বিএনপিতে আসছে নতুন নেতৃত্ব

ঢাকা অফিস : ক্লিন ইমেজের একজনকে মহাসচিব পদের জন্য খুঁজছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনিও সরে যেতে প্রস্তুত। দল চাইলেই তিনি সরে যাবেন। মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিএনপির মহাসচিব পদ পরিবর্তন হচ্ছে। দল পুনর্গঠনের কোন এক পর্যায়ে বিএনপির মহাসচিবের পদ পরিবর্তন হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরিয়ে দলের সিনিয়র কোন হেভিওয়েট নেতা নয়, বরং ফ্রেশ ও ক্লিন ইমেজের একজনকে মহাসচিব করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির লন্ডনে নির্বাসিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া।
এর পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রথমত, বিএনপির যেসব ‘হেভিওয়েট’ নেতা রয়েছেন, তাদেও প্রায় সবাই বার্ধক্যে উপনীত। আগামী দশ বছরের জন্য একজন মহাসচিব দরকার। যিনি বিএনপিকে গুছিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে দলাদলি ও কোন্দল প্রকট। এরা একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এবং গোপনে কাজ করে। যাকেই মহাসচিব করা হোক না কেনো, স্থায়ী কমিটির মধ্য থেকে তিনি অন্য সিনিয়র নেতাদের তোপের মুখে পড়বেনই। ফলে তিনি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারবেন না।
তৃতীয়ত, বিএনপির যেসব ব্যক্তি এখন স্থায়ী কমিটিতে আছেন এবং স্থায়ী কমিটির বাইরে যেসব সিনিয়র নেতারা রয়েছেন, গুঞ্জন রয়েছে- তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সরকারের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত। তারা নিজেরা নানাভাবে সরকারের কাছ থেকে গোপণে সুযোগ সুবিধা নেন। এদের মধ্যে থেকে কাউকে মহাসচিব করা হলে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সময় যে দলের অবস্থা হয়েছিলো, একই অবস্থা হবে।
তাই তারেক জিয়া চাইছেন, একটি আনকোড়া মুখ। যিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ, যার স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। যিনি দলকে নতুন করে গোছাতে পারবেন। এক্ষেত্রে মহাসচিব পর্যায়ে সারপ্রাইজ আসতে পারে বলে জানা গেছে।
এতোদিন মনে করা হয়েছিলো, বিএনপির বর্তমান মহাসচিব সরে গেলে আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী বা নজরুল ইসলাম খানের মতো কাউকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। কিন্তু সর্বশেষ অগ্রগতিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বর্তমান স্থায়ী কমিটির কারো ব্যাপারেই তারেক জিয়া আগ্রহী নন। বরং এক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান। আওয়ামী লীগ যেমন দলের হেভিওয়েট নেতাদের প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছে। তেমনি একটি তারুণ্যনির্ভর স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করতে চান তারেক জিয়া। যে স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানের হয়তো কেউই থাকবেন না। বরং তাদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে পদ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
তারেক জিয়া যাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন, এদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, দলের পুনর্গঠনে তারেক জিয়া পুরো নেতৃত্বকে ঢেলে সাজানোর চিন্তাভাবনা করছেন। যারা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের নেতৃত্বে, তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছেন, যারা আগামী দশ বছর ধরে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
বর্তমানে যারা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আছেন, তারা সবাই নানারকম রোগেশোকে আক্রান্ত ও ব্যস্ত। নতুন করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো শারীরিক শক্তি বা মনোবল তাদের মধ্যে নেই। এসব কারণেই বিএনপিতে নেতৃত্বের একটি নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপির পুনর্গঠনে একটি বড় ধরনের ‘সারপ্রাইজ’ অপেক্ষা করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিৎ করেছেন।