ঠিকানা রিপোর্ট: আগামী ২১ অক্টোবর প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন। এই নির্বাচনে দুটো প্যানেল এবং দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একটি প্যানেল হচ্ছে রব- রুহুল প্যানেল, অপর প্যানেল হচ্ছে নয়ন- আলী প্যানেল। স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন আব্দুল মোমেন। রব- রুহুল প্যানেলের সভাপতি হিসাবে রয়েছেন মোহাম্মদ রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। এই প্যানেল পূর্ণ ১৯টি পদে নির্বাচন করছে। অন্যদিকে নয়ন- আলী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। এই প্যানেলের কার্যকরি পরিষদের ২ জন সদস্য পদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। যে কারণে এই প্যানেলের ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ইস্তেহার ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি ঠিকানাকে জানান, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মেশিন ঠিক করা হয়েছে এবং ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটো প্যানেলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি নিয়ে যারা ভাবেন তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সোসাইটির সকল অশান্তির মূলে ট্রাস্টি বোর্ড। নির্বাচনের পরে নব নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তাদের খবরদারি শুরু হয়। নির্বাচনে যেহেতু তারা কোন না কোন প্যানেলের পক্ষে কাজ করেন, সেহেতু তাদের শাসন চলতেই থাকে। তাদের শাসনকে কেন্দ্র করেই কমিটির মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়। সৃষ্টি হয় অশান্তি। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়- ট্রাস্টি বোর্ড গঠন। তারাই ঠিক করে দেয় কাকে কাকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করা হবে। বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারাও তাদের হাতের পুতুলে পরিণত হন। কারণ তারাই তাদের নির্বাচিত করেছিলো। নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করেছিলো। ঋণশোধের সুযোগ আসে। অনিচ্ছা সত্তে¦ও তাদের এই অপ্রিয় কাজটি করতে হয়। তারপরেও যেন তাদের মুক্তি নেই। বাংলাদেশ সোসাইটি কীভাবে চলবে, কোন অনুষ্ঠানে কারা অতিথি হবে- সোসাইটির ছোটখাট বিষয় নিয়েও তাদের হস্তক্ষেপ থাকে। যে কাজটি বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির করার কথা সেই কাজটি তারা করেন। জোর করে মিটিং করেন। এই সব ইস্যুকে কেন্দ্র করেই সোসাইটির কার্যকরি কমিটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। মিটিং এ যদি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের কথা মত ভোট না দেন, তখনই তাকে বা তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয় নির্বাচন। ট্রাস্টি বোর্ডের যে সব সদস্য ভোট দিয়ে যাদের নির্বাচিত করেন, তাদের স্বার্থেই তারা দল বদল করেন। গায়ে মানে না আপনি মোডলের মত বাজারে নিয়ে আসেন অর্থে তাজা নতুন প্রার্থী। দেখা যায় দায়িত্ব নেয়ার এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের ঢামাডোল শুরু হয়ে যায়। কার্যকরি কমিটি ট্রাস্টি বোর্ডের অতিউৎসাহী নেতাদের ষড়যন্ত্র সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন। কাজের কাজ কিছুই করতে পারেন না। অন্যদিকে ট্রাস্টি বোর্ডের এ সব সদস্য বাজারে বলতে থাকেন নির্বাচনে দেখে নেবো। দেখে নেয়ার এই হুমকিতেই পরবর্তী নির্বাচনের সমীকরণ তৈরি হয়। সোজা কথা ট্রাস্টি বোর্ডের যে সব সদস্য ন্যায় কথা বলতেন তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
এবারের নির্বাচনেরও প্রেক্ষপট তৈরি একটি সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র। কার্যকরি কমিটির বিষয়টি জোর করে নিজেরা টেনে নিয়ে যান। লক্ষ্য এটাই অন্যায়ভাবে শাসন করা এবং নিজেদের প্রভাব জাহির করা। প্রভাব জাহির করতে গিয়ে বিভক্ত করে দেন বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটিকে। কার্যকরি কমিটির এক সদস্যকে শাসাতে আসা কয়েকজনের ষড়যন্ত্র রুখে দেন কার্যকরি কমিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ। লম্প- ঝম্প দেয়া কয়েকজন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অন্যায় কথায় সায় না দিয়ে সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সত্যের পক্ষে অবস্থান নেন। ইমামকে ঐ মিটিং-এ বস করতে না পারলেও সহকারি ইমামরা নির্বাচনের ব্যাপারে তাকে বস করতে সক্ষম হন। যদিও তিনি আগের মত এক্টিভ নন। অনেকটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছেন।
এবারের নির্বাচনেও সহকারি ইমামরা একটি প্যানেলের পক্ষে অবস্থান নেন। তারাই অর্থেপুষ্ট একজন প্রার্থী নিয়ে আসেন। তারাই গঠন করেন তাদের পছন্দের একটি প্যানেল। এই প্যানেলের হর্তাকর্তা বিধাতা তারাই। তারাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রার্থীদেরও যেন স্বাধীনতা নেই। ভুল মনোনয়নের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিল ২ সদস্যের বিষয়টি তারা বাজেট পাশের মতবিনিময়ে তুলে ধরেন। যে কাজ সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের এখতিহারে, তা নিয়েও অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করেন। জানা গেছে, এখন বাদ পড়া একজন সদস্যকে মামলা করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। মামলা করতে লাগবে প্রায় ৬ হাজার ডলারের মত, সেই সদস্যকে প্রস্তাব দেয়া হয় আমরা ৪ হাজার ডলার দেবো, বাকি ২ হাজার ডলার আপনি দেন। এই প্রস্তাব পেয়ে ঐ সদস্য বলেন, আমি মামলা করতে চাই না। আমি নির্বাচনের জন্য যে অর্থ দিয়েছি তা আমাকে ফেরত দিন। ব্যালট পেপার তাদের পছন্দ হয়নি, তা নিয়েও বাগড়া দেন। সহকারি একজন ইমাম গত ১ অক্টোবর ওজনপার্কে নির্বাচনী সভায় বলেছেন, আমরা এখনো নির্বাচনে যাবেন কি না সন্দেহ। এই কমিশনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে। আপনারা যে কোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন। অথচ সবাই চান ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন সম্পন্ন হোক- কিন্তু এই প্যানেলের মুরব্বীরা খুঁজছেন মামলা করার অজুহাত।
অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড নিয়োগ করা উচিত। আর গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যাতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারেন তার ব্যবস্থা করা উচিত। তাহলেই বাংলাদেশ সোসাইটি সুষ্ঠুভাবে চলবে। অনভিপ্রেৎ হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা পাবে।