বিএনপির চুয়াল্লিশ বছরের পথচলা

মহিউদ্দিন খান মোহন : ৪৫ বছরে পা দিল দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। সময়ের বিচারে খুব একটা কম নয় ৪৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে দলটির অর্জন যেমন আছে, তেমনি আছে বিসর্জনও। এক বিশাল রাজনৈতিক শূন্যতার প্রেক্ষাপটে ১৯৭৮ সালে অভ্যুদয় ঘটেছিল বিএনপির। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পতন হওয়ার পর দেশে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক শূন্যতা। অনাকাক্সিক্ষত সামরিক শাসন চেপে বসে বাংলাদেশের ওপর। ওই বছরের ঘটনাপরম্পরায় তখন দেশের শাসনক্ষমতার শীর্ষে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী সরকার ঘোষণা করেছিল, দ্রুতই দেশে সাধারণ নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। ১৯৭৬ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা স্থগিত করে সামরিক ডিক্রিবলে রাজনীতির ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। ফলে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, জাসদসহ রাজনৈতিক দলগুলো পুনর্জীবিত ও পুনর্গঠিত হতে শুরু করে। ১৯৭৭ সালে সেনাপ্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বেতার ভাষণে বললেন, ‘সামরিক শাসন কোনো স্থায়ী পদ্ধতি হতে পারে না। অচিরেই নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।’ তাঁর এ ঘোষণার ফলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নড়েচড়ে বসতে শুরু করে। শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক পোলারাইজেশন। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গভবনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে তিনি অচিরেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইঙ্গিত দেন। সেই সঙ্গে এটাও বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরই দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর আস্থা ও অনুগত্যের কথা ব্যক্ত করেন। তখন থেকেই ক্রমে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে সামরিক শাসক জিয়া দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ও আন্তরিক। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে যেতে থাকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়, তাতে আওয়ামী লীগের বিপরীতে একটি বড় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রপতি পদে লড়তে ইচ্ছুক। তিনি তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথি হিসেবে বেছে নেন সে সময়ের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ন্যাপ চেয়ারম্যান মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়াকে। তার আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক করে নিজে নেপথ্যে থেকে জিয়াউর রহমান গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল বা জাগদল। ওই বছরের এপ্রিল মাসে জাগদল, ন্যাপ, ইউপিপি, মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি ও তফসিলী জাতি ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠিত হয় নয়া রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিয়াউর রহমান এই রাজনৈতিক জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক জোট গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী (অব.)। নির্বাচনে জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করেন। এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের অংশীদার দলগুলোকে নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন জিয়া। তারই ফলে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির। সংক্ষেপে এই হচ্ছে বিএনপির জন্মকথা।


প্রতিষ্ঠার পরপরই দলটি দেশব্যাপী ব্যাপক জনসমর্থন পেতে সমর্থ হয়। এর প্রধান কারণ স্বাধীনতা-পরবর্তী সাড়ে তিন বছরে দেশ সংঘটিত নানা ঘটনায় সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতির ফলে জনমনে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে চরম নেতিবাচক ধারণা এবং তার বিপরীতে দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ফলে জিয়াউর রহমানের ইতিবাচক ভাবমূর্তি। বিএনপিতে যেসব রাজনৈতিক দল একীভূত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ভাসানী ন্যাপ ছিল দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামোসমৃদ্ধ। ফলে বিভিন্ন জেলা ও থানায় বিএনপির কমিটি গঠনে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। একই সঙ্গে ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগ পেতে উদ্্গ্রীব একশ্রেণির সুযোগসন্ধানীও দলটির ছাতার নিচে সহজেই জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। অবশ্য পরবর্তী সময়ে এসব সুযোগসন্ধানীর অনেকেই অন্যখানে সুযোগ পেয়ে সটকে পড়তে দেরি করেনি।
প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি বিভিন্ন সময়ে সম্মুখীন হয়েছে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির। পৌনে তিন বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আকস্মিক মৃত্যু ছিল বিএনপির জন্য প্রথম এবং চরম এক আঘাত। সেই আঘাতের চোট সামলে ওঠার আগেই জিয়াবিহীন দলে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং তাকে পুঁজি করে সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ছিল দ্বিতীয় আঘাত। শুধু তা-ই নয়, দলটির প্রথম সারির অনেক নেতার স্বপক্ষ ত্যাগ করে স্বৈর শাসকের কেবিনেট ও দলে যোগদান বিএনপিকে করে তোলে হীনবল। সে সময় অনেকেই বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। কেউ কেউ বিএনপি পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম নেওয়া কনভেনশন মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। উল্লেখ্য, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতনের পর কনভেনশন মুসলিম লীগের অস্তিত্ব আর থাকেনি। কিন্তু সেসব ভবিষ্যদ্বাণীকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে বিএনপি আজ ৪৪ বছর ধরে বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে। এর মূলে রয়েছেন দলটির বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়াবিহীন বিএনপির কঠিন দুঃসময়ে দলের হালটা তিনি ধরেছিলেন বেশ শক্ত হাতেই। তাঁর সহযোগী ছিলেন সে সময়ে দলের অপেক্ষাকৃত নবীন যুবদল ও ছাত্রদল নেতারা। সেই সাথে জনসাধারণের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়ার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এবং অকাল বৈধব্যের কারণে বেগম খালেদা জিয়া তাদের বিপুল সহমর্মিতা পান। এই সহমর্মিতাই হয়ে ওঠে তাঁর প্রধান রাজনৈতিক পুঁজি। জনগণের সহমর্মিতাকে তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের দ্বারা জনপ্রিয়তায় পরিণত করতে সক্ষম হন। স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে টানা নয় বছর তাঁর নিরাপোস সংগ্রাম তাঁকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল নয় বছর নানা চড়াই-উতরাই পার করে স্বৈরাচারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও ইতিহাস গড়েন তিনি। খালেদা জিয়া তাঁর নেতৃত্বে দলকে তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তাঁর আরো একটি বড় কৃতিত্ব হলো এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হননি। মূলত খালেদা জিয়ার গড়ে ওঠা ভাবমূর্তি বিএনপির প্রধান পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। তবে সে পুঁজি এখন আর অক্ষত নেই।
বিএনপির ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আঘাতটি আসে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর। নিজের বানানো সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে কবজা করে কথিত সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করিয়ে বিএনপিকে পর্যুদস্ত করার প্রয়াস পান। তিনি বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চক্রান্ত করেন। মইন উ আহমেদের মাইনাস টু ফর্মুলা সে সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, তা বিএনপিকে আঘাত করেছিল বেশ শক্তভাবেই। দলের ১২৪ জন এমপি মান্নান ভূঁইয়ার সাথে যোগ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার মিশনে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। এর কারণ সংকটময় মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার আগে দলের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনি মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব নিযুক্ত করেন। তাঁর এই একটি সিদ্ধান্ত বিএনপিকে অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দলের ঐক্য ধরে রাখতে সক্ষম হন। যদিও পরবর্তী সময়ে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দল ও দলের নেত্রীর কাছ থেকে চরম অবজ্ঞা-অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সুযোগ নিয়ে দলকে দখল ও খালেদা জিয়াকে নেতৃত্ব থকে বেদখল করার চক্রান্তে লিপ্ত চক্রটি ছিল এর পেছনের কুশীলব।
যদি প্রশ্ন করা হয়- কেমন আছে বিএনপি এখন? এককথায় এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া বড্ড কঠিন। কেননা, ওয়ান ইলেভেনের ধাক্কা এখনো বিএনপি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার দূরদর্শিতার ঘাটতিকে অস্বীকার করা যাবে না। এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি যে রকম দৃঢ়তায় দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ওয়ান ইলেভেন-পরবর্তী সময়ে তা অনেকটাই যেন অনুপস্থিত ছিল। একসময়ের অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনাকারী নেত্রী খালেদা জিয়া এই সময়ে এসে দলের মধ্যে গড়ে ওঠা একটি গ্রুপের কাছে যেন বন্দী হয়ে পড়েন। তাঁর অনেক সিদ্ধান্তই উপেক্ষিত হতে থাকে। চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ওই চক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে বেগম জিয়াকে সাধারণ নেতাকর্মী ও মিডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। উদ্ভট ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়ে দলকে বিপর্যয়ের মুখোমুখি নিয়ে যায়। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন এবং ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাসের অর্থহীন সহিংস আন্দোলন অন্যতম। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নেমে অসে হতাশা। এরপর আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর দলটিতে নেতৃত্বহীনতা প্রকট আকার ধারণ করে। যার জের এখনো চলছে।
বর্তমানে তদীয় পুত্র তারেক রহমান লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থেকে দল চালাচ্ছেন। কিন্তু তার এই ‘রিমোট কন্ট্রোল’ নেতৃত্বে দল যে সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তা এখন পরিষ্কার। বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে একজন গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব আজ বিএনপিতে প্রকটভাবে দৃশ্যমান। দীর্ঘ ৪৪ বছরে আরেকজন গ্রহণযোগ্য নেতা গড়ে না ওঠা বিএনপির দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। এটা কার ব্যর্থতা, সে বিচার এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। তবে এটা অস্বীকার করার জো নেই, জিয়াউর রহমানের পর খালেদা জিয়া যেভাবে দলের নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে পেরেছিলেন, তারেক রহমান তা পারেননি। কেন পারেননি বা পারছেন না, তা নিয়ে বিস্তর কথা বলা যাবে, তর্ক-বিতর্কও করা যাবে। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, মাঠে অনুপস্থিত থেকে কোনো যুদ্ধেই নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। তা ছাড়া দলের ভেতর তরুণ কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা থাকলেও অপেক্ষাকৃত প্রবীণরা তার ওপর যেন আস্থা রাখতে পারছেন না। বিগত কিছুদিন ধরে এটা পরিলক্ষিত হচ্ছে, দলে তরুণ নেতৃত্ব সামনে আনার নামে প্রবীণদের ক্রমান্বয়ে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। এটা ঠিক, দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই তরুণদের ক্রমান্বয়ে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে। তাই বলে প্রবীণদের যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দল যে অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার সংকটে পড়বে, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। কিন্তু সে বিবেচনার কোনো আলামত নেই। ফলে বিএনপির অভ্যন্তরে একটি চাপা ক্ষোভ ধূমায়িত অবস্থায় আছে। যদিও পদ-পদবি হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। এ অবস্থা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে যে কাক্সিক্ষত নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে এটা স্বীকার্য, শত ঘাত-প্রতিঘাত এবং ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি এখনো টিকে আছে। এর প্রধান কারণ দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। উঁচু পর্যায়ের নেতারা সময়ে সময়ে দিগ্্ভ্রান্ত হয়ে দলের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেও তৃণমূল কর্মীরা সব সময় রয়েছেন দলের প্রতি একনিষ্ঠ। এসব নিঃস্বার্থ কর্মীকে বিএনপির প্রাণশক্তি কিংবা প্রবহমান রক্তের সাথে তুলনা করলে নিশ্চয় তা অতিশয়োক্তি হবে না। তৃণমূলের এই একতাবদ্ধতা ও দলের প্রতি আস্থাই হয়তো বিএনপিকে ভবিষ্যতেও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক