন মাহবুব, আবুল কাশেম চৌধুরী ও সরোয়ার খান বাবু।
সভায় নতুন কমিটির অভিষেক, ক্ষমতা হস্তান্তর, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে হিসাব গ্রহণ এবং নতুন কমিটির কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় আলোচনার ভিত্তিতে আগামী ৩১ অক্টোবর সোমবার উডসাইডের গুলশান টেরেসে নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অভিষেক অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মোহাম্মদ আলীকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে সরোয়ার খান বাবুকে। যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন নওশেদ হোসেন ও ফারহানা চৌধুরী, যুগ্ম সদস্য সচিব মাইন উদ্দিন মাহবুব, প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দ এম কে জামান, সমন্বয়কারী আবুল কালাম ভূঁইয়া, আহসান হাবীব, নাদের এ আইয়ুব ও আবুল কাশেম চৌধুরী।
সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহবায়ক হয়েছেন মনিকা রায় চৌধুরী। যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন ডা. শাহনাজ লিপি।
ম্যাগাজিন উপকমিটির সম্পাদক হয়েছেন নাসির উদ্দিন, সহকারি সম্পাদক ফয়সাল আহমদ, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সহব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. সাদী মিন্টু।
এদিকে অভিষেকের দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে হিসাব পাওয়ার বিষয়টি ততই সামনে এসেছে। সোসাইটির বর্তমান কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড চায় সিপিএ দ্বারা সোসাইটির কমিশনের সব খরচের হিসাব সম্পন্ন করা।
বাংলাদেশ সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে কমিশনকে হিসাব বুঝিয়ে দিতে হবে। সেই হিসাবে অক্টোবরের ১৮ তারিখের মধ্যে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। এই হিসাব দেওয়ার পর নতুন কমিটির অভিষেকের তারিখ, দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার কথা।
একটি সূত্র জানায়, নবনির্বাচিত কমিটির কয়েকজন নেতা চাইছেন নির্বাচন কমিশন যখনই হিসাব দিক না কেন তার আগেই যাতে বর্তমান কমিটি নবনির্বাচিত কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। পাশাপাশি কমিশন নবনিবাচিত কমিটির কাছে হিসাব দেবে। নবনির্বিাচিত কমিটি এই হিসাব বুঝে নেবেন।
এদিকে বিদায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার ও কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চাইছেন নবনির্বাচিত কমিটির হাতে নয়, যেহেতু বর্তমান কমিটির কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন অর্থ নিয়েছেন, এজন্য বিদায়ী কমিটির কাছেই হিসাব দিতে হবে। কারণ এই কমিটির কাছে না দিলে পরবর্তীতে এ নিয়ে ঝামলো হবে এবং তারা পুরোপুরি বুঝে না নিলে পরে তারা কমিশনের দেওয়া হিসাবে দায়দায়িত্ব নিতে পারবেন না। যেহেতু নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কমিশনের। তাই সব বিবেচনা করে বৈঠক সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে নির্বাচন কমিশনকে সিপিএ দ্বারা সার্টিফাইড হিসাব বর্তমান কমিটির কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ্যাৎ নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে বুঝিয়ে দিবেন। এই হিসাব দেওয়ার পর বর্তমান কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ড যাবতীয় হিসাব সম্পন্ন করে নবনির্বাচিত কমিটির কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেবেন।
জানা গেছে, বর্তমানে সোসাইটির ব্যাংক হিসাবে দুই লাখ ডলারের বেশি অর্থ রয়েছে। এই অর্থের মধ্যে কিছু অর্থ অভিষেকের জন্য খরচ হবে। বাকি অর্থ নবনির্বিাচিত কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে হিসাব দিতে হবে এমন বাধ্যবধকতা থাকলেও প্রধান নির্বাচন কমিশন জামাল আহমেদ জনি বর্তমানে নিউইয়র্কে নেই। তিনি ওমরাহ হজে গেছেন। সেখান থেকে তার বাংলাদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে। কবে ফিরবেন তা কাউকে বলে যাননি। সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে হিসাব দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। যথাসময়ে হিসাব দেওয়ার জন্য তাগিদও দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অন্য একজন নির্বাচন কমিশনারের নাম বলে তাকে দিয়ে গেছেন এবং বলে গেছেন যে তিনি হিসাব বুঝিয়ে দিবেন।
সূত্র জানায়, যে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হবে সেটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনের থাকার দরকার হবে। তাই তাকে ১৮ অক্টোবরের আগে এসেই হিসাব দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রায় সোয়া তিন লাখ ডলারের হিসাব দিবে। এরমধ্যে সোসাইটির কোষাগার থেকে কমিশণকে দেওয়া হয়েছে একবার ৬৬ হাজার, একবার ৮০ হাজার আর শেষ বার ৪৫ হাজার মোট ১৯১ হাজার ডলার। এর বাইরে নির্বাচন কমিশন নমিনেশন ফি বিক্রি ও সাবমিশন বাবদ প্রায় সোয়া লাখ ডলার আয় করেছে। সেই সব মিলে প্রায় সোয়া তিনলাখ ডলারের হিসাব, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নির্বাচনের জন্য খরচ হয়েছে বলেই এটি সিপিএ সার্টিফাইড কর্তৃক হিসাব দিতে হবে। এছাড়াও কোর্টে মামলাও চলমান আছে। যে কোন সময়ে হিসাবের প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন টিপু সুলতান। তিনি সিপিএ সার্টিফাইড দিয়ে সব হিসাব সম্পন্ন করেই বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে নব নির্বাচিত সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী সব করা উচিত। যেহেতু সোসাইটি নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। এই কারণে সব দিকেই স্বচ্ছতা থাকা দরকার। বিশেষ করে অর্থনৈতিক হিসাবের ব্যাপারে। তাই আমি চাই সোসাইটির কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন তারা দুই পক্ষই সিপিএ দিয়ে হিসাব সার্টিফাইড করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন। আমরা সব হিসাব যথাযথভাবেই চাই। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং বর্তমান কমিটি এই সব বিষয়ে সব জানেন। তাদের সময়েই মামলা হয়েছে। সুতরাং তাদের সময়ের এইসব বিষয়গুলো তারা ষ্পষ্ট করে গেলে আমরা বা আগামী দিনে যারাই দায়িত্ব নিন না কেন, কোন সমস্যা হবে না। কারণ কাগজই কথা বলবে।
এদিকে কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে সোসাইটির ফান্ডে দুই লাখ ডলারের বেশি অর্থ আছে। আমি প্রথম এত অর্থ নবনির্বাচিত কমিটিকে দিয়ে যাচ্ছি যা এর আগে কখনও হয়নি। আর আমরা সোসাইটির সব হিসাব সিপিএ দিয়ে সার্টিফাইড করিয়েছি। এখন নির্বাচন কমিশন তাদের সোয়া তিন লাখ ডলারের হিসাব সম্পন্ন করে সিপিএ দিয়ে দিয়ে সার্টিফাইড করে দিলে সেই হিসাবে আমরা নবনির্বাচিত কমিটিকে বুঝিয়ে দেব। এটি আমাদের জন্য ভাল হবে। নবনির্বাচিত কমিটির জন্য ভাল হবে। কারণ সবাই জানেন যে কমিশন ২০১৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত কোন হিসাব আমাদের দেয়নি। ট্রাস্ট্রি বোর্ড ও বর্তমান কমিটির হিসাব চেয়িছিল। তারা নির্বাচন শেষ করে হিসাব দিতে চেয়েছেন। এখন নির্বাচন শেষ। কিন্তু আমরা হিসাব পাইনি।