রাজধানী ডেস্ক : রাজধানীর গুলশান থেকে হাতিরঝিল হয়ে রামপুরামুখী যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রামপুরা ও বাড্ডায় মূল সড়কের ওপর দুটি ইউ আকৃতির গাড়ি পারাপার সেতু (ইউলুপ) নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রাজধানী উন্নম্নয়ন কর্তৃপক্ষ। মূলত এটি হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নম্নয়ন প্রকল্পের একটি অংশ। গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের ইউলুপটি চালু হয়েছে। তবে আগামী জুন মাসে বাড্ডার ইউলুপটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে তারা দাবি করলেও এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে বলে সরেজমিন দেখা গেছে। ফলে শিগগিরই বাড্ডা ইউলুপের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
এ দিকে, নির্মাণকাজের জন্য দুই লেনের গাড়িগুলো সরুপথে চলাচল করায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাকালে খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় সময়ই গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এই রুটের যাত্রীদের।
তবে হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, দুটি কারণে বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপটির নির্মাণে দেরি হচ্ছে। এক, ইউলুপের মূল সড়কের ভূগর্ভস্থ অংশে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিষেবা সংস্থার তার সরাতে সময় বেশি লেগেছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো- ইউলুপের ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ বিষয়ে মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সময় লেগেছে।
প্রগতি সরণি হয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন যাত্রী বলেন, ইউলুপ নির্মাণের কারণে বাড্ডা এলাকায় ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পিক আওয়ারে এই যানজট এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, গাড়ি একবার থামলে আর নড়তেই চায় না। কখনও কখনও বাড্ডা অতিক্রম করতেই দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যায়।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ প্রকৌশল নির্মাণ ব্যাটালিয়ন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। নকশা অনুযায়ী বাড্ডা ইউলুপের দৈর্ঘ্য ৪৫০ ও প্রস্থ ১০ মিটার। প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। হাতিরঝিল থেকে বাড্ডার দিকে যেতে মেরুল বাড্ডায় চলছে দ্বিতীয় এই ইউলুপ নির্মাণের কাজ। গত বছরের ডিসেম্বরে ইউলুপটি চালুর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এরপর আগামী জুনে শেষ হবে বলে জানানো হয়।
হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (রাজউক) জামাল আক্তার ভূঁইয়া বলেন, নানা কারণে ইউলুপটির নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। মামলার কারণে প্রথমে কাজ শুরু করতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। এরপর কাজ করতে গিয়ে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিষেবা সংস্থার ভূগর্ভস্থ কেবল নিয়ে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ইউলুপটির প্রায় ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুলাই-আগস্টে নির্মাণকাজ শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।
হাতিরঝিলের মোড় থেকে রামপুরা সেতু হয়ে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের দিকে এগোলে মেরুল বাড্ডা। সেখানেই হচ্ছে বাড্ডা প্রান্তের ইউলুপ। বাড্ডায় এই ইউলুপ নির্মিত হলে রামপুরা, বনশ্রী বা আফতাবনগর যাওয়ার জন্য বিভিন্ন গাড়ি সহজে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট, মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, গুলশান ও কুড়িল যাওয়ার জন্য রাস্তার লেনটিও হবে ট্রাফিক সিগন্যালমুক্ত। যেসব গাড়ির প্রয়োজন হবে, সেগুলো সহজেই ইউলুপ ব্যবহার করে লেন পরিবর্তন করতে পারবে। এর ফলে ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে এখন যে যানজট সৃষ্টি হয়, তখন তা আর থাকবে না।
সরেজমিন দেখা যায়, ইউলুপের ঢালু দু’প্রান্তের কাজ শেষ হলেও রাস্তার ঠিক ওপরের অংশটুকুু এখনও নির্মাণ শেষ হয়নি। বর্তমানে স্টিলের পাত স্থাপনের কাজ চলছে। হাশেম আলী স্টিল সুপার মার্কেট, রাজভোগ সুইটস, মা এ্যালুমিনিয়মসহ বেশ কয়েটি দোকানের মালিক জানান, নির্মাণাধীন ইউলুপের নিচ দিয়ে যাওয়া রাস্তাকে কেন্দ্র করে দুটি লেনে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু এ সড়কের মাঝে বড় বড় গর্ত রয়েছে। এ ছাড়া ইউলুপের নিচে স্থায়ী ও অস্থায়ী পিলার থাকায় এখানকার রাস্তা সরু হয়ে গেছে। ফলে এ রাস্তায় সবসময়ই যানজট লেগে থাকে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পঞ্চমবারের মতো আরও দেড় বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে আবারও ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে রাজউক।