বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন : নতুন মামলার হুমকি দিয়ে ওসমান চৌধুরীর চিঠি

ঠিকানা রিপোর্ট : গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন সোসাইটির সাবেক নেতা ওসমান চৌধুরী। গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ, সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীকে এ বিষয়ে তিনি চিঠি দেন। চিঠিতে সোসাইটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে আট দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। এই আট দফা দাবি অনুসরণ করে নির্বাচন করা না হলে তিনি নতুন করে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন। আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন-সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধান করারও তাগিদ দেন তিনি।
এ ব্যাপারে ওসমান চৌধুরী বলেন, আমি সোসাইটির নির্বাচন সুষ্ঠুুভাবে করার জন্য কী কী বিধান অনুসরণ করতে হবে, তা বলেছি। আটটি পয়েন্টে সব উল্লেখ করেছি। আমি চাই নির্বাচন কমিশন, ট্রাস্টি বোর্ড ও বর্তমান কমিটি এগুলো সব অনুসরণ করবে। তারা যদি এগুলো অনুসরণ না করে, তাহলে আমি নতুন করে মামলা করব।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, লাইফ মেম্বার ছাড়া অন্য সব সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে না। ২১ আগস্টের মধ্যে এর সমাধান করতে হবে।
এদিকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তবে এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় যাদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে, তাদের ঠিকানা আপডেট করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এটি করার জন্য কমিটিকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি বলেন, নির্বাচন করার জন্য যে ভোটার তালিকা সেটি কমিটি আমাদের দিয়েছে। আমরা ভোটার তালিকা করি না। এটি করে সোসাইটির নির্বাহী কমিটি। এই ভোটার তালিকা এখন আপডেট করতে হবে। ইতিমধ্যে আমি বলেছি, বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার তালিকায় যাদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে, তা সংশোধন করার জন্য পত্রিকান্তরে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যাদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে, তাদেরকে ঠিকানা সংশোধন করতে হবে। তা না হলে ভোটের দিন সমস্যা হবে।
অন্যদিকে জানা গেছে, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, জটিলতা ততই বাড়ছে। কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড ও পরিচালনা কমিটির কাছে ৪৭ হাজার ডলার চাইলেও এখনো তা পায়নি। ট্রাস্টি বোর্ড ও সোসাইটি পরিচালনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, বিগত দুই নির্বাচনে খরচ হওয়া দুই লাখ ডলারের হিসাব না পেলে তারা কমিশনকে নতুন করে কোনো অর্থ দিতে সমস্যা আছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন ৪৭ হাজার ডলার চেয়েছে নির্বাচনী খরচ হিসাবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও কমিশন এখনও অর্থ পায়নি। কারণ এই অর্থ পাওয়ার জন্য কমিশনকে ট্রাস্ট্রি বোর্ড ও সোসাইটির পরিচলনার কাছে বিগত দুই নির্বাচনে তারা দুই লাখ ডলার খরচ করেছে, সেই অর্থের হিসাব দিতে হবে। সেই হিসাব দেওয়ার পর, কমিটি ও ট্রাষ্ট্রি বোর্ড দেখবে, পাশাপাশি এই অর্থ দেওয়ার জন্য অনুমোদন নিতে হবে। সেখানে এই অর্থ দিতে অনুমোদন দিলে এরপর কমিশনকে অর্থ দেওয়া হতে পারে। একের পর এক মামলা চলার কারণে মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সোসাইটির কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড বড় ধরণের কোন অংক হিসাব ছাড়া খরচ করতে চাইছে না। একটি মামলায় সব ধরণের সকলের হিসাব ও নথিপত্র চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন মামলার বাদী। ফের এখন এত বড় অংকের অর্থ দিতে গেলে আইনী জটিলতায় পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা রয়েছে। যদিও সোসাইটির নির্বাচন করার বিষয়ে এখন আর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বলে দাবি করেন সোসাইটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকতা। নির্বাচন করতে কোন বাঁধা নেই। এই বাঁধা না থাকার কারণে নির্বাচন করতে কোন সমস্যা হবে না তাই কমিশন নির্বাচন করছে।
এদিকে সূত্র জানায়, ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড তারা হিসাব নিয়ে অর্থ দেওয়ার পক্ষে। কারণ আগের হিসাব দেওয়ার পর সেই হিসাব কমিটিতে অনুমোদিত হতে হবে। আগের হিসাব না পাওয়ার কারণে তার হিসাব নিকাশ হয়নি। আর হিসাব নিকাশ না হলে সমস্যা হতে পারে। কারণ যারা মামলা করছেন তারা সোসাইটির দোষ ও অনিয়ম ধরার জন্য অপেক্ষা করছেন। আর্থিক অনিয়ম ও অসঙ্গতি পেলে মামলা করার সিদ্ধান্ত সিতে প্রস্তুতিও রাখছেন। নির্বাচন কমিশনার মোহম্মদ এ হাকিম মিয়া বলেন, আমি বাজেট দিয়ে অর্থ চেয়েছি। নির্বাচনের জন্য অর্থ দরকার। আমরা আশা করছি সেই অর্থ পাবো ও নির্বাচন হবে। আমরা ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের কাছে নয় কমিটির কাছে অর্থ চেয়েছি। এই অর্থ তারা দিলে নির্বাচন হবে। আর ট্রস্ট্রি বোর্ড যদি হিসাব ছাড়া অর্থ দিতে না চায় তাহলে বলবো হিসাবতো দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কমিটি যদি বলে তারা অর্থ দিবে না, ট্রাস্ট্রি বোর্ড দিবে, সেটাতো হবে না। কারণ কমিশন বলবত আছে। আর আদালতে মামলা থাকার কারণে কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড দুটিই বলবৎ আছে। সেই হিসাবে কমিটি অর্থ দিতে পারবে। তাছাড়া অর্থ দিবে না এমন কথা বিভিন্ন দিক থেকে কেউ বললেও বা শোনা গেলেও সোসাইটির ট্রাস্ট্রি বোর্ড কিংবা কমিটি আমাদেরকে অফিসিয়ালী বলেনি , অর্থ দিবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি বলেন, নির্বাচন সময়মতোই হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা বাজেট দেইনি বলে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন। এটা ঠিক না, কারণ আমরা এর আগে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করার দিনে বাজেট দিয়েছি। মূলত আমরা কার্যকরী কমিটির কাছেই হিসাব দেই ও অর্থ চাই। আমরা ট্রাস্ট্রি বোর্ডের কাছে অর্থ চাই না। এখন আমরা নির্বাচনে কত ডলার খরচ হতে পারে তার একটি হিসাব দিয়েছি। এরপর সেটি কমিটি অনুমোদন করেছে কিনা সেটা জানিনা। আমরা যৌথ সভায় বাজেট দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট্রি বোর্ডের কাছে হিসাব দেই না। তারা অর্থ দিবে না। দেবে কমিটি। আমি কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ট্রেজারারের বরাবরে চিঠি দিয়েছি, অর্থ চেয়েছি। এখন তারা অর্থ না দিলে, যারা নির্বাচনের অর্থ দিবেন না এই দায়ি দায়িত্ব তাদের। আমরা এখন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডে টু ডে খরচ হচ্ছে। আশা করছি তারা আমার চিঠি পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় অর্থ দিবেন।
কোষাধ্যক্ষ মোহম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি করোনার সময়ে ২০২০, ২০২১সহ সব বছরের হিসাব নিকাশ সিপিএ দিয়ে হিসাব সম্পন্ন করে ট্যাক্স ফাইল করা হয়েছে। কমিশনকে যে অর্থ দেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হিসাব পুরোপুরি পায়নি কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড। নির্বাচন কমিশন এখনও হিসাব সিপিএকে দিয়ে সম্পন্ন করায়নি। তাদের এটি করেই তা জমা দিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে। বাংলাদেশী কমিউনিটির স্বার্থে এটি হওয়া উচিত। এটি করতে হলে নির্বাচন কমিশন এখন ৪৭ হাজার ডলার চেয়েছে। এই ডলার না দিলে নির্বাচন হবে না এটা ঠিক। নির্বাচনের খরচ তো আর না দিয়ে থাকা যাবে না। এটি দিতে হবে। তবে তা দিতে হলে প্রথম যৌথ সভায় কমিশনকে বাজেট দিতে হবে। সেই বাজেট পাস করতে হবে। এর আগে তারা কত ডলার লাগবে এমনটি দিয়েছিল শুনেছি কিন্তু আমি মিটিংয়ের ওই সময়ে উপস্থিত ছিলাম না। তিনি বলেন, ওই হিসাবটি পুরোপুরি আমি জানি না। তা ছাড়া অর্থ দিতে হলে যৌথ সভার বৈঠক হতে হবে এবং অনুমোদন দিতে হবে। তারা যদি এটি অনুমোদন দেন তাহলে আমি দিয়ে দিবো চেক। গঠনতন্ত্রের নিয়ম হচ্ছে কমিশন নির্বাচনের বাজেট দিবে। সেই বাজেট নির্বাহী পরিষদ ও ট্রাস্ট্রি বোর্ডে অনুমোদন হতে হবে। অনুমোদনের পর অর্থ দেওয়া হবে। অনুমোদন না হলে সমস্যা হবে। তারা অনুমোদন দিলে চেক দিতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু হিসাব না পেলে ট্রাস্ট্রি বোর্ড অর্থ দিতে রাজি না। এখন কমিটি যেহেতু সেইভাবে কাজ করছে না। এই কারণে কমিশন, কমিটি ও ট্রাস্ট্রি বোর্ড সবাইকে বসেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি বলেন, এর আগে দুইবার নির্বাচনের জন্য যে অর্থ নেওয়া হয়েছে সেই অর্থের হিসাব কমিটির কাছে আছে। কারণ বাজেট দিয়েই অর্থ নিয়েছি। এখনও নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পুরোপুরি হিসাব দেব। সোসাইটিতে কোন কমিশন আগে হিসাব দেয় না। নির্বাচন হওয়ার পর যখন সব কিছু শেষ হবে, তখন হিসাব দেব। যেহেতু আগে দুইবার নির্বাচন হয়নি তাই হিসাবও সেইভাবে পুরোটা দেওয়া হয়নি। তবে এই অজুহাতে সোসাইটরি কমিটি, ট্রাস্ট্রি বোর্ড তারাতো আগামী নির্বাচন করার জন্য অর্থ না দিয়ে পারবেন না। এছাড়াও নতুন করে যে বাজেট দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে এটাতো আমরা আগেই দিয়েছি। এখন তারা আমাদেরকে বাজেটের অর্থ দিলে আমরা নির্বাচনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল রহিম হাওলাদার ২১অগস্ট দেশ থেকে আসার কথা। তিনি আসার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সোসাইটির একটি সূত্র। এ অবস্থায় ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।