চট্টগ্রাম : বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই হাজার ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পাকড়াও করা হয়েছে চার পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন ও এলিট বাহনী র্যাব-৭ চট্টগ্রাম গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে এ যৌথঅভিযান পরিচালনা করে। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৪টি এসবিবিএল ও ১১টি ওয়ানশুটার গান। গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার রাউন্ড পয়েন্ট ২২ রোবের গুলি ও ৩৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি।
র্যাব জানায় দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রসীরা খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালান, মানুষ অপহরণ ও মানুষ আটক করে মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকা- পরিচালনা করে আসছে। এখন পাহাড়ে চলছে ফসল কাটার মওসুম। পাহাড়ে শাক-সবজি, ফলমূল ও মশলা কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে ব্যবসায়ীদের আসা-যাওয়াও বেড়েছে। এই সময়ে অস্ত্রধারীরা এসব ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকা- করে আসছে। উপজাতি চাষি ও খামারারিরাও চাঁদাবাজদের কারণে অতিষ্ঠ। জানা যায়, সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। দীর্ঘদিনের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা তৎপরতার একপর্যায়ে র্যাব নিশ্চিত হয় বান্দরবান জেলার লামা থানার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর রাজাপাড়াস্থ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কিছু সংঘবদ্ধ পাহাড়ি সন্ত্রাসী জড়ো হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সেখান থেকে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করা। এই লক্ষ্যে তারা সেখানে বিপুল অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অবস্থান করছে মর্মে খবর আসে।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন ও র্যাব-৭, চট্টগ্রাম সেখানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেনাবাহিনী ও র্যাবের চৌকস সদস্যরা পুরো এলাকা ঘেরাও করে অস্ত্রধারীদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে পাকড়াও করা হয় চার জনকে। তারা হলো, তুইসা মং (৩৬), এক্য মারমা (৩৯), মিফং মারমা (৪৫) ও চাইনুং মারমা (৩৬)। তাদের কাছ থেকে ১৪টি এসবিবিএল এবং ১১টি ওয়ানশুটার গানসহ ২৫টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৩৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এ অভিযানে পাহাড়ি জনপদে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি।
এ দিকে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় এখানে অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, অপহরণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধ প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে। র্যাব-৭ এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে এবং বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গুলি, অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, জালটাকার ব্যাবসায়ী, চোরাকারবারি, ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আটকসহ বিপুল ইয়াবা ও ইয়াবা কারবারিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭ চট্টগ্রাম গত এক বছর দেড় মাসে ৩৪৬টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ মোট ৪৮টি ম্যাগাজিন এবং ৫ হাজার ৫১৯ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে।
বান্দরবান : সেনাবাহিনী ও র্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ত্রিশডেবা এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে যৌথ বাহিনী। চট্টগ্রাম র্যাব-৭ কক্সবাজার ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর রুহুল আমিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা আলীকদম সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে গয়ালমারা এলাকার রাজারপাড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদার জানান, গয়ালমারা, বনফুর এলাকাটি সন্ত্রাসপ্রবণ। দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রপ চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। অভিযানের পর এলাকায় অনেকে আনন্দ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, এখানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি করছিল একদল সন্ত্রাসী। তবে বান্দরবান-কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় পুলিশও তাদের কিছু করতে পারেনি এত দিন। আলীকদম পুলিশ অভিযানে এলে তারা কক্সবাজার সীমান্তে চলে যেত আবার পুলিশ চলে গেলে তারা বান্দরবান সীমানায় চলে আসত। র্যাবের এ অভিযানের ফলে এলাকাবাসী সেনাবাহিনী ও র্যাব-৭ চট্টগ্রামকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, তারা এখন খুশি।
বান্দরবানে ২৫টি অস্ত্র ২ হাজার গুলিসহ ৩ পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রেফতার
সেনাবাহিনী-র্যাবের যৌথ অভিযান