বিশ্বচরাচর ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক তালিকার খসড়ায় এক কোটি ৩৯ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এ খসড়া তালিকা প্রকাশের পর তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বরাক উপত্যকার বাঙালিদের মধ্যে। বাঙালিরা বলছেন, নাম না ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বাঙালি রয়েছেন। আসাম থেকে বাঙালিদের বিতাড়নের পাঁয়তারা চলছে বলে বাঙালিরা অভিযোগ করেছেন। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
এই তালিকা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গত ৩ জানুয়ারি এক সভায় তিনি ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না’ বলে আসাম সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন পড়েছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে গত ৩ডিসেম্বর রাতে প্রকাশ করা হয় খসড়া তালিকা। এতে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম তালিকাভুক্ত করা হলেও। বাদ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষের নাম। অর্থাৎ আবেদন করা ৪২৫৯ শতাংশের মানুষের নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
তালিকা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজি। তিনি বীরভূম জেলার আমোদপুরে এক সভায় বলেছেন, আসামে এখন বাঙালি খেদাওয়ের পাঁয়তারা চলছে। সেখানে যারা ৩০-৪০ বছর ধরে বাস করছেন, তাদের নাম ওঠেনি।
মমতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। আসাম-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে অশান্তি হলে তার প্রভাব পড়বে বাংলায়। আসামে সবাই বাঙালি খেদাও করছে। আমি বলছি, বাংলার কেউ আসামে থাকলে তাকে বুকে করে রাখতে হবে। চক্রান্ত করে মানুষকে নিজের এলাকা থেকে সরানোর নোংরা চেষ্টা করছে বিজেপি।’
মমতার প্রতিবাদের ডাকে গত ৩ জানুয়ারি রাজধানী দিল্লির গান্ধী মূর্তির পাদদেশে লোকসভায় তৃণমূলের সদস্যরা অবস্থান ধর্মঘট করবে বলে ঘোষণা দেন। মমতা এরই মধ্যে দলীয় এমপিদের অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি এ দিকে কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের’ বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ অভিবাসীদের কিছুতেই কোনো সাংবিধানিক অধিকার থাকবে না। তার সরকার এমন কোনো অধিকার দেবে না তাদের। এমন ‘বাংলাদেশিদের’ আসাম থেকে বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বা তার সরকার মানবিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের অপোয় থাকবে। গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নাগরিকত্ব বিষয়ক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনের (এনআরসি) প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে। বিভিন্ন রিপোর্টে আভাস দেয়া হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩০ থেকে ৪০ লাখ কথিত ‘বাংলাদেশি অভিবাসী’কে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। যদি তা-ই ঘটে তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুর পর এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
সর্বানন্দ সনোয়াল বলেছেন, যেসব অভিবাসী এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি করাতে ব্যর্থ হবেন অর্থাৎ যারা এ তালিকা থেকে বাদ পড়বেন তাদের কোনো রকম সাংবিধানিক অধিকার দেবে না তার সরকার। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এমন অবৈধ ‘বাংলাদেশিদের’ বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত না দেয় কেন্দ্রীয় সরকার ততক্ষণ পর্যন্ত মানবিক কারণে এসব মানুষকে ভারতে বসবাস করতে দেয়া হবে। এনআরসির প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনি এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুনে আসামে প্রথম কোনো বিজেপি সরকার প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন সর্বানন্দ সনোয়াল। এর আগে সেখানে বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা নির্বাচিত হলে আসাম থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেবে। বিশেষত এর মাধ্যমে সেখানে বাংলাভাষীদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগই বাংলাভাষী মুসলিম। তাদেরকে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।