বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে সিটি নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে দোটানায় আছে সরকার। নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, যাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো জটিলতায় না পড়ে এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার আশঙ্কা থাকলেও বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে রাজনৈতিক কারণে জুলাই-আগস্টে এ নির্বাচন করিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

৩১ মার্চ নির্বাচন কমিশন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে নির্বাচন রমজানের পর অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। দলে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করা হবে কি না। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন করিয়ে নেওয়ার পক্ষেই নীতিনির্ধারকদের জোরালো মত।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে ৪ সেপ্টেম্বর, খুলনা ২৫ সেপ্টেম্বর, রাজশাহী ৫ অক্টোবর, সিলেট ৮ অক্টোবর এবং বরিশালের মেয়াদ শেষ হবে ২৪ অক্টোবর। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে এ নির্বাচন করা যাবে। সে বিধানমতেই স্থানীয় সরকার বিভাগ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে চায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জুলাইয়ে ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের একটি প্রভাবশালী অংশ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে চায়। বিএনপিকেও ফাঁদে ফেলতে চায়। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি বর্তমানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রয়েছে। নির্বাচনের চেয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে সরকার বিএনপিকে আন্দোলন বিমুখ করে নির্বাচনমুখী করতে চায়। প্রধান প্রধান মহানগরের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়লে সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে ভাটা পড়বে।

মহানগরগুলোর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন বর্জন করার যৌক্তিকতা পাবে না বিএনপি। সরকারি মহল আরো মনে করে, এই নির্বাচনের পর বিএনপি তার সরকারবিরোধী আন্দোলনেও গতি আনতে পারবে না। সরকার এই নির্বাচন ঘোষণা করলে বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও দ্বিধান্বিত। বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা যায়, বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নেবে এবং ভালো ফলাফলের আশা করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন লাভে অনিশ্চয়তায় বিএনপির অনেক নেতাই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে তা চূড়ান্ত হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে।

বিএনপি যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরতও থাকে, দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও স্থানীয় যোগ্য, জনপ্রিয় বিএনপির লোকজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। সরকারদলীয় প্রার্থী ও তাদের লোকজন, পুলিশ বাহিনীর নির্মম আচরণ এবং নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার পরও বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা বহু জায়গায় জয়ী হয়েছেন। দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘনকারী কারো বিরুদ্ধেই বিএনপি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি মহল বিভিন্নভাবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের উৎসাহিতও করতে পারে। স্থানীয় প্রভাব, আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে জনপ্রিয়, যোগ্য ব্যক্তিদের বসিয়ে রাখাও কষ্টকর হবে।

এদিকে বিএনপি দলগতভাবে আসুক আর না আসুক, সরকার নির্বাচন করিয়ে নেবে। প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বিএনপিতে জোরালো মতও রয়েছে। নির্বাচনে জালিয়াতি, গোলযোগ হলে তারা সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সিটি করপোরেশন এলাকার সচেতন ভোটাররা সরকারদলীয় প্রার্থীর বিপক্ষেই ভোট দেবে বলে তাদের বিশ্বাস।