বাংলা বসন্তে স্যেক্যুলার ঝড়

সেই সব নানা রঙের দিনগুলি (পর্ব-৩৪)

শামসুল আরেফিন খান

ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ আর ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের একটা দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক স্বার্থে জিইয়ে রাখা হয় ঐতিহাসিক কারণে এবং হালনাগাদ বৈশ্বিক কারণেও। অভিন্ন ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রের একটা বড় দৃষ্টান্ত হল যুক্তরাষ্ট্র। তার পরেই চীন ও যুক্তরাজ্যকে ধরা যায়। তবে যুক্তরাজ্যের আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে নানারকম উসখুস রয়েছে। অভিন্ন দর্শন ও ভাষার বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র বলতে চীনকেই বোঝায়। স্বাধীন ভারতে হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান – শিখ -জৈন -পার্সী প্রভৃতি বহু ধর্মের মেলবন্ধনে হিন্দি ভাষাভিত্তিক ভারতীয় জাতীয়তাবাদ শক্ত বন্ধনীর ভিতর লালিত হয়েছে ৭১ বছর। তবুও কাশ্মীর এবং আসামসহ সপ্তকন্যা খ্যাত অঞ্চলে চাপান উতোর রয়েছে এখনও। মাথাব্যথা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারেরও। টন টন করা শিরঃপীড়াটা বেড়ে গিয়েছিল অক্টোবর ২০০১ এর পর। সেই রগ টাটানো উপসর্গ ২০০৯ জানুয়ারি অবধি টানটান অবস্থায় ছিল। মৌলবাদে মৌলবাদে দহরম মহরম যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও “১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার “ ধরাপড়ার ঘটনা কালকেউটের ফনাকে দৃশ্যমান করে তুললো। ভারতের যারা চরম দক্ষিণপন্থী শক্তি, যারা একসময় মনে করতো ’৬৫ সালে এক থাবায় ‘পূর্ব পাকিস্তান ‘ কেড়ে নিয়ে কাশ্মীর না বানিয়ে ইন্দিরা-শাস্ত্রীর কংগ্রেস বিরাট ভুল করেছে। যুদ্ধের সময় অরক্ষিত পূর্ব পাকিস্তান ভূখন্ড দখল করে নিলে একাত্তরে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে বলবৎ ও বলবান করার এতবড় ঝুঁকি নেয়ার কোন দরকারই হতনা। এত আদিখ্যেতারও কোন অবকাশ থাকতো না। জামাত নেতা শিল্পমন্ত্রী হওয়ায় তারা বুঝতে পারলো বাংলাদেশে ফনা উঁচিয়েছে কালকেউটে।
বিএনপিকে আজও তার মূল্য দিতে হচ্ছে। সাউথ ব্লকের বারান্দায় অলিন্দে উঠোনে লাগাতার গড়াগড়ি খেয়েও বিজেপির লেজের নাগাল পায়নি তারা। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশে থাকা রাষ্ট্রদূত মুচকুন দুবে, বিজেপির থিঙ্ক ট্রাঙ্কের শ্রী রাম মাধব , পলিসি রিসার্চ সেলের অনির্বান গাঙ্গুলি সহ নীতি নির্ধারকরা বিএনপির প্রেম প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। নিজের দেশের অখন্ডতার হুমকি নিয়েই ভাবতে তাঁরা ব্যস্ত। সবাই তাঁরা প্রায় এক বাক্যেই বলেছেন, “বিএনপি কথনোই ভারতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার পক্ষে দাঁড়ায়নি। সারাজীবন রাজাকারদের তোষামোদ করেছে। আজ তারা ভারতের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব বা নীতি বদলালো কি নাবদলালো তাতে , ভারতের কিছুই আসে যায়না। তারা জামাত ছেড়েছে কিনা সেটাই বড় কথা”। ২০০১-২ সালে তারেক অনেক ধর্ণা দিয়েছিল। কিন্তু পাত্তা পায়নি। “তার জন্যেও সে নিজে দায়ী না। আই এস আই ও জামাতের সঙ্গে তার কথিত যোগসাজসই তার জন্যে দায়ী”। এ কথাও বলেছেন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের শীর্ষ ব্যক্তিরাই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘ জয় বাংলার’ ঢেউ লেগে উদ্বাস্তু বাঙালিদের মনে বেশ একটু রঙ ধরেছিল। বঙ্গবন্ধু ভোরের পূজার অর্ঘ্য পেতে শুরু করেছিলেন। তখন কম্যুনিস্ট নেতা সর্বভারতীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী জ্যোতিবসু ‘হিন্দিভাষাভিত্তিক ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পক্ষে শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সেই আবেগের ফুলকিতে জল ঢেলে দিয়েছিলেন। সেভাবেই অবশ্য তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে শ্রমতি ইন্দিরা গান্ধীকে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি তখন নিজগুণে ভারতীয় বাঙালিদের অবিসম্বাদিত নেতা হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধু সেই আবেগী চত্বরে একটু অন্যরকম অবস্থান করে নিয়েছিলেন। সেটা তাঁর মনে কোন আঁচড় কেটেছিল কিনা সেটা জানিনা। তবে ভারতে পুনর্বাসিত হওয়া পূর্ব বঙ্গীয় বাস্তত্যাগীদের মনে যে বাষ্প জমেছিল তাতে বেশ খানিকটা উষ্ণতা ছিল। আমি তার একটু নিবিড় পরশ পেয়েছিলাম একাত্তরে তুমুল বর্ষার সময়। সমগ্র বিহার জলমগ্ন ছিল। আসামের করিমগঞ্জ থেকে কোলকাতা যেতে প্রায় আটদিন লেগে গেলো। বন্যায় ডোবা রেলপথে রোামাঞ্চকর একটানা মন্থর যাত্রায় একবস্ত্রে থাকতে তেমন কোন কষ্টই বোধ করিনি। দীর্ঘ রেলভ্রমণে কোন ক্লান্তি আসেনি। কারণ ছিল এক অবিশ্বাস্য হৃর্দ ও সখ্যের অনবদ্য অভিব্যক্তি। আন্তরিক আপ্যায়ন সারা পথ জুড়ে। প্রথম শ্রেণীতে চড়ে বসেছিলাম দুরু দুরু বুকে। টিকিট ছিলনা। বেসরকারি “ত্রাণ কমিটির” একটা পরিচিতি চিরকুট আর রণাঙ্গনের একটা পরিচয়পত্র সম্বল। পকেট বলতে গেলে গডের মাঠ। কিন্তু বুফে কার থেকে তিন বেলা চর্বচোষ্যের সরবরাহ কী ভাবে বিনা পয়সায় পেলাম তা বুঝতেইই পারলাম না। সেই সাথে সহযাত্রীদের কাছ থেকে চপ কাটলেট- চা কফি নিরন্তর। টিকিট চেকাররা ছিলেন প্রায় সবাই পূর্ববাংলায় মা-মাটি ফেলে আসা আবেগপ্রবণ মানুষ। প্রতি ঘাটে কেউনা কেউ এসে আর এক স্টেশন না আসা পর্যান্ত আদর আপ্যায়নে ডুবিয়ে রেখেছেন আমাকে। কত না তাদের সুখ দুঃখের স্মৃতিচারণ। মনোবেদনার বিস্ফোরণ। কী যে উচ্চতা তাঁদের স্বপ্ন-বাসনার!
মনে আছে ! ইতিহাসের আর এক অধ্যায়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এমনি আদর আপ্যায়ন পেয়েছিলাম রেল ভ্রমণে। সেটা ছিল ১৯৬৩ সাল। আমি আর প্রিয় ব্যক্তিত্ব অগ্রজ সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী লাহোর থেকে রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছিলাম। সে আবেগের মর্ম ছিল অবশ্য ভিন্ন। তাদের কাছে ছিলাম স্বদেশে ভিনদেশী। একাত্তরে যাদের সান্নিধ্য পেলাম তাঁরা আমার কাছে ভিন দেশে স্বদেশী। পার্থক্য সেটাই।
কলকাতা থেকে ফেরার সময় ‘সি-আর-পির’ নক্শাল নিধনযজ্ঞের ভয়ঙ্কর ও মর্মস্পর্শী কিছু লাইভ দৃশ্য দেখলাম শিয়ালদহ ষ্টেশনে। ফিরতি যাত্রার সূচনায়। হুইসেল বাজলো। শিয়ালদা স্টেশনে বিচরণরত হাজার হাজার মানুষ হঠাৎ ভ্যানিশ হয়ে গেলো। ঠুস ঠাস কিছু শব্দ।বুটের দ্রুত বিচরণ ও নিষ্ক্রমন। প্যান্টের ওপর বাংলা পাঞ্জাবি পরা টগবগে চক চকে কিছু যুবকের দৃশ্যপটে প্রবেশ। তাদের একহাতে চকচকে পিস্তল। অন্যহাতে লাশটানা রশি। দমকলের হোসপাইপে রক্ত ধুয়ে গেলো। আবার লোকে লোকারণ্য। ট্রেনের ফার্স্টক্লাস কমপার্টমেন্টের দরজার হাতল ধরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। পাশের লোককে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার ? কিসের এত হুলুস্থুল ? ভীত সন্ত্রস্তভাবে সহযাত্রী অস্ফুটে বললেন, সিৃ আরৃ.পি..যুব..কংগ্রেস ! হাওড়া ব্রিজে আরও ৬ টা লাশ পড়েছে। ট্রেন ঝিক ঝিক করে চলা শুরু করলো বিহার অভিমুখে। আমি ফিরে যাবো গোহাটি হয়ে শিলচর। সেখান থেকে করিমগঞ্জ। আবার অন্তত ৭দিনের ধাক্কা। বন্যা পরিস্থিতি তখনও বলতে গেলে অপরিবর্তিতই ছিল।
নক্শাল বাড়ির রক্তজলের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল গাঙ্গেয় অববাহিকায়। তা গড়িয়েছিল ৭২ সালে সর্বহারা নেতা সিরাজ শিকদারের এনকাউন্টার ও তৎপরবর্তী রক্ষীবাহিনী অপারেশনে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম দূরদর্শী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কেন তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের পতাকায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূখন্ডের মানচিত্র জুড়ে দিয়েছিলেন? কেন অর্বাচীণ এক ছাত্রকর্মীর হাতে দিয়ে ১ মার্চ একাত্তর সেই অসাধারণ পতাকা জনারণ্যে ভবনশীর্ষে উত্তোলন করতে বলেছিলেন? কেন অপর এক তরুণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ইশতেহার? প্রতিবেশীর জন্যে সেটা ছিল নিরাপত্তা ও বিশ্বস্ততার অঙ্গীকার।আমাদের জন্যে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর হুশিযারি। মনের আবেগ এমন উচ্চতায় উথলে উঠতে পারবে না , যাতে কূল ছেপে কোন বিপত্তি ঘটে। এটার খুব প্রয়োজন ছিল। তা না হলে বায়ান্নর মহান একুশের স্যেক্যুলার আবেগ এপার বাংলা ওপার বাংলার কূল ভাসিয়ে সব স্রোতধারায় বাঙালি আবেগের ঢল নামিয়ে চরম বিপত্তি ঘটাতে পারতো। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সীমানা দেগে দিয়েছিলেন। কাঁটাতারের বেড়ায় ঝাঁকি দিয়ে সেটা কতটা মজবুত তা পরখ করে তবেই যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দিয়েছিলেন শ্রীমতি গান্ধী। দুজনের দূরদর্শিতায় নিবিড় ছিল গভীর প্রজ্ঞা। তাতেই বাঙালি জাতি ৫২-এর ভাষা বিপ্লবের স্যেক্যুলার ভেলায় ভেসে ৭১ এ ভালোবাসার নিসর্গ রচনা করতে পেরেছিল। আমি ভাগ্যবান , তাই মাত্র ১২ বছর বয়সে ভারতবর্ষের সেই সর্ববৃহৎ স্যেক্যুলার বিপ্লবের সূচনাকালে বাত্যাতাড়িত হয়ে যুধিষ্ঠিরের ক্ষণিক নরক দর্শনের মত একচিলতে কারাবাসের স্বাদ নিতে পেরেছিলাম। আমার নগণ্য অকৃতী জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি এবং শীর্ষ অহঙ্কার সেটাই। তারই ধারাবাহিকতায় এসেছিল আমার কৈশোরে ১৯৫৫ সালের কারাজীবন যা আমার সামনে পৃথিবীর দুয়ার খুলে দিয়েছিল। ১৫ বছর বয়সে দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ’ইপসুর’ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্যপদ পেয়ে স্কুল জীবনেই জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতে আমার অভিষেক ঘটে। তার আগে বা পরেও আর কোন স্কুল ছাত্র তেমন সৌভাগ্যের অধিকারী হয়নি কখনও। আমাকে হারিয়ে দিয়েছিল কেবলমাত্র ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ নবকুমার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান। ধন্য সে মহাপ্রাণ!
(২): আরবী ভাষা আরব ভূখন্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা। প্রেমের ভাষা , গানের ভাষা। শিক্ষার ভাষা ও শাসন শোষণের ভাষা। ধর্মের দিক দিয়ে সর্বকালের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ইসলাম অনুসারীরা। সুন্নী ও শিয়া সম্প্রদায় এবং নানা ফেতনায় বিভক্ত ছিল তাদের অনেকে। তাছাড়া ছিল খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মাবলম্বীরাও। কিন্তু তাদের সবার মুখের ভাষা ও জীবনের ভাষা ছিল অভিন্ন। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ধারণাকে ধ্যানে ও চিত্তে ধারণ করেছিলেন, দার্শনিক মাইকেল আফলাক ও তাঁর সমদর্শী সালাউদ্দীন বিতার। তাঁরা ১৯৪০ সালে “আরব সোস্যালিস্ট বাথ পার্টি” প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে তার নাম ছিল ‘আরব ইহইয়া মুভমেন্ট’। ১৯৪৩ সালে নাম পরিবর্তন করা হয়। সে দলের প্রতিষ্ঠাতা আফলাক ও বিতার দুজনই ছিলেন সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের দর্শনে উদ্বুদ্ধ। তাঁরা সমস্ত আরব ভূখন্ড জুড়ে আরবী ভাষা ভাষী মানুষের একটা ফেডারেল যুক্তরাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। মিশরের কর্ণেল নাসেরও সেই সপ্নের ভেলায় ভেসেছিলেন।
প্রতিষ্ঠা লাভের অল্পকাল পর ‘আরব ইহইয়া মুভমেন্ট’ উপনিবেশ বিরোধী আরব জাতীয়তাবাদী সামরিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালে আফলাক ইরাককে সাহায্য করার জন্য সিরিয়ান কমিটি গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইঙ্গ-ইরাকি যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিরোধী ও ইরাকের অক্ষপন্থী সরকারকে সমর্থন করা। যুদ্ধে ইরাকি সেনাদের পাশে দাড়িয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াইকে বলীয়ান করতে ‘ আরব ইহইয়া মুভমেন্ট ’এর সিরিয়ান কমিটি অস্ত্র ও স্বেচ্ছাসেবক পাঠায়। ১৯৪৩ সালে মাইকেল আফলাক সিরীয় সংসদের সদস্যপদের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে তাঁর বাসনা সফল হয়নি।। সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আফলাক অন্যান্য দল যেমন , আকরাম আল হাউরাণির “আরব সোশ্যালিস্ট মুভমেন্ট” দলের সাথে সহযোগিতা করে সেক্যুলার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হন। সেই সংহতি নিয়ে ১৯৪৭ সালে তার দল আরব বাথ পার্টিতে পরিণত হল। আল হাউরানির আরব সোশ্যালিস্ট মুভমেন্ট পরবর্তীকালে ১৯৫০ এর দশকে আরব বাথ পার্টির সাথে একীভূত হয়ে আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টি গঠন করে। বাথ পার্টির একটি শাখা ইরাকে ক্রিয়াশীল ছিল সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে। ১৪ জুলাই ১৯৫৮ বাথ পার্টি সমর্থিত করিম কাশেম এবং কম্যুনিস্ট পার্টি সমর্থক কর্ণেল আরিফ অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করেন। হাশেমী রাজবংশ উৎখাত হয়। রাজা , রাজপুত্র এবং ব্রিটিশ আশীর্বাদপুষ্ট প্রধানমন্ত্রী নূরী আস সাঈদ বিপ্লবী নিধনকান্ডের শিকার হন। সেই সাথে জর্ডান ও ইরাকের আরব ফেডারেশনও বিলুপ্ত হয়। কিন্তু ইরাকের বাথ পার্টি এবং কম্যুনিস্ট পার্টির প্রবল দ্বন্দ্বে মিশর সিরিয়ার সংযুক্ত আরব ফেডারেশন গঠনের বিষয়টা চাপা পড়ে যায়। সমস্ত আরব ভূখন্ড জুড়ে একটি ভাষিক রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন ভূলুন্ঠিত হয়।
(৩): ১৯১৭ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের ঝড়ো হাওয়ায় পালে বাতাস পেয়ে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বলশেভিকদের হাত ধরে কূলে ভিড়তে পেরেছিল মহামতি লেনিনের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে। তারপরেই আরবের পাশে মুসলিম ঘরানায় প্রথম স্যেক্যুলার বিপ্লব করেন জাতীয়তাবাদী সেনাপতি মোস্তফা কামাল পাশা। ইঙ্গ-ফরাসী সাম্রাজ্যবাদ ও জার শাসিত সম্প্রসারণবাদী রাশিয়া এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা তুরস্কের ইসলামের ধ্বজাধারী অটোমেন সাম্রাজ্যেকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। তারা খলিফার লেবাজধারী মুসলিম রাজার ভূস্বর্গকে মালে গনিমাত বিবেচনায় লুটেপুটে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সে সময় জেনারেল মুস্তফা কামাল পাশা প্রতিবেশী সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণপুরুষ ভি আই লেনিনের প্রনোদনায় তুরস্কের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করে তুললেন। লেনিন অর্থ দিলেন। অস্ত্র দিলেন , প্রশিক্ষণ দিলেন। গোলাবারুদ দিলেন। সেই শক্তিতে বলবান কামাল পাশা দেশের গণমানুষকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গড়ে তুললেন। নিজের মাটিতে দাঁড়িয়ে তুর্কী মুক্তিযোদ্ধারা তিন বছর যুদ্ধ করে বহিঃশত্রু হটিয়ে দেশকে পুরোপুরি স্বাধীন করলেন। সশস্ত্র তুর্কী জনগণ ধর্মান্ধতার খোলস ছেড়ে কামাল পাশার স্যেক্যুলার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হলো। মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুর্কী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলো ২০-২১ সালে।। পরের ধাপে ১৯২৪ সালে তিনি ইসলামী শরিয়া শাসনের উপর প্রতিষ্ঠিত খেলাফতের বিলুপ্তি ঘটাতে সক্ষম হলেন অনেকটা নির্বিঘেœ। লেনিন তাকে কম্যুনিস্ট পার্টি করার জন্য সবরকম সহায়তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবদর্শী কামাল পাশা সেই অগ্নিপথ পরিহার করলেন। তিনি স্যেক্যুলার বিপ্লবের সীমানার মধ্যে দৃঢ় অবস্থান নিলেন। ভূমি সংস্কার করে ভুমিহীন কৃষককে ভূমিবান করলেন। উৎপাদন বেগবান হল। মাদ্রাসা বন্ধ করলেন না। কিন্তু হাজার হাজার স্কুল বানালেন। নারী মুক্তি পেলো অন্তঃপুরের বন্দীশালা থেকে।শিক্ষায় দীক্ষায় বলীয়ান হল তারা। বিদূষী ২৩ নারী সংসদ সদস্যপদ অর্জন করলো।। ধর্মীয় কুসংস্কারের কাদাজলে ডুবে থাকা রক্ষণশীল পশ্চাদপদ তুর্কী জাতিকে অন্ধকার থেকে তুলে এনে তিনি আলোর মিছিলে সামিল করলেন। অগ্রসরমান ইউরোপীয় ভাবধারায় একটি আধুনিক তুর্কী জাতি গড়ে উঠলো। কৃতজ্ঞ দেশবাসী সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই তাঁকে জাতির পিতার স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করলো। তিনি ‘তুর্কী পিতা তথা “ কামাল আতাতুর্ক “ অভিধায় উদ্ভাসিত হলেন।
তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মিশরের জাতীয়তাবাদী নেতা কর্ণেল নাসের আরবের বুকে জেগে ওঠা স্যেক্যুলার ঝড়কে উত্তাল করে তুললেন্। ১৯৫২ সালে ‘ফ্রি ইজিপ্ট আর্মী’ কর্ণেল নাসের ও সমদর্শী আনোয়ার সাদাত গং এর নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাজা ফারুককে সিংহাসনচ্যুত করে দেশ থেকে বহিষ্কার করলো। কর্ণেল নাসের মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থনপুষ্ট হয়ে তাদের পছন্দের লোক জেনারেল নাগীবকে রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে প্রথম মিশরীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন। পাঁচ হাজার বছরের ফেরাউন যুগ ও নির্মম সামন্তবাদী শোষণের অবসান হল। মৌলবাদী মুসলিম ব্রাদারহুডের চাহিদায় ও সমর্থনে জেনারেল নগীব ইসলামী শরীয়া শাসন কায়েম করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার গোপন উদ্যোগ নিয়ে নাসেরের দ্বিতীয় বিপ্লবের স্যেক্যুলার ঝড়ের মুখে পড়লেন। ধূলিসাৎ হল মৌলবাদী ষড়যন্ত্র। নাসের হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে সাঈদ কুতুবসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ ৭ নেতার ফাঁসি হওয়ায় মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লবী শক্তি ভূলুন্ঠিত হ’ল। মাইকেল আফলাখের তত্ত্ব লুফে নিয়ে নাসের সিরিয়া এবং ইয়েমেনকে মিলিয়ে স্যেক্যুলার আরব প্রজাতন্ত্র গড়লেন। কিন্তু তার দ্রুত বিলোপ ঘটলো ইরাকী কম্যুনিস্ট পার্টির সদম্ভ প্রত্যাখ্যান ও সাম্রাজ্যবাদী অভিঘাতে।
কম্যুনিস্ট পার্টির সমর্থনে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কর্ণেল আরিফ সে সময় ইরাকের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিলেন। মাইকেল আফলাক ও সালাউদ্দীন বিতারের সেক্যুলার তত্ত্বে গড়ে ওঠা সংযুক্ত আরব ফেডারেশনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়ে ইরাকের কম্যনিস্ট পার্টি নিখিল আরব স্যেক্যুলার বিপ্লবের পথিকৃৎ সাদ্দাম হোসেনের বিপুল গণশক্তির বিপরীতে জন সমর্থনের শোডাউন করে সমাধানহীন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হ’ল। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে কর্ণেল আরিফ ক্ষমতাচ্যুত হলেন। ইরাকী কম্যনিস্ট পার্টি নিজেদের ভুলের খেসারত দিতে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলো।
সাম্প্রদায়িকভাবে দ্বিখন্ডিত ভারতবর্ষের পূর্ব পাকিস্তান ভূখন্ডে হিন্দু -মুসলিম -বৌদ্ধ- খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী সে সময় সহিংস সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে মাতৃভাষা বাংলার জাতীয় অভিষেক ঘটানোর জন্য জানকসম দুর্ভেদ্য সেক্যুলার ঐক্য গড়ে তুললো। শক্ত ভূমিতে সবার অলক্ষে উদ্গত হ’ল ভারতবর্ষের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের অঙ্কুর। তারই দুর্বিনীত ফলশ্রুতি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
(৪): ব্রিটিশ শাসনের ঠিক একশত বছর পর ১৮৫৭ সালে বাকিমহাম প্যালেসের রাজ সিংহাসন কেঁপে উঠেছিল ভারতবর্ষের সেক্যুলার ঝড়ে। ব্রিটিশের অনুগত পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকরা নাম দিয়েছিলেন সিপাই বিদ্রোহ। কালজয়ী দার্শনিক কার্ল মার্কসের বিশ্লেষণে তা মূর্ত হয়েছিল তৎকালীন বিশ্বের উপনিবেশবাদ বিরোধী সবচেয়ে বড় যুদ্ধ এবং পরাধীন ভারতের সর্বপ্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে। স্বাধীন ভারত ১৮৫৭ সালের মহান স্যেক্যুলার বিপ্লবকে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম ধাপ হিসাবে স্মরণ করে থাকে। সেই গণবিপ্লব সেনা ছাউনি থেকে উৎসারিত হয়ে সমগ্র উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিদ্রোহী সৈনিকদের সাথে নিম্নবিত্ত শহুরে সমাজ, শ্রমিক কৃষক গরীব দুঃখীদের সংহতি ধর্মপ্রাণ সেনা সদস্যেদের বিদ্রোহকে গণবিপ্লবের দাবাগ্নিতে রূপান্তরিত করেছিল। ক্ষুদ্র-মাঝারি সামন্তরাও সেই ঐক্যে সামিল হওয়ায় তাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাত্রা যুক্ত হয়েছিল। ব্রিটিশ দানবীয় শক্তি দিয়ে সে দ্রোহ , সে সংগ্রাম সে সমরকে পদপিষ্ঠ করে কোম্পানি শাসন তুলে নিয়ে রাজকীয় শাসন প্রবর্তন করে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে হিন্দু-মুসলমান সংহতির শিরোচ্ছেদ করে পর্যায়ক্রমে একটি সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের স্থায়ী প্রেক্ষিত রচনা করেছিল। প্রথম ঔপনিবেশিক মন্ত্রী বলেছিলেন , “আগামী সাত শত বছর ভারতবর্ষ আর মাথা উঁচু করে কথা বলবে না”। তার কথা অব্যর্থ করতে রাওলাট অ্যাক্টের মত বন্য আইন রচিত হয়। ১৯১৯ সালে তার প্রয়োগ ঘটে অমৃতসরে। জালিয়ানওয়ালাবাগ বধ্যভূমির নৃশংসতায় বিধূর হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্রিটিশের দেওয়া ‘নাইট’ বা ‘স্যার’ উপাধি বিসর্জন দেন। সহস্রাধিক নরনারীর সেই নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে তখনকার প্রত্যক্ষদর্শী কিশোর ঊধাম সিং , একুশ বছর পর মার্চ ১৯৪০ খোদ ইংল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে হুকুমদাতা জেনারেল স্যার মাইকেল ও’ ডায়ারকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে এপ্রিল ‘৪০ ফাঁসিতে জীবন বিসর্জন দেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরু মূলতঃ ভাইসেরয়ের বিশেষ ক্ষমতাবলে ১, পাবলিক সেফটি বিল ও ২.ট্রেড ডিসপিউট এ্র্যাকট পাশের প্রতিবাদে দিল্লী সংসদ ভবনে ৮ এপ্রিল ১৯২৯ অধিবেশন চলাকালে ২টি দেশী বোমার বিষ্ফোরণ ঘটান। ধূম্রজালের মধ্যে ভগৎ সিং পালানোর সুযোগ না নিয়ে “ইনক্লাব জিন্দাবাদ “ স্লোগান সহকারে লিফলেট ছড়িয়ে গ্রেফতার হন্। মার্চ ১৯৩১ ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরুর ফাঁসি হয়। ব্রিটিশ ভেবেছিল যা, তা হ’ল না। রাওলাট অ্যাক্টের স্টিমরোলার দিয়ে দমনপীড়ন করায় ভারতবর্ষ উত্তাল হয়ে উঠলো দ্রোহে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি ধোপে টিকলো না। ব্রিটিশ ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানালো ১৯৩৯ সালে। তাদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে জন্ম নিল দ্বিজাতি তত্ত্ব। জিন্নাহ হলেন তার কান্ডারি।
ভারতবর্ষের মানুষ প্রাকৃতিক ধর্ম পালন করতো অনাদি কাল। বেদ ঊপনিষদ হাতে আরব্য ব্রাক্ষ্মণরা এসেছিল ক্ষত্রিয় দোসরদের বাহুবল নির্ভর করে। ভারতের আদিবাসীকে বৈশ্য ও শূদ্র নামে সেবাদাস বানিয়ে বৈদিক ধর্ম প্রবর্তন করেছিল কত হাজার বছর আগে সে কথা ইতিহাসে কোথাও লেখা নেই। প্রাচ্য প্রতীচ্যের ইসলামের ধ্বজাধারী লুটেরা হানাদাররা “হিন্দুস্তানের” সব মানুষকে ‘হিন্দু’ এবং তাদের লালিত ধর্মকে ‘হিন্দুধর্ম’ নাম দেয়। বর্ণবাদী নির্যাতনের শিকার বিপুল সংখ্যক “অস্পৃশ্য অশুচি” আদিবাসী বর্ণবৈষম্যহীন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু সামাজিক সখ্য কখনও ব্যাহত হয়নি।১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরাজ নিজের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ করে।
মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত সূর্য কুমার সেন। ডাক নাম কালু। ১৮ এপ্রিল ১৯৩০, ব্রিটিশের হাড় কাঁপানো বিপ্লবী কান্ড ‘ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক সূর্যসেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। বাংলা মায়ের বীর সন্তান সূর্য সেন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী মর্যাদা নিয়ে বেঁচে আছেন শতকোটি হৃদয়ে। তাঁর পূর্বসূরী ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ১৮ বছর ৭ মাস বয়সে ফাঁসিতে প্রাণ দেন। গান্ধী ফর্মূলায় ভারত ছাড়ার আগে ব্রিটিশ তাদের বশংবদদের দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার দাবানলে বাঙালির বিপ্লবী ঐতিহ্যকে ভস্ম করে দেয়ার প্রয়াস পেয়েছিল। তাদের সেবাদাস জিন্নাহ -লিয়াকত আলী বাঙালির মায়ের ভাষার আবেগের টুটি চেপে ধরেছিল ১৯৪৮ সালে।
ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী এবং উপমহাদেশে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র সফল নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির আসাম্প্রদায়িক আবেগে নতুন প্রাণ সঞ্চার করলেন। জীবন দিয়ে সফল করলেন উপমহাদেশের সেরা স্যেক্যুলার বিপ্লব। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান , সাঁওতাল ও নানা নৃ-গোষ্ঠী র ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে প্রাণ দিলো। ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে তিন লক্ষ নারী সম্ভ্রম হারালো। বাঙালি পেলো স্বাধীনতা। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, গণপরিষদে একটি ছোট সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। মূল সরকারি প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ইংরেজির সঙ্গে উর্দুও পাকিস্তান গণপরিষদের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বিবেচিত হবে। ধীরেন্দ্রনাথের সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, “ ৫৬ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাও সরকারি ভাষারূপে গণ্য হবে”। অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে। ১১ মার্চ ৪৮ বাঙালি গর্জে উঠেছিল ভাষার দাবিতে। বাংলার স্বধীনতা- মহাকাব্যের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু তখন তরুণ নেতা। তিনি সেই উত্তাল বাত্যার কর্ণমূলে স্বাধীনতার বার্তা সঞ্চালন করলেন। শহীদের রক্তেসিক্ত মহান একুশ তথা আটই ফাল্গুন ১৮ বছর দূরন্ত পথ চলে মুক্তিযুদ্ধের মর্মমূলে পৌঁছে দিল অনিবার্য স্বাধীনতার বাণী। বাংলার রক্তস্নাত স্বাধীনতা ভারতবর্ষের সেই শীর্ষ সেক্যুলার সংগ্রামেরই ফলশ্রুতি।