বামদের কয় ফের?

মোস্তফা কামাল : অবিরাম গালমন্দ শুনতে-শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বাংলাদেশের বামপাড়ার নেতাকর্মীরা। রাজনীতি করেন না, কোনো দলের সমর্থকও নন- এমন ব্যক্তিদের মাঝেও কারণে-অকারণে বামদের গালি দেয়ার প্রবণতা। কিন্তু, বামরা জবাব দেন না। পাল্টা গালও দেন না। পাল্টা গাল না হলেও অন্তত জবাব দিতে কী সমস্যা বামদের?
প্রতিটি ক্রিয়ারই বিপরীত ক্রিয়া থাকে- সূত্রটি এ ক্ষেত্রে খাটছে না। পাল্টা গাল বা সমালোচনা তো নেই। বামদের গালিগালাজেও ঝুঁকি নেই। পাল্টা অ্যাকশন নেই। চাকরি যাবে না, চাপাতির কোপ বা মার খেতে হবে না, হাতুড়ির বাড়ি পড়বে না, জেল খাটতে হবে না। সেটা বামদের দয়া, না মহানুভবতা?
বামদের সেই শক্তি আছে কিনা, তাও প্রশ্ন। পাল্টা জবাব দেয়ার যে যোগ্যতা-দক্ষতা, তা বরং বেশিই আছে তাদের। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির সেই যোগ্যতা লাগে না। মুখের কাজ তারা হাতেই সারিয়ে দিতে জানে। ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ তত্ত্বকে বাস্তবে ফলিয়ে অভ্যস্ত তারা। তাই বলে বামদের প্রতি কি সাধারণ মানুষের কোনো সমবেদনা আছে? বামরা কি নিজেরাও ভাবতে পারেন না বিষয়টি! পারেন না নিজেরা নিজেরা আলোচনা করতে?
বামপন্থীদের বিকল্প শক্তি হতে বাধা কোথায়? তাদের দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে? শিক্ষা-দীক্ষায় কমতি আছে? মোটেই না। এ দেশকে নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়, এমনটি যারা ভাবেন, তাদের কথা আলাদা। অবিরাম প্রতারণার তোড়ে বসে যাওয়া সৎ নেতাকর্মী, লেখক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্টরা তো আছেন। মনোবেদনায় ভোগেন। তাদেরকে এক করতে না পারলেও অন্তত এই বার্তা কি দেয়া যায় না যে, মেনন, ইনু, দীলিপ বড়ুরাই বাম নয়। বাম নামের খুচরা উচ্ছ্বিষ্ট মাত্র?
শিকারী বাঘ আর শিকার হরিণ একসাথে চলতে পারে না সত্য। বাম শিকারির সংখ্যা বেশি, তাও সত্য। শিকাররা মনোবেদনায় ইনডিভিজুয়ালিস্টিক না থেকে একটু কালেকটিভ হতে তো নিশ্চয়ই বাধা নেই। ইনডিভিজুয়াল পাণ্ডিত্য দিয়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সে জন্য সংগঠন দরকার। তাই সংগঠিত হওয়ার প্রশ্ন। সংগঠিত হতে তত্ত্ব লাগবে। সেটা বামদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি আছে। দরকার এখন চর্চা আর প্রয়োগ। সেটা নেই কেন বামদের?
এবারের ঈদের ছুটিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছাত্রজীবনের বাম ঘরানার বেশ ক’জন সতীর্থের সঙ্গে কথা বলেছি। উদ্দেশ্য তাদের মনোজগতের হালহকিকত উপলব্ধি। বেদনার সঙ্গে খেয়াল করেছি- তাদের মধ্যে মোটাদাগে তিনটি বিভাজন। যা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের মতো ধরিবাজদের জন্য কল্যাণকর। এক ভাগের বাম বন্ধুরা চান আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘরবসতি। তাদের মুখে মার্কস-লেনিনের চেয়ে শেখ হাসিনার নাম বেশি উচ্চারিত হয়। নৌকার সাদকা হিসেবে মন্ত্রীত্ব না পেলেও সংসদ সদস্য এবং স্ত্রীকে সংসদে নিতে পারার মোহ তাদের। আরেকটি গ্রুপ তুমুল আওয়ামী লীগ বিরোধী। ভুট্টো-ইয়াহিয়া আর শেখ মুজিবকে একই ভাবেন তারা। তৃতীয় অংশটি সাচ্চা সমাজতন্ত্রী দাবিদার। জনগণের মুক্তির জন্য বহুদূর যেতেও রাজি। কিন্তু সংগঠন কই?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।