এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জয়ী মাবিয়া নিজেকে আরো দূরে নিয়ে যেতে চান। দেশকে দিতে চান আরো আন্তর্জাতিক পদক। তবে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশি কোচ চেয়েছেন তিনি। মাবিয়া বলেন, ‘শুধু বিদেশি হলেই হবে না। আন্তর্জাতিক মানের কোচ হতে হবে।’ একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে ভারোত্তোলনের এই সোনার মেয়ে বলেন, ‘আমার যতটুকু করার আমি করে ফেলেছি। এখন আরো ভালো করতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। যত বেশি উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবো, তত বেশি পদক জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।’
মাবিয়ার বয়স এখন ১৯। দেশকে দেওয়ার মতো এখনো অনেক সুযোগ আছে তার। আগামীতে এশিয়ান গেমস, অলিম্পিক গেমস, কমনওয়েলথ গেমসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ভারত্তোলনের আসর আছে। তবে বড় মঞ্চে দেশের পতাকা তুলে ধরতে প্রয়োজন পরিকল্পনা। মাবিয়া বলেন, ‘এর জন্য প্রয়োজন তিনটি জিনিস- একজন আন্তর্জাতিকমানের প্রফেশনাল কোচ, প্রশিক্ষণের জন্য ভালো ক্রীড়াসামগ্রী ও আধুনিক ট্রেনিং সেন্টার। এই তিনটি বিষয়ে জোর দিলে আমরা পদকের কাছে চলে যেতে পারবো।’
অস্ট্রেলিয়ার গোলকোস্টে অনুষ্ঠিত কমনওলেথ গেমসে ১১ জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন মাবিয়া। ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণির লড়াইয়ে একটুর জন্য মাবিয়া চতুর্থ হতে পারেননি। মাবিয়া বলছিলেন, ‘চতুর্থ কেন, আমাকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে পদকের লড়াইয়েও নামতে পারবো। এখনকার মতো আর আফসোস থাকবে না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে,আমাদের এখানে সব কিছুরই অভাব।’
অনেক কষ্টের জীবন অতিক্রম করে মাবিয়া এখন দেশের সোনার কন্যা। কোনো গেমসে দেশের প্রথম স্বর্ণজয়ী নারী ভারোত্তোলক মাবিয়া। টিভি পর্দায় বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাকে। খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের বাসা ছেড়ে এখন বড় ফ্ল্যাটে বসবাস তার। অথচ এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পুরুষশাসিত সমাজে পদে পদে বাধা ডিঙাতে হয়েছে তাকে। মামা কাজী শাহাদাতের হাত ধরে ক্রীড়াঙ্গনে পা দেন মাবিয়া। খেলার পোশাক পরে অনুশীলনে যেতেন, সেটা অনেকের চোখে দৃষ্টিকটু লাগতো বলে তাকে টিপ্পনি কাটত। আজে-বাজে কথা শুনে নীরবে চোখ ভিজত। কিন্তু কাউকে দেখাতেন না। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন চোখের পানি ফেলে তবে বুকে সাহস রেখে নিজের লক্ষ্যে মাবিয়া ছিলেন অবিচল।
মাবিয়া বলেন, ‘গৌহাটিতে এসএ গেমসে স্বর্ণপদক পাওয়ার আগ পর্যন্ত রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় পেছন থেকে অনেক খারাপ কথা শুনেছি। খেলব না বলে অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যদি আশপাশের মানুষের কথায় নিজেকে গুটিয়ে নিতাম, তাহলে আজকের মাবিয়া হতে পারতাম না। যারা আমাকে কটুকথা বলে আমার জীবনকে বিষাক্ত করে দিয়েছিল, ওদের কথায় কান দিলে ওরা জিতে যেত, আমি হেরে যেতাম। আমি জিতেছি, ওরা হেরে এখন আমাকে সম্মান করে। পদক পাওয়ার পর অনেকের দৃষ্টিভঙ্গিও চেঞ্জ হয়েছে।’
নানা সমস্যায় ভারোত্তোলন : দেশে ভারত্তোলকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক কিছুরই সংকট আছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটাই সবচেয়ে ভঙ্গুর। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামসংলগ্ন সুইমিংপুলের পাশে নিচ তলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর অবস্থান। সাওনা স্টিম বাথ দরকার। জিম নেই।
হিটিং সিস্টেম নেই। ভারত্তোলকরা ভালো কোচ চায়। উন্নত প্রশিক্ষণ চায়। কিন্তু সরকারি সহায়তা ছাড়া এত কিছুর ব্যবস্থা করাটা ফেডারেশনের জন্য একটু কঠিন।
এ প্রসঙ্গে ভারত্তোলন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই প্রশিক্ষণের জন্য কোচ আনা দরকার। প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের একটা জায়গাও দরকার। অনেক সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করা দরকার। আধুনিক জিম দরকার।’
এসব সমস্যা নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাইলেন। তবে কী লাগবে, না লাগবে তা ফেডারেশনকে নির্ধারণ করে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বললেন, ‘ফেডারেশেনের সমস্যার কথা তাদের নিজেদেরকে জানাতে হবে। আমার জানা মতে, ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সমস্যা নিয়ে কোনো আবেদন করেনি তারা। ফেডারেশন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করুক। আমরা চেষ্টা করব। আমাদের সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা সব ফেডারেশনকে অনুদান দিয়ে থাকি।’