লুৎফা শাহানা: হাজার বছরের বাংলা কবিতা ও বাংলা গানের ইতিহাস বন্দনা ‘বাংলার কবিতা, বাংলার গান’ ৬ মে রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যাকসন হাইটসের পি এস ৬৯ স্কুলে। ফারুক ফয়সালের গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা এবং ডঃ নজরুল ইসলামের নির্দেশনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যায়। দুই ঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানটি উপস্থিতরা উপভোগ করেছেন পরম আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শুরু না করতে পারায় পরিকল্পিত সময়সূচি থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিট বাদ দিতে হয়েছে। মাত্র দুই ঘন্টায় প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের কবিতা ও গানের মেলবন্ধন পরিবেশন করা সত্যি এক অসাধ্য ব্যাপার।
হাজার বছর ধরে চলে আসা বাংলা কবিতার বিবর্তন ও বাংলা গানের ইতিহাসের অসংখ্য উৎকৃষ্ট কবিতা এবং কালজয়ী গান থেকে সুনির্বাচিত কিছু গান ও কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠাটি। শুরুতেই মোর্শেদ খান অপুর মোহনীয় সেতারের মূর্ছনায় আবিষ্ট হন হলভর্তি দর্শক শ্রোতা। এর পরপরই সবাই চলে যায় বারো’শ বছর আগে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবিতা চর্যাপদে, সেখানে লুইপার ‘কা আ তরুবর, পাঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চিত্র পইঠা কাল। ‘শোনার পর আসে মধ্য যুগের গোবিন্দ দাসের রাধা কৃষ্ণের কীর্তন, চন্ডী দাসের কবিতা, বিদ্যাপতির আক্ষেপন, আব্দুল হাকিমের দর্নামা কাব্য থেকে পাঠ, সে সময়কালের জনপ্রিয় পালাগানের একটি কণ্ক লিলা থেকে, শোকার্ত লিলার দুঃখের বিবরণ। এরপর ‘মনরে কৃষি কাজ জান না’, রাম প্রসাদের গান শুনতে শুনতে দর্শক শ্রোতারা ফিরে আসে আধুনিক যুগে। কবি ঈশ্বর গুপ্তের হাত ধরে আধুনিক কবিতার যাত্রা শুরু হলেও এ যাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান মহা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিহারী লাল চক্রবর্তী, কায়কোবাদ, মহিতলাল মজুমদার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকে। বিশ্বের দরবারে বাংলা সাহিত্যকে মর্যাার আসনে সমাসীন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আধুনিক বাঙালির মননে ও সৃজনে জ্যেতির্ময় এক দ্যুতি ছড়িয়ে দেয় তাঁর কবিতা ও গান। এ পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ কবিতার সঙ্গে নৃত্য ও দুটি গান পরিবেশিত হয়। অতুল প্রসাদ সেনের গান, নজরুলের। বিদ্রোহী কবিতার সঙ্গে নাচ ও পরপর দুটি গান, আব্বাস উদ্দীনের ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’, আহসান হাবীবের কবিতা, আব্দুল লতিফের কথা ও সুরে আব্দুল আলীমের গান ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, শামসুর রাহমানে ‘কখনো আমার মাকে’ কবিতা, সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ও তাঁর লেখা ও সত্য সাহার সুরে ফেরদৌসি রহমানের গাওয়া সুতরাং ছায়াছবির গান ‘ পরাণে দোলা দিল এ কোন ভোমরা’, কবি শহীদ কাদীর ও নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পাশাপাশি খান আতাউর রহমানের লেখা ও সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের ‘ একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’র সাথে রথীন্দ্র নাথ রায়ের অসাম্প্রদায়িক ও শক্তিশালী দেশ প্রেমের গান’ চাষাদের মুটেদের মজুরের, গরীবের নিঃস্বদের ফকিরের, আমার এ দেশ সব মানুষের’ শুনতে শুনতে নির্ধারিত অনুষ্ঠান শেষ হয়। এসময় ফারুক ফয়সাল মঞ্চে একে একে ডাকেন সাংবাদিক মনজুর আহমেদ, হাসান ফেরদৌস, নিনি ওয়াহেদ, কবি সামস আল মবীন এবং নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রিয়েল এস্টেট ইনভষ্টর আনোয়ার হোসেনকে। কিছু বলতে বলা হলে সকলেই নিজেদের বক্তব্যে আবিষ্টতা এবং একরাশ মুগ্ধতাই প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আনোয়ার হোসেন এরকম ব্যতিক্রমী আয়োজনে সাথে সবসময়ই থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বাচিক শিল্পীরা ছিলেন, শরফুজ্জামান মুকুল, ক্লারা রোজারিও, মিজানুর রহমান বিপ্লব, আবীর আলমগীর, নজরুল ইসলাম, হোসেন শাহরিয়ার তৈমুর, দুররে মাকনুন নবনী, তাহরিনা পারভীন প্রীতি। সঙ্গীতে ছিলেন, মুত্তালিব বিশ্বাস, কাবেরী দাশ, শফি চৌধুরী হারুন, শাহ মাহবুব, জীবন বিশ্বাস, রেজাউল করিম এবং তনিমা হাদী। নৃত্যে সেমন্তী ওয়াহেদ।